‘বানরে জিওল খাচ্ছে!’
কে যেন বলল কথাটা। বানরে ফল-টল খায়। কিন্তু জিওল! বদন কথাটা শুনে রাস্তার দিকে তাকাল। তাকাল আশেপাশের বাড়ির ছাদগুলোর দিকে। কিন্তু কোথায় বানর-হনুমান! মাছ কিনতে হবে। মাছবাজারের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল বদন। স্বর্ণকার টিটি উবু হয়ে বসে জিওল মাছ তুলে রাখছে দাঁড়িপাল্লায়। সবে দাঁড়িপাল্লায় তোলা হচ্ছে, আর তাতেই ‘খাচ্ছে’! মানুষ পারেও বটে!
স্বর্ণকার আসলে টিটিই। কিন্তু টিটিই আর কে বলে! কথাটা দাঁড়াক বা না দাঁড়াক বলার সময় ই বিযুক্তি ঘটেই যায়। আর স্বর্ণকারের ক্ষেত্রে অত শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করার তো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ স্বর্ণকার টিটি অনেকের কাছেই খুব অপছন্দের। অপছন্দের হলে যা হয়!
অবয়বগত সাদৃশ্য আর তিড়িংবিড়িং করে এই ওখানে তো ওই ওখানে চলাচলের জন্য স্বর্ণকারের ওরকম একটা ইতর প্রাণীর নাম পেতেও দেরি হয় না।
জিওল মাছের খুব দাম। বদন যখন কেনে, বড়জোর আড়াইশো। স্বর্ণকার টিটি নিচ্ছে এক কেজি। পায়ে পায়ে মাছবাজারে ঢুকে গিয়েছিল বলেই দেখতে পেল বাটখারাটা।
—‘সকালে আজ ভালোই দাঁও মেরেছে স্বর্ণকার!’
একজন মন্তব্য ছুড়ে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে গেল মাছবাজার থেকে।
দাঁও মারার কথাটা উড়িয়ে দেওয়া শক্ত। স্টেশনের কাছাকাছি ভাড়া থাকে স্বর্ণকার। সেই সুবাদে ট্রেনে যাওয়ার সময়টুকু বাদে প্রায় সারাদিন পড়ে থাকে স্টেশনে। টিটিই হিসেবে ডিউটি নিশ্চয় সারাদিন ধরে নয়! এতক্ষণ রেল কোম্পানিকে সার্ভিস দেওয়া কে বিশ্বাস করবে!
এই বাজারে আসাটাও স্বর্ণকারের স্টেশনফেরতা। বাজারের ব্যাগ নিয়েই বাড়ি থেকে বেরোয়। তারপর স্টেশনে ঢুকে খপাখপ কিছু বিনাটিকিটের যাত্রী ধরে। চেনা লোকেরা ‘স্বর্ণকার বাজার খরচ তুলছে’ বলে একটা চার অক্ষরের খিস্তি ঝাড়ে। স্বর্ণকারের এতে কিছু যায়-আসে বলে মনে হয় না। টিকিট চেকিং খানিকক্ষণ করে, বাজারের থলিটা দোলাতে দোলাতে স্বর্ণকারকে দেখা যায় স্টেশন-লাগোয়া বাজারটার দিকে রওয়ানা দিতে।
মাছবাজারে ঢুকে বদন দেখে মাছওলার সামনে স্বর্ণকারের পাশে একই ভঙ্গিতে বসে আছে অভয়। অভয় বদনের কলিগ, সমবয়সী।
অভয়ও হয়তো মাছ কিনবে। কিন্তু ও কি আজ স্কুলে যাবে না নাকি? নিজের মাছ না কিনে দিব্বি স্বর্ণকারের পাশে বসে ওর জিওল মাছ বেছে দিচ্ছে!
—‘কী মাছ নিয়েছিলেন দাদা! ভাগ্যিস আমি ছিলাম! দাঁড়িপাল্লা থেকে কতগুলো চেঞ্জ করলাম, দেখলেন তো!’
অভয়ের কথা শেষ না হতেই ওর মাথায় টোকা দেয় বদন। —‘আজ স্কুলে যাবে না নাকি!’
—‘যাব তো! অনেক বেজে গেছে? আজ আবার আমাকে মান্থলি করতে হবে!’ অভয়ের এবার তাড়াহুড়ো শুরু হয় নিজের মাছ কেনায়।
ন’টা চল্লিশের ট্রেনে নিত্যযাত্রা। এই ট্রেনে স্বর্ণকার টিটিও বেশিরভাগ দিন থাকে। মফস্বল শহর-লাগোয়া এই স্টেশনে আরও এক-আধজন টিটিই থাকলেও তাঁদের সেভাবে দেখা যায় না। হতে পারে তাদের ডিউটিটা স্বর্ণকারের মত আপের ট্রেনে নয়, ডাউনের দিকের ট্রেনে।
আজও স্বর্ণকার রয়েছে শুধু নয় একেবারে বদনদের কম্পার্টমেন্টেই উঠেছে প্রথমে। টিকিট চেক করতে করতে বদনদের দলটার কাছেও চলে এসেছে। —‘এসেছি যখন আপনাদের মান্থলিগুলো একবার চেক করেই যাই!’ স্বর্ণকার মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে।
একেবারে কোনায় বসেছিল অভয়। ওকে দিয়েই শুরু করে চেকিং। কিন্তু অভয়ের মান্থলি চেক হয়ে যাবার পরে কেন কে জানে অন্যদের মান্থলি চেক করার উৎসাহ কমে আসে ওর। এক-আধজনের দেখেই আবার সেই বানরের মত তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে চলে যায় সামনের দিকের এক যাত্রীর কাছে।
স্বর্ণকার একটু দূরে যেতেই অভয় গলা খোলে। —‘একেবারে চোখের চামড়া নেই লোকটার। সকালে বাজারে জিওল মাছ বেছে দিলাম, আর কিনা আমাকে দিয়েই শুরু করল চেকিং!’
বদন বলল— ‘চেকিং শুরু নয়, তোমারটা চেক করতেই এসেছিল। বাজারে আমাকে বললে না, আজ মান্থলি কাটবে। শুনে নিয়েছে। ভেবেছে হয়তো কাটোনি বা কাটতে পারোনি।’
পাশে বসে দলিল-লেখক সঞ্জয় মজুমদার একটা খ্যাঁক খ্যাঁক দেয়। ‘জিওল মাছ বেছে দেওয়ার এই পরিণাম! এ এক আজব টিটি মাইরি। গাড়িতে উঠে কাউকে চেনে না। এই ট্রেনের নিত্যযাত্রী তো ওর স্ত্রীও। হয়তো তার মান্থলিও ব্যাটা চেক করে এল!’
জানলার পাশে বসা অনুত্তম হাজরা ফুট কাটে। —‘এতে খারাপটা কোথায়? একেবারে আদর্শ টিটি!’
—‘আদর্শই বটে! পঞ্চাশ টাকা ফাইন করে বাথরুমের কাছে নিয়ে গিয়ে চল্লিশ টাকা রিবেট দেয়। দিয়ে বাকি টাকাটা পকেটে ভরে!’ গজগজ করে ব্যাঙ্ককর্মী সুখেন সমাদ্দার।
—‘ওর ব্যাগ চেক করলে দেখবেন দশ টাকা, পাঁচ টাকা, দু’টাকার কয়েন-নোটে ভর্তি। তবে স্বর্ণকারের নজর দু’টাকার নিচে নামে না। দু’টাকা কেজি চালের কথাটা মনে রাখে আর কী!’ হাসে সঞ্জয় মজুমদার।
—‘ফাইনেও রেশন-ব্যবস্থা!’ হাসির রোল ওঠে অন্যদের মধ্যেও।
বদন স্বর্ণকারের বিলীয়মান অবয়বে চোখ রেখে উদাস হয়। গাট্টাগোট্টা, সাড়ে পাঁচ ফুটের মত চেহারাটায় মেজমামার আদল আছে। অথচ কী পার্থক্য দু’জনের! একজন ঘুষ-প্রলোভন থেকে বাঁচতে সরকারি অত বড় চাকরিটাই ছেড়ে দিলেন। সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন স্কুলমাস্টারিতে। আর একজন…
জানলা দিয়ে তাকিয়ে বদন দেখল, পরের স্টেশনে ট্রেন থামতে প্ল্যাটফর্মে নেমে ছুটে যাচ্ছে স্বর্ণকার। কী ব্যাপার? ভাল করে নজর করতে বোঝা যায়, স্বর্ণকার ধাওয়া করেছে এক যুবককে। জানলা দিয়ে অনেকেরই চোখ সেদিকে পড়ে। বেশ রোমাঞ্চকর দৃশ্য। একটা যেন কী হয়, কী হয় ভাব। সামনে একটা লোকের সঙ্গে একটু দূরে গিয়েই ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় ছোকরা। আর তাতেই স্বর্ণকারের নাগালে এসে যায় সে। স্বর্ণকারকে দেখা যায় ছেলেটিকে ফাইন করার জন্য রসিদ বই বের করতে। কত টাকা ফাইন করছে বোঝা যাচ্ছে না। তবে বেশি অঙ্কের নিশ্চয়। দর কষাকষি চলছে খুব।
ট্রেন বড় বেরসিক। এমন রোমাঞ্চকর দৃশ্যের সবটা না দেখতে দিয়েই প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে দেয়।
—‘ধাক্কা খেয়ে পড়ে না গেলেও স্বর্ণকার ধরে ফেলত। ওর পায়ে হেবি রান। আমি দেখেছি একদিন।’ জানলায় চোখ রাখা এক সহযাত্রী মন্তব্য করে।
—‘শেষ অব্দি রসিদ লেখা হবে না। রফা হয়ে যাবে, দশ বা কুড়ি টাকায়। আমি নিশ্চিত।’ এক মোটা চেহারার ডেলি প্যাসেঞ্জার বেশ প্রত্যয়ের সঙ্গে বলে।
যদি এই প্রয়াসের পুরোটা রেলের স্বার্থে হত, তাহলে স্বর্ণকার টিটি যে এতদিনে পুরস্কৃত হত, এ ব্যাপারে বদন নিশ্চিত। কিন্তু তা যখন হয়নি, তখন বোঝাই যায় নিজের পকেট ভরানোর তাগিদেই এই ছোটাছুটি। সত্যিই আশ্চর্য লোভ মানুষটার। রাত্রিতে যখন বাড়ি ফেরে তখন ছেলেমেয়ের কাছে এই অসৎ চেহারাটা নিয়ে কীভাবে দাঁড়ায়, ভেবে পায় না বদন।
ডেলি প্যাসেঞ্জাররা মান্থলি ঠিকঠাক কাটছে কিনা এ ব্যাপারে তীক্ষ্ণ নজর স্বর্ণকারের। মান্থলি শেষ হবার পর এক-দু’দিন লেট হলে যদি ওর কাছে ধরা পড়ে কেউ, ফাইন হয়তো করে না সবসময়, কিন্তু বহু আজেবাজে কথা শুনিয়ে দেয়। মান্থলি আনতে কেউ ভুলে গেলেও একই ট্রিটমেন্ট। এ জন্য ডেলি প্যাসেঞ্জাররা মান্থলি নিয়ে সদাসতর্ক থাকে।
তবু কি কারও মান্থলি কাটতে অথবা আনতে ভুল হয় না? ভুল হলে অনেকসময় সে খবরও পৌঁছে যায় স্বর্ণকারের কাছে। ওর অনেক চর আছে। যে সঞ্জয় মজুমদার স্বর্ণকার নিয়ে ট্রেনে নিত্য এত কথা বলে, সে-ই তো স্বর্ণকারের এক নম্বর চর। কেউ যদি মুখ ফসকে ওর সামনে বলে বসে, মান্থলি আনতে বা কাটতে ভুলে গেছি, অমনি সঞ্জয় আড়ালে গিয়ে স্বর্ণকারকে ফোন করে। কেউ যাতে বুঝতে না পারে, সেজন্য কম্পার্টমেন্টের নাম উল্লেখ করে বলে— ‘এখানে পাখি আছে।’ অমনি পরের স্টেশনে স্বর্ণকার এসে হাজির হয়ে যায় কম্পার্টমেন্টে।
বদনরা কয়েকজন, সঞ্জয় ও স্বর্ণকারের এই গেম জানে। সেজন্য ওরা পারতপক্ষে, ওই জাতীয় কিছু হয়ে গেলে সঞ্জয়ের সামনে বলে না।
সেদিন সঞ্জয় ছিল না। অন্য কারও সামনেও কিছু বলেনি। ছাব্বিশে জানুয়ারি সেদিন। স্কুলে পতাকা উত্তোলন, অনুষ্ঠান। সকালেই আসতে হয়েছিল। বাড়ি ফেরার জন্য সকাল এগারোটা দশের ট্রেনে উঠেই খেয়াল হল, মহাভুল হয়ে গেছে। ছুটির দিন বলেই শান্তিনেকেতনী সাইড ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়েছিল। মান্থলিটা ঢোকানো হয়নি, আর সেটা মনে ছিল না বলে টিকিটও কাটা হয়নি। সকালে বাসে আসার জন্য এদিকে আগে তাকানোর প্রয়োজনও হয়নি। ফাইন দেবার মত অত টাকাও তো কাছে নেই! মুখ শুকিয়ে গেল বদনের।
এই ট্রেনে স্বর্ণকারের থাকার কথা নয়। ও এলে, আসে ন’টা চল্লিশের ট্রেনে আর ফেরেও অনেকদিন ওদের ট্রেনটাতেই। কিন্তু খোঁড়ার পা খানায় পড়ে। আজ ট্রেনটা প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার মুহূর্তে দৌড়তে দৌড়তে ওদের কম্পার্টমেন্টে এসে উঠল স্বর্ণকার। তিন সহকর্মী বসেছিল পাশাপাশি। প্রথমে মুর্তজা, পরে অশ্বিনীদা, আর জানলার ধারটিতে বদন। অশ্বিনীদা রসিক মানুষ। মজার মজার গল্প করছিলেন। বদন খুব জোর করে হাসছিল। বুকে কিন্তু হাপর চলছে। যদি স্বর্ণকার মান্থলি চেক করা শুরু করে তবে অপমান আজ বাঁধা। লোকটা ওদেরকে এতদিন দেখছে, কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস করবে না যে ও মান্থলি আনতে ভুলেছে। এক্ষেত্রে ও ধরেই নেয়, মান্থলি শেষ, কাটেনি ইচ্ছে করে।
ফাইন না করলেও আজও হয়তো স্বর্ণকার অনেক বাজে কথা বলবে। আর সব শেষে, ‘শিক্ষক হয়ে যদি বিনা টিকিটে যাতায়াত করেন, ছাত্রকে কী শেখাবেন’ জাতীয় কথা তো থাকবে অবধারিত। আজ টাকা নিয়ে বেরোলে স্বর্ণকারকে বদন নিশ্চিত বাজে কথা বলতে দিত না।
স্বর্ণকার ওদের কাছাকাছি এসেই এক গাল হেসে দেয়। —‘আজ এই ট্রেনে যে সব! ও আজ তো ছাব্বিশে জানুয়ারি, সকালে স্কুল!’ তারপরেই বলে সেই পরিচিত এবং আজকে বদনের জন্য কাঁপন ধরানো কথাটি, ‘তা এসেছি যখন মান্থলিগুলো একবার চেক করেই যাই।’
প্রথমে মুর্তজার মান্থলি চেক হয়। এরপর অশ্বিনীদা মান্থলি বের করার আগে স্বর্ণকারের দিকে তাকিয়ে বলেন— ‘আগে হাঁ করুন!’
স্বর্ণকার খানিকটা অপ্রতিভ হয়ে থেমে যায়। তবে হাঁ করেও শেষ অব্দি। কারণ ওর লোভী চোখ দেখে নিয়েছে অশ্বিনীদা একটা লজেন্সের ফয়েল ছাড়াচ্ছে। ওকে হাঁ করতে বলা হয়েছে, সেটা মুখে দেবার জন্যই।
অশ্বিনীদা লজেন্সটা স্বর্ণকারের মুখে দিয়েই থামেন না। ছাব্বিশে জানুয়ারি স্কুলে পাওয়া আরও চার-পাঁচটা লজেন্স ঢুকিয়েও দেন ওর বুকপকেটে।
স্বর্ণকার মান্থলি চেকিং মুর্তজাতেই শেষ করে লজেন্স চিবোতে চিবোতে হাসিমুখে এগিয়ে যায় সামনে।
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে বদনের।
ভোটের জন্য সেবার অনেকদিন বন্ধ ছিল স্কুল। যেদিন স্কুল খুলছে মদন মান্থলি কাটার জন্য বেশ তাড়াতাড়িই এল স্টেশনে। দীর্ঘ ছুটির পর প্রথম দিন। অনেক স্কুলই বন্ধ হয়েছিল ওদের মত। স্বভাবতই সেদিনটায় মান্থলির লাইন বেশ লম্বা।
একটু আগেই বদন শুনেছে খবরটা। একটু কি খারাপ লাগছে? লাগার তো কথা নয়! এতকাল স্বর্ণকারকে নিয়ে কম অস্বস্তি, টেনশন তো কম ছিল না! লোকটাকে আপদই মনে হত। আজ থেকে আর সেই আপদটার মুখোমুখি হতে হবে না, এ তো একপক্ষে ভালই হল!
যা শুনেছে সেই অনুযায়ী দৃশ্যটা কল্পনা করে বদন। লোকটা ছুটছে, পিছনে পিছনে ছুটছে স্বর্ণকার। হঠাৎ একটা হোঁচট। হুমড়ি খেয়ে স্বর্ণকার পড়ল প্ল্যাটফর্মে। তাড়াতাড়ি উঠল গাঝাড়া দিয়ে। উঠেই আবার লোকটার পিছনে দৌড়। কিন্তু কয়েক পা যেতেই, বুক ধরে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর সব শেষ।
গাড়িতে সেদিন সবার কাছে হঠাৎ এক চমক। চমক নাকি থাপ্পড়? তবে এমন থাপ্পড়ে কারই বা রাগ হয়, বিশেষ করে এখন! তবে বানরের পোশাক থেকে ফুটফুটে রাজপুত্র বের হওয়াটা বেঁচে থাকলে যদি হত, তবে থাপ্পড়টা অনুতাপের হত না! হয়তো একটা আবিষ্কারের আনন্দই এসে যেত।
কাগজে খবরটা দেখায় সঞ্জয় মজুমদার। টুকরো খবরে উঠেছে। কিন্তু বেশ অনেকটা। সঞ্জয় পড়ে শোনায়। ‘গতবছর রেকর্ড ফাইন কালেকশনের জন্য পুরস্কার পাচ্ছেন পূর্ব রেলের অম্বিকেশ স্বর্ণকার।’
‘এখন আর এ পুরস্কারের কী দাম! লোকটাই তো চলে গেল!’ অনুত্তম হাজরার গলায় বিষণ্নতা ঝরে। যার রেশ থেকে যায় অনেকক্ষণ।
—‘‘খবরটা ঠিকঠাক লিখতেও পারেনি। পুরস্কারের আগে একটা ‘মরণোত্তর’ যোগ করতে হয়! কী যে সব সাংবাদিক হয়েছে আজকাল!’’ ট্রেন থেকে নামার সময়, আপনমনেই গজগজ করে বদন। থাপ্পড়ের আঘাতটা কেন জানি একটু বেশিই পীড়া দেয় ওকে।