সু দী প জো য়া র দা র
সকালবেলায় খবরের কাগজটা দেখে একটু চমকেই গেলেন অঘোরবাবু। নামকরা কাগজ, এত গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে খবরটা! এতটা সত্যিই আশা করেননি।
দিনকয়েক আগে ফোন এসেছিল, পুরস্কারের খবর নিয়ে। পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে খবরটা বাইরে বলতে নিষেধ করা হয়েছিল। কারণ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা তখনও হয়নি। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়েছে। আর আজই এই খবর কাগজে।
পুরস্কার পেলে কার না ভাল লাগে? আর সে পুরস্কারের খবর নামী কাগজে ছাপা হলে তো আরও! অঘোরবাবু বাড়িতে ছাড়া আর কোথাও খবরটা গতকাল অব্দি শেয়ার করেননি। তবু এক ছাত্র কোত্থেকে জেনে সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটা গতকাল দিয়েছিল। সেখানে কমেন্টে বেশকিছু অভিনন্দনবার্তা এসেছে দেখেছিলেন রাতে। কিন্তু এবার কাগজে খবরটা ছাপা হতেই মোবাইলে অভিনন্দনের মেসেজ আসতে লাগল।
এত মেসেজের উত্তর দেওয়া যায় না। তবু দু’একজন মানুষ যাঁরা মানেও অনেক বড় এবং যাঁদের আশাও করেননি ইনবক্সে, তাঁদের ধন্যবাদ না দিলে চলে না। সে ভেবেই দু’একজনকে ধন্যবাদ জানালেন। স্কুলের প্রেসিডেন্টের মেসেজটা বারে বারেই চলে আসছে স্ক্রিন উপরনিচ করতে করতে। উত্তর কি দেবেন? যদিও প্রেসিডেন্টকে আশা করেননি, আর পদমর্যাদায় তিনি নেহাত ছোটও নন, গুণে না হলেও প্রতাপে ও হুঙ্কারে যথেষ্ট কেউকেটাও, তবু অঘোরবাবুর ইচ্ছে হচ্ছিল না উত্তর দিতে। তবু শেষোক্ত কারণেই হয়তো একই বয়ানে লিখেই দিলেন— ‘অভিনন্দন জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’ কিন্তু পাঠানোর আগে বয়ানটাতে একটু দাঁড়ালেন অঘোরবাবু। একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
‘আপনাকে’-টা কেটে বয়ানটাকে একটু ছেঁটে দিলেন। তারপর আঙুল ছোঁয়ালেন পাঠানোর ঊর্ধ্বমুখী তিরটায়।
স্কুলে গিয়ে দেখলেন বেশ হইহই ব্যাপার। ছাত্র-শিক্ষক অনেকেই কাছে এসে অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছে। অঘোরবাবু লিখছেন কম দিন নয়, যাঁরা অভিনন্দন জানাচ্ছে, তাদের কাছেও তাঁর লেখালেখির ব্যাপারটা অজানা নয়, কিন্তু নামী পুরস্কার অঘোরবাবুকে যেন হঠাৎই দামি করে তুলেছে।
এরই মধ্যে এক-আধ জন যে চোনা মেশাল না, তা নয়। যেমন ইতিহাসের সাত্যকি হাজরা অঘোরবাবুকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল— ‘পুরস্কার-টুরস্কার আজকাল সব চ্যানেলের ব্যাপার।’ বর্ষীয়ান শিক্ষক আমিনুল সাহেব এতকাল যত না শিক্ষা ছড়িয়েছেন তার চেয়ে বেশি ছড়িয়েছেন কলিগদের নামে কুৎসা। তাঁর ঈর্ষাকাতরতা রীতিমতো পুরস্কারের দাবি রাখে। আমিনুল সাহেব সম্ভবত পুরস্কারের অর্থমূল্যটা জানেন না। তাই সাত্যকি হাজরার কথার রেশ ধরে বলে উঠলেন— ‘আজকাল খবরের কাগজগুলোও একেবারে বিলো স্ট্যান্ডার্ড হয়েছে। ছুটকোছাটকা পুরস্কারের খবরও কাগজে জায়গা করে নিচ্ছে।’
এসব কথা খুব বেশি আমল পেল না। বেশিরভাগ জনই যেখানে অঘোরবাবুর পুরস্কার প্রাপ্তিতে আনন্দিত, তখন এসব কথার দূষণ কতটা আর ছড়াবে! তবে চ্যানেলের ব্যাপারটা এতকাল অঘোরবাবুও কিছুটা মানতেন। কিন্তু বেমক্কা ওর ‘শুকনো ফুলের মালা’ গল্পগ্রন্থটি পুরস্কার পেয়ে যাওয়ায় বুঝতে পারছেন চ্যানেলের ব্যাপারটা সব জায়গায় সত্যি নয়।
হঠাৎ করে স্কুলে আলাদা মর্যাদা পেয়ে যাওয়ায় ভালই লাগছে। লেখালেখি করছেন কম দিন তো নয়! যখন কলেজের ছাত্র তখনই অঘোরবাবুর লেখা ছাপা হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। তারপর স্কুলে ঢুকলেন। লেখা এবার চলতে লাগল জোরকদমে। কিন্তু এর জন্য আলাদা কোনও মর্যাদা স্কুলে ছিল না। বরং এটা সকলের অভ্যেসে এসে গিয়েছিল, যেভাবে ট্যাক্সের কাজে দক্ষ হিসেবে তড়িৎ দত্ত, ছেলেদের দিয়ে নাটক করানোয় পারঙ্গম হিসেবে বলদেব মিস্ত্রি, আঁকা ও ক্রাফটের চমৎকার কাজ জানা হিসেবে সাইমুল বাশার সকলের অভ্যেসে এসে সাধারণ হয়ে গিয়েছেন।
স্টাফরুমে অঘোরবাবু বসেছিলেন রোজকার মতোই। পরের পিরিয়ডে ক্লাস আছে। এইট এ-তে সাপ্লিমেন্টারি দিয়েছেন এএইচএম। আজ এমনিতেই পাঁচটা ক্লাস। সাপ্লিমেন্টারি করলে ছ’টা হবে। এই সাতান্ন বছর বয়সে ছ’টা ক্লাস টানা বেশ কঠিন। তবে মন আজ প্রফুল্ল। তাই খুব একটা চাপ মনে হচ্ছে না।
ফাঁকা থাকলে মোবাইলে ইউটিউব খুলে কানে হেডফোন গুঁজে গান শোনেন অঘোরবাবু। আজও গান শুনতে কানে হেডফোন লাগালেন। ইউটিউবে কীর্তন শুনতে আজকাল বেশ ভাল লাগে। ইউটিউবে রাধারাণী, ছবি বন্দ্যোপাধ্যায় সার্চ দিলেই বেরিয়ে আসে। এককালে এঁদের গান কত শুনেছেন! এখন আবার নতুন করে ভাল লাগছে। আজ অবশ্য একটা নতুন ছেলের গান শুনতে চাইলেন। নামটা বেশ অভিনব। দুটো ফুলের নাম দিয়ে। ভিডিয়োটায় ক্লিক দিয়ে চোখ বুঝলেন অঘোরবাবু। খুব সুন্দর কণ্ঠ তো!
—‘স্যর, অভিনন্দন!’ একগাল হাসি নিয়ে এসে দাঁড়ালেন স্কুলের প্রেসিডেন্ট। অঘোরবাবু কান থেকে জ্যাক খুললেন।
—‘ধন্যবাদ।’ আলতো হাসলেন অঘোরবাবু।
—‘আপনি যে এত বড় মাপের লেখক, জানতামই না। কবে যেতে হচ্ছে দিল্লি?’ চোখেমুখে একটা শ্রদ্ধার ভাব খেলা করে গেল প্রেসিডেন্টের। আসল না নকল?
মনে পড়ল, সেবার চন্দননগরে সাহিত্য সম্মেলনে গল্পপাঠের চিঠি পেয়েও যাওয়া হয়নি অঘোরবাবুর। কারণ উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার গার্ড পড়েছিল সেদিনটায়। স্কুলে অনেক স্টাফ, হলেই বা ইংরেজি, ছাড়াই যেত অঘোরবাবুকে। কিন্তু অঘোরবাবুর অনুরোধ রাখেননি হেড। আর অনুরোধ করতে গেলে পাশে বসা এই প্রেসিডেন্ট বলেছিল— ‘ওসব ফালতু কাজের জন্য ছুটি দেওয়া যাবে না!’
প্রেসিডেন্টের শ্রদ্ধা নিয়ে তাই যথেষ্ট সন্দেহ আছে অঘোরবাবুর। তবে একে শিক্ষক, তায় ভদ্রলোক, সৌজন্য বজায় রাখতেই হয়। তাই শান্ত গলায় বললেন— ‘জানি না। ডেট তো বলেনি কিছু। তবে মনে হয় এই মাসেই!’
—‘এত বড় একটা পুরস্কার, ভাবছি ওখানে যাওয়ার আগে স্কুলে আপনাকে একটা সংবর্ধনা দেব আমরা!’
প্রেসিডেন্টের মুখে এই কথা শুনে অঘোরবাবু হা হা করে উঠলেন। ‘না না ওসব আর কেন? আপনারা সবাই এসে অভিনন্দন জানালেন। এই তো বেশ!’
পুরস্কার নিয়ে বাড়াবাড়ি অঘোরবাবুর একটুও পছন্দ নয়। আর তাছাড়া পুরস্কার দিয়ে লেখককে মাপা যায় না। এসব পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। আরও কত যোগ্যজন আছেন। তাঁরা এখনও এই পুরস্কার পাননি বলে কি তাঁদের কৌলিন্য কমে গেল! পুরস্কারে কৌলিন্য বাড়া যাঁরা ভাবেন ভাবুন, অঘোরবাবু ভাবতে নারাজ। আর তাই পুরস্কার পেয়ে ভাল লাগছে এর মধ্যেই ব্যাপারটায় দাঁড়ি টানতে চান।
ক্লাস শেষের ঘণ্টা বাজল। এবার ক্লাস আছে। অঘোরবাবু উঠলেন চক-ডাস্টার নেওয়ার জন্য।
—‘ক্লাস আছে এখন?’ তাকালেন প্রেসিডেন্ট।—‘আপনি বসুন। আজ আর ক্লাস করতে হবে না আপনাকে। আমি হেডস্যরকে বলে দিচ্ছি আপনার ক্লাসে অন্য কাউকে পাঠাতে!’
এবার হাসি পেল অঘোরবাবুর।
—‘আপনার খাতা কে দেখবে? ছেলের চিকিৎসার জন্য বাইরে যাচ্ছেন, যান। খাতাগুলো নিয়েই যান। সব সময়ে তো আর ডাক্তারের কাছে থাকতে হচ্ছে না!’ সেদিন এই প্রেসিডেন্টেরই ক্রূঢ় লাল চোখ দেখতে হয়েছিল তাঁকে।
আগে স্কুলে এমসি-র জন্য নির্বাচন ছিল। সেবারই প্রথম পার্টির দেওয়া পদ। নতুন পদ পেলে যা হয়। স্কুলে শিক্ষকদের ছুটি থাকলেও প্রেসিডেন্টের ছিল না। আর ছিল সব ব্যাপারেই নাক গলানো। খাতা দেখার সমস্যাটা জানিয়েছিলেন হেডমাস্টারকেই। কিন্তু কীভাবে ইনি শুনে তলব করলেন। শুরুটা আরও খারাপ ছিল।
—‘আপনার ক্লাস যদি আমি করি, আপনার বেতনের ভাগ কি দেবেন আমাকে?’
কিছু বুঝতে না পেরে অঘোরবাবু এমন অসম্মানজনক কথায় ভুরু কুঁচকে তাকিয়েছিলেন।
খোলসা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট।—‘আপনার বেতনের যেমন ভাগ হবে না, তেমনি আপনার কাজও কেউ করে দেবে না। আপনাকেই করতে হবে।’
অঘোরবাবু বুঝে গেয়েছিলেন কেন এসব কথা।—‘আমার এবার সত্যিই অসুবিধে খাতাগুলো দেখার। একদম সময় পাব না বিশ্বাস করুন!’ বিনীত গলায় বলেছিলেন অঘোরবাবু। আর তারপরেই ছিল প্রেসিডেন্টের ওই কথা!
আজ সেই প্রেসিডেন্টেরই বারণ ক্লাসে যাওয়ায়। কে শুনবে?—‘না না, থাক!’ বলে চক-ডাস্টার নিয়ে ক্লাসের জন্য বেরিয়েই গেলেন অঘোরবাবু।
কতই বা বয়স? হিসেব মত সাঁইত্রিশ-আটত্রিশ। এই হিসেব ব্যাপারটা কাল্পনিকও নয়। এই স্কুলেরই ছাত্র, বিভিন্ন ভাষণে প্রেসিডেন্ট তাঁর ফাইভে ভর্তি হওয়া আর মাধ্যমিক পাশ করার বছরটি সবার আগে পেশ করে থাকেন। সেটা ঠিকঠাক হলে বয়সটা সেরকমই হওয়ার কথা। এখানে একটা মজার ব্যাপারও লুকিয়ে আছে। অঘোরবাবু এই স্কুলে এসেছেন একুশ বছর আগে। সাল-তারিখের খতিয়ান বিচার করে অঘোরবাবু দেখেছেন যখন এই স্কুলে তিনি ঢোকেন, সে সময় প্রেসিডেন্ট ক্লাস টেনের ছাত্র। একে অঘোরবাবু্র সীমা আপার প্রাইমারি মানে ক্লাস এইট অব্দি, তার ওপর সব ছেলেকে চেনা একজন স্যারের পক্ষে কঠিন। তাই অঘোরবাবুর মনে পড়ে না স্কুলে তাঁকে দেখেছেন কিনা। কিন্তু একজন ছাত্রের তো তখনকার গুটিকয় শিক্ষককে চেনা কঠিন নয়! অথচ…! ঠিক এই কারণেই অঘোরবাবু প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ‘আপনি’ ‘তুমি’র ধন্দে পড়েন।
সাপ্লিমেন্টারি শেষ করে স্টাফরুমে এসে দেখেন প্রেসিডেন্টের পাশে স্কুলের ধূর্ত সেক্রেটারিটিও এসে জুটেছে। আবার একপ্রস্থ অভিনন্দন। দেঁতো হাসি দু’ তরফের।
—‘স্যর পুরস্কারের অর্থমূল্য নাকি পাঁচ লাখ?’ এখনও পর্যন্ত যে দিকে কেউই এমনকী অঘোরবাবুও নজর করেননি, অভিনন্দনের পরেই সেদিকটা নিয়ে সেক্রেটারি পড়েন।
—‘তাই তো জানি!’ বলে ও প্রসঙ্গে দাঁড়ি টানতে চান অঘোরবাবু।
কিন্তু সেক্রেটারি হয়তো এ নিয়ে কথা বলতেই এসেছেন। তাই ওদিকেই রয়ে যেতে চান। বলেন– ‘আপনি তো বিশাল দান জিতেছেন স্যর!’
এমন অমার্জিত কথার কী উত্তর দেবেন? তাই চুপ করে থাকেন অঘোরবাবু।
—‘আপনার কাছে রিকোয়েস্ট থাকল, আমাদের পার্টিফান্ডে কিছু টাকা দান করার! আমরা তো কত জনহিতকর কাজ করি। পঞ্চাশ-ষাট হাজার যা দেন, চিন্তা নেই সৎকাজেই ব্যয় হবে!’ সেক্রেটারি তাকান প্রেসিডেন্টের দিকে।
অভিনন্দন জানাতে আসার আসল উদ্দেশ্য এবার ধরা পড়ে। এ সময়, অঘোরবাবুকে চমকে দিয়ে প্রেসিডেন্ট বলে ওঠেন— ‘সব জায়গাতে পার্টিবাজি করতে এসো না আহাদদা! স্যর একটা টাকাও কোথাও দেবেন না!’
—‘আরে আমি জোরজার করছি কিছু? স্যর যদি ভালবেসে কিছু টাকা যদি দেন, আমাদের নিতে আপত্তি কী! সামনে পুজোয় বস্ত্র বিতরণ আছে। স্যর যা দেবেন সেটা ওখানেই লাগিয়ে দেব!’ আহাদ সেখ গালের হালকা দাড়িতে হাত বোলান।
প্রেসিডেন্ট বলে ওঠেন— ‘আমি আবার বলছি আহাদদা, সব জায়গায় পার্টিবাজি করতে এসো না। বস্ত্র বিতরণের টাকা আমরা যেভাবেই হোক যোগাড় করে নেব। স্যরের টাকা লাগবে না!’
প্রেসিডেন্টের আগের কথায় অবাক হয়েছিলেন কিন্তু প্রেসিডেন্টের ‘যেভাবেই হোক’ কথাটা কানে আটকে যায়। দু’জনে মিলে একটা তৈরি করে আসা নাটক পরিবেশন করছে মনে হয়। একজন অঘোরবাবুর দানের পক্ষে, আর একজন দানের বিপক্ষে। অঘোরবাবুর কথা আদায়ের হয়তো এ-ও এক কৌশল! এবার কি দু’জনে মিছিমিছি হাতাহাতিতে জড়াবে অঘোরবাবুকে বস্ত্র বিতরণে সামিল করতে? বলা যায় না!
হঠাৎ প্রেসিডেন্ট উঠে দাঁড়ান। —‘আহদদা যথেষ্ট হয়েছে। চলো এবার!’ বলে একরকম জোর করেই সেক্রেটারিকে নিয়ে স্টাফরুমের বাইরে চলে যান।
নাটকের মাঝখানে প্রেসিডেন্টের এমন আচরণ অঘোরবাবু আশা করেননি। মিনিট পাঁচেক পরে প্রেসিডেন্ট ফিরে আসেন একা। অঘোরবাবু টানটান হয়ে বসেন। এবার কি নাটকের দ্বিতীয় অঙ্ক? অঘোরবাবু আতঙ্কিতও হন।
প্রেসিডেন্ট অঘোরবাবুর দিকে চেয়ে বলেন— ‘স্যর আহাদদার কথায় কিছু মনে করবেন না। এইসব লোকের জন্যই দলের মুখ পুড়ছে। আমি আহাদদার হয়ে মাফ চাইছি। আর একটা কথা স্যর, আমি জানতাম না আপনি আমার স্কুল ছাড়ার বছরটিতেই এখানে এসে গিয়েছেন। আজই জেনেছি। আমি ভাল ছাত্র ছিলাম না। তাই হয়তো তখন আপনাকে নজর করা হয়ে ওঠেনি। অনেক বাজে ব্যবহার করেছি আপনার সঙ্গে। মাফ চাওয়ার মুখ নেই। শুধু একটা কথা স্যর, আমি না হয় বুঝতে পারিনি কিন্তু আপনি তো আমার বক্তব্য অনেক শুনেছেন, নিশ্চয় জানতেন আমি কবে স্কুল ছেড়েছি। তা সত্ত্বেও আপনি এতকাল আমাকে ‘আপনি’ বলে গেলেন কীভাবে?’
এখনও কি নাটকটা চলছে নাকি কথাগুলো সত্যি সত্যি প্রেসিডেন্টের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে? অঘোরবাবু ধন্দে পড়ে যান। তবে ছাত্র না হলেও কি একজন শিক্ষকের সঙ্গে অত বাজে আচরণ স্কুলের প্রেসিডেন্ট করতে পারেন?
—‘ছাত্র হলেই বা কী? প্রেসিডেন্ট পদের মর্যাদা তো দিতে হবে। তাছাড়া আপনি দিয়েই যখন শুরু তখন নতুন করে আর—’
ধন্দ কেটে অঘোরবাবুর নিজেকে সাব্যস্ত লাগে। মনে হয় এবার হয়তো সাবলীলভাবেই আপনিতে দ্বিধাহীন হবেন। অঘোরবাবু প্রেসিডেন্টের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসেন।