Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

‘এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তুর্য’

আপাতদৃষ্টিতে গড়পড়তা বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করলে মনে হতে পারে, কাজী নজরুল ইসলামের (১৮৯৯- ১৯৭৬) যা হবার কথা নয়, তার চেয়ে বেশি কিছুই হয়েছিলেন বা হতে পেরেছিলেন। যতটুকু পারার কথা নয়, তার চেয়ে বরং বেশিই পেরেছিলেন। যতটুকু চেয়েছিলেন, তার চেয়ে অংশত বেশিই পেয়েছিলেন। অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম নেয়া, গ্রামের মক্তব থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণকারী একজন দুখু মিয়ার নানা বাঁকবদলের মধ্য দিয়ে নজরুল হয়ে ওঠা সত্যিই এক বিস্ময়কর পরিক্রমা। চুরুলিয়া নামের যে প্রান্তিক গ্রামে তাঁর জন্ম, সেটি পশ্চিমবঙ্গের একটি অতিসাধারণ গ্রাম। আজ থেকে একশো তেইশ-চব্বিশ বছর আগে বাংলার কুলীন সমাজে গ্রামটির পরিচিতি ছিল না বললেই চলে। নজরুল যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সেটিও ছিল অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক পরিবার। বাবা ফকির আহমেদ মসজিদ-মাজারে খাদেমগিরি করে যৎসামান্য উপার্জন করতেন, জমিজমাও সামান্য ছিল, কিন্তু তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারটি এলোমেলো হয়ে যায়। বাবার যখন মৃত্যু হয়, তখন নজরুলের বয়স মাত্র নয় বছর। তখন থেকেই তিনি নেমে পড়েন জীবিকা ও উপার্জনের কঠিন-কঠোর সংগ্রামে। এছাড়া তার সামনে কোনও উপায় বা বিকল্প ছিল না, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েও কেউ এগিয়ে আসেননি। মসজিদে ইমামতি, মাজারের খাদেমগিরি, বাড়ি বাড়ি ধর্মীয় গ্রন্থাদি পাঠ, লেটোর দলে গান বাঁধা— সবই করেছেন কেবলই নিত্যদিনের অন্নসংস্থান তথা জীবিকার তাগিদে। অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার গাঢ় অন্ধকার তাঁকে সারা জীবন ঘিরে রেখেছিল। সাহিত্য-সঙ্গীত ক্ষেত্রে যশ-খ্যাতি ও অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছিলেন বটে, তবে আর্থিক সংকট ও অনিশ্চয়তার অমানিশা থেকে তিনি কোনওদিন-ই মুক্তি পাননি। সংকটময় বৈরী পরিবেশে বেড়ে ওঠা, জীবিকার জন্য সর্বদা চিন্তাগ্রস্ত মানুষ সাধারণত আর পাঁচটা মানুষের চেয়ে আলাদা রকমের হয়ে থাকেন। সে মানুষটি যদি কবি-সাহিত্যিক কিংবা সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব হন, তাহলে তিনি আরও সেনসিটিভ, আরও প্রতিভাধর হয়ে ওঠেন। আর্থিক সংকট-অনিশ্চয়তা, পারিবারিক ডিট্যাচমেন্ট, মায়ের প্রতি ক্ষোভ-অভিমান নজরুলকে আলাদা রকমের এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। শৈশব-কৈশোরে তিনি নিজ পরিবারে কিংবা গ্রামে থিতু হতে পারেননি, ঘুরে বেড়িয়েছেন এ গ্রাম থেকে আর-এক গ্রামে, পাননি প্রিয়জনদের স্নেহ-সান্নিধ্য বা সমবেদনা। নির্ভরতাহীন রুক্ষ পরিবেশের মধ্যে তাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছে শৈশব ও কৈশোর। না-পাওয়ার বেদনা, চারপাশের রুক্ষতা, ভেতরে পুঞ্জীভূত ক্রোধ, অভিমান, ক্ষোভ, দুর্বিনয় তাঁর মধ্যে জন্ম দেয় অন্যের থেকে আলাদা হবার প্রবল তাগিদ, নিজেকে নিজের মতো করে নির্মাণের অস্বাভাবিক প্রবণতা। সেই তাগিদ, সেই প্রবণতা থেকেই শহুরে আলোকপ্রাপ্ত বিদ্যায়তন থেকে শিক্ষাবঞ্চিত একজন দুখু মিয়া কিংবা ‘নজর আলি’ বাংলা সাহিত্যমঞ্চে আবির্ভূত হন কাজী নজরুল ইসলাম হিসেবে।

নজরুল যখন বাংলা সাহিত্যভুবনে আবির্ভূত হচ্ছেন, তখন তামাম দুনিয়ার সারস্বত সমাজের দৃষ্টি রবীন্দ্রনাথের দিকে, কুলীন বয়ানে তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলা সাহিত্যের প্রধান স্তম্ভ। সারা দুনিয়া তিনি চষে বেড়াচ্ছেন প্রাচ্যের মর্মবাণী শোনানোর জন্য। আজ আমেরিকা, কাল জাপান, পরশু রাশিয়া, তার পরের দিন আর্জেন্টিনায়। সারা পৃথিবী তাঁকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তাঁর স্পর্শ পেয়ে ধন্য হতে চাইছে। এমন চোখ ঝলসানো রাবীন্দ্রিক ঔজ্জ্বল্যের ভেতর ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’, তখন তিনি তেইশ বছরের এক টগবগে যুবক। অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয় ‘মোহরম’, ‘কোরবানী’, খেয়াপারের তরণী, ‘শাত-ইল-আরব’-এর মতো ইসলামি অনুষঙ্গের কবিতার পাশাপাশি হিন্দু দেবী ও উৎসব নিয়ে রচিত রক্তাম্বর ধারিণী মা, ‘আগমনী’। এ ছাড়াও অন্তর্ভূক্ত হয় ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহীর’ মতো অনবদ্য কবিতা— যেসব কবিতায় হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান পুরাণ ও অনুষঙ্গ অসাধারণ নৈপুণ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতার্তুককে নিয়ে লেখা ‘কামাল পাশা’ কবিতাও অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এই কালজয়ী কাব্যগ্রন্থে। ‘অগ্নিবীণা’র দ্বিতীয় কবিতা ‘বিদ্রোহী’ রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালে ডিসেম্বর মাসে ক্রিসমাসের সময় তালতলা লেনের একটি বাড়িতে যেখানে কমরেড মুজাফফর আহমেদও থাকতেন। এই কবিতা যখন রচিত হচ্ছে তখন উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামে উত্তাল সারা ভারতবর্ষ। অসহযোগ আন্দোলন, চরকা আন্দোলন, সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলনের উন্মাদনায় প্রকম্পিত আসমুদ্র-হিমাচল। ভারতবর্ষের অন্যান্য তরুণের মতো নজরুলও সেই অগ্নিযুগের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধী দেশমুক্তির জন্য যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তাতে তরুণ নজরুলও সাড়া দিয়েছিলেন। তবে খুব বেশিদিন তিনি গান্ধীবাদে আস্থা রাখতে পারেননি, কারণ গান্ধীর অহিংসতত্ত্বে তাঁর তেমন আস্থা ছিল না। কারণ ইংরেজ আমলের যে রাষ্ট্র তার প্রবল-প্রতাপ ও সহিংস চরিত্র সম্পর্কে তিনি বেশ সচেতন ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি গান্ধীবাদ তথা নরমপন্থী জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ ত্যাগ করে শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য বিপ্লবী মতাদর্শের দিকে আকৃষ্ট হন। সেই সময়ের অগ্নি ও উত্তাপ ধারণ করে রচিত হয় ‘বিদ্রোহী’, কবিতাটিকে অনেকেই বিপ্লবীদের ইশতেহারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিদ্রোহী এমন এক অনলবর্ষী দৃপ্ত লেখনী যা সে সময়ে তরুণ প্রজন্মকে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে সংঘবদ্ধ হতে, কারাগারের অন্ধকার আর ফাঁসির মঞ্চকে অগ্রাহ্য করতে এবং মৃত্যুকে তুচ্ছ করতে সাহস যুগিয়েছে। ‘এই একটি কবিতা যার গায়ে কোথাও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের উল্লেখ নেই।… ইংরেজ তাড়ানোর জন্য গান্ধীর যা ভূমিকা আছে, ১৩৯টি লাইনের ভূমিকা তার চেয়ে কম নয়। যে-কবিতা সেদিন চট্টগ্রাম থেকে কাকদ্বীপের ঘরে ঘরে ধ্বনিত হয়েছে, বোমা বাঁধতে বাঁধতে কত বিপ্লবীর হাত উড়ে গেছে, তবু উঠে দাঁড়াবার জোর খুঁজে পেয়েছে কবিতাটির প্রতিধ্বনি শুনে। যে-মা ছেলেকে ভাত দিতে না পেরে উঠোনে বসে কাঁদছিলেন, সে-ই অভুক্ত মা ছেলেকে কোলে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে শুনেছেন কবিতাটা।’ (সুবোধ সরকার, একটি উপমহাদেশ, একটি কবিতা’, দেশ ১৭ জুলাই ২০২২)। এই কবিতা শুনে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি সেদিন নজরুলকে জড়িয়ে ধরেননি, জড়িয়ে ধরেন অগ্নিগর্ভ ভারতবর্ষের এক নির্ভীক কণ্ঠস্বরকে। সত্যি বলতে কী, পরাধীন ভারতবর্ষের পুলিশ যেমন এই কবিতাকে ভয় পেত, স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশও ভয় পেয়েছে। ব্রিটিশ গোয়েন্দারা অনেক স্ট্র্যাটেজি নিয়েও এই কবিতার আগুন ঠেকাতে পারেনি। লন্ডন হেডকোয়ার্টার পর্যন্ত এই কবিতার উৎপাত পৌঁছে গিয়েছিল, যদিও ব্রিটিশ সরকার কবিতা ব্যান করেনি।

নজরুলের আগে বাংলা সাহিত্যে আর কেউ এমন করে বলতে পারেননি ‘আমি চিরদুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস’ কিংবা ‘আমি মানি নাকো কোনো আইন’। বাংলা সাহিত্যে ‘প্রোটেস্ট পয়েট্রি’ রচনার ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃতের দায়িত্ব পালন করেন আর তার সূচনা হয় ‘বিদ্রোহী’-র মাধ্যমে। বিদ্রোহী তথা অগ্নিবীণা কাব্যই তাঁকে নিয়ে গেল জনপ্রিয়তার শীর্ষে; তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ‘অগ্নিবীণা’ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে কারণে-অকারণে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যুগলরূপে নজরুলের নামটিও উচ্চারিত হতে থাকে। উপনিবেশিত বাঙালি অভিজাত ও হিন্দু-মুসলিম রক্ষণশীলদের দ্বারা ব্যাপক সমালোচিত নজরুলের জন্য এ এক পরম প্রাপ্তিই বলতে হয়।

কৈশোর থেকে নজরুলকে একাই সবকিছু করতে হয়েছে; লড়তে হয়েছে সব ধরনের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। প্রতিকূল প্রতিবেশ, অনিশ্চয়তা, সহজাত ভাবাবেগ তাঁকে মানসিকভাবে স্থির হতে দেয়নি। এ কারণে তাঁর নিজের নির্দিষ্ট কোনও মতাদর্শ ছিল না। নিজ রাজনৈতিক পথ ও পরিচয়ও ঠিক করতে পারেননি সারা জীবন। কখনও বলশেভিক বিপ্লবের সফলতায় উজ্জীবিত হয়েছেন, আবার গান্ধীজি-চিত্তরঞ্জন দাশের প্রতিও আবেগ সংবরণ করতে পারেননি। প্রগতিবাদী কামাল আতার্তুককে নিয়ে যেমন কবিতা লিখেছেন, আবার কামালের বিপরীত মেরুতে থাকা রক্ষণশীল আনোয়ার পাশাকে নিয়েও মাতামাতি করেছেন। তারপরও সাম্প্রদায়িকতা ও উপনিবেশ বিরোধিতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ, দৃঢ় ও অবিচল। ধর্মীয় সম্প্রীতি চেতনা ছিল তাঁর হৃদয়ের মর্মমূলে প্রোথিত। প্রথম গ্রন্থ তিনি উৎসর্গ করেছিলেন ব্রিটিশ-বিরোধী সংগ্রামের বিপ্লবী বীর বারীনকুমার ঘোষকে। সাধারণভাবে প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ প্রিয়জনকে উৎসর্গ করা হয়, কিন্তু তিনি তা করেননি। সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি, গোঁড়ামি, ধর্মীয় সংকীর্ণতা তাকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি বলে তিনি এ কাজটি করতে পেরেছিলেন। উৎসর্গপত্রে তিনি লিখলেন, ‘ভাঙা বাংলার রাঙা যুগের আদি পুরোহিত সাগ্নিক বীর বারীন্দ্রকুমার ঘোষ শ্রীচরণাবিন্দেষু’। নজরুল ইসলাম সকল ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং মানবধর্ম ছিল তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় ধর্ম। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন মানবপ্রেম বৈষম্য ও হিংসার অবসান ঘটায়। যে-মানুষ নিজ ধর্ম গভীরভাবে জানে, সে অন্য ধর্ম ঘৃণা করে না বরং অন্য ধর্মের সত্য গ্রহণ করার চেষ্টা করে। তিনি ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করার নীতি কখনওই সমর্থন করেননি। কবিতার মতো তাঁর প্রবন্ধসমূহের প্রতিটি শব্দাবলি ছিল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে খাপখোলা তলোয়ার। ‘হিন্দু মুসলমান’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘অবতার পয়গম্বর কেউ বলেনি আমি হিন্দুর জন্য এসেছি, আমি মুসলমানের জন্য এসেছি, আমি ক্রিশ্চানের জন্য এসেছি, তারা বলেছেন আমরা মানুষের জন্য এসেছি, আলোর মতন সকলের জন্য’। তিনি রাজনীতির মানুষ ছিলেন, রাজনীতি ও রাজনৈতিকতা তাঁর কবিতার প্রধান অনুষঙ্গ, তারপরও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ছিলেন ঘোর বিরোধী। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম আগাগোড়া মি. জিন্নাহের দ্বিজাতিতত্ত্ব ও পাকিস্তান বিরোধী ছিলেন। স্বলিখিত সম্পাদকীয়র নীচে তাঁর স্বাক্ষর থাকত। একাধিক স্বাক্ষরিত রচনায় তিনি কঠোর ভাষায় পাকিস্তান পরিকল্পনা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের সমালোচনা করিয়াছিলেন।’ (আবু জাফর শামসুদ্দীন, ‘আত্মস্মৃতি’)

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রাম এক পর্যায়ে ধর্মীয় উগ্রতায় রূপ নেয় এবং এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ধর্মীয় উন্মত্ততা হানাহানি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভয়াবহরূপে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২৬ সালের ২ এপ্রিল কলকাতার রাজারাজেশ্বরী মিছিলকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বেধে যায়। ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর মদদপুষ্ট এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নজরুলকে ভীষণভাবে পীড়িত করে। দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে সাবধানবাণী উচ্চারণ করে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প মাখানো বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতায় লেখেন:
‘‘অসহায় জাতি মরেছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ/ কাণ্ডারী। আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ/ ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম’? এই জিজ্ঞাসে কোন জন/ কাণ্ডারী! বলো, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।” (সর্বহারা)। কৃষ্ণনগরে কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলনে গানটি প্রথম গাওয়া হয়। হিন্দু-মুসলমান ভেদবুদ্ধি ও উগ্রচিন্তার বিরুদ্ধে তাঁর কবিতার পঙ্‌ক্তি সব সময়ই ঝলক দিয়ে উঠেছে। ধর্মান্ধ ও মুর্খ দাঙ্গাবাজদের হানাহানিতে বিরক্ত হয়ে তাদের প্রতি বিদ্রূপ শেল নিক্ষেপ করে তিনি রচনা করেছেন:
‘খালেদ আবার ধরিয়াছে অসি, অর্জুন ছোড়ে বাণ।/ জেগেছে ভারত, ধরিয়াছে লাঠি হিন্দু মুসলমান।’ হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতি যখন দাঙ্গায় রূপ নেয় তখনও তিনি হিন্দু-মুসলমান মিলনের কথা বলেছেন, প্রচার করেছেন আকবরের দ্বীন ই-ইলাহি মতবাদ। মধ্যযুগের সন্ত কবীর-দাদু ধর্ম সমন্বয়ের জন্য যে পথে চলার সাধনা করেছেন ধ্যানে ও জীবনচর্যায়, সে পথে নজরুলও চলতে চেয়েছেন আমৃত্যু।

ওই একই সময়ে (১৯২৬) দাঙ্গার বিরুদ্ধে রচিত ‘মন্দির-মসজিদ’ প্রবন্ধেও তিনি লিখেছেন: ‘হিন্দু মুসলমানি কাণ্ড বাধিয়া গিয়াছে। প্রথমে কথা কাটাকাটি, তারপরে মাথা ফাটাফাটি আরম্ভ হইয়া গেল। আল্লাহ ও মা কালীর প্রেস্টিজ রক্ষার জন্য যাহারা এতক্ষণ মাতাল হইয়া চিৎকার করিতেছিল তাহারাই যখন মার খাইয়া পড়িয়া যাইতেছিল দেখিলাম, তখন আর তাহারা আল্লামিঞা বা কালী ঠাকুরানীর নাম লইতেছে না।’ ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা কীভাবে মানুষের শুভবোধ, নৈতিকতা ও মানবিকতা ধ্বংস করে হিংসায় উন্মত্ত পশুতে পরিণত করে, তা তিনি ‘মন্দির মসজিদ’ প্রবন্ধে ব্যাখ্যা করেছেন।

নজরুল যে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ‘পশুর দল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, সেই দল আজও উপমহাদেশ জুড়ে সক্রিয় রয়েছে। তারা আজও হিন্দু ও বৌদ্ধদের মন্দির, মুসলমানদের মসজিদ-দরগাহ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িতে হামলা চালাচ্ছে ও অগ্নি সংযোগ করছে। ধর্মের নামে নৃশংসভাবে মানুষ-হত্যা করছে, নানা ফ্রন্টে বিভক্ত হয়ে সমাজ-রাষ্ট্রে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মন্দিরের পুরোহিত, মঠের যাজক, আশ্রমের ঋত্বিক ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে চলেছে। রাজনীতির পাশাপাশি কেউ কেউ বুদ্ধিবৃত্তিক রাস্তায় খণ্ডিত ও বিকৃত বক্তব্য উপস্থাপন করে হিংসা-বিদ্বেষ প্রচার করে চলেছে। নজরুল এই ধর্মান্ধ জাত-জালিয়াত বদমায়েসদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন তাঁর গানে-কবিতায়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরূদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও বিবমিষা প্রকাশ করেছেন। ‘জাতের নামে বজ্জাতি’ কবিতায় তিনি জাতপাত, ছুঁৎমার্গ, ধর্মের নামে বাড়াবাড়িকে তিরস্কার করে বলেছেন, ঈশ্বরের কোনো জাত নেই, তাঁর কাছে সকল ধর্ম ও মানুষ সমান, টিকি-টুপির মূল্য নেই। ধর্মের নামে যারা খুনোখুনি করে, নজরুল তাদের ‘ধর্ম-মাতাল’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, ‘ইহারা ধর্ম-মাতাল। ইহারা সত্যের আলো পান করে নাই, শাস্ত্রের এলকোহল পান করিয়াছে।’ মদ-মাতালদের যেমন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, তেমনই ধর্ম-মাতালদেরও স্বাভাবিক বোধ-বুদ্ধি থাকে না। তারা মানুষরূপী হিংস্র জানোয়ারে পরিণত হয়। হিংস্র জানোয়ারের পরিণতি যেমন এক পর্যায়ে করুণ মৃত্যু, তেমনই ধর্ম-মাতালের সামনেও করুণ মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প থাকে না।

নজরুল রোমান্টিক অনুভবে সব সময় সুন্দর, সম্প্রীতিময়, কল্যাণময় সমাজ প্রত্যাশা করেছেন। তাই তাঁর বিদ্রোহ অন্যায়, অসত্য, অসুন্দরের বিরুদ্ধে; কবিতায় বিদ্রোহ সামন্তপ্রথা, শাস্ত্রাচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। নজরুলের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ঘুমন্ত জাতিকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করেছে। তারপরও কথা থাকে যে, তাঁর অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদ ও সমন্বিত ধর্মচেতনা সমকালে সর্বতোভাবে প্রশংসিত হয়নি বরং নিন্দিত হয়েছে ঢের বেশি। হিন্দু সমাজ বিশেষ করে, রক্ষণশীল হিন্দুরা তাঁকে উপেক্ষা করতে চেয়েছে। সংস্কৃতিবান হিন্দুরা তাঁর গান পছন্দ করতেন, তাঁকে কখনও কখনও গৃহেও আমন্ত্রণ জানাতেন, কিন্তু ব্রাহ্মণ নয় জেনে নজরুলের উপস্থিতিতে অন্যরা অস্বস্তি বোধ করতেন। আর মুসলমান রক্ষণশীলরা তো তাঁকে ধর্মদ্রোহী, কুলাঙ্গার, শয়তান, নাস্তিক, ফেরাউন-সহ নানা অপঅভিধায় অভিহিত করে। নজরুল তাঁর সমালোচকদের আচরণ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন, কিন্তু তাদের খুব একটা পাত্তা দিতে চাননি। বৈরী পরিবেশ, বিরুদ্ধ সমালোচনা সত্ত্বেও ধর্মীয় গোঁড়ামির কাছে আত্মসমর্পণ করেননি তিনি। বিরুদ্ধ পরিবেশে দাঁড়িয়ে ‘আমার সুন্দর’ প্রবন্ধে নজরুল লিখেছেন, ‘আমার কেবলই যেন মনে হত, আমি মানুষকে ভালবাসতে পেরেছি। জাতি, ধর্ম, ভেদ আমার কোনো দিনও ছিল না আজও নেই।’ (আব্দুল কাদির সম্পাদিত নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, ১৯৯৬, বাংলা একাডেমি, ঢাকা। পৃ. ৩৫।)

ধর্ম বা সম্প্রদায় নয়, মানুষই ছিল তাঁর আরাধ্য। আর তাই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে আপন করে নিতে পারতেন আর এ অলৌকিক ক্ষমতাও তাঁর ভেতরে ছিল। তিনি যখন সাহিত্যচর্চা করেছেন তখন সারা ভারতবর্ষ জুড়ে চলছিল ধর্মের নামে হানাহানি। ব্রিটিশদের ভেদনীতির কারণে ধর্মীয় বিরোধ ও হানাহানি যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখনও তিনি আচারসর্বস্ব ধর্মের বিরূদ্ধে এবং মানব সম্প্রীতির সপক্ষে বলিষ্ঠভাবে উচ্চারণ করেন:
‘আমি ব্রহ্ম চাই না, আল্লাহ চাই না, ভগবানও চাই না। এই সব নামের কেউ যদি থেকে থাকেন তিনি নিজে এসে দেখা দিবেন। আমার বিপুল কর্ম আছে। আমার অপার অসীম ধরিত্রী মাতার ঋণ আছে।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৫)

সত্য, সুন্দর, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির ধ্যান ও স্তবগান ছিল নজরুলের জীবন ও সৃষ্টিবিশ্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি মনে করতেন, ইসলাম বা কোনও ধর্মের শাস্ত্র নিয়ে সাহিত্য করা যায় না, তবে ধর্মের অন্তর্নিহিত নির্যাস বা সারসত্য নিয়ে করা যেতে পারে। তিনি সবার বা স্ব-সম্প্রদায়ের কাছে প্রিয় হয়ে থাকার জন্য লোভ বা প্রলোভনের কাছে মাথা নত করেননি বরং স্বভাবগত কারণে ধর্মের বিষয়ে নির্মোহ ছিলেন। তাঁর অবস্থান ছিল চিরন্তন ও সত্যধর্মের সপক্ষে, অসুন্দরের ছেদন করে সুন্দরের পক্ষে। ‘যে পথে যেতে হবে সে পথে তুমি একা, নয়নে আঁধার রবে ধেয়ানে আলোক রেখা’— রবীন্দ্রনাথ একটি গানে এ কথা বলেছেন। সব সৃষ্টিশীল সাধককে আঁধার পেরিয়ে আলোর পথ ধরে একাই এগিয়ে যেতে হয়। নজরুলকেও একা যেতে হয়েছে ধর্মান্ধতা, শাস্ত্রাচার, গোঁড়ামি পেরিয়ে মানবিকতা ও সম্প্রীতির পথে। এই পথচলায় তিনি সন্ত্রস্ত, ক্লান্ত বা দ্বিধান্বিত ছিলেন না কখনও। কারণ তাঁর সঙ্গে ছিল বাংলার অন্তর ও বাহিরের পরম ঐশ্বর্যের উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্য। তাঁর মনে হয়েছে, ‘এত ফুল, এত পাখি, এত গান, এত সুর, এত কুঞ্জ, এত ছায়া, এত মায়া, আর কোথাও নেই। এত ধর্মবোধ— আল্লাহ ভগবানের উপাসনা, উপবাস, উৎসব আর কোথাও নেই।’ আর তাই ‘বাঙালির বাঙলা’ প্রবন্ধে তিনি বলেছেন:
“বাঙালি যেদিন কর্মবিমুখতা, জড়ত্ব, মৃত্যু-ভয়, আলস্য, সংকীর্ণতা ত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে, ‘বাঙলা বাঙালির হোক’ সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে। কারণ বাংলা মহামানবের মিলন তীর্থ, বাংলা নিত্য সুন্দর, নিত্য পবিত্র।”(নবযুগ, ৩ বৈশাখ ১৩৪৯)

দ্বিধাহীনভাবেই বলতে হয় যে, নজরুল তাঁর কালেও জনপ্রিয় ছিলেন, একালেও রয়েছেন। জনপ্রিয়তার পেছনে মূল কারণ ছিল, তিনিই একমাত্র সাহিত্যিক প্রতিনিধি যাঁর সঙ্গে সাধারণ মানুষের সখ্য সম্পর্ক ছিল এবং তাদের আবেগ বুঝতে পারতেন, তাদের ভাষায় লিখতে ও বলতে পারতেন। গত শতকের দ্বিতীয় দশকের মাঝামাঝিতেই তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ, পরে গান একেবারে আমজনতার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। প্রশ্ন জাগে, কীভাবে তা সম্ভব হল? হুমায়ুন কবীরের ভাষায় বলা যায়, বাংলার বিপুল কৃষকসমাজের সঙ্গে ছিল নজরুলের গভীর আত্মীয়তা। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও ওই কথা প্রতিধ্বনিত করে বলেন, নজরুল কৃষক পরিবারের সন্তান, সে কারণেই তাঁর রচনা এত দ্রুত কৃষকসমাজকে আচ্ছন্ন করতে পেরেছে। তাছাড়াও বাঙালির জাগরণকালে সমকাললগ্ন যুগ-প্রবর্তক কবি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেও তিনি বিপুল জনমানুষের চিত্তে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন। আজও নজরুলের সুরে স্বরে অনুষ্ঠানের প্রথম প্রদীপ জ্বলে, সব ধর্মের পার্বণে-উৎসবে আমেজ তৈরি হয়।

নজরুলের জীবনচর্যা ও সৃষ্টিবিশ্বের সবখানে রয়েছে কেবল সমন্বয় ও সম্প্রীতি ভাবনার উজ্জ্বল উপস্থিতি। তিনি তাবৎ ধর্মের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য গভীরভাবে আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি বাঙালির প্রাণের কবি হতে পেরেছিলেন। ধর্মান্ধতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নীচে বসেও বাঙালির এই প্রিয় কবি মরণপণ লড়াই করেছেন সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণতা এবং সংঘবদ্ধ আঁধারের বিরূদ্ধে। ‘বিদ্রোহী’-তে নজরুল যে অভেদ সুন্দর, সাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন তা থেকে তিনি বিচ্যুত হননি আমৃত্যু। ১৯২৯ সালে ১৪ এপ্রিল ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে দেয়া অভিভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলেই আমি এই দেশের এই সমাজের নই। আমি সকল দেশের, সকল মানুষের, সুন্দরের স্তবগান আমার উপাসনা। যে কুলে, যে সমাজে, যে ধর্মে, যে দেশেই জন্মগ্রহণ করি সে আমার দৈব।’

১৯৪১ সালে কলকাতা মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির রজতজয়ন্তীর উৎসবে জীবনের সবশেষ ভাষণে ঋষির মতো মরমী সুরে কবি বললেন, ‘অসুন্দরের সাধনা আমার নয়। আমার আল্লাহ পরম সুন্দর। তিনি আমার কাছে নিত্য প্রিয়ঘন সুন্দর, রসঘন সুন্দর, আনন্দঘন সুন্দর।’ এই ভাষণে তিনি ঔপনিষদিক ভাবাদর্শের সঙ্গে ইসলামি মরমী ভাবনার সংশ্লেষ ঘটিয়েছেন— যেখানে নিহিত আছে নজরুলের সম্প্রীতি ভাবনার বীজমন্ত্র। ১৯২৯ ও ১৯৪১ সালের দুটি ভাষণ মূলত একই সুর ও সূত্রে গাঁথা।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার অনন্য প্রতিভূ নজরুলকে আমরা নানা পরিচয়ে চিনি। তিনি ছিলেন বিদ্রোহী, ছিলেন প্রেমিক ও সাম্যবাদী। ‘এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তুর্য’ নিয়ে বাংলা সাহিত্যে নজরুলের আত্মপ্রকাশ। সুষম, ন্যায়ানুগ, ভেদবুদ্ধিহীন, কল্যাণময় সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর স্বপ্ন। আমাদের জাতি ও সমাজকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার জন্য তাঁকে জীবনের নানাপর্বে নানা ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। কখনও কবি, পত্রিকা-সম্পাদক, কখনও অভিনেতা, চলচ্চিত্রকার কিংবা সমাজ সংস্কারক হিসেবে। তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ মহত্তম বাঙালি কবি; যিনি বাঙালির সামগ্রিকতা, সম্প্রীতি ভাবনা, সমন্বয়বাদী ধর্মচিন্তা ধারণ করতে পেরেছিলেন। আজ চারদিকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। এই অন্ধ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে কাজী নজরুল ইসলাম হতে পারেন প্রধান সহায়ক ও সারথি। অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, সুস্থ বাংলাদেশ বিনির্মাণেও নজরুলচর্চা খুবই দরকার।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar
সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar
1 year ago

একটি জরুরি এবং খুব ভালো লেখা।

Recent Posts

সুজিত বসু

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে/ জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে/ চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে/ যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ/ রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে/ শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ/ তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা/ অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মার ব্রতকথা

বিশ্বকর্মা পুজোতেও কেউ কেউ বিশ্বকর্মার ব্রত পালন করে থাকেন। এমনিতে বিশ্বকর্মা যেহেতু স্থাপত্য ও কারিগরির দেবতা, তাই কলকারখানাতেই এই দেবতার পুজো হয়ে থাকে। সেখানে ব্রতকথার স্থান নেই। আবার কোন অলৌকিক কারণে এবং কবে থেকে যে এদিন ঘুড়িখেলার চল হয়েছে জানা নেই। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শহর ও গ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ও নানা আকৃতির ঘুড়িতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার কখনও বাংলাদেশে পা রাখেননি!

ভাবতে অবাক লাগে, ‘৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ উত্তমকুমারকে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। টালিগঞ্জের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছিলেন সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে। অন্যদিকে ববিতা, অলিভিয়া ও আরও কেউ কেউ টলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদার ও পরে গৌতম ঘোষ ছবি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশে এসে, কিন্তু উত্তমকুমারকে আহ্বান করার অবকাশ হয়নি এখানকার ছবি-করিয়েদের।

Read More »
নন্দিনী কর চন্দ

স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্দরমহলে: কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি

বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এমন কয়েকজন মহিলা কবির কথা আলোচনা করব, যাঁরা তাঁদের কাব্যপ্রতিভার দ্যুতিতে বাংলা কাব্যের ধারাকে উজ্জ্বল ও বেগবান করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণকামিনী দাসী, মোক্ষদায়িনী দেবী, প্রসন্নময়ী দেবী, লজ্জাবতী বসু, জগন্মোহিনী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, হিরণ্ময়ী দেবী, অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, সুরবালা ঘোষ প্রমুখ।

Read More »
মোহাম্মদ কাজী মামুন

বালকেরা অচেনা থাকে : এক অবিস্মরণীয় পাঠ অভিজ্ঞতা

ঘাসফুল নদী থেকে প্রকাশিত ‘বালকেরা অচেনা থাকে’ গল্পগ্রন্থটি যতই এগোনো হয়, একটা অনুতাপ ভর করতে থাকে পাঠকের মনে— কেন আগে সন্ধান পায়নি এই অমূল্য রত্নসম্ভারের! হ্যাঁ, রত্নসম্ভারই, কারণ একটা-দুটো নয়, প্রায় দশটি রত্ন, তাও নানা জাতের— লুকিয়ে ছিল গল্পগ্রন্থটির অনাবিষ্কৃত খনিতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও বৃক্ষরোপণ উৎসবের শতবর্ষ

কবির প্রয়াণের পরের বছর থেকেই আশ্রমবাসী বাইশে শ্রাবণকে বৃক্ষরোপণ উৎসব বলে স্থির করেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই দিনটিই এ-উৎসবের স্থায়ী তারিখ। বাইশের ভোর থেকেই প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় উৎসব। সকালে কলাভবনের ছাত্রছাত্রীরা বিচিত্রভাবে একটি পালকি চিত্রিত করেন ছবি এঁকে, ফুল, লতাপাতায়। মঙ্গলধ্বনি দিতে দিতে এর পর পালকির ভিতরে টবের মধ্যে একটি চারাগাছকে স্থাপন করা হয়। অতঃপর শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গীত-পরিবেশন-সহ আশ্রম-পরিক্রমা।

Read More »