বিষ
আমার মৃত শরীরের ওপর দাঁড়িয়ে তোমার মতো হাজারটা
পিঁপড়ে আজকাল হেঁটেচলে বেড়ায়। শুকনো রসে লালা মিশিয়ে ভাঙায় চিরঘুম। কানে কানে ভোর স্বপ্নের কথা বলে৷ গলায় লাল মাফলার, কালো হাইনেক চাপিয়ে মোহময়ী পাহাড়ি বালিকার মতো জেগে ওঠে সাদা ঠোঁট। বরফের নিচে জমা হাত জাপটে ধরে গোটা উপত্যকা। খসে পড়া হিমটুকু নিয়ে রচনা করি আমি, নিজেরই অন্য একরূপ৷ যে রূপে যক্ষিণী সেজে চুষে খাই রক্ত, মাতৃত্বহীন।
টানটান বিছানায় লণ্ডভণ্ড ঢেউ। খোলসের ভেতর ক্রমশ পাতলা হয়ে ঢুকে যায় এক জংলি সাপ। বিপদসীমার ওপরে টলটল করে জল।
পিঁপড়েরা ছত্রাকার। হুলের মুখে বিষ। চামড়া খুঁটে খুবলে নিয়ে যায় একেকটা দিন। লাভায় পুড়ে যাওয়া প্রত্যেক পিচরাস্তার মতো যোনি… বিষাক্ত, যৌবনহীন!
২
তোমার কোলে শুয়ে বর্ণনা করি অন্য এক খনির। কচ্ছপের খোলস নড়ে ওঠে। এত আয়ু জমা রাখো?
চোখের জলে বিদেশি ভাষার খোঁজ। পরিত্যক্ত এক মুখচ্ছবি। কী আশ্চর্য মধুর!
নিষ্ঠুর শরীরী বর্ণনায় যত টুকরো টুকরো হও, আমি তত বেশি সুন্দর হয়ে উঠি।
পোশাকের ফ্যাকাসে রং শরীরে চড়ে না। নগ্ন চামড়ার আলো সূর্যের মতো চারটে দেওয়ালে। কাঁধের হাড় দুটো নড়ে ওঠে আঙুলের চাপে। পথ, যেন আঙুল থেকে অন্তিম চলন। থামতে চায় না পথিক, যতক্ষণ না সব বিষ ঝেড়ে ফণা তোলে আবার কালকেউটে।
৩
ঋতুস্রাবের রক্তে আঁকা যন্ত্রণাগুলো আমারই কন্যাসন্তান। বড় প্রিয় আবেগে কণ্ঠ জড়ানো এসরাজ।
আজকাল ভয় হয় খুব। এক অজানা অন্ধকার সিসিটিভির মতো নজর রাখে সর্বত্র। ভবিষ্যতের কোনও নিশ্চিত রহস্য নেই। সিঁদুরে মেঘের ভয়ে চাদর ভিজিয়ে ফেলি।
আশ্চর্য এক যান ছুটে নিয়ে চলে চল্লিশের ধাপে। ভুলে যেতে এখন বড় ভাল লাগে। শুধু তোমাকে ভুলে যাব বলেই মৃত্যুকে চিনেছি এত কাছে।
তলপেটে শিরশিরে ব্যথা। স্রাবের মতো বয়ে যায় যৌবন। গভীরে সরোদের সুর। যেন কান্না চাপা দেওয়ার জন্য বৃষ্টির ব্যর্থ প্রচেষ্টা এক!
৪
সকলে গান গাইতে পারে না। কবিতা লেখে আমার মতো কিছু কাঙাল। সুর হয়ে ভাসে কাগজের নৌকারা। ছোট ছোট পা লাফিয়ে ওঠে একত্রে। জলের নিচে থকথকে পলি। মৃত মাছেরা হাততালি দেয়। লেখার ওপর ঝরে পড়ে অদৃশ্য কান্না।
মৃত ভ্রূণ নড়ে ওঠার বিস্ময় নিয়ে জন্ম পার হই। নিঃস্ব জীবনে কবিতা ছাড়া কীই বা আছে ঘোর? তুমি যখন সব
জেনেও একা করে দাও আরও, প্রতিটা ভুল
শরীরজুড়ে উল্কি আঁকে। এত আগুনে পুড়েও শুনতে পাই
বিশ্বাসের শিস। কী নৈঃশব্দ্য! কী অদ্ভুত এক মিথ!
৫
মৃত্যুর ভেতর যারা স্বপ্নকে খোঁজে তাদের পৃথিবী, কবি বলে ডাকে। আঘাতে কঠিন এক মূর্তির মতো, পেরিয়ে যায় আগুন। পলাশ ফুটলে বসন্ত, শীতে, ভাস্কর বুকে নিয়ে সুপর্ণাভাবে দীর্ঘশ্বাসে ভোলে নাভিজন্ম।
আমারও অবস্থা খানিক পুরোনো হ্যারিকেনের মতো।
সারা গায়ে কস্মিলকালের ভুসোকালি অথচ আগুন
নিভতে চায় না যেন। খড়ের ছাউনি মেলা কুঁড়েঘরে টাঙিয়ে দিই ছায়ার কঙ্কাল। ঘাড়ে চেপে বসে নাছোড়বান্দা ভূত। শহরের প্রতিটা হোটেল আমাদের ঘর। পিছুটানহীন
খোলা জানলায় অ্যাসট্রের ওপর জ্বলন্ত দুটো আঙুল…
তুমিও জানো, ভাস্কর আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে আবার।
শহরের মারপ্যাঁচ ভুলে বৃষ্টির রাস্তা দেখিয়েছে কলকাতায়।
তোমার ভেতর যে শীত কঠিন হয়ে জমেছে, তাতে তাপ রেখে দেখেছি, গলেনি। যত ভালবেসেছ তত আঘাতে সাজিয়েছ চিত্রপট। মৃত্যুকে দেখেছি প্রতিদিন আমারই শরীরে জায়গা করে নিতে। আমিও খুলে দিয়েছি সমস্ত গিঁট স্বেচ্ছায় মৃত্যুপিয়াসী হয়ে!