এ স্বপ্ন আমার রোজ আসে
এক নির্মল কিশোরীর মতো ভারতবর্ষের চোখ
হাতে শরতের মেঘ
কাশফুল ভরা মাঠে দৌড়ে বেড়ায় তেরঙ্গা উড়িয়ে
একফোঁটা রক্ত নেই কোত্থাও
কচি কচি ধান আর ঝলমলে রোদ
সকলে তখন বালক
ক্ষুদির গানে মজেছে লালমাটির পথ
সুবি তার বঙ্গমাতার মূর্তি নিয়ে চলেছে স্লোগান উড়িয়ে
দলে দলে ঘিয়ে রঙের গরদের শাড়ি আর লাল পাড়,
শঙ্খধ্বনি উলুধ্বনি,
যতীনদার হাতে এক মস্ত ঢোলক
কোনো বাধা নেই আর…
দূরে এক পাগল ফকির গান বেঁধেছে আলোর।
এ স্বপ্ন আমি রোজ দেখি
মায়ের হাতে দুধ ভরা বাটি আর একটু চটকে রাখা ভাত।
সুবি ছুটে যায় ঘরময়
নুপূর বেজে ওঠে পায়ে পায়ে
আমার মাও তো রোজ এভাবেই খাওয়াতেন আমায়
তবে কেন তোমার সে চোখ দেখিনি কখনো?
কেন ঊষারঙের টিপে আমার পড়ার টেবিলের আলো
চিৎকার করে বলোনি ভারতবর্ষ আমার শরীর?
ধমনীতে ভরে দেয়নি দশ হাতির তেজ?
মাটির গন্ধ দুহাতে মাখায়নি প্রাণ ভরে?
কিশোরীর অঙ্গ জোড়া ঝুমকোলতার ফুল
পায়ে তার বেলফুলের বেড়ি।
আকাশ রঙের ক্যানভাসে সে এঁকে যায়
ক্ষুদি যতীনদা আর সুবিদের মুখ
তখন সবাই সমবয়সী,
দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোরীর সাথে
এমন স্বপ্ন আমার রোজ আসে
রোজ আকাশে জেগে ওঠে তেরঙ্গা রঙের বিরাট এক মেঘ
এক প্রান্ত থেকে শাঁখ বাজান রবি ঠাকুর
ও আমার দেশের মাটি…
নুইয়ে পড়ে অহংয়ের দশটা মাথা
এ তো কোনো স্বপ্ন নয়, অহংকার
কিশোরী বালিকার সুখী চোখের ছটায় ঝলমল করে
সেই ভারতবর্ষ!
*
উমা
কাপড়ে ঢাকা চাঁদমুখ
মায়াবী কাশবন
কার বাঁশি শোনা যায় মেঘে মেঘে?
কুমারটুলিতে তখন সেজেগুজে
দাঁড়িয়েছে উমা।
শঙ্খধ্বনি
মৃদু পায়ে পদ্মদিঘিতে নামে,
বেজে ওঠে গোছা গোছা মল
রুপোলি আলোয় সোনার শরীর তার
এক মোহময়ী নক্ষত্র!
পিছু পিছু চলে সমস্ত পৃথিবী।
কোমরের ভাঁজে ঝাপটা খায় চাবির গোছা।
ছুটে যায় পথে পথে কত মেয়ে কত ছেলে
ঘাসের সমুদ্রে ঢেউ
সবুজ ওড়নায় ঢাকা মখমল শরীর গেয়ে ওঠে আগমনী।
উমা আসে তার ভরা সংসার নিয়ে
গিরিরাজ পেতে রাখেন পিঁড়ি
উঠোনে ছড়ানো ধান,
একঝাঁক পায়রার মাঝে তার দুটি দুধআলতা পা
ছই ঢাকা একচালার ঘরে রাজকন্যা মেলে দেয়
মেঘবরণ ভিজে চুল
সাদা ধোঁয়ার মতো মেঘ ঘিরেছে গোটা আকাশ
উমা তাকিয়ে দেখে, সূর্য ক্রমশ ঠাঁই নিচ্ছে তার
কালো দুটি ভুরুর মাঝে
বয়ে যায় শোক জল
গাল বেয়ে ধুয়ে আসা কাজলের মিহিন দাগ
‘ঘরের মেয়ে, আবার চারটে দিন,
গোবিন্দভোগ, তোমার হাতের পায়েস’
উড়ে যায় শিউলির বাস এপার থেকে ওপার…
কেউ কি ডেকে ওঠে, ‘মা, ও মা’!