Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের গুচ্ছকবিতা

বিষ

আমার মৃত শরীরের ওপর দাঁড়িয়ে তোমার মতো হাজারটা

পিঁপড়ে আজকাল হেঁটেচলে বেড়ায়। শুকনো রসে লালা মিশিয়ে ভাঙায় চিরঘুম। কানে কানে ভোর স্বপ্নের কথা বলে৷ গলায় লাল মাফলার, কালো হাইনেক চাপিয়ে মোহময়ী পাহাড়ি বালিকার মতো জেগে ওঠে সাদা ঠোঁট। বরফের নিচে জমা হাত জাপটে ধরে গোটা উপত্যকা। খসে পড়া হিমটুকু নিয়ে রচনা করি আমি, নিজেরই অন্য একরূপ৷ যে রূপে যক্ষিণী সেজে চুষে খাই রক্ত, মাতৃত্বহীন।

টানটান বিছানায় লণ্ডভণ্ড ঢেউ। খোলসের ভেতর ক্রমশ পাতলা হয়ে ঢুকে যায় এক জংলি সাপ। বিপদসীমার ওপরে টলটল করে জল।

পিঁপড়েরা ছত্রাকার। হুলের মুখে বিষ। চামড়া খুঁটে খুবলে নিয়ে যায় একেকটা দিন। লাভায় পুড়ে যাওয়া প্রত্যেক পিচরাস্তার মতো যোনি… বিষাক্ত, যৌবনহীন!

তোমার কোলে শুয়ে বর্ণনা করি অন্য এক খনির। কচ্ছপের খোলস নড়ে ওঠে। এত আয়ু জমা রাখো?

চোখের জলে বিদেশি ভাষার খোঁজ। পরিত্যক্ত এক মুখচ্ছবি। কী আশ্চর্য মধুর!

নিষ্ঠুর শরীরী বর্ণনায় যত টুকরো টুকরো হও, আমি তত বেশি সুন্দর হয়ে উঠি।

পোশাকের ফ্যাকাসে রং শরীরে চড়ে না। নগ্ন চামড়ার আলো সূর্যের মতো চারটে দেওয়ালে। কাঁধের হাড় দুটো নড়ে ওঠে আঙুলের চাপে। পথ, যেন আঙুল থেকে অন্তিম চলন। থামতে চায় না পথিক, যতক্ষণ না সব বিষ ঝেড়ে ফণা তোলে আবার কালকেউটে।

ঋতুস্রাবের রক্তে আঁকা যন্ত্রণাগুলো আমারই কন্যাসন্তান। বড় প্রিয় আবেগে কণ্ঠ জড়ানো এসরাজ।

আজকাল ভয় হয় খুব। এক অজানা অন্ধকার সিসিটিভির মতো নজর রাখে সর্বত্র। ভবিষ্যতের কোনও নিশ্চিত রহস্য নেই। সিঁদুরে মেঘের ভয়ে চাদর ভিজিয়ে ফেলি।

আশ্চর্য এক যান ছুটে নিয়ে চলে চল্লিশের ধাপে। ভুলে যেতে এখন বড় ভাল লাগে। শুধু তোমাকে ভুলে যাব বলেই মৃত্যুকে চিনেছি এত কাছে।

তলপেটে শিরশিরে ব্যথা। স্রাবের মতো বয়ে যায় যৌবন। গভীরে সরোদের সুর। যেন কান্না চাপা দেওয়ার জন্য বৃষ্টির ব্যর্থ প্রচেষ্টা এক!

 

সকলে গান গাইতে পারে না। কবিতা লেখে আমার মতো কিছু কাঙাল। সুর হয়ে ভাসে কাগজের নৌকারা। ছোট ছোট পা লাফিয়ে ওঠে একত্রে। জলের নিচে থকথকে পলি। মৃত মাছেরা হাততালি দেয়। লেখার ওপর ঝরে পড়ে অদৃশ্য কান্না।

মৃত ভ্রূণ নড়ে ওঠার বিস্ময় নিয়ে জন্ম পার হই। নিঃস্ব জীবনে কবিতা ছাড়া কীই বা আছে ঘোর? তুমি যখন সব

জেনেও একা করে দাও আরও, প্রতিটা ভুল

শরীরজুড়ে উল্কি আঁকে। এত আগুনে পুড়েও শুনতে পাই

বিশ্বাসের শিস। কী নৈঃশব্দ্য! কী অদ্ভুত এক মিথ!

 

 

মৃত্যুর ভেতর যারা স্বপ্নকে খোঁজে তাদের পৃথিবী, কবি বলে ডাকে। আঘাতে কঠিন এক মূর্তির মতো, পেরিয়ে যায় আগুন। পলাশ ফুটলে বসন্ত, শীতে, ভাস্কর বুকে নিয়ে সুপর্ণাভাবে দীর্ঘশ্বাসে ভোলে নাভিজন্ম।

আমারও অবস্থা খানিক পুরোনো হ্যারিকেনের মতো।

সারা গায়ে কস্মিলকালের ভুসোকালি অথচ আগুন

নিভতে চায় না যেন। খড়ের ছাউনি মেলা কুঁড়েঘরে টাঙিয়ে দিই ছায়ার কঙ্কাল। ঘাড়ে চেপে বসে নাছোড়বান্দা ভূত। শহরের প্রতিটা হোটেল আমাদের ঘর। পিছুটানহীন

খোলা জানলায় অ্যাসট্রের ওপর জ্বলন্ত দুটো আঙুল…

তুমিও জানো, ভাস্কর আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে আবার।

শহরের মারপ্যাঁচ ভুলে বৃষ্টির রাস্তা দেখিয়েছে কলকাতায়।

তোমার ভেতর যে শীত কঠিন হয়ে জমেছে, তাতে তাপ রেখে দেখেছি, গলেনি। যত ভালবেসেছ তত আঘাতে সাজিয়েছ চিত্রপট। মৃত্যুকে দেখেছি প্রতিদিন আমারই শরীরে জায়গা করে নিতে। আমিও খুলে দিয়েছি সমস্ত গিঁট স্বেচ্ছায় মৃত্যুপিয়াসী হয়ে!

চিত্রণ: মুনির হোসেন
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »