এই ভয়ই ছিল মনে
ওই তো চিরকাল একা কেউ
নড়বড়ে মুখ
তবুও আয়েশ করে তাকে ধরা যায়, ছোঁয়া যায়
এই পৃথিবীর কোনও এক দূর সীমানায়
জল নয় ছল নয়
ছায়ায় ছায়ায় সে সাঁতরায় মস্ত এক সময়
কাঁপা হাতে ছুঁয়ে দ্যাখো
ওই তো চিরকাল একাকী ও
বলো নাকো কথা
মুখ বুজে থাকো
ভান করো নিঃস্বতার
তবু নিদেনপক্ষে জেনো
আলোর আগুন, না কি ঝোড়ো পাতার মত একাকী ও
উড়ে গেছে কবে, সেই কবে—
এই ভয়ই ছিল মনে—
বুঝি একদিন তার সব প্রেম পরাস্ত হবে
∇∇∇
আমাদের নামগুলো
যদিও প্রশ্ন করার আমি কে
তবু একটি অনির্ধারিত প্রশ্ন আছে;
আমার নামের সাথে তোমার নামের মিল কই
কোথাও তো নেই
আর তুমিও কেমন আবদ্ধ এই অনন্ত বিষাদে
যদি আমাদের নামের মিল খুঁজতে যাই,
আর তাতে যদি তোমার রাগ হয়
তবে আমি সার্থক
আমার কাছে এমন কিছু নেই যা ধরে রাখা যায়,
ব্যবহার করব না কিন্তু ভাবব আছে, আছে তো— কাছে হোক বা দূরে—
এইরূপ কোনও জায়গা-জমি, মানুষ
বা নিজের করে রাখার উপযোগী কোনও পরিচয়—
কিছুই নেই যা ছুঁয়ে বলা যায়—
আমি আমাতেই বুঁদ হয়ে থাকি, তোমাতে নয়
আর এ না থাকার অর্থ আমারই অযোগ্যতা
তবু চোখ যায়— নামে, তোমার নামে
আমার নামের সাথে তোমার নামের মিল কই?
জানি, এ প্রশ্নের জবাব আমারই আদেশের কাছে নত
অথবা হয়ত মোমের ডানা গলে গলে আজ আমি সর্বস্বান্ত
অথবা হয়ত আমি যোগ্য হতে চাই সেদিনের
যেদিন আমাদের দু-পক্ষের নামের মিল খুঁজে না পেয়ে
বদমেজাজি হৃদয়ের ঊর্বর মাটিতে আমি
আমাদের নামগুলো পুঁতে নেব
∇∇∇
‘‘এই ‘তুমি’ কে?’’
আমবাগান, ধানখেত, মড়াখোলার শ্মশান থেকে আরও অনেক দূরে, যেখানে পাতায় পাতায়
ফিসফিসানির শব্দ শোনে জল ও মৃতের আত্মারা
সেইখানে একদিন ভোর হওয়ার ঠিক আগে, এক শান্ত মুহূর্তে কে এক ঈশ্বরী, নামহীন গোত্রহীন এক
জগৎ থেকে উঠে এসে ডেকেছিল কবে
বলেছিল, ‘‘সাথে যদি রেখে দাও, বলে যাব এই ‘তুমি’ কে’’
ভোরের অবসাদ রোদ-খোলসে ঢেকে, ‘ধুর’ বলে আমি তারে ছেড়ে আসি
আমি তারে মুছে ফেলি এই পৃথিবীর বুকের থেকে। তাই তো সে উড়ে যায়। তাই তো সে ডুবে যায়
জলের শেকড়ে বাকড়ে। তারও বহু দিন পর লুব্ধক-জুটি-তলে উড়িবার ছলে
ছায়া-সুপ্ত নিরালা নগর থেকে
কে যেন বা গায় গান,
‘‘এই ‘তুমি’ কে?’’