Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

নুশান জান্নাত চৌধুরীর কবিতা

উর্বর আঁধারে

তুমি কোথাও যাওনি তো আর
এ তোমার শুষ্কঋতুর প্রাচীর ভূমি
হাওয়া যে বইছে দেখি এখানেও— তুমি

এ তো আর আজকের কথা নয়
ঝুড়ি ঝুড়ি চূর্ণ হচ্ছ তুমি
ঢেউয়ের পরে ঢেউ
ক্ষয়ে যাচ্ছ তুমি
ভালবাসা কী তার চেয়ে তুমি জেনেছ
ভালবাসা কী নয়

তোমার রংহীন শরীরের অবশেষ থেকে
এখানে গজাতে বীজমূল
আমি কোথাও যাব না আজ থেকে

ভালবেসেছি বলেই দীর্ঘপথ
ভালবেসেছি বলেই
এতশত ঝড়ের দৃশ্য রোপণ
ফিরে আসার শপথ

ভালবাসি বলে
বেদনার উষ্ণজলে
জেগে ওঠা লতাগুল্ম আমাদের রক্তের মধ্যে দিয়ে ছোটে
এখনও সময়ের উপকূলে কখনওসখনও ভেসে ওঠে
ডুবে যাওয়া স্থাপনা, কিছু অসঙ্গত চিত্রকর্ম
শতাব্দীমাঝে চোখ চেয়ে দেখি
ওই আশপাশে আমারই তো বাস ছিল একদিন

মাঝে মাঝে মনে হয় ভুলে যাচ্ছি সব
জলজযন্ত্রণায়
শুধু বোধ হয়
ও কিছু নয়— হয়ত এমনই হয়
আমাদের সাধারণ ক্ষয়…

এখনও ভুলতে পারিনি পুরোটা
চোখে এখনও কিছুটা জ্যোতি বাকি
এখনও প্রলাপ বকি
এখনও শান্তির নিমিত্তে বর্বর বিবাদের বাগদান করি
আমরা এখনও দুর্ভিক্ষের হাঁ করা মুখ থেকে ঝরি

সেই সুযোগে কিছু না বলেই
আলো নিভিয়ে দিয়েছে কেউ
টের পাচ্ছি অসাড় ঠান্ডা

সেই সুযোগে আমার হাতের ওপর
এ আঁধারেই কেউ
ফেলে গেল উজ্জ্বল রঙের বীজ
আমি কি আদিম কোনও জীব!

একদিন মোহিত করেছিল যারা
ওরা, মানে হাতের আস্তিনে রাখা
আধেক নির্দোষ স্মৃতি
ওরাই শোকাহত করছে আজ
এ অন্ধকারে

জটলা বাগানের ধারে
পড়ে আছে পাতা, সামান্য কাঠ
ইচ্ছে হয় আলো জ্বালি—
করি প্রার্থনার পরাগায়নপাঠ

ভালবাসা,
যদি তোমারও ইচ্ছে হয় কোনওদিন ঝরো নদীতীরে
পাতার পতনে যদি তোমারও হৃদয় পোড়ে
তুমি ফিরে এসো
আমাদের সূর্যোষ্ণ বাড়ির দেয়ালে-ছাতে-ঘরে

ভালবাসা,
তুমি তো সীমানা বোঝনি কোনোদিন
জন্মের উপকূল ছেড়ে
তুমি চলে এসো আমাদের হেমন্তে—
এখানে যৌবনের পাপশোক গ্রাম্যফুল হয়ে শুকায় ঘাসে
তুমি এসো আরও কিছু শক্তি, আরও কিছু সময় নিয়ে হাতে

ভালবাসা,
তুমি এসো
এসো থেমে থেমে, জলের এপারে
সদ্যোজাত ভোরে

আকাশের মতো পুরাতন হতে হতে
তুমি এসো
আরও কিছু শক্তি আরও কিছু সময় নিয়ে হাতে

পথে যদি কালো ভাঁজে ভাঁজে দ্রুত এসে যায় রাত
যে রাতে কেউ বোঝে প্রেম
খোঁজে কেউ বারুদের মোহন হাত
খোঁজে কেউ গদ্যময় পূর্ণিমাচাঁদ
তারে তুমি বলে এসো—

ক্ষয়জলে যে যায় চলে
সে কেমন নুয়ে নুয়ে পড়ে; দ্যাখে দাগহীন
জলহীন তালুরেখা তার

সে কেমন খোঁজ করে
উর্বর আঁধারে মৃত-মথ
বিবর্ণ পাতার

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
J.Ghosh
J.Ghosh
2 years ago

অনবদ্য কবিতা। কবিকে আগে হয়তো পড়িনি। কিন্তু তাঁর আরও কবিতা পড়তে চাইব।

নুশান
নুশান
2 years ago
Reply to  J.Ghosh

J. Ghosh, অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
ভাল থাকবেন।

Recent Posts

রূপকুমার দাস

রূপকুমার দাসের কবিতাগুচ্ছ

পড়তি বিকেলে আলতা রং রৌদ্রের রক্তিম ইজেলে,/ লজ্জারাঙা মুখ হত তরতাজা বসরাই গোলাপ।/ এখন ঈশানের মেঘপুঞ্জ ঢেকে দেয় সব কারুকাজ।/ বারুদের কটু ঝাঁঝে গোলাপের গন্ধ উবে যায়।/ নক্ষত্রের আলো কিংবা জ্যোৎস্নার ঝর্নাধারা নয়,/ বজ্রের অগ্নিঝলকে ঝলসে যায় উদভ্রান্ত চোখের নজর।/ হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে রাখা আরাধ্যার চিত্রলেখা,/ অজানা শংকায় ডুবে যায় অন্ধকার সমুদ্রের জলে।/ সে সমুদ্র তোলপাড় লবেজান আমি তার পাই না হদিস।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »