Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

রামমোহনের স্বাদেশিকতা

এপ্রিল ১৮৩১-এ লিভারপুল-এ পা রাখলেন রামমোহন। ব্রিস্টল-এ ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩-এ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রামমোহনের জীবন কাটল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে। ততদিনে ইওরোপে দেখা দিয়েছে এক নতুন যুগ— রক্ষণশীল অভিজাতদের হঠিয়ে উদারনৈতিক বুর্জোয়ারা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে; রাজতন্ত্র পেরিয়ে ধীরে ধীরে গণতন্ত্রর বিস্তার ঘটেছে। বলা বাহুল্য, এই নয়া আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে রামমোহনের উৎসাহ কম ছিল না। কলকাতায় থাকাকালীন ইওরোপ-আমেরিকার রাজনৈতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে তিনি রীতিমতো খোঁজ রাখতেন। ১৮২১-এ স্পেনে সংবিধান কার্যকরী হওয়ার খবর পেয়ে টাউন হলে নিজের খরচায় ভোজের ব্যবস্থাও করেন রামমোহন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর আশা ছিল, ইতিহাসের প্রগতিশীল ধারায় ভারতীয় জনগণও সামিল হওয়ার সুযোগ পাবে। বলা চলে, সেটিই ছিল তাঁর বিলেতযাত্রার অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই ব্রিটিশ সংসদে সতীদাহ রদ অথবা তৎকালীন মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর-এর ভাতা বৃদ্ধির জন্যে দরবারের পাশাপাশি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সনদ পুনর্নবীকরণের (১৮৩৩) আগে সিলেক্ট কমিটির প্রশ্নাবলির উত্তর দিলেন তিনি। দেখার ব্যাপার, শেষ তিন বছরে রামমোহনের যাবতীয় ইংরেজি লেখাপত্তরে তাঁর আর্থ-রাজনৈতিক ধ্যানধারণার স্পষ্ট হদিশ পাওয়া গেল। সেসবের পেছনে ছিল তাঁর স্বাদেশিকতা। সেই স্বাদেশিকতার অর্থ অবশ্য পুরোপুরি ইংল্যান্ডের বিরোধিতা নয়। বরং ইংল্যান্ডের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া যে দেশের সার্বিক অবস্থা পাল্টাবে না— এমনই ছিল রামমোহনের মত।

সিলেক্ট কমিটি (১৮৩১)-র সদস্যরা চাইলেন রামমোহন তাঁদের সামনে উপস্থিত হবেন। কিন্তু দেখা গেল, ভারতের আইনি ও রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে নিজের মতামত পেশের জন্যে তিনি বেছে নিলেন লিখিত রূপ; পরে আবার সেসব বই আকারে ছেপেও বের করলেন।

প্রথমেই বলা দরকার, ভারতের সাধারণ জনগণের কল্যাণই ছিল রামমোহনের যাবতীয় চিন্তাভাবনার অভিমুখ। তৎকালীন কোম্পানি আমলের শাসনব্যবস্থার সংস্কার তিনি চেয়েছিলেন মূলত গরিব মানুষের স্বার্থে। তাই বড়লোক জমিদারের শোষণ থেকে রেহাই পেতে আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর (যাতে একটির সঙ্গে অন্যটির দূরত্ব কমে) সুপারিশ করলেন রামমোহন। শুধু তা-ই নয়, সঠিক ন্যায়বিচারের জন্যে বিদেশি বিচারপতিদের যে স্থানীয় ভাষা জানা খুব প্রয়োজন— তা বারবার তিনি মনে করালেন। সেই অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে একদল দেশি আইনজীবী ও আমলা যে অসাধু কারবার চালাচ্ছেন— সে-বিষয়েও রীতিমতো সজাগ ছিলেন রামমোহন। এই প্রসঙ্গে এল ফার্সির পরিবর্তে আদালতে ইংরেজি চালু করার আর্জি। তিনি ভেবেছিলেন, সে-ক্ষেত্রে আদালতের গণ্ডি পেরিয়ে দেশে ইংরেজির প্রসার ক্রমশ বাড়বে। আধুনিক যুগের ধ্যানধারণার নাগাল পাওয়ার জন্যে তখন ইংরেজি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে সেরা মাধ্যম। বোঝা যায়, রামমোহনের চিন্তাভাবনা ছিল নিঃসন্দেহে ভবিষ্যৎমুখী।

অন্যদিকে, ভারতীয় আমলা-আইনজীবীরা যে সাম্রাজ্যবাদী শাসনব্যবস্থার শিকার— সে-কথা জানাতেও ভোলেননি রামমোহন। যোগ্যতা সত্ত্বেও ইওরোপীয়দের তুলনায় কম বেতন, বৈষম্য আর অসম্মানের জন্যে তাঁদের নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি অধস্তন সম্প্রদায়। তাই রামমোহনের আইনি সংস্কার-প্রকল্পে জোর পড়েছে ভারতীয়দের (যাঁরা দেশীয় ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ) সহায়তায় ইওরোপীয় বিচারপতিদের কাজ করার ওপর। এই প্রসঙ্গেই দেওয়ানি আদালতে আলাদাভাবে মুফতি (ইসলামি আইন বিশারদ) আর জেলায় সদর আমিনদের অধীনে সহযোগী বিচারক নিয়োগের আর্জি জানান তিনি। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা অনুসারে স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে জুরি গঠনও এসেছে রামমোহনের ভাবনায়। বুঝতে অসুবিধে হয় না, আইনি ব্যবস্থায় বেশি সংখ্যক ভারতীয় সক্রিয় অংশগ্রহণ করুক— এমনটাই চেয়েছেন রামমোহন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য: ইওরোপীয়দের তত্ত্বাবধানে দেশে গড়ে উঠবে উন্নত শাসনব্যবস্থা— যেখানে দেশের মানুষের অবদানও থাকবে চোখে পড়ার মতো।

একইভাবে, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার প্রকল্পেও রায়তের দুঃখ ঘোচানো ছিল রামমোহনের অভীষ্ট। তিনি স্পষ্ট বলেন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (১৭৯৩)-র পর ক্ষমতা পেয়ে জমিদাররা লাগাতার কৃষকদের খাজনা বাড়িয়েছেন। সে-আইনে জমিদাররা মালিকানা স্বত্ব পেয়েছিলেন কিন্তু রায়তদের জোটেনি কিছুই। তাই বহাল থেকেছে তাঁদের দুর্দশা— জমিদারদের অত্যাচারের পাশাপাশি চলেছে আমিন ও অন্যান্য রাজস্ব আধিকারিকদের অর্থনৈতিক শোষণ। রামমোহনের সরাসরি অভিযোগ: জমিদারদের প্রশ্রয় দিয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকার। বেশি ফলন হোক বা কম, জমিদার-মধ্যস্বত্বভোগীদের জাঁতাকল থেকে তারা মুক্তি পাননি কখনওই; বেঁচে থাকার রসদ জোটানোই হয়েছে দুষ্কর।

বোঝা যায়, দেশের কৃষকের দুর্দশা নিয়ে বিস্তর ভাবতেন রামমোহন। তাই রায়তদের অবস্থা ফেরাতে সিলেক্ট কমিটির সামনে তিনি প্রস্তাব করলেন: কোনও অজুহাতেই যেন জমিদাররা ভবিষ্যতে বাড়তি খাজনা না চাপাতে পারেন। এমনকি, বিলাসদ্রব্যর ওপর বাড়তি কর চাপিয়ে অথবা রাজস্ব দপ্তরের খরচ কমিয়ে কৃষকের ওপর অত্যধিক খাজনার বোঝা সরানোর কথাও বললেন রামমোহন। যেহেতু গরিব কৃষকের পক্ষে জমিদার ও অন্যান্য মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই ছিল অবাস্তব সেইহেতু তিনি চাইলেন দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিক সরকারি আধিকারিক, পুলিশ আর জেলা আদালত।

রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকদের নিয়েও আলাদা কর্মসূচি চোখে পড়ে রামমোহনের পরিকল্পনায়। যেহেতু ইংরেজ কালেক্টর নির্ভর করতেন তাঁর অধস্তন দেশি আধিকারিকদের ওপর সেইহেতু সেসব কর্মচারীর (যাঁদের মাইনে ছিল নেহাতই কম) সামনে থাকত দুর্নীতিতে জড়ানোর সুযোগ। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই আদালত যেন অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়— এমনই মনে করতেন রামমোহন। এছাড়া, তিনি সর্বদা চাইতেন, কোনও ব্যক্তি যেন একইসঙ্গে কালেক্টর আর বিচারপতির দায়িত্ব না পান। আইনি ব্যবস্থার সংস্কারের মতো এ ক্ষেত্রেও রামমোহনের উদ্দেশ্য: ধীরে ধীরে যোগ্য ভারতীয়দের সম্মানীয় বেতন দিয়ে রাজস্ব বিভাগের উচ্চপদে, এমনকি কালেক্টরের বিকল্প হিসেবেও নিয়োগ করুক সরকার।

রামমোহন স্পষ্ট উপলব্ধি করেন যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তর পর দেশে হাতে-গোনা কিছু বড়লোক জমিদার আর ব্যবসায়ী নিয়ে গড়ে উঠেছে এক শোষক শ্রেণি। উল্টোদিকে রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ গরিব জনতা— কোম্পানির আমলে যাদের দুর্ভোগ বেড়েছে অনেকটাই। এই বাস্তব পরিস্থিতি অবশ্য ছিল কোম্পানি সরকারের ঘোষিত নীতির বিপরীত। তাই রামমোহন মনে করতেন, জমিদারদের মতো রায়তদের বেলায়ও খাজনার ঊর্ধ্বসীমা অবিলম্বে স্থির হোক; জমিদার-তালুকদারের পাশাপাশি তাঁদেরও সমৃদ্ধি ঘটুক। তবে স্রেফ কৃষক নয়, দেশের দরিদ্র কারিগর-মিস্ত্রিদের দুঃসহ জীবন নিয়েও সমান চিন্তিত ছিলেন রামমোহন।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাম্রাজ্যবাদী নীতির ফলে ভারত যে ক্রমশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়ছিল— তা-ও রামমোহনের দৃষ্টি এড়ায়নি। মূলত সেই কারণেই ইওরোপীয়দের স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাসের পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। সিলেক্ট কমিটির প্রশ্নর উত্তরে তো বটেই, পরে (১৮৩২) রামমোহন আলাদা করে সে-ব্যাপারে বিস্তারিত লিখলেন লন্ডনের এক পত্রিকায়।

রামমোহন বিলক্ষণ জানতেন, আধুনিক কালে ইওরোপের সমৃদ্ধির মূল কারণ সেখানকার উৎপাদন ব্যবস্থা— যা প্রাচ্যর তুলনায় ছিল বেশ উন্নত। তিনি তাই ভেবেছিলেন, শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কহীন ইওরোপীয়রা এ দেশে চালু করতে পারবেন আধুনিক পদ্ধতিতে চিনি ও নীল চাষ। কৃষিকাজের পাশাপাশি যন্ত্রশিল্পর বিস্তারও নিঃসন্দেহে ভারতের বাণিজ্য জগতের (আর সেইসঙ্গে দেশবাসীর) সমৃদ্ধি ঘটাবে। শুধু তা-ই নয়, ইংল্যান্ডের উদারনৈতিক সরকারের কাজকর্ম সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল হওয়ার সুবাদে ইওরোপীয়রা এদেশের শাসনব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আনবেন— এমন সম্ভাবনাও রামমোহন দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি এরপর ভাবলেন, ইওরোপীয়রা এখানে স্থায়ীভাবে থাকলে তাঁদের প্রভাবে স্থানীয়রা ক্রমে হয়ে উঠবে অজ্ঞতা ও কুসংস্কার মুক্ত। এছাড়া তাঁর আশা ছিল: জমিদার ও অন্যান্য শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও জনতার পাশে দাঁড়াবেন সেইসব প্রগতিশীল ইওরোপীয়। সেইসঙ্গে দেশের সর্বত্র তৈরি হবে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— যেখানে পাওয়া যাবে আধুনিক পাশ্চাত্য সাহিত্য ও বিজ্ঞানের পাঠ।

রামমোহন জানতেন, ভারতবাসীর প্রতি গড়পড়তা ইংরেজের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব দেখানোই স্বাভাবিক। তাই তিনি চেয়েছিলেন অন্তত প্রথম কুড়ি বছর স্রেফ উচ্চশিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত ও ধনী ইওরোপীয়রাই ভারতে পাকাপাকিভাবে বসবাসের সুযোগ পান। রামমোহনের বিশ্বাস, এঁরা সচরাচর ভারতবাসীর ধর্মীয় অথবা স্বদেশ ভাবনাকে আঘাত করবেন না। এছাড়া, তিনি আর্জি জানান, আদালতে বিচার করুক ইওরোপীয় ও ভারতীয় নিয়ে গঠিত জুরি— যাতে সমান সামাজিক অধিকার বজায় থাকে সকলের। এ প্রসঙ্গে চার্লস গ্রান্ট-এর জুরি বিলের সমর্থনে রামমোহনের মন্তব্য (১৮৩৩) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

রামমোহনের মনে সন্দেহ জেগেছিল, তাঁর প্রকল্প বাতিল করতে পারে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। সিলেক্ট কমিটির সদস্যদের মনে হতে পারে, ইওরোপীয় শিক্ষাদীক্ষা প্রসারের পর আমেরিকার মতো ভারতেও জাগবে স্বাধীনতার চাহিদা। নিজেদের স্বার্থেই ভারতে প্রগতির ধারা হয়তো অব্যাহত রাখতে চাইবেন না তাঁরা। তাই সম্ভবত সাংসদদের আশ্বস্ত করার জন্যে রামমোহন নিয়ে এলেন কানাডা-র প্রসঙ্গ। তিনি পরিষ্কার বললেন, সুশাসন বজায় থাকলে ইংল্যান্ডের থেকে কখনওই বিচ্ছিন্ন হবে না ভারতবাসী। এমনকি, ভবিষ্যতে কোনও আকস্মিক কারণে বিচ্ছেদ ঘটলেও দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক অটুট থাকবে।

মনে রাখা দরকার, জীবনের শেষ আড়াই বছরে রামমোহন যা লিখেছেন, সেসবের বীজ পাওয়া যায় তাঁর পুরনো লেখাপত্তরে। দেশে থাকতে মাঝেমধ্যেই তিনি যেসব ভাষণ, চিঠি ও/ বা আবেদন দাখিল করেছেন, সেখানে স্পষ্ট বেরিয়ে এসেছে ব্রিটিশ শাসন নিয়ে তাঁর প্রাথমিক বক্তব্য। নমুনা হিসেবে সবচেয়ে আগে মনে পড়ে ১৮২৩-এ আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা চালু করার দাবি নিয়ে আমহার্স্ট-কে চিঠি আর সংবাদপত্রর স্বাধীনতা নিয়ে প্রথমে কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট, পরে ব্রিটেনের সম্রাটের কাছে তাঁর নিবেদন। তাই বলা চলে, পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে উপযুক্ত পরিবেশে রামমোহন নিজের চিন্তাভাবনা আরও বিশদে প্রকাশ করলেন।

এ কথা ঠিক, ভারতের সামগ্রিক উন্নতির জন্যে রামমোহন নির্ভরশীল ছিলেন ব্রিটিশ উদার রাজনীতির ওপর। তিনি বিশ্বাস করতেন, নীচুতলায় কিছু অনাচারী থাকলেও ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আর সেখানকার প্রগতিশীল সম্প্রদায় আদতে ভারতদরদি। রামমোহন স্পষ্ট বুঝেছিলেন, যুগান্তরের পরই দেশে দেখা যাবে আমূল পরিবর্তন। আঠেরো শতক থেকে ইওরোপের শাসনব্যবস্থা ও চিন্তাভাবনার জগতে যে পালাবদল ঘটেছিল, তার সঙ্গে সামিল হলেই ভারতে শুরু হবে আধুনিক কাল— সামন্ত পেরিয়ে আসবে বুর্জোয়া যুগ। ইংল্যান্ডকে সেই পরিবর্তনের মাধ্যম ভেবেছিলেন রামমোহন। উনিশ শতকের প্রথম ভাগে স্বাদেশিকতার ধারণা ছিল এমনই। আবেদন-নিবেদনের সেই ধারা অব্যাহত থেকেছে বিশ শতকের গোড়া অব্দি। ভারতের পরিস্থিতি বদলানোর জন্যে ব্রিটিশ শাসকের শুভবুদ্ধির ওপর ভরসাই ছিল তখন একমাত্র পথ। জাতীয়তাবাদী যুগে অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টাল— ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে শুরু হল প্রত্যক্ষ সংগ্রাম।

সূত্র
Collet, Sophia Dobson. The Life and Letters of Raja Rammohun Roy. Calcutta, 1914.
Roy, Rammohun. The English Works of Raja Rammohun Roy. Eds. Dr Kalidas Nag and Debojyoti Burman. Calcutta: Sadharan Brahmo Samaj, 1995.
Tagore, Saumyendranath. Builders of Modern India: Raja Rammohun Roy. New Delhi: Publications Division, 2016 (first published 1973).

কভার চিত্র: ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে অজ্ঞাতনামা শিল্পী অঙ্কিত রাজা রামমোহন রায়ের প্রতিকৃতি। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত।
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

কাজী তানভীর হোসেন

ধানমন্ডিতে পলাশী, ৫-ই আগস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কয়েকদিন ধরে যা ঘটেছিল, তা শুরু থেকেই গণআন্দোলনের চরিত্র হারিয়ে একটা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পরিণত হয়েছিল। আজ আমরা কার্যক্রম দেখেই চিনে যাই ঘটনাটি কারা ঘটাচ্ছে। আগুন আর অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি করার স্বভাব রয়েছে বিএনপি-জামাত ও রোহিঙ্গাদের। তারা যুক্তিবুদ্ধির তোয়াক্কা করে না।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য: কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

আমরা বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিলাম, যাঁকে খুব সঙ্গত কারণেই ‘পশ্চিমবঙ্গের রূপকার’ বলা হয়। পেয়েছি প্রফুল্লচন্দ্র সেন ও অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো স্বার্থত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী। এবং জ্যোতি বসুর মতো সম্ভ্রান্ত, বিজ্ঞ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখর কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ। কিন্তু তাঁদের সকলের চেয়ে অধিক ছিলেন বুদ্ধদেব। কেননা তাঁর মতো সংস্কৃতিমনা, দেশবিদেশের শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র নাটক সম্পর্কে সর্বদা অবহিত, এককথায় এক আধুনিক বিশ্বনাগরিক মানুষ পাইনি। এখানেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনন্যতা।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে/ জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে/ চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে/ যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ/ রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে/ শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ/ তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা/ অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মার ব্রতকথা

বিশ্বকর্মা পুজোতেও কেউ কেউ বিশ্বকর্মার ব্রত পালন করে থাকেন। এমনিতে বিশ্বকর্মা যেহেতু স্থাপত্য ও কারিগরির দেবতা, তাই কলকারখানাতেই এই দেবতার পুজো হয়ে থাকে। সেখানে ব্রতকথার স্থান নেই। আবার কোন অলৌকিক কারণে এবং কবে থেকে যে এদিন ঘুড়িখেলার চল হয়েছে জানা নেই। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শহর ও গ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ও নানা আকৃতির ঘুড়িতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার কখনও বাংলাদেশে পা রাখেননি!

ভাবতে অবাক লাগে, ‘৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ উত্তমকুমারকে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। টালিগঞ্জের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছিলেন সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে। অন্যদিকে ববিতা, অলিভিয়া ও আরও কেউ কেউ টলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদার ও পরে গৌতম ঘোষ ছবি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশে এসে, কিন্তু উত্তমকুমারকে আহ্বান করার অবকাশ হয়নি এখানকার ছবি-করিয়েদের।

Read More »
নন্দিনী কর চন্দ

স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্দরমহলে: কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি

বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এমন কয়েকজন মহিলা কবির কথা আলোচনা করব, যাঁরা তাঁদের কাব্যপ্রতিভার দ্যুতিতে বাংলা কাব্যের ধারাকে উজ্জ্বল ও বেগবান করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণকামিনী দাসী, মোক্ষদায়িনী দেবী, প্রসন্নময়ী দেবী, লজ্জাবতী বসু, জগন্মোহিনী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, হিরণ্ময়ী দেবী, অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, সুরবালা ঘোষ প্রমুখ।

Read More »