
সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
প্রতিবারের মতো দুপুর রোদে ছাদের মাঝখানে, ছড়ানো খেলনার মতো পুরনো হয়ে যাওয়া একটা সম্পর্ক আর আর দুটো মানুষ— উদ্ভ্রান্ত হতে পারি না তবু! ইচ্ছে করে

প্রতিবারের মতো দুপুর রোদে ছাদের মাঝখানে, ছড়ানো খেলনার মতো পুরনো হয়ে যাওয়া একটা সম্পর্ক আর আর দুটো মানুষ— উদ্ভ্রান্ত হতে পারি না তবু! ইচ্ছে করে

ভালভাষা উৎসব সংখ্যা ২০২৩|| সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা।

India’s First Bengali Daily Magazine. তুমি চলে যাচ্ছ বলে সূর্যও কি বিষণ্ন আজ?/ কতবার এই তো এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখেছি/ মাঝিদের ছোট ডিঙি,/ ফেলে আসা হাতে জাল ধরে পাড়ে নিয়ে আসছে ঢেউ,/ কীভাবে গোধূলি এসে মিশিয়ে দিয়েছে পলাশী রং/ সারা গায়ে,/ অথচ কখনও তো মনখারাপ বাঁধেনি!// তুমি চলে যাবে বলেই কি ঝিনুকের মাঝে মুক্তো/ পাইনি একটাও?/ হারাতে সবাই ভালবাসে। কেউ বলে, কেউ বলে না।

India’s First Bengali Daily Magazine. কাপড়ে ঢাকা চাঁদমুখ/ মায়াবী কাশবন/ কার বাঁশি শোনা যায় মেঘে মেঘে?// কুমারটুলিতে তখন সেজেগুজে/ দাঁড়িয়েছে উমা।/ শঙ্খধ্বনি/ মৃদু পায়ে পদ্মদিঘিতে নামে,/ বেজে ওঠে গোছা গোছা মল/ রুপোলি আলোয় সোনার শরীর তার/ এক মোহময়ী নক্ষত্র!/ পিছু পিছু চলে সমস্ত পৃথিবী।// কোমরের ভাঁজে ঝাপটা খায় চাবির গোছা।/ ছুটে যায় পথে পথে কত মেয়ে কত ছেলে/ ঘাসের সমুদ্রে ঢেউ/ সবুজ ওড়নায় ঢাকা মখমল শরীর গেয়ে ওঠে আগমনী।

India’s First Bengali Story Portal. সকলে গান গাইতে পারে না। কবিতা লেখে আমার মতো কিছু কাঙাল। সুর হয়ে ভাসে কাগজের নৌকারা। ছোট ছোট পা লাফিয়ে ওঠে একত্রে। জলের নিচে থকথকে পলি। মৃত মাছেরা হাততালি দেয়। লেখার ওপর ঝরে পড়ে অদৃশ্য কান্না।// মৃত ভ্রূণ নড়ে ওঠার বিস্ময় নিয়ে জন্ম পার হই। নিঃস্ব জীবনে কবিতা ছাড়া কীই বা আছে ঘোর? তুমি যখন সব// জেনেও একা করে দাও আরও, প্রতিটা ভুল// শরীরজুড়ে উল্কি আঁকে। এত আগুনে পুড়েও শুনতে পাই// বিশ্বাসের শিস। কী নৈঃশব্দ্য! কী অদ্ভুত এক মিথ!

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।