Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

বাংলা সাহিত্যে নারী সাহিত্যিক

দু’শো বছর আগে উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে অবিভক্ত বঙ্গদেশে স্ত্রীশিক্ষার অবস্থা মোটেই উল্লেখযোগ্য ছিল না। প্রধানত সম্ভ্রান্ত পরিবারের অন্তঃপুর-প্রাচীর মধ্যেই এটা সীমাবদ্ধ ছিল; মেয়েরা ঘরে বসে শিক্ষয়িত্রীর সাহায্যে পড়াশুনা করতেন। ‘সম্বাদ ভাস্কর’ সম্পাদক গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশ একবার স্ত্রীশিক্ষা প্রসঙ্গে লিখেছিলেন:

“কলিকাতা নগরে মান্য লোকদিগের বালিকারা প্রায় সকলেই বিদ্যাভ্যাস করেন, প্রাপ্ত রাজা সুখময় রায় বাহাদুরের পরিবারগণের মধ্যে বিদ্যাভ্যাস স্বাভাবিক প্রচলিতরূপ হইয়াছিল, বিশেষত রাজা সুখময় রায় বাহাদুরের পুত্র প্রাপ্ত রাজা শিবচন্দ্র রায় বাহাদুরের কন্যা প্রাপ্তা হরসুন্দরী দাসী সংস্কৃত, বাঙ্গালা, হিন্দী এই তিন ভাষায় এমত সুশিক্ষিতা হইয়াছিলেন পণ্ডিতেরাও তাঁহাকে ভয় করিতেন।’’

এটা হল সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারের কথা। সাধারণ গৃহস্থ-পরিবারে মেয়েদের বিদ্যাশিক্ষার কোনও ব্যবস্থাই ছিল না; বরং প্রাচীনাদের অনেকের বদ্ধমূল সংস্কার ছিল, যে-মেয়ে লেখাপড়া করে সে ‘রাঁড়’ (বিধবা) হয়। এই শোচনীয় অবস্থার কথা মনে করে রামমোহন রায় ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে সহমরণ বিষয়ে বাদানুবাদে একস্থলে প্রতিপক্ষকে বলেছিলেন:

“আপনারা বিদ্যাশিক্ষা জ্ঞানোপদেশ স্ত্রীলোককে প্রায় দেন নাই, তবে তাহারা বন্ধিহান হয় ইহা কিরূপে নিশ্চয় করেন?”

প্রকৃতপক্ষে সম্ভ্রান্ত হিন্দুরা মেয়েদের প্রকাশ্যে স্কুলে পাঠানোর আদৌ পক্ষপাতী ছিলেন না। এই বাধা সর্বপ্রথম দূর করেন, তৎকালীন সরকারি শিক্ষা-সংসদের সভাপতি ভারত-হিতৈষী ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন (বেথুন)। তিনি রামগোপাল ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রমুখ এদেশের কয়েকজন সুসন্তানের সহায়তায় ১৮৪৯ সনের ৭ মে কলিকাতা বালিকা বিদ্যালয় (বর্তমানে বেথুন কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন। সেই অবধি দেশে প্রকাশ্যে স্ত্রীশিক্ষা প্রসার লাভ করতে থাকে। এর প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ কিছুকাল পরেই আমরা কোনও কোনও বঙ্গমহিলাকে পর্দার আড়াল ছেড়ে সাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হতে দেখি।

১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গমহিলা-রচিত সর্বপ্রথম বই প্রকাশিত হয়; যা ‘চিত্তবিলাসিনী’ নামে একখানি ছোট কাব্য (পৃষ্ঠা-সংখ্যা ৭২), লেখিকা— কৃষ্ণকামিনী দাসী।

ঈশ্বর গুপ্ত এই বইয়ের সমালোচনা প্রসঙ্গে ‘সংবাদ প্রভাকর’-এ (২৮-১১-১৮৫৬) লেখেন:

“আমরা পরমানন্দ-সাগর-সলিলে নিমগ্ন হইয়া প্রকাশ করিতেছি যে ‘চিত্তবিলাসিনী’ নামক অভিনব গ্রন্থ প্রাপ্ত হইয়া পাঠানন্তর চিত্তানন্দে আনন্দিত হইয়াছি, অঙ্গনাগণের বিদ্যানুশীলন বিষয়ে যে সুপ্রণালী এ-দেশে প্রচলিতা হইতেছে, তাহার ফলস্বরূপ এই গ্রন্থ, …অবলাগণ বিদ্যানুশীলন পূর্ব্বক অবনীমণ্ডলে প্রতিষ্ঠিতা হয়েন ইহাই আমারদিগের প্রার্থনা।”

চিত্তবিলাসিনীর প্রকাশকাল থেকে পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে (১৮৫৬-৬৬) আমরা আরও সাতজন লেখিকার দেখা পাই। এঁদের নাম ও রচনা:

১. বামাসুন্দরী দেবী (পাবনা): ‘কি কি কুসংস্কার দূর হলে এদেশের শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে পারে।’। ৪ বৈশাখ ১৭৮৩ শক (ইং ১৮৬১)। পৃ. ২০। এই লেখাটির ভূমিকায় লোকনাথ মৈত্রেয় লিখেছেন:

“ইহার রচয়িত্রী তিন বৎসরের অধিক হইবে না, বিদ্যাচর্চ্চা আরম্ভ করিয়াছেন। যত্ন সহকারে বিদ্যার্জ্জনে নিবিষ্টমনা হইলে আমাদের দেশীয় রমণীগণ যে কত অল্পকাল মধ্যে বিদ্যা ও জ্ঞানালঙ্কারে ভূষিতা হইতে পারেন, তাহা এদেশের লোকের হৃদয়ঙ্গম করিয়া দেওয়া আমার এই ক্ষুদ্র পুস্তক প্রচার করিবার অন্যতর উদ্দেশ্য।”

২. হরকুমারী দেবী (কালীঘাট): ‘বিদ্যাদারিদ্রদলনী’ (কাব্য)। ১২ আশ্বিন ১৭৮৩ শক (ইং ১৮৬১)। পৃ. ৮৪। বইতে লেখিকা নিজ নাম এভাবে লেখেন (লক্ষ্য করুন):

“পঞ্চমীতে যেই দ্রব্য না করে ভক্ষণ
তার আদ্য বর্ণ অগ্রে করিয়া গ্রহণ
কর্কট মিথুন রাশি হয় যেই নাম
রচয়িত্রী সেই দেবী কালীঘাট ধাম।’’

৩. কৈলাসবাসিনী দেবী (দুর্গাচরণ গুপ্তের পত্নী): ‘হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা’ (প্রবন্ধ)। ১৭৮৫ শক (ইং ১৮৬৩)। পৃ. ৭২। ‘হিন্দু অবলাকুলের বিদ্যাভ্যাস ও তাহার সমুন্নতি’। ১৭৮৭ শক (ইং ১৮৬৫)। পৃ. ৩৯।

৪. মার্থা সৌদামিনী সিংহ: ‘নারীচরিত’। ইং ১৮৬৫। পৃ. ৯৪।

৫. রাখালমণি গুপ্ত: ‘কবিতামালা’। ইং ১৮৬৫। পৃ. ৭২।

৬. কামিনীসুন্দরী দেবী (শিবপুর): ‘উর্বশী নাটক’। ১২৭২ সাল (ইং ১৮৬৬)। পৃ. ৮৫।

প্রথমত এই নাটকে রচয়িতার নাম ‘দ্বিজতনয়া’ ছিল। কিন্তু ওঁর পরের বই ‘বালা বোধিকা’-য় (ইং ১৮৬৮) ‘উর্ব্বশী নাটক রচয়িতা শ্রীমতী কামিনীসুন্দরী দেবী প্রণীত’ মুদ্রিত হয়। বঙ্গমহিলাদের মধ্যে কামিনীসুন্দরীই প্রথমে নাটক রচনায় হস্তক্ষেপ করেন।

৭. বসন্তকুমারী দাসী (বরিশাল): ‘কবিতামঞ্জরী’।

৮. এখানে তরু দত্তর নাম ইচ্ছা করে নিলাম না, কারণ ওঁর ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় লেখা কবিতা উপন্যাস ইত্যাদি দেশে-বিদেশে সমাদৃত। বাংলায় ওঁর লেখালেখি নেই বললেই চলে।

একে যথোচিত শিক্ষার অভাব, তার ওপর সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিকূলতা— এসব ভাবলে স্বল্পশিক্ষিতা এসকল কুলবালার প্রথম প্রচেষ্টা একেবারে সামান্য মনে হয় না।

ক্রমশ মাসিকপত্রের পৃষ্ঠাতেও বঙ্গমহিলাদের নাম নিয়মিত বেরোতে লাগল। ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ বামাগণের রচনার জন্য পত্রিকার কয়েক পৃষ্ঠা আলাদা রাখার ব্যবস্থা করল। চারদিকেই স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের আন্দোলন মাথা তুলল। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সরকার বেথুন কলেজের সঙ্গে একটি শিক্ষয়িত্রী-বিদ্যালয় শুরু করল; কলকাতার ব্রাহ্মসমাজগুলিও, বিশেষত কেশবচন্দ্রের প্রগতিশীল দল, স্ত্রীশিক্ষার সর্বাঙ্গীণ উন্নতিসাধনের জন্য বদ্ধপরিকর হল। স্ত্রীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রতিপন্ন করার জন্য নানা প্রবন্ধ ও পুস্তক-পুস্তিকা প্রচারিত হতে লাগল। যে-সকল মহিলা ইতিমধ্যে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, তাঁরাও শিক্ষাবঞ্চিত বোনদের পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করতে লেগে পড়লেন। স্ত্রীশিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পরের দশ-এগারো বছরে সাহিত্য-মন্দিরের পূজারিণীর সংখ্যাও দ্রুত বেড়ে যেতে লাগল। তাঁদের দান কেবলমাত্র সাহিত্যের কাব্য-বিভাগেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

এঁদের সকলের নামধাম ও রচনার দীর্ঘ তালিকা না দিয়ে মাত্র কয়েকজনের উল্লেখ করলাম। তারা হলেন:

নবীনকালী দেবী: ‘কামিনী কলঙ্ক’ (উপন্যাস)। এপ্রিল ১৮৭০।

হেমাঙ্গিনী: ‘মনোরমা’ (বড়গল্প)। জুলাই ১৮৭৪।

সুরঙ্গিনী দেবী (প্রসন্নকুমার সবাধিকারীর পত্নী): ‘তারাচরিত’ (রাজস্থানীয় ইতিহাস-মূলক গল্প)। জানুয়ারি ১৮৭৫।

ফৈজুন্নিসা চৌধুরাণী: ‘রূপ-জালাল’। (প্রেমের উপাখ্যান)। ঢাকা ১৮৭৬।

রাসসুন্দরী (কিশোরীলাল সরকারের মা): ‘আমার জীবন’। ডিসেম্বর ১৮৭৬।

এই শেষের বইটি একটা অন্য রকম, কারণ এই বইটি সহজ সরল‌ ভাষায় লেখা।

উনবিংশ শতাব্দীর সপ্তম দশক পর্যন্ত ইতিহাস সংক্ষিপ্ত। এই সময়ে বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে এমন এক প্রতিভাশালিনী মহিলা এলেন, যাঁর গদ্য-পদ্যে আমরা প্রথম শিল্পসুষমার ছোঁয়া পেলাম, যাঁর হাতে বঙ্গভারতীর বীণায় মৌলিক নারী-সুর প্রথম বাজল; ইনি রবীন্দ্রনাথের বড়বোন স্বর্ণকুমারী দেবী। প্রতিভার যাদুস্পর্শে সর্বপ্রথম তাঁর রচনাই রসে-বশে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গান, নাটক, প্রবন্ধ ও বিজ্ঞান— এককথায় সাহিত্যের সব বিভাগই তাঁর দানে ভরে উঠতে থাকে। এই সাফল্যের প্রভাব অচিরেই আরও অনেকের রচনায় পাওয়া যেতে লাগল। এই সময় থেকে শতাব্দীর শেষপাদ পর্যন্ত এমন কয়েকজন মহিলা-সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে, যাঁরা বঙ্গসাহিত্যে বিশিষ্টতা অর্জন করেন। তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও রচনাবলির কালানুক্রমিক তালিকা দিলাম:

স্বর্ণকুমারী দেবী: তিনি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যা; রবীন্দ্রনাথের বোন। স্বর্ণকুমারীর সুদীর্ঘ জীবন বাণী-সাধনায় সমুজ্জ্বল। তিনি অনেকগুলি পাঠ্যপুস্তকেরও রচয়িতা। তিনি অতীব যোগ্যতার সঙ্গে দীর্ঘকাল ‘ভারতী’ সম্পাদনা করে গেছেন। ১৯৩২ সনের ৩ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।

প্রসন্নময়ী দেবী: ইনি স্যার আশুতোষ চৌধুরীর বড়বোন ও প্রিয়ম্বদা দেবীর মা; জন্ম ১৮৫৭ সনে।

জ্ঞানদানন্দিনী দেবী: ১৮৫২ সালে তাঁর জন্ম যশোরে। বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর আন্তরিক অনুরাগ ছিল। পুরাতন ‘ভারতী’-র পৃষ্ঠায় মুদ্রিত তাঁর ক’টি রচনার সন্ধান পাওয়া গেছে।

শরৎকুমারী চৌধুরাণী: শরৎকুমারীর জন্ম ১৮৬১ সনের ১৫ জুলাই। পুরোনো সাময়িক-পত্রের পৃষ্ঠায় খোঁজ করলে তাঁর বহু রস-রচনার সন্ধান পাওয়া যায়। তাঁর প্রথম রচনা ‘কলিকাতার স্ত্রীসমাজ’ ১২৮৮ সালের ভাদ্র ও কার্তিক-সংখ্যা ‘ভারতী’-তে প্রকাশিত হয়।

এছাড়া আমরা উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ অব্দি যে সব বিশিষ্ট মহিলা সাহিত্যিকের নাম পেলাম, তার একটা তালিকা দিলাম:

১. মোক্ষদায়িনী মুখোপাধ্যায় (মোক্ষদাদেবী); ইনি ডবলিউ. সি. ব্যানার্জির বোন, ২. গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, ৩. মানকুমারী বসু, ৪. কামিনী রায়, ৫. কুসুমকুমারী দেবী, ৬. বিনয়কুমারী বসু (ধর), ৭. প্রমীলা বসু (নাগ), ৮. কৃষ্ণভাবিনী দাস, ৯. অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, ১০. মৃণালিনী সেন, ১১. সরোজকুমারী দেবী, ১২. নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী, ১৩. হিরন্ময়ী দেবী, ১৪. সরলা দেবী, ১৫. প্রিয়ম্বদা দেবী, ১৬. সরলাবালা দাসী, ১৭. লজ্জাবতী বসু, ১৮. লাবণ্যপ্রভা বসু, ১৯. প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী, ২০. সারদাসুন্দরী দেবী, ২১. পঙ্কজিনী বসু, ২২. অন্নদাসুন্দরী ঘোষ প্রমুখ।

এই ক্রমোন্নতির জের আজও পর্যন্ত অব্যাহত আছে। বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে মহিলাদের দানের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। প্রবন্ধ, ভ্রমণ-কাহিনি, কাব্য ও কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রে তাঁদের কেউ কেউ বহু উঁচুতে অবস্থান করছেন। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে বর্তমান কাল অব্দি যাঁরা এই ইতিহাসের জের টানবেন, সাহিত্যক্ষেত্রে নারীদের অভিযানের একটা মোটামুটি তালিকা পেশ‌ করলাম। উপন্যাস এবং সাময়িক-পত্রের লেখিকা হিসাবে বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে:

অনিন্দিতা দেবী, অনুরূপা দেবী, আশাপূর্ণা দেবী, আশালতা দেবী, আশালতা সিংহ, ইন্দিরা দেবী (চৌধুরাণী), ইন্দিরা দেবী (বন্দ্যোপাধ্যায়), উমা দেবী (গুপ্ত), উমা রায়, ঊর্মিলা দেবী, কুমন্দিনী মিত্র (বসু), গিরিবালা দেবী, জ্যোতির্ময়ী দেবী, জ্যোতির্মালা দেবী, তুষার দেবী, দুর্গাবতী ঘোষ, নিরুপমা দেবী, নিরুপমা দেবী (সেন), নিস্তারিণী দেবী, পারুল দেবী, পূর্ণশশী দেবী, প্রতিভা বসু, প্রতিমা দেবী (ঠাকুর), প্রফুল্লময়ী দেবী (ঠাকুর), প্রভাবতী দেবী সরস্বতী, ফুলকুমারী গুপ্ত, বাণী গুপ্তা, বাণী রায়, বিনোদিনী দাসী, বিমলা দাশগুপ্তা, বীণা দাস (ভৌমিক), মৈত্রেয়ী দেবী, রত্নমালা দেবী, রমা চৌধুরী, রাজকুমারী অনঙ্গমোহিনী, রাণী চন্দ, রাধারাণী দেবী (অপরাজিতা দেবী), রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, লীলা দেবী (চৌধুরী), লীলা মজুমদার, শরৎকুমারী দেবী, শান্তা দেবী, শান্তিসুধা ঘোষ, শৈলবালা ঘোষজায়া, সরযূবালা দাশগুপ্তা, সীতা দেবী, সুখলতা রাও, সরমাসুন্দরী ঘোষ, সুরুচিবালা সেনগুপ্তা, স্নেহলতা সেন, সুফিয়া কামাল, হাসিরাশি দেবী, হেমন্তবালা দেবী, হেমলতা দেবী, হেমলতা সরকার, কবিতা সিংহ, মহাশ্বেতা দেবী, সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য, নবনীতা দেব সেন, বাণী বসু, মীরাতুন নাহার, বিজয়া মুখোপাধ্যায়, মল্লিকা সেনগুপ্ত, নুরুন্নেসা খাতুন, তিলোত্তমা মজুমদার, কেতকী কুশারী ডাইসন, জাহানারা ইমাম, তসলিমা নাসরিন, তাহমিনা আনাম, নাসরিন জাহান, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, সেলিনা পারভীন, সেলিনা হোসেন, মন্দাক্রান্তা সেন প্রমুখ লেখিকার নামের সঙ্গে পাঠকেরা পরিচিত আছেন এবং প্রতিদিন আরও নতুন নাম তালিকায় যোগ হচ্ছে। এঁদের অনেকেই ক্ষমতাশালী লেখিকা এবং ব্যাপকতর আলোচনার দাবি রাখেন।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
3 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »