রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ডিলাররাই কৃষি বিশেষজ্ঞ! তারাই বলে দিচ্ছেন কোন বীজ কিনতে হবে, কখন কোন রাসায়নিক সার কতটা দিতে হবে, কখন কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এরা কেউ ডিগ্রিধারী নন, চাষাবাদটাও নিজের হাতে করেননি। কেউ কেউ আবার প্রাথমিকের গণ্ডিটাও টপকাতে পারেননি। বাপ-ঠাকুরদার অগাধ রোজগারের থেকে টাকা নিয়ে এখন তারা সারের দোকানের মালিক। কিন্তু চাষাবাদ না জেনেই তারাই এখন জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছেন। অজস্র ভুলভালও বকে চলেছেন। অজান্তে দেশের সর্বনাশ করে দিচ্ছেন। কৃষকদের প্রয়োজনের তুলনায় উল্টোপাল্টা বীজ, সার, কীটনাশক গছিয়ে দিচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে কৃষক ধারেই বীজ সার কীটনাশক নিচ্ছেন। তাই দোকানদারের ইচ্ছে অনুযায়ী কীটনাশক সার বীজ নিয়ে মাঠে যেতে হচ্ছে।
পুরুলিয়া জেলায় এমনও দেখেছি, বৃষ্টির জমা জল চেক বাঁধে এসে পড়ায়, গেঁড়ি-গুগলি পর্যন্ত ভেসে উঠেছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক উৎপাদকের কাছে তারাই বড় ভাল ব্যবসায়ী। বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক কোম্পানির থেকে আসা উপঢৌকন তাদের হাত দিয়ে আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের অফিসে পৌঁছে যায়। যে কোনও সরকারি আদেশ, ওই ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয় আঞ্চলিক কৃষি দপ্তর। এটা কোনও নতুন ঘটনা নয়, ৬০-এর দশক থেকে আজ পর্যন্ত এইভাবেই চলছে। যুগ যুগ ধরে তাদের এই ভুলভাল কথা শুনে গ্ৰামের প্রতিটি কৃষক পরিবার চাষাবাদের কাজ করে চলেছেন।
কোন কৃষকের ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে, কীসের জোরে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে জৈব সার প্রয়োগ করে দেশীয় ফসলের চাষ করতে পারবেন? পুরো গ্ৰামবাসীর মতের বিরুদ্ধে, এমনকি নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে যাওয়া কি সম্ভব? হ্যাঁ, সেটাই সম্ভব করতে পেরেছি। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কানাডা প্রবাসী বন্ধু শান্তনু ওরফে টনি মিত্র, শান্তনু চক্রবর্তী, ড. অনুপম পাল, ড. পরিতোষ ভট্টাচার্য, অসিত চক্রবর্তী (প্রাক্তন উপাচার্য, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), অভ্র চক্রবর্তী, রফিকুল আলম সাহানা, দিশা-র সুজয় জানা ও তাঁদের সহকর্মীরা। পরামর্শ পেয়েছিলাম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক রবীন মজুমদার সহ বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানকর্মী পত্রিকার সকল বন্ধুবান্ধবের। এত মানুষের সক্রিয় সহযোগিতায়, সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করতে পেরেছি।
জৈব পদ্ধতিতে দেশীয় বীজ দিয়ে চাষ করলে সেই ফসলের ক্রেতা পাব কোথায়? পুরুলিয়া জেলার ঝালদা-২ ব্লকের মুরুগুমা, বেগুনকোদর ও চাতামবাড়ি গ্ৰামের কয়েকশো পরিবারকে বুঝিয়েসুঝিয়ে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে (তাঁদের চাষের জমির ১ শতাংশ বা ২ শতাংশ জমি) ‘কালাভাত’ চাষ করিয়েছিলাম। চাষ শুরু করার আগেই বাঁকুড়ার একজন ধান ব্যবসায়ীর সঙ্গে ৩৫০০ টাকা কুইন্টাল দরে ধানটা কিনে নেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম। বীজ সংগ্রহ করেছিলাম হাঁসখালির সরকারি খামার থেকে। SRI পদ্ধতিতে চারা রোপণ করাতে গিয়ে সুজয় জানার গ্ৰুপের সাতজন সহ আমি ও রাণা পাগলের মত খেটেছিলাম, তবুও ওদের বিশ্বাস করাতে পারিনি এক ফুট অন্তর অন্তর একটিমাত্র ধানের চারা রোপণ করলেই ২৫/৩০টা পাশকাঠি হবে।
কোনও রাসায়নিক সার না দিয়ে কিছুটা গোবর, কিছুটা গোচোনা, সামান্য একটু চিটেগুড়, সামান্য কিছুটা পোকা খাওয়া ডাল, সামান্য একটু উইপোকার ঢিপির মাটি এগুলো জলে গুলে দিলেই সার? ওই কৃষকরাই তাঁদের বাকি জমির জন্য রাসায়নিক সার কীটনাশকের দোকান থেকে বীজ সার কিনতে গিয়ে হাসির খোরাক হতেন আর রাগটা আমাদের ওপর ঝেড়ে গায়ের জ্বালা মেটাতেন। তবে আমার কথামত মাঠে তরল সারটাও দিতেন। ওই তরল সার দিতে গিয়ে ধানের পাশকাঠিটাও দেখতে পেতেন, ধীরে ধীরে আমার ওপর বিশ্বাসটাও জন্মাতে লাগল। ধান ঝাড়তে গিয়ে ধানের ফলন ও খড় দেখে ওঁদের মনে একটা বিশ্বাস জন্মেছিল।
কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক না কেন, সেই ধান ব্যবসায়ী ধান কিনতে এলেন না। ধানটা বিক্রির জন্য ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বহু মানুষের কাছে ধানের বিবরণ দিয়ে পাঠিয়েছিলাম। বীজের জন্য সামান্য কিছু ধান দক্ষিণ ভারতে গিয়েছিল। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বাকিটারও ক্রেতা যোগাড় করেছিলাম। সব ক্ষেত্রেই দামটা ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা কুইন্টাল ছিল। তবে সেই দামটা কৃষকরা পেলেন না, ধান বিক্রির অর্ধেকের বেশি টাকা মেরে দিল তিন জনের একটা চক্র। একজন সরকারি আধিকারিক, একজন তথাকথিত কৃষকপ্রেমী রাজনৈতিক নেতা ও একজন আঞ্চলিক ব্যবসায়ী। যারা এত মানুষকে ঠকালেন তাদের বিরুদ্ধে শত অভিযোগ করেও কৃষকদের হাতে লাভকারী মূল্যটা তুলে দিতে পারিনি।
গত ১৮.০৯.২০২০ কেন্দ্রীয় সরকারের পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা (PKVY) ‘দেশে জৈব পদ্ধতিতে চাষ’ সম্বন্ধে অনেক তথ্য দিয়েছিল।১ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি উপদেষ্টারা ‘জৈব পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন শাকসবজি উৎপাদন’ সম্বন্ধে অনেক মূল্যবান তথ্য প্রকাশ্যে এনেছিলেন।২ গত ০৪.০৯.২০১৭ বাংলাদেশের অমৃতা পারভেজ ‘জৈব চাষাবাদ কেন বাড়ানো উচিত’ এ সম্বন্ধে অনেক মূল্যবান তথ্য হাজির করে বহু কৃষককে নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন।৩ এই লেখাগুলো সব কৃষক না পড়লেও বহু কৃষক পরিবার পড়েছে, অনেকেই উৎসাহিত হয়ে প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু জৈব ফসল কেনার ক্রেতা কোথায়? বণ্টনের ব্যবস্থা কোথায়? তাই নিয়ে গত ০৫.০৫.২০১৬ অনলাইন আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘জৈব গ্ৰামে জৈব চাষে অনীহা’।৪
অনীহা শুধু বাগনানে নয়, অনীহা হিমালয় থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত, প্রতিটি গ্ৰামে, প্রতিটি কৃষক পরিবারে। রাষ্ট্র কৃষকদের জৈব চাষাবাদে উৎসাহ দিচ্ছে, কিন্তু বিক্রির কোনও সঠিক পথ দেখাতে পারছে না। কৃষি দপ্তরের কোনও দায়দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না। শুধু জৈব নয়, রাসায়নিক সার কীটনাশকযুক্ত খাদ্যশস্যেরও লাভজনক মূল্য কৃষকদের বাড়িতে পৌঁছাচ্ছে না। সরকার আজও সব কৃষকের ধান সরকারি মূল্যে কিনতে চায় না। শুধু ধান নয়, সব ধরনের ফসলের লাভজনক মূল্য কৃষকদের বাড়িতে পৌঁছাচ্ছে না। তাই আজ কৃষক পরিবারের সন্তান কৃষিকাজে যুক্ত হতে চাইছেন না। এটা একটা বিপর্যয়ের পূর্বাভাষ।
৬০-র দশকেও দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজে যুক্ত ছিলেন, আজ সেটা ৪০ শতাংশে নেমে গিয়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে এই শতাব্দীর শেষদিকে মাঠে আর কৃষক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি কাউকেই দেশের কথা ভাবতে বলব না, শুধু অনুরোধ করব, নিজের উত্তরসূরিদের জন্য একটু ভাবুন। যেহেতু আপনিই উপভোক্তা। পৃথিবীতে কোনও কারখানায় চাল ডাল তেল মশলা তৈরি হবে না। আপনার থালাটা কৃষকদের উৎপাদিত ফসল দিয়েই ভরবে। ওটা আদানি-আম্বানির কারখানায় উৎপাদন হবে না, কেউ চেষ্টা করলেও পারবেও না। অন্যদিকে যদি আমরা কৃষকের থেকে ফসল সংগ্রহ করতে পারি, তবে আদানি-আম্বানি যত বড়মাপের সংস্থাই হোক না কেন, গায়ের জোরে কৃষকদের ফসল টেনে নিলেও আমাদের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। শুরুতেই আমরা দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্ৰাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার পচনশীল অপচনশীল সব ধরনের বিষমুক্ত খাদ্যদ্রব্য বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে নিকটতম এলাকায় বিক্রির ব্যবস্থা করি।
কলকাতা পুরনিগমের এক নং বরোর চেয়ারম্যান এবং পাঁচ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তরুণ সাহা মহাশয়ের সক্রিয় সহযোগিতায় গত বছরের আগস্ট মাস থেকে আমরা ‘টালা বসুন্ধরা’ নামে একটা বিষমুক্ত খাদ্যের বাজার তৈরি করতে পেরেছি। আগে বাজারটা কেবলমাত্র রবিবার সকালে বসত। নতুন জায়গায় এসে আমরা আরও দুই দিন যোগ করে প্রতি বৃহস্পতিবার, শনিবার ও রবিবার সকালে বাজার বসাতে পেরেছি। আশাকরি আগামী দিনে প্রতিদিন বাজারটা চলবে। কিছু কৃষকদের সংগঠন দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্ৰাম থেকে বিষমুক্ত পণ্য এনে এখানে বিক্রি করছেন। মাসে আনুমানিক ৮০-৯০ হাজার টাকা বিক্রিও হচ্ছে।
বিক্রেতাদের কথা অনুযায়ী, আনুমানিক ৪০-৪৫ হাজার টাকা কৃষকদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। এখন গড়ে বিক্রি মাসে ২ লক্ষ টাকাতে নিয়ে যেতে চাইছি এবং এই নিরাপদ সামগ্রীর এমআরপি-র ৫০ শতাংশের অধিক কৃষককে প্রত্যক্ষভাবে ফেরত দেবার লক্ষে কাজ করে চলেছি। লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমরা আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক প্রোফাইল ‘টালা বসুন্ধরা’ ব্যবহার করছি। ওই বাজার থেকেই বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একজন যুবককে নিয়োগ করেছি। হোম ডেলিভারি নম্বর: 9804549889। আপাতত তিনদিন, খুব শীঘ্রই নিরাপদ খাদ্যের নিত্যবাজার মানে আমাদের ফুটপাথ মল ‘টালা বসুন্ধরা’ সাত দিন বাহান্ন সপ্তাহ চলবে।
কেবলমাত্র টালা অঞ্চলেই নয়, আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা জৈব চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য নিকটতম উপভোক্তাদের হাতে সরাসরি তুলে দিয়ে কৃষকদের হাতে লাভকারী মূল্য তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চলেছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট বিক্রয় কেন্দ্র সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। গত বছরের শুরু থেকে রামকুমার বন্দোপাধ্যায় ও সোমেন মুখার্জির তত্ত্বাবধানে উত্তরপাড়ার ভদ্রকালী অঞ্চলে ‘উত্তরপাড়া বসুন্ধরা’ নামে একটা বিক্রয় কেন্দ্র চলছে। ওখানে কোনও দোকানঘর নেই। ফোন, এসএমএস, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার সংগ্ৰহ করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গত এক বছর ধরে উত্তরবঙ্গের মাটিগাড়া অঞ্চলে ইন্দ্রাণী ব্যানার্জি ‘শিলিগুড়ি বসুন্ধরা’ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারও কোনও দোকানঘর নেই। ফোন, এসএমএস, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার সংগ্ৰহ করে, বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে রাজীব মুখার্জি ও রাণাপ্রতাপ সেনের তত্বাবধানে আসানসোলের কোর্ট মোড় অঞ্চলে ‘অর্গ্যানিকা’ নামে একটা বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। কোনও দোকানঘর নেই। বাড়িতেই স্টক করছেন। ফোন, এসএমএস, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার সংগ্ৰহ করে, ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রসেনজিৎ পালের নেতৃত্বে বারাসত অঞ্চলে একটা বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ চলছে। দোকানঘরটা নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘর সাজাতে কিছু টাকার প্রয়োজন, টাকা যোগাড় হলেই শুরু হয়ে যাবে। এখানে চাল, ডাল, তেল, মশলা, মধু সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাছ, মাংস, ডিমও পাওয়া যাবে। আড়িয়াদহ/ দক্ষিণেশ্বর অঞ্চলে অনিমেশ মিত্র মহাশয়, তাঁর দোকানঘরটাকে জৈব বিষমুক্ত খাদ্যের দোকানে পরিণত করেছেন। আশা করছি আগামী মাস থেকে পচনশীল ও অপচনশীল দু’ধরনের বিষমুক্ত খাদ্যদ্রব্য ওখানে পাওয়া যাবে।
উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া অঞ্চলেই থাকেন অজয় বসু। তিনি বাড়িতেই একটা অপচনশীল খাদ্যদ্রব্যের আউটলেট খুলেছেন। বিভিন্ন ধরনের বিষমুক্ত চাল, ডাল, তেল, মশলা সংগ্ৰহ করে উপভোক্তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। অরিজিৎ গাঙ্গুলি খড়দহ অঞ্চলেরই মানুষ। খড়দহে তিনিও একটা অপচনশীল খাদ্যদ্রব্যের আউটলেট খুলতে চলেছেন। বৌবাজার অঞ্চলে মানুষ প্রবীর বসাক। প্রচুর মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মার্কেটিংয়ের কাজ করেন। তাঁকেও এই ব্যবসার মধ্যে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাঁর দলকে যুক্ত করতে পারলে আরও অনেক বেশি মানুষের রান্নাঘরে বিষমুক্ত খাবার পৌঁছে দেওয়া যাবে। একটু চেষ্টা করে যদি আসানসোল, ভদ্রকালী, মাটিগাড়ায় একটা করে আউটলেট তৈরি করে দেওয়া যায়, তবে ওই সব এলাকায় পণ্য মজুত করে আরও বেশি উপভোক্তার হাতে পৌঁছে দেওয়া যাবে।
বহু মানুষ বাড়িতে, ছাদে, বারান্দায় শাকসবজি সহ ফল, ফুলের গাছ লাগাতে চান। সেই কাজটা জৈব কৃষিভিত্তিক ব্যবস্থায় পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ যদি কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তবে একদিকে যেমন মানুষকে জৈব কৃষি বাগিচা তৈরিতে উৎসাহিত করা যাবে তেমনই কিছু কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে। সেই কথা ভেবেই ‘দমদম ব্রতচারী নায়ক মণ্ডলী’-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের সদস্য পায়েল ভট্টাচার্য ব্রিকসন নেতৃত্বে ব্রতচারী সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত ‘সরোজনলিনী স্বনির্ভর গোষ্ঠী-র সকল সদস্যদের কাজের মধ্যে যুক্ত করতে ‘টালা বসুন্ধরা’ অমরপল্লির শহিদ রামেশ্বর বিদ্যামন্দিরের পাশে একটা বিষমুক্ত বাজার তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আশাকরি এই কর্মকাণ্ডে সাউথ দমদম মিউনিসিপ্যালিটির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরমাতা অঞ্জনা দত্তের সক্রিয় সহযোগিতাও পাওয়া যাবে।
জৈব কৃষি ও তা থেকে উৎপাদিত ফসলই আগামী পৃথিবীকে সুস্থ-সবল রাখতে পারে। ডাক্তার-ওষুধের পেছনে খরচ না করে নিজের থালাটা বিষমুক্ত করুন। আমাদের লক্ষ্য, মুখোশধারী মানুষদের সরিয়ে দিয়ে উৎপাদকের সঙ্গে উপভোক্তার সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করে দেওয়া। তাহলেই কৃষকদের লাভকারী মূল্য পাইয়ে দেওয়ার একটা সুবন্দোবস্ত তৈরি করে দেওয়া যাবে। খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ের অন্তত ৫০ শতাংশ মূল্য কৃষকদের কাছে পৌঁছলেই কৃষক আত্মহত্যা-মুক্ত ভারতের স্বপ্ন দেখা সম্ভব।
তথ্যসূত্র
১. https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1656408
২. http://www.ais.gov.bd/site/view/krishi_kotha_details/%E0%A7%A7%E0%A7%AA%E0%A7%A8%E0%A7%AB/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%98/%E0%A6%9C%E0%A7%88%E0%A6%AC%20%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87%20%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%A6%20%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%9C%E0%A6%BF%20%E0%A6%89%E0%A7%8E%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%A8
৩. https://www.dw.com/bn/%E0%A6%9C%E0%A7%88%E0%A6%AC-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B7-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8B-%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4/a-40345322
৪. https://www.anandabazar.com/west-bengal/howrah-hoogly/disinterested-in-organic-farming-1.377800