Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এবং প্রথম টেলিফোন

এখন বেতার-যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি ও বিকাশের এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, যেখানে প্রায় প্রত্যেকের হাতের মুঠোয় রয়েছে চলমান-দূরভাষ। স্মার্টফোন। ভিডিও কল থেকে কনফারেন্স কল, জুম বা গুগল মিট ইত্যাদির সংযোগ। আজ থেকে দু-দশক আগেও সংযোগের এমন উন্নতির কথা সম্ভবত কল্পনাতেও ছিল না কারও। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের বাল্য-কৈশোর বা তরুণ বয়সে দেখা আঙুল দিয়ে ঘুরিয়ে ডায়াল করা বিএসএনএল-এর কালো রঙের সেই ল্যান্ড-লাইন টেলিফোন যন্ত্রটির কথা ভুলতে বসেছি বলা বাহুল্য। যা ছিল প্রত্যেক অফিসে এবং অনেক বাড়িতে।

টেলিফোন বা দূরভাষ যে অতীব প্রয়োজনের একটি জিনিস, তা আর নতুন করে কাউকেই বলার দরকার নেই। ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি…’ গানের কথায় এক এক সময় মনে হয়, কবি কি তাহলে ‘টেলিফোন’-এ প্রিয়জনের কথা শুনে মনে মনে ‘ফাল্গুনী’ রচনার কথা বলতে চেয়েছিলেন?

সে যাই হোক। টেলিফোনের প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল ২০০৩ সালে লেখা ‘তারবার্তা’ নামের একটি কবিতার কথা। লেখক কবি যশোধরা রায়চৌধুরি। সেই কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন পড়তে ইচ্ছে করছে। শুনুন।

‘চারিদিকে ধসে পড়ছে আগে যা নিশ্চিত ছিল, আশ্বাসের ছিল
যাবতীয় ট্যারিফ স্ট্রাকচার
মোবাইল দখল নিচ্ছে সমস্ত প্রেমের এলাকায়’

শেষ তিনটি লাইন পড়ি—

‘টেলিফোন ক্লান্ত হাসে, কারণ সে জানে, তবু তার আছে বলে
যোগাযোগ আছে,
তার ছিন্ন হয়ে গেলে হৃদয় আর কথাই বলে না’।

বলা নিষ্প্রয়োজন যে, কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে একটি সময়ের কথা। সময় সন্ধিক্ষণের কথা। যে সময়ে মোবাইল ফোন বা সেল ফোন— ল্যান্ড লাইন টেলিফোনের ‘পাশ ঘেষে ঢুকে যাচ্ছে মহব্বৎ-ওয়ালাদের পকেটে পকেটে’! এই যে ট্রাঞ্জিশন এটি চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে কবিতাটিতে।

এরই পাশাপাশি প্রায় একশো সাতচল্লিশ বছর আগের অন্য একটি যুগ সন্ধিক্ষণ ফিরে দেখব আমরা, এই লেখায়। এ ছিল সেই সময়, যখন ‘শব্দশক্তি’-কে ‘বিদ্যুৎ শক্তি’-তে পরিণত করে তারের মধ্যে দিয়ে এক জায়গার কথা দূরবর্তী জায়গায় পাঠানোর মূল নীতি আবিষ্কার হয়েছিল। যার যুগান্তকারী আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল (Alexander Graham Bell, ১৮৪৭-১৯২২)। ‘বিদ্যুৎ’ আবিষ্কারের পরে ‘টেলিফোন’ আবিষ্কার, যোগাযোগ ব্যবস্থায় যা ছিল এক বৈপ্লবিক উদ্ভাবন।

টেলিফোন আবিষ্কারের মাত্র বছর দশেক আগে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। সে সময়ের কথা পড়লে জানা যায় যে, তার আগে জরুরি ডাক ও সরকারি চিঠিপত্র মানুষ পিঠে করে বয়ে নিয়ে যেত বা ঘোড়ার মাধ্যমে পাঠানো হত বা জলপথে জাহাজে করে পাঠানো হত।

১৮৪৭ সালের আজকের দিনে, তেসরা মার্চ, স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় জন্ম হয়েছিল আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের। বাবা এবং দাদু সকলেরই নাম— আলেকজান্ডার বেল। প্রথমে তাঁর কোনও মধ্য (মিডল) নাম ছিল না। এগারো বছর বয়সের জন্মদিনে বাবার কাছে আবদার করলেন, ‘একটি মধ্যনাম চাই’। আর এইভাবে তিনি হলেন ‘আলেজান্ডার গ্রাহাম বেল’।

গ্রাহামের তখন বারো বছর বয়স। মায়ের একটি কঠিন রোগ হল, যার ফলে তাঁর কানে শোনার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকল। ‘মা একেবারে কানে কালা হয়ে যাবেন!’— এই নিদারুণ যন্ত্রণা গ্রাহামের মনে গভীর রেখাপাত করল। মাকে কখনও গান শোনান কখনও পিয়ানো বাজিয়ে শোনান গ্রাহাম। বুঝতে পারেন যে, মা সবকিছু শুনতে পাচ্ছেন না। কিন্তু ছেলে দুঃখ পাবে এই কথা ভেবে, ছেলের সব কথা শুনতে পাচ্ছেন, এমন ভান করছেন। এ সময় গ্রাহাম মনের কথা মাকে বোঝানোর জন্যে হাতের আঙুলের সংকেতের মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে কথা বলার কৌশল আবিষ্কার করলেন। এইভাবে মায়ের কপালে হাত রেখে সুর ও শব্দ সংকেত বোঝাতে সক্ষম হলেন গ্রাহাম।

এখান থেকেই গ্রাহামের শ্রুতিবিদ্যা শেখায় আগ্রহী হয়ে ওঠা। শ্রুতিবিদ্যা, স্পিচ-থেরাপি, দৃশ্য-কথা বিদ্যায় শিক্ষকতা করেছেন তিনি। গ্রাহামের বাবা এবং দাদা দুজনেই মূক ও বধিরদের কথা বলা শেখানো, ইশারায় সংকেতের সাহায্যে মনের কথা বোঝানোর বিদ্যা এবং কৌশলে পারদর্শী ছিলেন। বাবার ইচ্ছেমাফিক গ্রাহামও এই পদ্ধতি শিখে যান এবং এ বিষয়ে আরও পড়াশোনা করে উৎসাহী ও পারদর্শী হয়ে ওঠেন। অধ্যাপনাতেও সফলতা পেয়েছেন গ্রাহাম।

স্কটল্যান্ড এবং লন্ডনে স্কুল পাশ করে তেইশ বছর বয়সে বাবা মায়ের সঙ্গে কানাডাতে অভিবাসী হয়ে এলেন গ্রাহাম। পরে আমেরিকায় ‘বোস্টন স্কুল ফর দ্য ডিফ’-এ শিক্ষকতার কাজ করেন। টেলিফোন আবিষ্কার পরবর্তী খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরে আমেরিকার নাগরিক হন তিনি।

ছাব্বিশ বছর বয়সে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভোকাল-ফিজিয়োলজি’ বিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন গ্রাহাম। এখানেই তাঁর ফোনোগ্রাফ নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করলেন তিনি। উনত্রিশ বছর বয়সে গ্রাহামের টেলিফোনের ‘ইউএস পেটেন্ট’ গ্রান্টেড হল।

মাত্র উনিশ মাস বয়সে সম্ভবত স্কারলেট অসুখে আক্রান্ত হয়ে হেলেন কেলারের চোখের দৃষ্টি ও কানে শোনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছিল। ছ-বছরের শিশুকন্যা হেলেনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাহামের কাছে সাহায্যের জন্যে এলেন হেলেনের বাবা। তখন টেলিফোনের আবিষ্কর্তা হিসেবে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন গ্রাহাম। তবু হেলেন কেলারের অসহায় বাবার অনুরোধ গভীর মমতার সঙ্গে শুনেছেন গ্রাহাম এবং তাঁরই হস্তক্ষেপে বোস্টনের ‘পারকিন্স স্কুল অফ ব্লাইন্ডস’-এ ভর্তি হন হেলেন কেলার। সেখানে হেলেন ব্রেল পদ্ধতিতে লিখতে, বলতে এবং পড়তে শেখেন। হেলেন কেলার তাঁর আত্মজীবনী গ্রাহাম বেলকে উৎসর্গ করে লেখেন— ‘…door through which I should pass from darkness into light.’ গ্রাহাম বেল আজীবন হেলেন কেলারের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছিলেন।

হেলেন কেলার ও গ্রাহাম বেল। আজীবন বন্ধুত্ব বজায় ছিল দুজনের।

গ্রাহাম বেলের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে, ওয়ারলেস আলোক-টেলিফোন (দ্য বেল ফোটো-ফোন)। সেলফোন আবিষ্কারের একশো বছর আগে, আলোক রশ্মিগুচ্ছের সাহায্যে সংকেত, শব্দ এবং ধ্বনি পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন গ্রাহাম। যুগান্তকারী এই আবিষ্কার। বলা বাহুল্য, যা টেলিফোনের চেয়েও অনেক বড় আবিষ্কার।

ধ্বনি ও শব্দবিজ্ঞানে অবদানের জন্যে গ্রাহামের মৃত্যুর পরে তাঁর সম্মানে শব্দ (সাউন্ড)-এর একক হয় ‘বেল’। আর ‘বেল’-এর এক দশমাংশ মাত্রাকে বলা হয়ে থাকে ‘ডেসিবেল’। ‘নয়েজ’-এর মাত্রা হিসেবে এই ‘ডেসিবেল’ একক আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। মৃত্যুর দুদিন পরে যেদিন তাঁর দেহ শায়িত করা হয়েছিল মাটির মধ্যে, সেদিন উত্তর আমেরিকা ও কানাডার সমস্ত টেলিফোন এক মিনিটের জন্যে বন্ধ করে রাখা হয় গ্রাহামের সম্মানে। ষাট হাজার টেলিফোন অপারেটর কাজের জায়গায় কোনও ফোন সংযোগের কাজ না করে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী গ্রাহাম বেল নাম যশ প্রতিপত্তি— এসব বিষয়ে ছিলেন সম্পূর্ণ উদাসীন। ব্যবসায়িক ও সাংসারিক বিষয়েও তিনি ছিলেন নিরাসক্ত। সারা জীবন তিনি বিজ্ঞান আবিষ্কারের ভাবনায় বুঁদ হয়ে থাকতেন। তাই নানান বিড়ম্বনা ও প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। টেলিফোন উদ্ভাবনের কৃতিত্ব কার, তা নিয়েও একদা হয়েছে তুমুল বিতর্ক, এমনকি মামলা-মোকদ্দমাও। দীর্ঘ কুড়ি বছর চলেছিল এই মামলা। সংবাদপত্রে ব্যঙ্গচিত্র ছাপা হয়েছে। গ্রাহাম বেলের যোগ্যতা সম্পর্কে নানান প্রশ্ন উঠেছে, তিনি বিদ্যুৎ বিজ্ঞান নিয়ে কিছু না-জেনেই টেলিফোন উদ্ভাবন করেছেন ইত্যাদি। একসময় নানান অপপ্রচার আর কুৎসায় জর্জরিত এবং হতাশ হয়ে পড়েন গ্রাহাম। কানাডার মন্ট্রিয়লে একবার বসন্ত রোগ ছড়িয়ে পড়ল, সেখানে অপপ্রচার চলল যে, টেলিফোনের তারের মধ্যে দিয়েই এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ঘেরাও করা হল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। টেলিফোন কর্মীদের ওপর চড়াও হলেন সাধারণ মানুষ। এইসব নানা কারণে গ্রাহামের কাছে টেলিফোন একসময় অসহ্য হয়ে উঠেছিল। দারুণ মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে জীবন কেটেছে।

টেলিফোন আবিষ্কারের জন্যে বিশ্বজুড়ে নাম যশ প্রতিপত্তি সত্ত্বেও মূক ও বধির মানুষদের প্রতি তিনি তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা কখনওই ভোলেননি। মূক-বধিরদের লেখাপড়া শেখানোর জন্যে একাধিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং নিজে সেখানে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন। বিজ্ঞানের কথা বাদ দিলেও কেবল অধ্যাপক হিসেবে মূক ও বধির মানুষদের জন্যে তাঁর যা অবদান, তার জন্যেই তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

আজ ৩ মার্চ। উদ্ভাবক, ইঞ্জিনিয়ার এবং আমেরিকান টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ কোম্পানির যুগ্ম প্রতিস্থাপক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গঙ্গাজলে এই গঙ্গাপুজো।

চিত্র: গুগল
5 4 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
4 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
নুশান
নুশান
2 years ago

অনেক ইন্টারেস্টিং ব্যাপার জানতে পারি এই লেখাগুলো থেকে। কৃতজ্ঞতা।

Siddhartha Majumdar
Siddhartha Majumdar
2 years ago

ভালো লাগলো মন্তব্য পড়ে

মোহাম্মদ কাজী মামুন
মোহাম্মদ কাজী মামুন
2 years ago

খুব খুব ভাল লাগল এই লেখাটি। কিছু জানা ছিল আগেই। কিন্তু হেলেন কেলারের সাথে তার বন্ধুত্ব, টেলিফোনের তার দিয়ে রোগের জীবানু ছড়িয়ে পড়ার গুজব, ওয়ারলেস আলোক-টেলিফোন – এসব জানা ছিল না। মায়ের না বুঝেও বুঝতে পারার অভিনয়ের জায়গাটা খুব মোচড় দিয়ে গেল। ..লেখক কে কৃতজ্ঞতা জানাই এত সুন্দর লেখাটির জন্য।

Siddhartha Majumdar
Siddhartha Majumdar
2 years ago

আপনার সহৃদয় মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ জানাই

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »