Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সুজিত বসুর কবিতাগুচ্ছ

তোমার শয্যায় শোবে

মুরগির পায়ের ভরে ঘুরে যায় বৃত্তাকারে গোল কাচঘর
শয্যায় ছড়ানো মেঘ, শরীরে পদ্মের মত ছুঁচ
ফুটে আছে একগুচ্ছ, পালঙ্কের চতুর্দিকে লাল বহুভুজ
উচ্ছ্বসিত অক্টোপাস, তামাটে খনিজ রাত, দূর দূরান্তর
অস্পষ্ট কুয়াশাঘেরা, সাতটি সমুদ্র ভরে কলস্বনা বান
আক্রোশে সাপিনী ফণা তুলে ধরে মায়াবিনী, ডাকিনী ঘিয়ের
বাতির শিখাটি আরো উসকে দিয়ে বসে থাকে, ভুল বিবাহের
সাজপরা কনেবউ, শুধু চারিদিকে শব্দ ‘ইভান ইভান’
রাজপুত্র তুমি আর কোথায় কতটা দূরে, গোধূলি ধূলিতে
কিছুই যায় না দেখা, ছায়াময় চারিদিক, অগুরু কুমকুম
চন্দন আবিরে ঘিরে সুগন্ধে সাজানো এই আঙিনায় শ্বেত
অশ্বের হ্রেষার ধ্বনি যদি না স্পন্দিত হবে, চুল থেকে ফিতে
জালের বন্ধনী হয়ে জড়িয়েছে রাজকন্যা, ডাকিনীও স্বেদ
মুছে নিয়ে কপালের তোমার শয্যায় শোবে নিথর নিঝুম।

*

অপেক্ষায় থেকে থেকে

দ্বারে স্তব্ধ পক্ষীরাজ, চোখ থেকে বাষ্পময় ফেনিল অশ্রুর
স্রোতের নির্ঝর ঝরে, তেরোটি নদীর ক্রূর প্রতিবন্ধকতা
পেরিয়ে অঙ্গনে এই রাজপুত্র এসে গেছে সাত সমুদ্দুর
গণ্ডুষে নিঃশেষ করে, শয্যা থেকে দুলে ওঠে দুটি বাহুলতা
কপালে স্বেদের বিন্দু শুকিয়ে কাজল গাঢ়, ক্লান্তির কালিমা
ছদ্মবেশী রাজকন্যা উঠে পড়ো এসময়, অসময়ে ঘুম
ভাল না, ভাল না এই অবেলায়, এ পৃথুলা শরীরে প্রতিমা
কীভাবে দেখাবে তাকে, ঝাঁপি খুলে বার করো কালো সম্মার্জনী
বাহন তোমার হবে, অহঙ্কার থলি ভর্তি প্লাস্টিক কুসুম
দুটি-একটি গুঁজে নিয়ো মেঘচুলে, কেন আজ সাবান মাখোনি!
পুরু আস্তরের মতো ঢেকে রাখত তবে সে তো নিশীথিনী রূপ,
সাজসরঞ্জাম সব কিন্তু এ কাদের জন্য, বাঁধভাঙা স্রোত
কেন যে প্লাবন হয়ে ভরে তোলে তার সব গণ্ডি নলকূপ,
দুয়ারে যে রাজপুত্র অপেক্ষায় থেকে থেকে ডন কুইকসোট।

*

রাজকন্যা শায়িতা ঘুমে

ঘুমিয়ে থাকে ঘুমিয়ে থাকে দরজা ধরে দাঁড়ানো
রাজপুত্র দুর্গদ্বারে, বিভ্রান্তি ক্ষণিকে
জলবালুকা হয়ে কি তাকে টেনে নিয়েছে ঘোরানো
সিঁড়ির ষড়যন্ত্রে ক্রূর, চেনেনি সে কি খনিকে
যা ছিল এত কুহকে ভরা, ধূসর কোনো অতীতে
খনন করে সন্ধানীরা খুঁজে নিয়েছে স্বর্ণ,
ধাতব পীত উজ্জ্বলতা, শোকাগ্নিও যে গীতে
নিশ্চিহ্ন নিমেষে, তার মূর্ছনাতে বন্য
মানবদল চকিতে স্থির, তাকে কি রাজপুত্র
নিপাতে তুমি ধন্য হবে, তরবারিতে মরচে
জমেছে জানো, সঞ্জীবনী ঢেলে কি তাকে শুদ্ধ
করতে পারো, সময় নেই, চতুর্দিকে প্রহরী
তন্দ্রাহীন সজাগ ধীর, স্বপ্ন দিয়ে তুমি এ
বিদ্ধ তবু করোনি বলে রাজকন্যা কবরী
এলিয়ে থাকে শায়িতা ঘুমে, ঘুমিয়ে থাকে ঘুমিয়ে।

চিত্রণ: মুনির হোসেন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
1 year ago

অসাধারণ তিনটি কবিতা। জীবনের পাওয়া আর স্বপ্নে চাওয়ার মাঝেমাঝে জমে থাকা দ্বান্দ্বিক প্রেক্ষাপটে দ্বিধান্বিত বোধ বাহি চরণগুলি পাঠককে এক অতীন্দ্রিয় আবহে এনে ফেলে।

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »