চলে যাওয়ার পথে
তুমি চলে যাচ্ছ বলে সূর্যও কি বিষণ্ন আজ?
কতবার এই তো এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখেছি
মাঝিদের ছোট ডিঙি,
ফেলে আসা হাতে জাল ধরে পাড়ে নিয়ে আসছে ঢেউ,
কীভাবে গোধূলি এসে মিশিয়ে দিয়েছে পলাশী রং
সারা গায়ে,
অথচ কখনও তো মনখারাপ বাঁধেনি!
তুমি চলে যাবে বলেই কি ঝিনুকের মাঝে মুক্তো
পাইনি একটাও?
হারাতে সবাই ভালবাসে। কেউ বলে, কেউ বলে না।
এই যে আমি বলি, ওই চোখের ভেতর মৃত্যু আছে আমার।
তুমি ঘুমলে জেগে দেখি কত শান্ত শিশুর মত আঁকড়ে
রেখেছ চাঁদ,
কে বলবে আমাকে পোড়াতে গোটা আগ্নেয়গিরি লাগে তোমার?
তুমি চলে যাবে বলে জ্যোৎস্নায় ভেসে আসা জেলিফিসগুলো পড়ে আছে কঙ্কালের মত…
বালির কিনারায় জমে আছে কত খোল,
পায়ে বিঁধে যাওয়া কাঁটাটুকু ছাড়িয়ে আবার ভাসিয়ে দিয়েছি অন্যত্র,
শুধু যেটুকু ভাসাতে পারি না সেটুকু আমারই থাক।
মৃত্যু আর জীবনের মাঝে একফোঁটা চন্দন হয়ে।
*
কবি জয় গোস্বামীকে
প্রথম যেদিন বাড়ি গিয়েছিলাম, ভয়ে ভয়ে
ডোরবেল ছুঁয়ে তাকিয়ে আছি বন্ধ দরজায়—
কত মেঘ যেন ঘিরেছে সকাল
কাগজফুলেও সে এক আশ্চর্য ঘ্রাণ
চারদিকে বসন্ত ছড়িয়ে কবি নিঝুম হয়েছেন বুঝি অগোচরে!
দরজা খুলে গেল—
বুকুন ডেকে উঠল, ‘জয়, বই এসেছে বই’
‘তোমার জন্য’ বই?
কী আছে আমার যা আপনাকে দেওয়া যায়?
লজ্জার টুকরো ছাড়া পোড়া কিছু অক্ষর?
দূর থেকে শব্দেরা মিলিয়ে গেল— দেখা হল না আর
বাড়ি ফিরে ভেবেছি শুধু, কেন নিয়ে গেছি সে ভুল?
কেনই বা পিছিয়ে এসেছি আবার সহস্র পা—
অথচ সেই কোমল বলিষ্ঠ কণ্ঠ,
বিনম্রতায় লুকিয়ে ছিল তরুণ স্পর্ধার আশ্রয়,
তবুও ভয়ে, সঙ্কোচে এবং লজ্জায় কথা হয়নি কখনও
মুখোমুখি, শুধু স্মৃতির সামনে বসে বলেছি,
হে ঈশ্বর, আশ্রয় দিয়েছ যেমন প্রতিটা কবিতায়—
ফুটেছে পাথরের ওপর অবিশ্বাস্য পারিজাত!