Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ছোটগল্প: আরও দূর অন্ধকারে

কি ঞ্জ ল  রা য় চৌ ধু রী

মৃদুল স্যার আমাদের বাংলা পড়াতেন। কবিতাপাগল মানুষ। আমরা আড়ালে বলতাম জীবন খ্যাপা। এক পিস ছেঁড়া জীবনানন্দ সারাক্ষণ তাঁর ঝোলাব্যাগে থাকত। ফাঁক পেলেই সেখান থেকে কবিতা পড়ে শোনাতেন।

‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা/ মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য…’ বলতে বলতে কেমন যেন উদাস হয়ে যেতেন মৃদুল স্যার। চোখদুটো ভেসে যেত জানলার বাইরে।

খুব বেশিকিছু ওঁর সম্পর্কে জানা ছিল না। তবে দুটো কথা স্যারদের মুখ থেকে টিচার্স রুমের দেওয়াল থেকে প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে কেমন করে যেন আমাদের কানেও এসে পৌঁছেছিল। স্ত্রী প্যারালাইজড। ছোটছেলেটা পেটের বা অন্য কিছুর তাগিদে বহুদিন ঘরছাড়া। সব মিলিয়ে মানুষটা বড় অসুখী।

অসুখী মানুষের গলার আওয়াজে বুঝি ওরকম আবেগ থকথক করে! গলাটা যখন চড়া থেকে ধীরে ধীরে নেমে আসত খাদে, বলতেন, ‘আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন—’; মনে হত স্যার কোথাও একটা পালিয়ে গিয়ে স্বস্তির শ্বাস নিতে চাইছেন।

থার্ড বেঞ্চে পাশাপাশি আমরা তিনজন। অর্ণব, পিপান আর আমি। পিপান কী যে খুঁজে পেয়েছিল ওই কবিতাটার মধ্যে! শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছিল প্রত্যেকটা লাইন। চান্স পেলেই উঠে দাঁড়িয়ে নাটুকে ঢঙে বিড়বিড় করত, ‘সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে…’, আর কী জানি সব কোথায় না কোথায়! ভূগোলে বরাবরের কাঁচা আমি, অর্ণবের কানে কানে ফিসফিস করে জানতে চাইতাম, ‘হ্যাঁরে, নাটোর মানে কি আমাদের তিলজলার নাটোর পার্ক? যেখানে খুব বড় করে দুর্গাপুজো হয়?’

অর্ণব মুচকি মুচকি হাসত। যেন কত কিছু বুঝে ফেলেছে। অথচ বাইরে এমন একটা ভাব— যেন কবিতা-টবিতা ওর বিশেষ পোষায় না। খুব চালাক। আমরা যদি সব জানার জন্য চেপে ধরি।

আমার কেন জানি না মনে হত, নিশ্চয়ই আমাদের চারপাশে কোথাও না-কোথাও বিশেষ একজন কেউ আছেই, যাকে দেখলে মুগ্ধ হয়ে মাথাটাথা ঘুরে যায়। আমার চোখে সে কি ধরা দেবে কোনওদিন?

একদিন সকলকে চমকে দিল পিপান। সে নাকি বনলতাকে দেখেছে, মানে খুঁজে পেয়েছে আর কী! শুনে অর্ণবের ভুরুতে তিনটে ভাঁজ। আমি সটান খাড়া। —‘কোথায়?’ সেটা পিপান কিছুতেই বলতে চায় না। অনেক জোর করতে শেষমেশ রহস্য ভেঙে জানায়— আমাদের স্কুল বিল্ডিংয়ের পেছনে একেবারে দেয়ালের গা ঘেঁষে কঙ্কণা অ্যাপার্টমেন্ট, আমাদের ইলেভেনের ক্লাসরুম থেকে চারতলার ব্যালকনিটা পরিষ্কার চোখে পড়ে, সেখানেই দেখতে পেয়েছে তাকে। পিপানের বর্ণনা অনুযায়ী— ছিপছিপে দেহলতা। পরনে আশমানি রঙের হাউসকোট। সকাল সাড়ে দশটার ঝলমলে রোদ্দুর গায়ে মেখে টবের ফুলগাছে জল ছড়াচ্ছিল। ঘন কালো চুলের ঢল নেমে ঢেকে দিয়েছিল মুখের একপাশ। ঝলক দেখা। তাতেই মুগ্ধ পিপান। ভুলতেই পারছিল না! আর আমরাও ওর বর্ণনা শুনে আন্দাজ করতে পারছিলাম— কেন গোটা ক্লাসের মধ্যে বাংলায় পিপান হাইয়েস্ট নম্বর পায়।

তারপর থেকেই প্রতিদিন উশখুশ করি। যদি একবার দেখতে পাই! উঁকিঝুঁকি তো কম মারিনি। কিন্তু কোথায় কে? দেখি বারান্দায় একটা ভিজে ম্যাক্সি আর ফিনফিনে নেটের ব্রা শুকোচ্ছে। ধুস্!

একটা আফসোস কুরে কুরে খেত। খানিকটা অভিমান। —তুই দেখতে পাস, অথচ আমার চোখে পড়ে না! কেন? পিপান ভুরু কুঁচকে বলেছিল, আমার নাকি নীচু নজর।

অবশ্য শুধু ও একা নয়, আমার যে নীচু নজর সেটা ক’দিন আগে সবার কাছেই প্রমাণ হয়ে গেছে। কারণ কিছুই নয়, একটা ফিল্মি ম্যাগাজিনের ছেঁড়া পাতা। কন্ডোমের বিজ্ঞাপন। অসতর্ক মুহূর্তে আমার বইখাতার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছিল হঠাৎ। আসলে ওটা আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম সময়-সুযোগ বুঝে ফেলে দেব বলেই। তার আগেই ক্লাস টিচারের সামনে নির্লজ্জের মতো ধরা দিয়ে দিল ছবিটা। আমি ঘেমেটেমে লজ্জায় লাল। সারা ক্লাসে চাপা হইহই। চোখ টেপাটেপি। হেডস্যারের হাতে-পায়ে ধরে কোনওমতে টিসি দেওয়া থেকে রেহাই পাই। ছুটির পর বেরিয়ে কাগজখানা কুচিয়ে ফেলে দিই নর্দমায়।

এরই মধ্যে একদিন কঙ্কণা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কিছু হোমরাচোমরা রেসিডেন্টস আমাদের স্কুলে এসে শাসানি দিয়ে গেলেন— ক্লাসরুমের জানালা থেকে কয়েকটা ছেলে নাকি ওদের চারতলার ব্যালকনির দিকে বিচ্ছিরিভাবে তাকিয়ে থাকে। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অর্ণব প্রথম থেকেই এসব ব্যাপারে নির্বিকার। তাছাড়া সিরিয়াস ছেলে বলে ক্লাসে ওর একটা রেকর্ড আছে। পিপানটা তো মার্কামারা ভ্যাবলাকান্ত, ‘চুল তার কবেকার’ ছাড়া যেন কিছুই বোঝে না। সুতরাং শীর্ষে উঠে এল আমার নাম। ব্যস, আর যাই কোথায়? কঙ্কণার হাইপ্রোফাইল বাবুবিবিদের একতরফা চোটপাট। হেডস্যারের ধমকধামক, ফের একচোট টিসি দেওয়ার হুমকি। …যাহ্ শালা! বনলতা সেনকে দেখতে চাওয়া এতই কি অপরাধ?

সেদিন শাস্তিখাওয়া মন নিয়ে জেলফেরত কয়েদির মতো বাড়ি ফিরছিলাম একাই। মেজাজ টঙে। কিশোরীলালের পান দোকানে সিগারেট ধরাতে যাই। উল্টোদিকে তাকাতে হাত থেকে আগুন পড়ে যায়। দেওয়ালে সাঁটানো চার-চারটে মাঝারি মাপের পোস্টার। ম্যাগাজিনে দেখা সেই কন্ডোমের বিজ্ঞাপনটা! —বেস কালারে ঝিম অন্ধকার… অন্ধকারে কন্ডোম-রানি সানি লিওনি। ছত্তিরিশি বম্বব্লাস্টিং যৌবন তার আলতো ঘিরে ফিনফিনে টপ… ঠোঁটের কাছে লাল স্ট্রবেরি… চোখ কুঁচকে বিচ্ছুর মতো হাসছে। তখন অবশ্য সানি লিওনিকে অতটা চিনতাম না। তখন সে নিছক এক ছবির মডেল। যে কিনা ওইসব বিচ্ছিরি বিজ্ঞাপন করে। যেসব ছবির দিকে কিনা আড়চোখে তাকাতে হয়। সেসব ছবি যার ব্যাগে থাকে তার কিনা নীচু নজর। সেই নজর বনলতা সেনকে দেখতে পাবে কী করে! ভীষণ রাগ হয়। ছিঁড়ে ফেলতে গেলাম পোস্টারগুলো। কী জম্পেশ আঠা মাইরি! ছাড়ানোই গেল না!

এরপর, ঠিক পরপর দুটো ঘটনা ঘটল। দুটো ঘটনাই ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে গেল আমাদের। প্রথমত, হঠাৎ একদিন কাউকে কিছু না বলে নিজের ঝোলাব্যাগ আর কবিতার বইসমেত উধাও হয়ে গেলেন মৃদুল স্যার। একেবারে নিখোঁজ। কিছুদিন টিচার্স রুমে শলাপরামর্শ। একটা থমথমে ভাব। ছেলেদের চোখে চোখে প্রশ্ন, চাপা কৌতূহল।

দ্বিতীয় ঘটনাটাও আমাদের স্কুলবাড়ির পাশেই। কঙ্কণা অ্যাপার্টমেন্টের গেটে একদিন দুপুরে উপচে পড়ল স্থানীয় লোকের ভিড়। বাইরে পুলিশের জিপ। ছুটির পর কাছাকাছি গিয়ে আমরা যখন পরিস্থিতির আঁচ নেওয়ার চেষ্টা করছি, ভিড় তখন অনেকটাই পাতলা। চারতলার ব্যালকনিটা খাঁ-খাঁ করছিল। বডি পোস্টমর্টেমে চালান করে চারতলাটা সিল করে দিয়ে গেল পুলিশ। কানাঘুষো শুনছিলাম— এলাকার লোক অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটাকে দেখতে পেত না চট করে। তবে সবাই আলোচনা করত, সেখানে তলে তলে দিনের পর দিন রহস্যজনক একটা কিছু ঘটে চলেছে। শেষে কাল শেষরাতে পুলিশের জিপ এসে যখন পাড়া জাগিয়ে তুলল, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। রক্তাক্ত বডিটা স্ট্রেচারে করে নামানোর সময় অনেকেই দেখবার চেষ্টা করেছিল, যদি মুখের ঢাকা কাপড়টা একবার হলেও সরে যায়! সে আশা কারওরই পূরণ হল না। মনে হচ্ছিল আমাদের কানের মধ্যে রাজ্যের লোকজন ফিসফিস করে অ্যাসিড ঢেলে যাচ্ছে। মোড়ের অটোস্ট্যান্ডে জটলা। একজন আর-একজনকে জানাচ্ছিল, পেটি পেটি বিয়ারের খালি বোতল আর প্যাকেট প্যাকেট কন্ডোম বেরিয়েছে ঘর থেকে… মানে কেসটা বুঝতে পারছিস…

কেউ বলল সুইসাইড। একজন বলল, মার্ডারও হতে পারে। বিল্ডিংয়ের আশেপাশে তখনও আমাদের ঘুরঘুর করতে দেখে স্টেশনারি শপের বিনয়কাকু বললেন, ‘তোমরা ছেলেমানুষ, এসব খবরে দরকার কী? ইস্কুল ছুটি হয়ে গেছে। বাড়ির ছেলে ভালয় ভালয় বাড়ি ফিরে যাও। আর দাঁড়িয়ো না। ছিঃ! কী দিনকালই না পড়ল!’

কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কেন হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার বনলতা সেন, যাকে কখনও চোখে দেখতে পেলাম না, সে এখন লাশকাটা ঘরে…

পিপান কেমন যেন মুচড়ে গিয়েছে ভেতরে ভেতরে। অটোস্ট্যান্ড পেরিয়ে বন্ধ চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে ধপ স্কুলব্যাগটা নামিয়ে উবু হয়ে বসে আপনমনেই বিড়বিড় করে বলল, ‘ষড়যন্ত্র, সব ষড়যন্ত্র। বনলতা সেন এমন হতেই পারে না…’

সে রাতে স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নে সানি লিওনি। খয়েরি ঠোঁটের ওপর রসালো জিভটা লোলচাচ্ছে। মাকড়সা যেমন করে লালারস দিয়ে জাল ছড়ায়, তেমনিভাবে। তন্তুর মতো সূক্ষ্ম একটা জাল। বাড়িঘর-ফ্লাইওভার সমেত গোটা শহরটা আটকা পড়ে গেছে সেই জালে। সুনসান মধ্যরাত। ঝাপসা ঝুলবন্দি সেই পথে কেউ কোথাও নেই। হঠাৎ ফাঁকা রাস্তায় দেখা দিলেন মৃদুল স্যার। আকাশের দিকে তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছেন। উশকোখুশকো চুল। হাতে উঠে এসেছে চকচকে একটা ধারালো ছুরি। উল্টোদিকের ফুটপাত থেকে চোখ বুজে হেঁটে আসছে পিপান। হাতে একটা ছেঁড়া চটিবই। চোখবোজা অবস্থাতেই হাঁটতে হাঁটতে বিড়বিড় করছে, ছেলেবেলায় নামতা মুখস্থের মতো… আর সেই বিড়বিড়ানি যান্ত্রিক স্বর হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে ফাঁকা রাস্তায়— ‘বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে… ধূসর ধূসর জগতে… সেখানে ছিলাম আমি… আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে… আরও দূর অন্ধকারে…’

দূরে নিয়নবাতির আলো ঘিরে আঠালো আস্তরণের জন্য সবকিছুই কেমন যেন ঘোলাটে জলছবির মতো দেখায়। পিপানের ধ্বনিত কণ্ঠস্বর অনুসরণ করে করেই হাঁটার গতি বাড়াচ্ছেন মৃদুল স্যার। কাকে যেন খুঁজছেন! কাকে যেন… ফ্লাইওভারের ওপারেই আকাশজোড়া ব্যালকনি। ব্যালকনিতে বিশাল হোর্ডিং। তাতে শরীর এলিয়ে ঠোঁট অল্প ফাঁক করে রয়েছে সানি লিওনি!

ছুরিসমেত হাতটা ধীরে ধীরে সেদিকেই এগোচ্ছে। আমার কানের কাছে লাখ লাখ পিপানের কণ্ঠস্বর কোরাস তুলেছে— ‘থাকে শুধু… থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার…’

ধড়ফড় করে উঠে বসলাম বিছানায়। সারা গা ঘেমে চপচপে। দু-হাত চ্যাটচ্যাটে রক্তে মাখামাখি। ঘরে অন্ধকার, বাইরেও। যেন গোটা শহরে একসাথে অ্যাট এ টাইম লোডশেডিং হয়ে গেছে।

একটা স্বপ্নের ভেতর থেকে আর একটা স্বপ্নের ভেতরে ঢুকে পড়ছি আমি…

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »