Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

নুশান জান্নাত চৌধুরীর গুচ্ছকবিতা

অদলবদল

তোমার সাথে অদলবদল করে নেব খুব প্রিয় কিছু।
তবে বেঁচে থাকাই আপাতত তোমার বাঁচার উপায়
তোমার পরাজয়ের বীজ দিয়ে বৃক্ষ বানাব বলে
তোমায় বাঁচিয়ে রাখলাম।
একদিন বিনিময়ে শুধু দিয়ো
খুব প্রিয় কিছু; মরুআকাশের শিশিরভরা অশ্রু দিয়ে
ভিজিয়ে দিয়ো আমার বুক।

*

এখানে কেবল ডুব

আর সবখানে ফুলের মধ্যে ক্ষত।
আর সবখানে ব্যথা—
.               ঝড়ের মতো।

কে যায় কে যায়?
আর সবখানে বাতাস ছুটে আসে
নেশায় পেশায় উদাম উল্লাসে।
মানব কিংবা মানবীর প্রেম নয়,
চোখের পক্ষে স্বস্তিকর অক্ষর
তোমার অপেক্ষায়।
          বন্ধু, তোমার কাছে
.            এখানে কেবল ডুব
.            এখানে কোমল স্বর।
          এখানে বেশ একাই তো বসে আছি
.            তুমি হৃদয়ের একধাপ কাছাকাছি;
          ঠান্ডা শীতের রাতে যে পাখি গান গায়,
.            তুমি তার মতো।

.            আর সবখানে ফুলের মধ্যে ক্ষত

তুমি তো খুঁজছ আমায়
কিছু কথা বাকি থাকে
মনে পড়ে যে কোন অবস্থাতে।
আর সবখানে রক্তমাখা ঠোঁট,
মনের মলিন ফাঁদ।
আর সবখানে দলে দলে কারা হাঁটে

কথারা পাশ কাটে
হয়তো উড়ে যায় দোকানে বা রাস্তায়।
সারাদিন ভেবে চিঠির অপেক্ষায়
এই বুঝি কেউ লজ্জার মাথা খায়।

আর সবখানে অমনোযোগ, দেখো,
ভান করা সব লোক।
আর সবখানে কেন সব হাওয়া হয়,
কে যায় কে যায়?
প্রখর চোখ, পুরাতন প্রয়োজন সাথে নিয়ে যায়
সমস্ত বন্ধন।
.            আর সবখানে মনটা কেমন ফাঁকা
          অহেতুক দূরত্ব, সুগন্ধি নিশ্বাস,
.            দেখো দেখো, হাতে রাখা এইসব মন্থর হাত।
          আমি কি বুঝি না বলো?
.            আর সবখানে ধনুকের মতো বাঁকা
.            ইতস্তত লজ্জিত
.            মানুষ জলের মতো।

.            আর সবখানে ফুলের মধ্যে ক্ষত।

.            বন্ধু, তোমার কাছাকাছি
.            এখন কেবল ডুব
.            এখন কোমল স্বর;
.            এখন বেশ একাই তো ভাল আছি

*

আমার উৎসবটুকু নিয়ো

গোলমেলে শারীরিক শোকতাপে
যেটুকু টিকে আছি, ওতেই আমার জীবনের
টেকসই উপাদান
ওটুকুই আমার উৎসব ও বিজয়ের দৃশ্য।
প্রেমের ব্যতিব্যস্ত পরিশ্রমে খুঁজে নিয়ো আমাকে,
হৃদয়ে স্থান দিয়ো সংক্ষিপ্ত কিছু বছর,
যদি কিছু ভাল পাও,
তার সবটুকু নয় উৎসবটুকু রেখে দিয়ো
শুধু তোমার কাছে,
বিষণ্ণ মেজাজে হারিয়ে যেতে দিয়ো একদিন।
ধূসর নক্ষত্র বেয়ে
অগণিত আমি গড়িয়ে পড়ছি রোজ।

*

খবর পেয়েছি

আমাকে নিয়ে তোমার ভাবনাচিন্তা
আমাকে ব্যথিত করে।
তোমার নির্লজ্জতা দেখে আমি
চোখের জল ধরে রাখতে পারি না।
তোমার আমার এই যে অবিরাম আলাপ
তারপরও আমাকে কি বুঝেছ তুমি?
সেদিন বলাবলি করছিলে—
আমাকে কী ভীষণ ভালবাসো।
স্বীকার করি—
আমার জন্য তোমার ভালবাসা ও অনুভূতিই
আমাকে দিয়েছে অতুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা।
শুধু দুঃখ হয়— এইসব অনুভুতির নাজুকতায়।
খবর পেয়েছি ওরা নাকি
ফুলের টোকায়ও কুঁকড়ে ওঠে?
এটাই দূরত্ব।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Siddhartha Majumdar
Siddhartha Majumdar
2 years ago

খুব ভালো লেগেছে। এই কবির উচ্চারণ আগে শুনিনি। প্রতিটি অক্ষরে কেমন অন্য পাখির সুর…অনুভবে সিক্ত। প্রতিটি লাইনে আলো- অন্ধকারের হিম মেঘে জমাট বাঁধা শিশিরের বিন্দু।অনেক শুভেচ্ছা জানাই এই কবিকে।

নুশান
নুশান
2 years ago

পড়ার ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। অনুপ্রাণিত হলাম! প্রণাম রইল।

নুশান

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »