Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

একটা ডাকে না-দেওয়া পোস্টকার্ড

হঠাৎ সেদিন কোন এক বইয়ের ফাঁকে একটা পোস্টকার্ড পেলাম। আমারই লেখা। লিখেছিলাম ১২ জানুযারি ২০০৪-এ। আমার বর্তমান ঠিকানা থেকে (EE 108/7 সল্ট লেক/কলকাতা 700 091 [2359 3468])। শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীতে শ্রীমতী চামেলি বাগ-কে। এই ছিল পোস্টকার্ডের বয়ান :

চামেলিদি,

এক্ষুনি যে-খবর শুনলাম তাতে মন খুব স্তব্ধ হয়ে গেল। অনেকদিন দেখা হয়নি বিনায়কের সঙ্গে, শুনেছিলাম শরীর ভালো নেই, কিন্তু এতটা যে খারাপ তা বুঝতে পারিনি। নিঃসঙ্গতাকে বিনায়ক মানিয়ে নিয়েছিল এ-ই জানতাম। তাছাড়া ওর চরিত্রে চমৎকার স্থিতির লক্ষণ ছিল। কখনও উত্তেজিত হত না, আবেগকে প্রশ্রয় দিত না। একসময় এত নিকট ছিলাম যে ওর স্বভাবের স্পর্শে আনন্দ পেতাম। সেইসব দিন এখন সত্যিই ‘অলীক’। মণি কোথায় আছে জানি না, বলদেবেরও কোনো খবর রাখিনি (যে-কয়েকবার দেখা হয়েছে তা বিনায়কের থিয়েটার রোডের বাড়িতেই), বাচ্চু তো শুনলাম এবার আসেওনি। আমার শোক আপনাকে ছাড়া আর কাকে জানাব?

অমিয়

এই পোস্টকার্ড কেন ডাকে দেওয়া হয়নি বুঝতে পারছি না। ভুলে গিয়েছিলাম? কিন্তু ঊনিশ বছর আগে তো এখনকার মতো ভুলো ছিলাম না! তাহলে কি ইচ্ছে করেই দিইনি? ভেবেছিলাম, এই কথাগুলো আসলে নিজেকেই বলা? বিনায়কের দিদিকে শোক জ্ঞাপন করতে হলে তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। আর তা তক্ষুনি করবার অবকাশ ছিল না বলেই কি এক চিঠির কথা ভেবেছিলাম? পরে যখন কোনো ‘কাজে’ শান্তিনিকেতন গেছি, তখন বন্ধুবিয়োগের বেদনা বয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছি। ([পোস্টকার্ডে উল্লিখিত] বিনায়কের সবচেয়ে ছোটো বোন মণির সঙ্গে দেখা হয়েছে তারও পরে। ছোটো ভাই বলদেবের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই হয়নি।)

কিছুদিন আগে কোভিডকালীন ‘আরেক রকম’-এ এক “পূর্বপল্লী ১০৪’’ শীর্ষক নিবন্ধ বেরোয় আমার, যাতে আমার বন্ধু বিনায়ক বসুর কথা অনেকটাই আছে। আছে আমার অন্য বন্ধু, বিনায়কের ভগ্নীপতি, বাচ্চু রায়ের কথাও। বস্তুত, আমাদের তিনজনের শান্তিনিকেতনে তথা পূর্বপল্লীর ১০৪ নম্বর প্লটের বাড়িতে পৌঁছে, সত্তরের দশকের সাপ্তাহান্তিক আড্ডাই ওই নিবন্ধের মুখ্য বিষয়। যখন লিখছি তখন বিনায়ক-বাচ্চু দুজনেই গত। তাঁদের চলে যাওয়ার অনেক আগেকার এক ঐকান্তিক অভিজ্ঞতার স্মৃতিই আমাকে ওই লেখায় প্রবৃত্ত করেছিল।

আর এই ডাকে না-দেওয়া পোস্টকার্ড, যা আমি আবিষ্কার করেছি এই ক’দিন আগে, ২০০৪-এর ১২ জানুয়ারির অব্যবহিত পূর্বের এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী। অভিজ্ঞতাটি এক একদা-ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মৃত্যুসংবাদ শোনার। তাৎকালিক। অক্ষর যদি সত্যিই কোনো সত্তার দুয়ার খুলে দিতে পারে, তাহলে এই পোস্টকার্ডের মর্মে আছে এক শোক যা কোনো স্মৃতিচারণে থাকে না। থাকবার কথাও নয়, কারণ স্মৃতি সততই সুখের। (এই নামে একটা বইও আছে প্রতিভা বসুর।) নাকি, তা এক সরলীকরণ যা স্মৃতির সকল মাত্রার খোঁজ রাখে না? মনোবিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন। বিষ্ণু দে-র কাছে যখন স্মৃতি ও সত্তা (ভবিষ্যৎকে আপাতত দূরে রাখছি) পরম্পর হয়ে ওঠে, তখন কি কোনো মনোবৈজ্ঞানিক প্রেরণা কাজ করে যায়?

অন্তত একটা কথা বোধহয় আমাকে মনে রাখতেই হয় যে, ওই দুই অক্ষর-বৃত্তেরই কর্তা আমি। তাৎকালিকতা যেমন আমার তেমনি অন্তরিত চারণও আমার। দুয়ের চরিত্র আলাদা হলেও আমার বিহনে তাদের উৎপত্তি হত না। অতএব তারা থাক একে অন্যের সম্পূরক হয়ে। কেউ যদি আমার ‘‘পূর্বপল্লী ১০৪’’ পড়ে থাকেন, তাঁকে এই “একটা ডাকে না-দেওয়া পোস্টকার্ড’’-ও পড়বার অনুরোধ জানাই।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

আরও পড়ুন…

বিশেষ নিবন্ধ: খালের শহর

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Siddhartha Majumdar
Siddhartha Majumdar
1 year ago

চমৎকার লেখা। খুব ভালো লাগল।… কিন্তু, ” পূর্বপল্লী ১০৪” এখানে পড়া গেলে, ভালো হত। ওই পত্রিকার অনুমতি সাপেক্ষে যদি এখানে আবার প্রকাশ করা হলে ভালো হত।

Recent Posts

কাজী তানভীর হোসেন

ধানমন্ডিতে পলাশী, ৫-ই আগস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কয়েকদিন ধরে যা ঘটেছিল, তা শুরু থেকেই গণআন্দোলনের চরিত্র হারিয়ে একটা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পরিণত হয়েছিল। আজ আমরা কার্যক্রম দেখেই চিনে যাই ঘটনাটি কারা ঘটাচ্ছে। আগুন আর অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি করার স্বভাব রয়েছে বিএনপি-জামাত ও রোহিঙ্গাদের। তারা যুক্তিবুদ্ধির তোয়াক্কা করে না।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য: কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

আমরা বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিলাম, যাঁকে খুব সঙ্গত কারণেই ‘পশ্চিমবঙ্গের রূপকার’ বলা হয়। পেয়েছি প্রফুল্লচন্দ্র সেন ও অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো স্বার্থত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী। এবং জ্যোতি বসুর মতো সম্ভ্রান্ত, বিজ্ঞ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখর কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ। কিন্তু তাঁদের সকলের চেয়ে অধিক ছিলেন বুদ্ধদেব। কেননা তাঁর মতো সংস্কৃতিমনা, দেশবিদেশের শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র নাটক সম্পর্কে সর্বদা অবহিত, এককথায় এক আধুনিক বিশ্বনাগরিক মানুষ পাইনি। এখানেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনন্যতা।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে/ জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে/ চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে/ যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ/ রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে/ শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ/ তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা/ অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মার ব্রতকথা

বিশ্বকর্মা পুজোতেও কেউ কেউ বিশ্বকর্মার ব্রত পালন করে থাকেন। এমনিতে বিশ্বকর্মা যেহেতু স্থাপত্য ও কারিগরির দেবতা, তাই কলকারখানাতেই এই দেবতার পুজো হয়ে থাকে। সেখানে ব্রতকথার স্থান নেই। আবার কোন অলৌকিক কারণে এবং কবে থেকে যে এদিন ঘুড়িখেলার চল হয়েছে জানা নেই। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শহর ও গ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ও নানা আকৃতির ঘুড়িতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার কখনও বাংলাদেশে পা রাখেননি!

ভাবতে অবাক লাগে, ‘৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ উত্তমকুমারকে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। টালিগঞ্জের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছিলেন সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে। অন্যদিকে ববিতা, অলিভিয়া ও আরও কেউ কেউ টলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদার ও পরে গৌতম ঘোষ ছবি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশে এসে, কিন্তু উত্তমকুমারকে আহ্বান করার অবকাশ হয়নি এখানকার ছবি-করিয়েদের।

Read More »
নন্দিনী কর চন্দ

স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্দরমহলে: কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি

বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এমন কয়েকজন মহিলা কবির কথা আলোচনা করব, যাঁরা তাঁদের কাব্যপ্রতিভার দ্যুতিতে বাংলা কাব্যের ধারাকে উজ্জ্বল ও বেগবান করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণকামিনী দাসী, মোক্ষদায়িনী দেবী, প্রসন্নময়ী দেবী, লজ্জাবতী বসু, জগন্মোহিনী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, হিরণ্ময়ী দেবী, অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, সুরবালা ঘোষ প্রমুখ।

Read More »