Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্দরমহলে: কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি

বিস্মৃতির ভারে নুয়ে পড়ছে পৃথিবী,
ফুরসৎ উড়ে গেছে ফুরুৎ করে।
রাত্রির গহ্বর গিলে খেয়েছে ছোট ছোট আলোকণা।
আগুনের ভেতরে প্রেম, আজ অশ্রুতে বোনা।

ব্যস্ত রাজপথের অনেক দূরে নিঃসঙ্গতা ছেয়ে আছে, গলিপথ অন্ধকার।
একদিন এখানে নরম রুমাল হাতে রেখেও তারা জন্ম দিয়েছিল, বড় আদরের বাংলা কবিতার।

বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এমন কয়েকজন মহিলা কবির কথা আলোচনা করব, যাঁরা তাঁদের কাব্যপ্রতিভার দ্যুতিতে বাংলা কাব্যের ধারাকে উজ্জ্বল ও বেগবান করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণকামিনী দাসী,
মোক্ষদায়িনী দেবী, প্রসন্নময়ী দেবী, লজ্জাবতী বসু, জগন্মোহিনী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, হিরণ্ময়ী দেবী, অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, সুরবালা ঘোষ প্রমুখ।

কৃষ্ণকামিনী দাসী।।

বাংলা ভাষায় সম্ভবত তিনিই প্রথম কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ‘চিত্তবিলাসিনী’ নামে বাহাত্তর পৃষ্ঠার সেই গ্রন্থটি ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ‘সংবাদ প্রভাকর’-এ কৃষ্ণকামিনী দাসীর এই কাব্যগ্রন্থটি সম্পর্কে লিখেছিলেন: ‘‘আমরা পরমানন্দ সাগরসলিলে নিমগ্ন হইয়া প্রকাশ করিতেছি যে এই অভিনব গ্রন্থ পাঠানন্তর চিত্তানন্দে আনন্দিত হইয়াছি, অবলাগণ বিদ্যানুশীলন পূর্বক অবনীমণ্ডলে প্রতিষ্ঠিতা হয়েন ইহাই আমারদিগের প্রার্থনা।’’

‘চিত্তবিলাসিনী’ কাব্যগ্রন্থের আরম্ভে পয়ার ছন্দে মঙ্গলকাব্যের আদলে ‘ব্রহ্মবন্দনা’ করে লেখিকা নিজের আত্মপরিচয় দিয়েছেন। হুগলী জেলার সুখরিয়া গ্রামের শ্রী শান্তিভূষণ মুস্তাফি হলেন তাঁর স্বামী। কাব্যগ্রন্থটি সেসময় নারীমুক্তি আন্দোলনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল। কৃষ্ণকামিনী ‘চিত্তবিলাসিনী’-তে নারী সংলাপ রচনায় বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ‘দয়া ছাড়া ধর্ম নাই’ কবিতায় তাঁর স্বাধীন, মুক্তমনের পরিচয় পাওয়া যায়।

পুরুষের উক্তি :
ঘোর রজনীতে তুমি কাহার কামিনী।
কিসের লাগিয়ে ভ্রমিতেছ একাকিনী।।
বয়সে নবীন অতি রূপ মনোহর।
আছ রঙ্গে নাহি সঙ্গে সঙ্গিনী অপর।।

কামিনীর উক্তি:
আমি হে রমণী, আছি একাকিনী
কুলের কামিনী তায়
তুমি হে এখানে, কিসের কারণে, বল ওহে যুবরায়।।
একি তব রীত, হেরি বিপরীত
নাহি চিতে কিছু ভয়।
রমণীর পাশে, এলে অনায়াসে
কিরূপেতে মহাশয়।

সেই যুগে রাত্রে একাকী ভ্রমণরতা এক নারীর কতটা স্বাধীনচেতা মানসিকতা থাকলে এই উক্তি করা যায়, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কৃষ্ণকামিনী ছিলেন একজন অন্তঃপুরবাসিনী গৃহবধূ। তাই দেখার চোখ থাকলেও প্রচলিত ‘অবরোধ প্রথা’-র কারণে তাঁর পরিচিতির জগৎ সীমাবদ্ধ ছিল। তবুও ‘চিত্তবিলাসিনী’-র বিষয়বস্তুর গৌরবে ও রচনার আঙ্গিকের বৈচিত্রে অসাধারণ। তিনি নারী-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হলেও পুরুষ-বিরোধী ছিলেন না। তাই গ্রন্থরচনার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে ‘আমার প্রাণবল্লভ যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছেন এবং তিনি এ-বিষয়ে মনোযোগী না হইলে কেবল আমা হইতে ইহা সম্পন্ন হইবার কোন প্রকার সম্ভাবনা ছিল না’ বলতেও কোনওরকম দ্বিধাবোধ করেননি, যা প্রকৃত আধুনিকমনস্কতার প্রোজ্বল উদাহরণ বলা যায়।

শিক্ষায় তো বটেই নারীরা গ্রন্থরচনাতেও এগিয়ে আসবে এই বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য তিনি ভূমিকায় বলেন, ‘অদ্যাপি অস্মদেশীয় মহিলাগণের কোন পুস্তকই প্রচারিত হয় নাই, সুতরাং প্রথম এ বিষয়ে হস্তার্পণ করা কেবল লোকের হাস্যাস্পদ হওয়া মাত্র, কিন্তু আমার অন্তঃকরণে যথেষ্ট সাহস জন্মিতেছে আর আমার পুস্তক রচনা করিবার এক প্রধান উদ্দেশ্য এই যে উৎকৃষ্ট হউক বা অপকৃষ্ট একটা দৃষ্টান্ত পাইলে স্ত্রীলোক মাত্রেই বিদ্যানুশীলনে অনুরাগী হইবে, তাহা হইলেই এ দেশের গৌরবের আর পরিসীমা থাকিবেক না…।

মোক্ষদায়িনী দেবী।।

স্বনামধন্য ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের অগ্রজা ছিলেন তিনি, কিন্তু এটাই তাঁর পরিচয় নয়। ছোট থেকেই মোক্ষদায়িনী দেবী ছিলেন শিক্ষানুরাগিনী। তিনি নারীজাতির মানকে রূপ-যৌবনের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ‘প্রোষিতভর্তৃকা’ কবিতায় বলেছেন:

যার লাগি দুখ, সেই জন মুখপানে যদি নাহি চায়,
তবে কেন বল, উন্মত্ত বিকল,
হ’য়ে মন তাঁরে চায়?
আমার বিরহে, কাতর সে নহে,
মনে জ্ঞান হয় হেন।
তাঁহার বিচ্ছেদ, হৃদি করে ভেদ,জ্বালা আর সহি কেন?

১লা বৈশাখ ১৩৬৬ (১৫ই এপ্রিল ১৯৫৯)-এ প্রকাশিত ‘মিলনে’ কবিতার চতুর্থ স্তবকে তিনি লিখেছেন এক স্বামীর জবানিতে:

কেন সখি, মনোমত
হয়েছিলে মম এত
বলনা; নহিলে চিত
কভু এত ভাবিত না;
একাধারে এত গুণ ধরে কত ললনা?

এই কবিতার অন্য স্তবকে স্বামী আবার বলেন:

গৃহলক্ষ্মী পূর্ণশশী,
প্রকৃত বন্ধু প্রেয়সী
হও হে তুমি আমার,
পরামর্শে মন্ত্রী তুমি,
জীবনের আধার।
তোমারে ছাড়িয়া যাই,
এমন বাসনা নাই,
কি করি, যাইতে চাই
সংসার-তীব্র তাড়নে,
শ্রম দুঃখ বিনা অর্থ, নাহি মিলে ভুবনে।
সখি! করমের তরে,
ছাড়ি যবে যাই দূরে,
রহ তুমি এ অন্তরে,
তব বাক্যর শুনি হে স্বপনে।

এইভাবে যুগের থেকে মানসিকতায় এগিয়ে থাকা কবি মোক্ষদায়িনী দেবী। পুরুষের থেকে অনাদর পেলে মেয়েদের জীবনের কোনও দাম নেই, এই ধারণার বিরোধিতা করেছেন, আবার স্ত্রীর প্রাপ্য সম্মান প্রদানে কুণ্ঠিত নয় যে পুরুষ, তার জীবনে ‘জ্যোতি’ হয়ে উঠতে স্ত্রীজাতিকে প্রেরণা যুগিয়েছেন। নরনারীর এই সুষমাময় পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভাষ্য আধুনিক মননসমৃদ্ধ।

প্রসন্নময়ী দেবী।।

কবিতার সাথে সাথে গল্প, উপন্যাসও লিখতেন প্রসন্নময়ী দেবী। তাঁর একটি তৎকালীন নামী উপন্যাস ‘অশোক’। তাঁর পিতা দুর্গাদাস চৌধুরী ছিলেন একজন ব্রাহ্ম এবং বদলিযোগ্য চাকরি সহ একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর এক ভাই আশুতোষ চৌধুরী এবং আরেক ভাই প্রমথ চৌধুরী ছিলেন সাহিত্যিক। তাঁদের পরিবার স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাঁদের বাড়িতে সেই সময়ের অনেক জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের ঘন ঘন আসাযাওয়া ছিল। প্রসন্নময়ী ‘মাতৃ মন্দির’ এবং ‘ভারতবর্ষ’-এর মতো মর্যাদাপূর্ণ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। তিনি ‘বনলতা’ এবং ‘নীহারিকা’ নামে দুটি কবিতার সংকলন এবং ‘পূর্বকথা’ নামে একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন।

‘মানসী’ ও ‘মর্মবাণী’ মাসিক পত্রিকাতেও তিনি লিখতেন। ১৮৭০-এ মাত্র ১২ বছর মতান্তরে ১৩ বছর বয়সে সতেরোটি ছোট ছোট কবিতা সম্বলিত বারো পৃষ্ঠার ‘আধ-আধ ভাসিনী’ নামে তাঁর প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা’ ২৫টি খণ্ড-কবিতার সংকলন।

প্রসন্নময়ীর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘নীহারিকা’। এই গ্রন্থের প্রথমভাগে একুশটি আর দ্বিতীয় ভাগে সতেরোটি; মোট আটত্রিশটি কবিতা রয়েছে। ‘নীহারিকা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্লীন সুর বিষাদ। কবির অনুভব এই দুঃখময় পৃথিবীতে সুখ, আনন্দ ক্ষণকালের, তাই এত মূল্যবান।

আকাশে নক্ষত্র আছে
বারি-কোলে ঊর্ম্মি নাচে,
কুসুম সুরভিময়, শশধরে হাসি,
প্রদীপ্ত অরুণে সদা তীব্র কর-রাশি
দামিনী বারিদ-কোলে,
তরুকণ্ঠে লতা দোলে,
ছায়া শীতলতা পূর্ণ, সমীরে জীবন,
তেমনি এ ভালবাসা-আত্মার মিলন!

কিন্তু এ মিলন তো চিরস্থায়ী হয় না, কারণ–
সকলি স্বার্থের দাস, স্বার্থের ধরণী–
নিজ সুখে মুগ্ধ নর দিবস রজনী।

নারীশিক্ষা প্রচলনের জন্য সেই সময়ের একাধিক মহিলা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত এবং দীর্ঘকাল ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডলের কর্মাধ্যক্ষা, ব্রাহ্মবালিকা শিক্ষালয়ের শিক্ষিকা, কবি প্রিয়ম্বদা দেবী ছিলেন প্রসন্নময়ী দেবীর গুণী সন্তান। শোনা যায়, স্বামী কৃষ্ণকুমার বাগচি উন্মাদ হয়ে গেলে মেয়েকে তিনি নিজহাতে মানুষ করেন। অসাধারণ ব্যক্তিত্বময়ী প্রসন্নময়ী দেবীর লেখা ‘সেই চন্দ্রালোক’ কবিতায় যেন নিজের গুণের বর্ণনার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

নীলিমার শশধর/ পরের কিরণে
সাজিয়া, সুদূর হতে
দেয় কর অবনীতে
গৌরবের কিছু নাই আপন জীবনে

আমার জীবন শশী/ নিজের বিভায়
নিরন্তর সমুদিত,
প্রীতিকর বিমণ্ডিত,
দিবা নিশি মুগ্ধকর অতুল শোভায়।

লজ্জাবতী বসু।।

উনিশ শতকের অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, অনুবাদক, শিক্ষক লজ্জাবতী বসু। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ রাজনারায়ণ বসুর কনিষ্ঠা কন্যা তিনি। ইয়ং বেঙ্গলের সক্রিয় সদস্য রাজনারায়ণ বসুর কন্যা লজ্জাবতী মুক্তচিন্তায় যুগের থেকে মানসিকতায় এগিয়ে দিয়েছিল। পিতার নারীশিক্ষার প্রচার ও প্রসারকার্যে তিনি আজীবন ব্রতী ছিলেন।

তিনি সাহিত্য রচনা, সঙ্গীতচর্চা, ব্রাহ্মধর্মের উপাসনা এইসব কর্মে নিজেকে নিযুক্ত করে রেখেছিলেন সারাজীবন অবিবাহিত থেকে। তাঁর রচিত কবিতা সেই সময়ে ‘প্রদীপ’, ‘সাহিত্য’, ‘প্রবাসী’, ‘নব্যভারত’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকায় প্রায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হত। কুমারী লজ্জাবতী বসুর ‘যাচনা’ নামে একটি কবিতার অংশ দেখে নেওয়া যাক।

দেবী!/ চির অসম্পূর্ণ কাহিনীর মত
ব্যাকুল রাখিও পরাণি;
অকূল নদীর তীর-রেখা মত
থেকো,/ আবেগে বহিব যখনি।
থেকো,/ দীপ্ত যৌবনের রহস্যের মত,
মোর দুকূল ভরিয়া থমকি;
ফুটো,/ ধরণী যেমন জাগে গো বসন্তে
নিজ পূর্ণতায় চমকি;
জেগো,/ চির অনুদ্দেশ পথ-রেখা মত
মোর দূর দূরান্তর ভরিয়া;
এসো,/ নিজ মহিমায়, চির নীরব
আকাশের মত নামিয়া।
দাঁড়ায়ো,/ প্রথম জাগ্রত সৌন্দর্যের মত,
আপন প্রকাশে বিস্মিত;
বীণার প্রথম সুরটির মত
মধুর মরমে জড়িত।

জগন্মোহিনী দেবী।।

ব্ৰহ্মানন্দ কেশবচন্দ্ৰ সেনের সর্বার্থেই সহধর্মিণী ছিলেন জগন্মোহিনী দেবী। তাঁর আরেকটা পরিচয় হল, তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় দেশীয় রাজ্য কোচবিহারের মহারানি, ১৯৩৩ সালে অল বেঙ্গল মহিলা ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সিআইই পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় মহিলা, নারীশিক্ষার পৃষ্ঠপোষক সুনীতিদেবীর মা। কিন্তু শুধু বিখ্যাত ব্যক্তির স্ত্রী বা মায়ের পরিচয়েই তাঁর পরিচয় সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি নিজেও ছিলেন একজন গীতিকার ও কবি। তাঁর রচিত ‘জগৎহার’ সঙ্গীত-গ্রন্থটিতে মোট ১১৪টি গান আছে। পূর্ণিমার চাঁদ দেখে তাঁর একটি লিরিক্যাল ব্যালাডধর্মী লেখা হল ‘পূর্ণিমার চন্দ্রর্শন’।

মন হাসিতে চাও, কর শিক্ষা সুধাংশুর কাছে।
কেমন সুন্দর হাসি শিখিয়াছ মার কাছে।
এমন মধুর হাসি চারিদিকে প্রকাশি,
করিছ বিস্তার জগৎ মাঝে।
এমন হাসি হায়, দেখি নাই আর কোথায়,
আপনি হাসি জগৎ হাসায় কি অপরূপ সাজে।
ইহা হতে সুন্দর, ভক্ত মুখচন্দ্র, আহা কেমন
মধুর হাসি সাজে সে মুখ মাঝে।

[চলবে]

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − three =

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

আমার স্মৃতিতে ঋত্বিককুমার ঘটক

দুটো‌ জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম তাঁর।‌ এক, তিনি কথা বলার সময় আত্মমগ্ন‌ থাকতেন। কারও দিকে‌ তাকিয়ে‌ কথা বলতেন না। তাকাতেন‌ হয় সুদূরে, আর নয়তো‌ চোখ বুজে‌ কথা বলতেন। আর দ্বিতীয় যা, তা হল‌ ঋত্বিকের চোখ। এত উজ্জ্বল আর‌ মরমী, এক-ই সঙ্গে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত আর লুব্ধক নক্ষত্রের মতো দীপ্ত, তা আর কারও মধ্যে দেখিনি। সত্যজিৎ-মৃণালের মধ্যেও না, যদিও ঘটনাচক্রে ওই দু’জনের সঙ্গে আমার মোলাকাত হয়েছিল অনেক বেশি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঋত্বিক ঘটক ও বাংলাদেশ

ঋত্বিক ঘটকের জীবনের প্রথম বাইশ বছর (১৯২৫-১৯৪৭) কেটেছে মূলত পূর্ব-বাংলায়, যা এখনকার বাংলাদেশ। তাঁর জন্ম ঢাকার ২,ঋষিকেশ দাস রোডের ঝুলন বাড়িতে। ১৯৪৭, অর্থাৎ দেশভাগ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তিনি মূলত পূর্ব-বাংলায় কাটান। আমরা দেখব, পূর্ব-বাংলা যেমন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল, সে-দেশ, সে-ভূমির প্রভাব তদনুরূপ ঋত্বিকেরও পড়েছিল তাঁর চলচ্চিত্রে।

Read More »
মণিকর্ণিকা রায়

অনুগল্প: অর্জন

অসহায় বৃদ্ধের খাওয়া হয়ে গেলে মাঝেমাঝে গল্পও করত ওঁর সাথে। আদিত্য লক্ষ্য করেছিল এই ব্যাপারটা যেন তার মনে একটা বদল আনছে— যেন রোজ তার শরীর-মন জুড়ে সঞ্চালিত হচ্ছে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি। যেন সে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠছে।

Read More »
মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনানন্দ দাশের সময়চেতনা: পুরাণ, প্রকৃতি ও আধুনিক নিঃসঙ্গতার নন্দনতত্ত্ব

পৌরাণিক, মনস্তাত্ত্বিক ও প্রকৃতিগত সময়চেতনা তাঁকে রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে এক স্থায়ী ও ব্যতিক্রমী মহাকবির আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর শিল্পকর্ম আমাদের শেখায়— দ্রুত ধাবমান জীবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ধীরে চলতে, নীরবতার গভীরে কান পাততে এবং প্রতিটি ক্ষণিকের মাঝে অনন্তের ইশারাকে খুঁজে পেতে। তাঁর সাহিত্য ভবিষ্যতের প্রতিটি সংবেদনশীল পাঠকের জন্য আধুনিকতার এক অমূল্য পাঠ হয়ে থাকবে, যা মানুষের জীবনকে শিল্প ও প্রকৃতির একাত্মতায় আবিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং প্রমাণ করে দেয়— কাব্যই চূড়ান্ত আশ্রয়, যখন সমস্ত পথ ফুরিয়ে যায়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

জীবনানন্দ: প্রয়াণদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

হেমন্তকাল ও জীবনানন্দ অভিন্ন, ওতপ্রোত ও পরস্পর পরিপূরক। তাঁর কবিতায় বারবার নানা অনুষঙ্গে, বিভঙ্গে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে হেমন্তের বসতি যেন। ‘হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু/ শিশিরের জল’, ‘ধানক্ষেতে, মাঠে,/ জমিছে ধোঁয়াটে/ ধারালো কুয়াশা’! কুয়াশা আর শিশির, এই দুই অচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হেমন্তের, চিনিয়ে দেন তিনি। ‘চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/ তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল’, হেমন্তকে বাহন করে এই যে প্রকৃতির অপরূপতা মেলে ধরা, তা অন্য কোন বাঙালি কবির আছে?

Read More »