বাংলা ও বাঙালি
জোরে বইছে উত্তুরে হাওয়া,
কিছু কথা, কিছু শব্দ আজ হারিয়ে যাচ্ছে নাকি?
বাজারের থলে আর মাছের আঁশের নীচে,
ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝি নীরবে প্রাচীন কথামালা।
পাড়ার কুকুরগুলো কনকনে শীতের রাতে
আজকাল আর ঘেউ ঘেউ করতে চায় না।
বুড়ো কুকুরের মেরুদণ্ড বেঁকে গেছে আজ, আর
ছানাপোনাগুলো কুঁই কুঁই করে বিজাতীয় সুরে।
বিশ্বভারতীর বিশ্বায়ন হয়ে গেছে আজকাল
বাউলের একতারা তুলছে নতুন সুর;
বাংলার হযবরল বদলেছে ভোল,
একুশের স্বপ্নগুলো আজ একুশে আইন হয়ে গেছে।
গঙ্গানিকা বেয়ে ভেসে চলেছে গলিত শবদেহ
মাড়াশাল্মলীর তলে পিতামহ রোজ কাঁদে।
***
এক আর্তি
আমি তার মৃত্যুর অপেক্ষা করছি
রুগ্নদেহ অসুস্থ বিকারগ্রস্থ
তার শরীর বলহীন
আমি এবং আরও কয়েকজন সজ্জন মিলে
তার চিকিৎসা করাতে করাতে
হতোদ্যম আজ
কত আর পাচন গেলাব
কতবার সুই ফোটাব ওর দুর্বল শরীরে
আজকাল খোঁজখবর নেবার লোক কমে গেছে
তাই আজ ওকে শেষ বাঁচাবার
শেষ চেষ্টা করব আমরা
কোরামিন দেব, আইসিইউ-তে রাখব
শেষচেষ্টা তো করতে হবে বাংলা ভাষাকে বাঁচাবার।
***
বর্ণপরিচয়
বর্ণপরিচয় পড়তে পড়তে আমি
কয়েকটা শব্দে আটকে গেলাম,
মানে বুঝতে প্রচণ্ড অসুবিধা হচ্ছিল আমার
উল্টো করে দেখলাম এটা নুতন মুদ্রণ।
ষাট বছর আগের ছাপা কপি ছিল আমার দেরাজে
বের করে দেখলাম,
নিষ্ঠুরতা, ধর্মনিরপেক্ষ, মৌলবাদী
হিন্দুত্ব, হিজাব, দাড়ি, টিকি, তিলক,
এই শব্দগুলো ছাপা ছিল না কপিতে।
বীরসিংহের সিংহবিক্রম বীর ঈশ্বর হয়তো
এই শব্দগুলো জানতেন না, তাই লেখেননি।
কে বা কারা এই শব্দগুলো ঢোকাল কপিতে?
আজ এই নূতন বাংলা শব্দগুলো
আমাকে নূতন করে ভাবাচ্ছে।
‘একুশের স্বপ্নগুলো আজ একুশে আইন হয়ে গেছে’/ ‘কতবার সুই ফোটাব ওর দুর্বল শরীরে’/ ‘মানে বুঝতে প্রচন্ড অসুবিধে হচ্ছিল আমার, উল্টো করে দেখলাম এটা নুতন মুদ্রণ’ …. বর্ণমালার দহন দারুণ ফুটেছে!