Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মলয় গোস্বামীর একগুচ্ছ কবিতা

বসে আছি হে

ভালবাসা পড়ে থাকে ধারালো বঁটির পাশে, সারাদিন…

বঁটি তাকে— কাছে ডাকে
এক হাজার বছর ধরে, দু-হাজার বছর ধরে
ডেকে ডেকে কবি হয়ে যায়৷

কাঠের মুখের কাছে, বঁটি তার— মাথা তুলে
সগর্ব ঘোষণা করে. আমি এই পৃথিবীতে আছি৷
কাঠের ওপরে বসে ঘরোয়া— রমণী। হাসে কাঁদে
গান গায় গুনগুন করে৷

ভালবাসা পড়ে থাকে ধারালো বঁটির পাশে
বহুদিন ধরে৷

অনিন্দ্যলাজুক সরু ট্রাম

এসো রাস্তা কলকাতার… এসো অনিন্দ্যলাজুক সরু ট্রাম
দ্যাখো গ্রাম কতটা তোমার

এসো বিধান সরণি দিয়ে, ফিটনে সাজিয়ে নিয়ে আলো—
এসো রাজনীতি এসো… এসো শিক্ষা… এসো ও চ্যানেল…
দ্যাখো— গ্রামট্রাম ঘুরে গেছে নব্বই ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে…
গাছেও লেগেছে ধুলো, ধূসরিত খরগোশ— রোদ

হ্যাঁ কলকাতা তুমি না— কলকাতার মতো
গ্রামের ছেলেকে খেতে দেবে? কেটে দেবে লেবু?
নীল প্যান্ট পছন্দ তোমার?

ট্রামের জানালায় বসা গ্রামের ছেলেটির হাতে
ভোরের কাগজ—

ভোরের কাগজ ছিঁড়ে, ছিঁড়েছিঁড়ে উড়োজাহাজ বানিয়ে ফেলেছে—
ওড়াবে ও মেয়ো রোডে… ওড়াবে ও সূর্য সেন স্ট্রিটে…
ওড়াবে ও লালদিঘি আর ওই ধর্মতলায়…

আসলে সে কবি এক— বসেছে ট্রামের জানালায়
উড়োজাহাজের গান তাহার গলায়…

আমাকে মেঘে পায়

নয়নতারা গাছের কথা আর বলব না৷ আমাকে
মেঘে পায়৷

তুমি হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কথা বলো৷ বাতাসের মধ্যে
হাত ঘোরাতে ঘোরাতে একদিন বললে, এয়ারপোর্টের
বাইরের একটা গলি থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এসেছিল
একজন চেনা লোক৷ তার গায়ে ছিল এরোপ্লেনের
গন্ধ৷

আমি নয়নতারা গাছের কথা বলব বলব
করেও আর বললাম না৷

নয়নতারা গাছের কথা ভাবি আর ভাবি সেই
লোকটার কথা, যে এয়ারপোর্টের গলি থেকে
বের হয়েছিল৷ তার সামনেও কি তুমি
হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কথা বলেছিলে? আমাকে
মেঘে পায়৷

মেঘেমেঘে ভর্তি হয়ে যায় আমার আকাশ৷ এরোপ্লেন
সেই মেঘের মধ্যে দিয়ে আসে৷ মাটিতে নামে৷ আর
বারবার আসে সেই লোকটা৷ চেনা৷ যার গায়ে
এরোপ্লেনের গন্ধ৷

নয়নতারা গাছের কথা আর বলি না! জল আসে!

আমি শুধু দেখতে চাইছি

আজ তোমার ব্লাউজ বানানো দেখছি
কী বলব, খুব ভাল লাগছে

মেশিনের তলায় তোমার দুটো পা
উঠছে আর নামছে…

এটাও আমার খুব ভাল লাগছে
চোখ বন্ধ করে দেখছি সিনেমা

ব্লাউজের কাটা বুক সেলাই করছ তুমি
সেলাই করছ সন্তানের মায়া, মেয়ের না-করা ফোনের দিন
পোড়া ভালবাসার ডানার কাহিনির সঙ্গে
সেলাই করছ বেঁচে-থাকা…

অনেকে বলবে, এটা কোনও কবিতাই না…
কিন্তু আমি তো কবিতা লিখতে চাইনিরে বাবা
আমি শুধু দেখতে চাইছি তোমার ব্লাউজ বানানো

কী বলব, আমার খুব ভাল লাগছে
তোমার পা-দুটো উঠছে আর নামছে…

ভালবেসেই কত আলো আমাদের

যদি আমি সত্যি লিখি মৃত্যু অবধি
ফাঁকা হয়ে পড়ে থাকব ফুঁ-হীন বাঁশি…
দেখে যাব— তোমার জন্ম ও মৃত্যু
অবধারিত বাংলায় মাখা৷

পরকালে যেতে যেতে
তোমার ঠোঁটের সামনেই ফট্ করে বেঁকে যাবে
কবিতার শাখা…

এরকম ভালবেসেই কত আলো আমাদের হল!
তোমার সমস্ত ভাঁজে— আমরাই হয়ে গেছি
ভয়ানক বোনা!

হাঃ!
যদি আমি সাপ খাই, বিষথলিসুদ্ধু খাব
ফণাটি উদ্বৃত্ত রেখে কখনও খাব না৷

চিত্রণ : চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 7 =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »