Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

এক যে আছে মসলা মেলা

বঙ্গদেশে অদ্বিতীয় এই মেলা। এই মেলার বাতাসে ভেসে থাকে হরেক রকম মসলার ঝাঁঝ। উত্তর ২৪ পরগনার বনেদি শহর গোবরডাঙায় বসে এই ‘মসালাদার’ মেলা। গোবরডাঙার সুপ্রাচীন প্রসন্নময়ী কালীবাড়ির পাশের মাঠেই চলে এই মসলা মেলা। শুরু হয় বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন। একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী যমুনা নদী সংলগ্ন প্রাঙ্গণে বসে একটি সাবেকী মেলা। ঐতিহাসিক মেলাটির পোশাকী নাম গোষ্ঠবিহার মেলা। এই দুই মেলা উপলক্ষে কয়েকদিন ধরে মানুষের সমাগমে গমগম করতে থাকে প্রাচীন জনপদ গোবরডাঙা। উভয় মেলাই মূলত দশ দিন ধরে চলে। এরপর মসলা মেলা উঠে যায়। সাবেকী মেলার মাঠে তখনও চলতে থাকে ভাঙা মেলা। তাও চলে আরও দিন দশেক ধরে।

জমিদার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই মসলা মেলার পত্তন।

বাঙালির হেঁশেলে যত রকমের মসলা শোভা পায়, সবই মেলে সেখানে। জিরে, কালো জিরে, রাঁধুনি, মেথি, মৌরী, ধনে, জোয়ান, কালো ও সাদা সরষে, দারচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, হলুদ, গোল মরিচ, শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা মায় পেঁয়াজ-আদা-রসুন (এগুলি আনাজ হিসেবেও ধরা হয়) প্রভৃতি সব ধরনের মসলার ‘মেলা’। মেলায় কৃষকরাও যেমন তাঁদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে আসেন, তেমনই ছোটবড় মসলা ব্যবসায়ীও তাঁদের পসরা নিয়ে হাজির থাকেন। অনেক ব্যবসায়ী এই মসলা মেলা থেকেই নতুন বছরের বেচাকেনার খাতা খোলেন। কারণ প্রচলিত বিশ্বাস, এই মসলা মেলা থেকে মসলার বিকিকিনি শুরু করলে বছরভর ব্যবসা জমে ভাল। অন্যদিকে বাজারের তুলনায় সস্তা বলে সম্বৎসরের প্রয়োজনীয় মসলাও কিনতে আসে আমজনতা।

মেলা বসানোর নেপথ্যে অবশ্য জমিদারমশাইয়ের অভিপ্রায় ছিল অন্য।

কে প্রবর্তন করেছিলেন এই অদ্ভুত মেলা? যতদূর জানা যায়, গোবরডাঙার জমিদার খেলারাম মুখোপাধ্যায়ের পুত্র কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই মসলা মেলার পত্তন হয়েছিল। তখন ব্রিটিশ আমল। গোবরডাঙার পাশ দিয়ে বয়ে চলা যমুনা নদী তখন প্রবল বেগবতী। রেলপথ চালু হওয়ার আগে মূলত নৌপথেই চলত ব্যবসাবাণিজ্য। যমুনার একদিকে ইছামতী নদী, অন্যদিকে ভাগীরথী বা হুগলি নদী। যমুনা দিয়ে সরাসরি হুগলি নদীপথে দেশের নানা অংশে পৌঁছনো যেত। আর তাই যমুনাতীরে গোবরডাঙা জমিদারবাড়ি সংলগ্ন জায়গায় বর্ষারম্ভে মসলা মেলার পত্তন করে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের বেচাকেনার সুবিধা করে দেন জমিদার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়।

মেলার বাতাসে ভেসে থাকে হরেক রকম মশলার ঝাঁঝ।

এই মেলা বসানোর নেপথ্যে অবশ্য জমিদারমশাইয়ের অভিপ্রায় ছিল অন্য। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর জমিদারি এলাকার কৃষকরা বৈশাখের শুরুতেই যাতে খাজনা মিটিয়ে দিতে পারেন। মেলায় কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল বেচবেন এবং ফসল বিক্রির অর্থ দিয়ে তৎক্ষণাৎ জমিদারের খাজনা মিটিয়ে দিয়ে যাবেন। সেই উদ্দেশ্যেই ১৮২৩ সালে সূচনা হয়েছিল এই মেলার। তখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর জেনারেল জন অ্যাডামস। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা দেশ ছেড়েছে, উঠে গিয়েছে জমিদারি প্রথাও, জমিদারদের বংশধরদের হাত থেকে ঐতিহ্যবাহী মেলার দায়িত্ব নিয়েছে গোবরডাঙার নাগরিক সমাজের একাংশ। ২০১ বছরের ঐতিহ্য এখন সেই মসলা মেলার গায়ে।

চিত্র: দেবস্মিতা মণ্ডল

দেখুন, দেশের প্রাচীনতম মসলা মেলার ইতিহাস।

5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
স্বপ্না অধিকারী
স্বপ্না অধিকারী
3 years ago

মশলার গন্ধের মতো ছড়িয়ে পড়ুক লেখার আঘ্রান

Samiran Biswas
Samiran Biswas
3 years ago

good writing

Recent Posts

রূপকুমার দাস

রূপকুমার দাসের কবিতাগুচ্ছ

পড়তি বিকেলে আলতা রং রৌদ্রের রক্তিম ইজেলে,/ লজ্জারাঙা মুখ হত তরতাজা বসরাই গোলাপ।/ এখন ঈশানের মেঘপুঞ্জ ঢেকে দেয় সব কারুকাজ।/ বারুদের কটু ঝাঁঝে গোলাপের গন্ধ উবে যায়।/ নক্ষত্রের আলো কিংবা জ্যোৎস্নার ঝর্নাধারা নয়,/ বজ্রের অগ্নিঝলকে ঝলসে যায় উদভ্রান্ত চোখের নজর।/ হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে রাখা আরাধ্যার চিত্রলেখা,/ অজানা শংকায় ডুবে যায় অন্ধকার সমুদ্রের জলে।/ সে সমুদ্র তোলপাড় লবেজান আমি তার পাই না হদিস।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »