Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মনে পড়ে সেইসব দিন

ইতিকথার আগের কথা

ষোলোই ডিসেম্বর তারিখটা বাংলাদেশের তথা বাঙালির মনে চিরতরে মুদ্রিত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তারিখটি নানা ঘটনার দ্বারা চিহ্নিত, যেমন ১৭৭৩ সালের এই দিনটিতেই আমেরিকায় ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ বস্টনে জাহাজ থেকে ৩৪২ পেটি চা সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার মাধ‍্যমে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। আবার ১৯৯১-এর এই তারিখটিতেই কাজাকস্তান রাশিয়া থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৬-ই ডিসেম্বর ১৬৩১ ভিসুভিয়াসে অগ্ন‍্যুৎপাত। তিন হাজার মানুষের মৃত‍্যু। বিখ‍্যাত সাহিত‍্যিক জেন অস্টেন-এর জন্মদিন (১৭৭৫) আর এই দিনটিতেই রূপকথাকার গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয়ের অন‍্যতম ভিলহেলম প্রয়াত হন (১৭৫৯)।

বাংলাদেশের বিজয়লাভ স্বভাবতই এসবের চেয়ে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা দেড়-দু হাজার বছর ধরে, বা তার-ও আগে থেকে বাঙালির মতো এক পরম্পরাগতভাবে ঐতিহ‍্যশালী জাতি স্বাধীনতার অন্বেষায় ব‍্যগ্র ছিল যুগের পর যুগ।

বাঙালির সবকিছুই ছিল, কেবল স্বাধীনতাই ছিল না। বাঙালির মেধাতালিকা সম্ভবত পঞ্চম শতাব্দীর পালকাপ‍্য দিয়ে শুরু, যদিও তাঁর হস্তীবিদ‍্যাবিষয়ক গ্রন্থ ‘গজায়ুর্বেদ’ সংস্কৃতে লেখা। অতীশ দীপঙ্করের আগেই কিন্তু কমল শীল ও শান্ত রক্ষিত তিব্বত যান বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও সেখানে আচার্যের ভূমিকা নিয়ে। একাদশ শতাব্দীতে জন্মেছিলেন বিখ‍্যাত চিকিৎসক, বৈয়াকরণ ও নৈয়ায়িক চক্রপাণি দত্ত। চরক-সুশ্রুত মন্থন করে তাঁর বিখ‍্যাত গ্রন্থ ‘সর্বসারসংগ্রহ’। অপর বই ‘ব‍্যাকরণচন্দ্রিকা’। তাঁর রচিত কোষগ্রন্থ ‘শব্দচন্দ্রিকা’। গৌতমের ন‍্যায়শাস্ত্রের ওপর টীকা আছে তাঁর। বহুমুখী প্রতিভা তাঁর। সিলেটের রাজা গৌরগোবিন্দ আরোগ‍্য লাভ করেন বর্ধমাননিবাসী এই ভিষকের চিকিৎসায়। রাজা তাঁকে সিলেটে রেখে দিতে চেয়েছিলেন। গঙ্গাহীন দেশে থাকতে রাজি হননি চক্রধর।

চর্যাপদের কবিদের বর্ধিয়ায়তন তালিকাও মিলেছে, যা ‘নবচর্যাপদ’ নামে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত। মধ‍্যযুগে বাঙালির সাহিত‍্যরচনা বিস্ময়কর। বৈষ্ণবপদাবলী (শতাধিক মুসলমান কবির নাম পাওয়া গিয়েছে পদাবলীকারের, এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তা প্রকাশ-ও করেছে), মৈমনসিংহগীতিকা ছিল বাঙালির, স্বাধীনতা ছিল না! বিজয়সিংহের লঙ্কা জয়, বিদেশে বাঙালির বাণিজ‍্যবিস্তার ইতিহাস-স্বীকৃত। বাঙালির মসলিন শোভা পেত ইয়োরোপের অভিজাত পরিবারে, রাজরাণীর পরিচ্ছদে। বাংলার মন্দির মসজিদ স্তূপ ছিল, ছিল চিত্র ভাস্কর্য সঙ্গীত নাটক। গৌড়ীয় নৃত‍্য আর কীর্তন, বাউল মরশিয়া মারফতী, মাইজভাণ্ডারী আর নবান্নের গান, ব্রতকথা ও জঙ্গনামা, দক্ষিণরায় আর বনবিবি, তবু বাঙালি স্বাধীন ছিল না!

শেরশাহের সেনাপতি হতে পেরেছিলেন বাঙালি ব্রহ্মজিৎ গৌড়। বাংলার কোটালিপাড়া থেকে বিখ‍্যাত বেদান্তের ভাষ‍্যকার শতায়ু মধুসূদন সরস্বতী সম্রাট আকবরের আনুকূল্য পেয়েছিলেন। রাজা রামমোহন, তার আগে মির্জা ইতেশামুদ্দীন, এই দুই বাঙালি চিরায়ত সংস্কার ভেঙে বিলেত গেলেন! ব্রাজিল গিয়ে সে-দেশের রাষ্ট্রীয় সেনাদলে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ ঠেকিয়ে ‘কর্নেল’ হলেন সুরেশ বিশ্বাস। অনুরূপভাবে সোভিয়েতের হয়ে যুদ্ধ করে সমরখন্দ জয় করেছিলেন মানবেন্দ্রনাথ রায়। তিনি-ই লেনিন-এর ‘এপ্রিল থিসিস’-এর ভুল শুধরে দেন, যেমন আইনস্টাইনের ভুল শোধরান বিজ্ঞানাচার্য সত‍্যেন্দ্রনাথ বসু। তবু বাঙালি ছিল পরাধীন।

সেই পরাধীনতা ঘুচল অবশেষে।

একাত্তরের আগে : প্রস্তুতিপর্ব

সালটা ছিল ১৯৬৫। দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত আর পাকিস্তান লড়াইতে নামল এক নিতান্ত তুচ্ছ কারণকে বাহানা করে, হজরত বাল! আমি তখন ক্লাস এইট। আশঙ্কা চারদিকে, আর দুশ্চিন্তা। আমার বড়ভাইয়ের শ্বশুর-শাশুড়ি, যেমন আমাদের প্রতিবেশী অনেকের-ই, বাস তখন পূর্ব পাকিস্তানে। তাঁরা নিরাপদে আছেন তো! পরে জেনেছিলাম, পূর্ববঙ্গ পুরোটাই সেসময় ছিল অরক্ষিত। ভারত ইচ্ছে করলেই বিনা বাধায় দখল করে নিতে পারত। সেবার পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় লাহোর পর্যন্ত পৌঁছে যায় ভারতীয় সেনা। আর সেই প্রথম, যুদ্ধের দৌলতেই, নাম শুনলাম কচ্ছের রান অঞ্চলের। যুদ্ধ হয় সেখানেও। চোদ্দো বছরের কিশোর আমি অতশত বুঝি না, তবে সৈয়দ মুজতবা আলীর পাঠক ছিলাম সেসময়ে, ‘সাপ্তাহিক দেশ’ পড়ার দৌলতে। তাই যখন শুনলাম, তাঁকে এসময় অ্যারেস্ট করা হয়েছে, দুঃখ পেয়েছিলাম খুব। একদা তিনি বাহান্নোর সমর্থনে বক্তব‍্য রেখেছিলেন বলে সরকারি চাকরি, অধ‍্যাপনা হারান। বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ‍্যক্ষ চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে চলে এলেন ভারতে। এখানেও তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়েছিল।

যাই হোক, আমাদের কোনও আত্মীয়স্বজনের ক্ষতি হয়নি সেবার। আমার কাকা এবং তাঁর পরিবার বরিশালে নিরাপদেই ছিলেন। কেবল এতদিন ধরে চলে আসা শিয়ালদা-খুলনা ট্রেন বন্ধ হয়ে গেল। ভারতীয় সিনেমা আর পূর্ববঙ্গে যেতে পারত না। পশ্চিমবঙ্গের বইপত্র-ও না। এর ফলে একটা মহাসুযোগ ঘটে যায় আমাদের, যেটা উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুলভে, মাত্র পঁচাত্তর টাকায় পনেরো খণ্ডে তাঁর রচনাবলী বের করার পরিকল্পনা নেয়। এর আগে কেবল বিশ্বভারতী এটি বের করত, আর রচনাবলীর দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ছিল।

সরকার ছাপবে এক লাখ কপি। ঠিক হয়, অর্ধেক সংখ‍্যক কপি লটারির মাধ‍্যমে ভারতে (মূলত পশ্চিমবঙ্গে) বিক্রি করা হবে, আর বাকি অর্ধেক পূর্ববঙ্গে পাঠানো হবে। রচনাবলী ছাপা হতে হতে পঁয়ষট্টি সাল এসে পড়ে, এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বই পাঠানোর পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। অতএব সেই পঞ্চাশ হাজার কপি-ও ভারতেই বিক্রি হবে স্থির হয়। তবে এবার আর লটারি করে নয়। ক্রয়েচ্ছু ব‍্যক্তিকে চিঠি লিখে জানাতে হবে, কেন সে এই রচনাবলী কিনতে চায়। আমার বড়দা লিখলেন, বাড়িতে যেহেতু তাঁর তিন ভাই স্কুল ও কলেজের ছাত্র, সেজন‍্য এই রচনাবলী তাঁর পরিবারে জরুরি। বড়ভাইয়ের আবেদন মঞ্জুর হয়েছিল, আর এইভাবেই পাক-ভারত যুদ্ধ আমাদের গৃহে পরোক্ষভাবে রবীন্দ্রনাথের অভিষেক ঘটায়।

১৯৭১-পরবর্তীকালে সেই রচনাবলী-ই হুবহু সেই পনেরো খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে। দাম-ও রাখা হয়েছিল পঁচাত্তর টাকা। সম্ভবত এটি ছিল সোনালী ব‍্যাঙ্কের উদ‍্যোগ, যতদূর মনে পড়ে। এখন তো বাংলাদেশের একাধিক প্রকাশনা থেকেই বৃহত্তর আকারে সুশোভন রবীন্দ্র রচনাবলী বেরিয়েছে।

মনে আছে, প্রাক্-একাত্তরে আমার বড়ভাইয়ের শাশুড়ি বছরে অন্তত একবার কলকাতায় আসতেন। তখন বরিশাল থেকে নিয়ে আসতেন হোগলগুঁড়ি, পালো, আমসত্বের মতো লোভনীয় খাবার। আমার স্কুলের এক বন্ধু এক-আধবার যেত পাকিস্তানে। চীনে তৈরি পোশাক পরে স্কুলে আসত যখন, ঈর্ষা করতাম তার বাহারি পোশাককে। হায়, ১৯৬২-তে চীন-ভারত যুদ্ধের পর থেকে চীন ভারতের পর! ‘হিন্দি চীনী ভাই ভাই’ স্লোগান ইতিহাসে পরিণত! তখন, এবং ১৯৬৭-তে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম যখন, তখন পর্যন্ত পাকিস্তান-ও ছিল আমাদের পর।

সত‍্যিই কি পর? স্কুলে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের Lingua franca তো ছিল নিপাট বাঙ্গাল ভাষা! ছাত্ররা এক এক জেলার লোক বলে তাদের উচ্চারণে সেই সেই জেলার ভাষা শুনতে শুনতে একটা সাধারণ বাঙ্গাল ভাষার ব‍্যবহার আমাদের অজান্তেই রপ্ত করেছিলাম। আবার হেডমাস্টারমশাইয়ের ভাষা ছিল প্রায় দুর্বোধ‍্য, সুবোধ‍্য কারণেই, কেননা তিনি চট্টগ্রামের নির্ভেজাল ডায়ালেক্টে কথা কইতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে-ও অনুরূপ। হঠাৎ আলোর ঝলকানি এল একবার। আমার বন্ধু তারাশঙ্করের বড়ভাই আমেরিকায় পড়তে গিয়েছিলেন। কথায় কথায় সে জানাল, ইয়োরোপ আমেরিকা যাওয়াটা অসম্ভব নয়, কিন্তু পাকিস্তানে যাওয়ার কল্পনা পর্যন্ত করা যাবে না ইহজীবনে। অথচ তার বাবা চিঠি পান ওর বাবার দেশ ময়মনসিংহের ভূমিপুত্র ও বন্ধু আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছ থেকে। সেটা ১৯৬৮ সন।

এর ক’বছর বাদেই এল ১৯৭১। অসম্ভব যে এত দ্রুত সম্ভব হবে, ইতিহাসের দেবী ক্লিও কি তা জানতেন? তারাশঙ্করের বাবা বাংলাদেশ জন্ম নেবার পরপরই যান তাঁর সুহৃদ সম্মিলনে। সেই মানুষটি তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি! আবু সাঈদ চৌধুরী।

একাত্তর : সুখ ও দুঃখের স্মৃতি

আমাদের তারুণ‍্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর আবর্তে কেটেছে। তার মধ‍্যে যেমন ছিল সংস্কৃতির ব‍্যাপ্তিকে আকণ্ঠ পান করা, তেমনই ছিল গরল, হলাহল, ক্রান্তিকালের দুঃসহনীয়তা, যুগপৎ। গত শতকের ছয়ের মাঝামাঝি থেকে সাতের মাঝামাঝি, এই এক দশকে কলকাতা, ভারত ও বিশ্বে তোলপাড় করা কত ঘটনাই না ঘটেছে! ১৯৬৮-তে ফ্রান্সে ছাত্রবিক্ষোভ একদিকে, অন‍্যদিকে বিশ্বব‍্যাপী আলোড়ন ফেলা দুদশকব‍্যাপী ভিয়েতনাম যুদ্ধ, পাশাপাশি চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব। ১৯৬৯-তে চন্দ্রজয়, কেনেডি, ফয়জল, মার্টিন লুথার কিং, চে-হত‍্যা, ইন্দোনেশিয়ায় দশ লক্ষ কমিউনিস্ট নিধন, কোল্ড ওয়ার, চীন-সোভিয়েত বিচ্ছেদ, ১৯৬৯- তে কর্নেল গদ্দাফির ক্ষমতা দখল, বিশ্বময় তেল সংকট, এসবের মধ‍্য দিয়ে এগিয়েছে বিশ্ব। ছিল হকিং-এর যুগান্তকারী ব্ল‍্যাকহোল ও রেডিয়েশন থিওরি, ভারতে নকশাল ও হাংরি আন্দোলন, হলিউড-কাঁপানো ‘Jaws’, ‘Star Wars’, ‘Godfather’, ‘Dr. Zhivago’, ‘Cleopatra’, ‘Spartacus’. সত‍্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল। বলিউড। রবীন্দ্রসঙ্গীত আর আধুনিক বাংলা গান। শম্ভু মিত্র উৎপল দত্ত অজিতেশ। সঙ্গে জ‍্যাজ, বিকিনি, বিটলস, হিপি। আর ছিল ফরসাইথ, আগাথা ক্রিস্টি, নবোকভ। স্মলপক্সের বীজাণু উধাও ১৯৭৭ থেকে!

বাংলাদেশকে এর সমরেখায় স্থাপন করে দেখতে হবে। ছেষট্টির ছয়দফা, উনসত্তরের গণ অভ‍্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ, চব্বিশে মার্চ ১৯৭১-এ পাকিস্তানের ‘অপারেশন সার্চলাইট’, ন’মাসব‍্যাপী মুক্তিযুদ্ধ এবং ষোলোই ভিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম, এ সমস্তই পরস্পরগ্রথিত, একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর মধ‍্যে দক্ষিণবঙ্গে সত্তরের সর্বগ্রাসী বন‍্যাকেও বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, যখন দেখি, এই মর্মান্তিক ঘটনাতেও পাকিস্তান সরকার বিমাতার মতোই নীরব থেকে প্রমাণ করেছে, পূর্বপাকিস্তান তার কেউ-ই নয়, উপনিবেশমাত্র!

একাত্তর : দিবারাত্রির কাব‍্য

কবি বিষ্ণু দে লিখেছিলেন, ‘সংবাদ মূলত কাব‍্য’। শুনলে গোড়ায় একটু ধাঁধা লাগলেও পুনর্বিবেচনায় টের পাই, কথাটি আদৌ অমূলক নয়। কাব‍্য তো কেবল কল্পনা আর রোমান্স নয়, তা দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ, মিরমিডনের রাজপুত্র একিলিস, যাঁর নাম দিয়ে হোমারের ‘ইলিয়াড’ মহাকাব‍্যের সূচনা। একিলিসের গোড়ালি ও দূঃশাসনের ঊরু। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ আর ট্রয়ের, এ-ও তো কাব‍্য, অথবা বোদলেয়ারের ‘ক্লেদজ কুসুম’। একাত্তরের বাংলাদেশ তেমনই এক মর্শিয়া-মহাকাব‍্য, যাকে অনায়াসে নাম দেওয়া যায় একালের বিষাদসিন্ধু।

‘ত্রিশ লক্ষ কারিগর/ দীর্ঘ ন’টি মাস দিনরাত পরিশ্রম করে বানিয়েছেন এই ছবি’, লিখেছেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এই ছবি হল সমগ্র বাংলাদেশ, যে ‘ছবির জন‍্য ব‍্যবহৃত সব উপকরণ অকৃত্রিম।’ কবি পরক্ষণেই লিখছেন, এ ছবি নির্মিতিতে লেগেছে ‘নরমুণ্ডের ক্রমাগত ব‍্যবহার’।

আমরা একটু অন‍্য প্রসঙ্গে যাই। কাব‍্যের যে মধুর দিক থাকে, একটু পরিক্রমা করে আসা যাক। আমার ব‍্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।

এক।। ১৯৭১-এ সাপ্তাহিক ‘দেশ’- এর শারদীয় সংখ‍্যায় প্রকাশিত হল শওকত ওসমানের উপন‍্যাস ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’। এই প্রথম সরাসরি একটি বেদনামথিত কাহিনির পরিচয় পেলাম, আবিষ্কার করলাম আমার-ই ভাষার এক কথাকারকে, যিনি আমার দেশের নন (তাই কি? তাঁর জন্ম তো পশ্চিমবঙ্গেই! কী যে ধাঁধা!)।

দুই।। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সুযোগ করে দিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ দেখার। ছবিটি সেসময় কলকাতার অভিজাত সিনেমাহল মেট্রোতে প্রদর্শিত হয়েছিল।

তিন।। ১৯৭১-এর দুর্গাপুজোর প‍্যান্ডেলে প‍্যান্ডেলে পরিবার সহ দেবী দুর্গা তো ছিলেন-ই, ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং ইন্দিরা গান্ধী। হ‍্যাঁ, তাঁরাও। প্রতিটি প‍্যান্ডেলে, যতগুলি দেখেছি, এ দুজনের বাঁধানো ছবি শোভা পেত দুর্গামূর্তির পাশে। এ-ও তো ইতিহাস! যেমন ইতিহাস এ-সময়ের ছোঁয়াচে ব‍্যাধি, চোখ লাল হয়ে কষ্টকর রোগ কনজাংটিভাইটিসকে আদর করে ‘জয়বাংলা’ নাম দেওয়া।

চার।। আমার স্কুলের এক মাস্টারমশাই আমাকে নিয়ে গেলেন (তখন আমি অবিশ‍্যি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র) ভবানীপুরের এক বাসায়, যেখানে খুলনার বিখ‍্যাত গীতিকার-গায়ক সাধন সরকার তাঁর যে আত্মীয়বাড়িতে থাকতেন। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না। ডিসেম্বরের গোড়া, সাধনদা শীতবস্ত্রহীন। এই দেখে মুহূর্তে আমার স‍্যার তাঁর শরীর থেকে নিজের শালটি খুলে সাধনদাকে পরিয়ে দিলেন। দুজনের ফের অশ্রুপাত! কাব‍্য নয়?

পাঁচ।। যুদ্ধের মধ‍্যেই বহু পত্রিকা বাংলাদেশ সংখ‍্যা বের করছে, জসীম উদ্দীনের আত্মজীবনীর কলকাতা সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে, শামসুর রাহমান ছদ্মনামে যেসব কবিতা লিখছেন, কোন মাজেজায় তা পৌঁছে যাচ্ছে ও ছাপা হচ্ছে ‘দেশ’-সহ অন‍্যান‍্য পত্রপত্রিকায়, আল মাহমুদের কবিতার বই কলকাতা থেকে বেরোচ্ছে। হঠাৎ হাতে এসে গেল ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’, কবি নির্মলেন্দু গুণের। পেয়ে গেলাম মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর প্রবন্ধের বই, আহমদ শরীফের।

ছয়।। শিয়ালদা স্টেশনে এসময়ে এক বিধুর দৃশ‍্য দেখেছিলাম, যা মনে পড়লে আমি এখনও ব‍্যথিত হই। এক তরুণ দম্পতি প্ল‍্যাটফর্মের মেঝেয় চিঁড়ে ভিজিয়ে খাচ্ছেন। আহার করার পাত্র পর্যন্ত ছিল না তাঁদের।

সাত।। পাশাপাশি অন‍্য চিত্র। যতীন্দ্রনাথ ঘোষ, যাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র কবি শঙ্খ ঘোষ, ওই শিয়ালদা স্টেশনেই কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক অনাথ শিশুকে। চিরকুমার যতীনবাবু ছেলেটিকে এনে নিজের কাছে রাখেন, মানুষ করেন। এ-ও তো ইতিহাস, যা কোনও গ্রন্থে স্থান পাবে না। ‘সন্ত’ আখ‍্যা পাবেন না যতীনবাবুরা।

আট।। স্থান পাবে না আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু গৌরশঙ্করের কথাও। যুদ্ধের সময় সে শিলাইদা কুঠিবাড়িতে পাক-হামলার প্রতিবাদে লিখেছিল ‘গুলিবিদ্ধ রবীন্দ্রনাথ’। পরে এই নামে সে কবিতার বই-ও বের করে। যুদ্ধের মধ‍্যেই দুঃসাহসী গৌর বাংলাদেশে চলে যায়। কেবল তাই নয়, ভাটপাড়ার বামুন মণিকা রহমানকে বিয়ে করে দেশে ফেরে। মুক্তিযুদ্ধে ভারত যদি বাংলাদেশের পরম সুহৃদ, গৌর-মণিকার যুগলবন্দী কি তার-ই এক ছোট্ট নিদর্শন নয়? ম‍্যানেঞ্জাইটিসে মাত্র সাতাশ-আঠাশ বছর বয়সেই মারা যায় গৌর, একটি শিশুপুত্র রেখে। মণিকা আর বিয়ে করেননি। কি, সন্ত নন এঁরা?

নয়।। ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ ছিল আমাদের কাছেও জনপ্রিয়। প্রতিদিন ‘চরমপত্র’ শোনার জন‍্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকতাম। বেশ কিছু গান কণ্ঠস্থ হয়ে গিয়েছিল আমাদের,— ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে (গানে মুজিবুর না, ছিল মুজিবর—’), ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, এইরকম। সেবছর শারদীয় গানের রেকর্ডেও অনেক শিল্পীর কণ্ঠে গীত হয়েছিল এরকম গান, ‘গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা’ (ভূপেন হাজারিকা, কথা: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়), ‘ওই পদ্মা, এই গঙ্গা’ (মানবেন্দ্র মুখোপাধ‍্যায়)।

দশ।। যুদ্ধশেষে বিজয়দিবস এল। কলকাতা আনন্দে কম মাতেনি সেদিন। ‘ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি’ গঠিত হয়েছিল তখন, অন্নদাশঙ্কর রায়, তারাশঙ্কর (বিজয় অর্জনের কিছুদিন আগেই প্রয়াত হন তিনি!), মনোজ বসুদের নিয়ে। সাতদিনের সাংস্কৃতিক কর্মসূচি নেয় সমিতি, জানুয়ারি ’৭২-এ। গান, নাচ, আবৃত্তি, নাটক। আমার লেখা একটি নাটকের স্থান হয় সেখানে, সুযোগ হয় অভিনয়ের-ও।

এগারো।। সদ‍্য-স্বাধীন বাংলাদেশ ডাকছে হাজার হাজার মানুষকে, ছেড়ে আসা জন্মভিটেয় গিয়ে একবার দাঁড়াবে। মনে আছে, এসময়ে দক্ষিণারঞ্জন বসুর সম্পাদনায় সঙ্কলনগ্রন্থ বেরোয় একটি, নানা জেলার বত্রিশজন মানুষের লেখা, ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’।

আমার কাকা চলে গেলেন নিজগ্রাম দেখতে। হিজলতলা। বরিশাল শহরে কীর্তনখোলা নদীর ওপারে কাউয়ার চর ছাড়িয়ে দুমাইল, খাল বেয়ে যেতে হয়। সেখানে রয়েছেন আমার আরেক কাকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় মুসলমানরা (আমাদের গ্রামটিতে সাত-আট ঘর মাত্র হিন্দু। বাকিরা মুসলমান) কাকাকে নিরাপত্তার বলয়ে ঘিরে রেখেছিলেন, ফিরে এসে জানালেন কাকা। আমরা হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার কথা জানি, সম্প্রীতির কথা জানি না তেমন।

পরিশিষ্টবচন

বাঙালি দুই কবি রঙ্গলাল বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় আর রামনিধি গুপ্তের যথাক্রমে ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়’, আর ‘বিনে স্বদেশী ভাষা, পূরে কি আশা’, এই কবিতাদুটির ভিতর যে আগ্নেয় অভীপ্সা, তাকে বাস্তবে রূপ দিলেন রাজনীতির এক কবি। হিমালয়-দেখার পরিপূরক তিনি, বলেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। পদ্মা মেঘনা গৌরী বহমান থাকবে যতদিন, তাঁর অনশ্বর মহিমাও অটুট থাকবে ততদিন, বলেছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়। দেশবাসীর কাছে তিনি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু নামে আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে পরিচিত। জাতিকে তিনি উপহার দিয়ে গেছেন একটি পতাকা, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে শামিয়ানা করে টাঙানোর জন‍্য। দিয়ে গেছেন সোনার বাংলার শাশ্বত উত্তরাধিকার। দিয়েছেন অন্ধজনে আলো, মৃতজনে প্রাণ। মূর্খ পশুরা তাঁকে হত‍্যা করেছে, অতীতে যেমন করেছিল জুলিয়াস সিজার, আব্রাহাম লিঙ্কন, মার্টিন লুথার কিংকে। আলেন্দে আর লুমুম্বাকে। পিতার রক্তাক্ত মুখ হৃদয়ে রেখে দেশটির বিজয় দিবসটিকেই নয় কেবল, দেশের সার্বিক কল‍্যাণ সাধন করে ‘তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি’, রবীন্দ্রনাথের এই বাণীকে সফল করে তুলছেন বঙ্গবন্ধুকন‍্যা। শান্তি ও কল‍্যাণ তাঁর অভীষ্ট। শান্তি, কবি মহাদেব সাহার ভাষায় ‘শিশুদের পদধ্বনির মতো শান্তি,/ বকুল ঝরে পড়ার মতো শান্তি,/ রজনীগন্ধার খোলা পাপড়ির মতো শান্তি।’

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »