যৌবনের স্বর্গদ্বারে
(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণে)
‘পাপীকে চুম্বন করো তুমি, তাই দ্বার খোলে স্বর্গের প্রহরী’:
এসব লাইন পড়ে কেঁপে উঠি কে আমি যে অর্জুন অর্জুন
সুদূর ঝরনার জলে ডুবে আছি মত্ততায়, আধো জ্বর ঘুম
নীরা সুজাতারা কেউ ভাঙায়নি, হিমভয়ে নড়ে উঠি নড়ি
স্বপ্ন যদি লজ্জাহীন তবে স্বপ্নে কেন আজও মায়াবী মনীষা
চুম্বনে খোলে না মৃদু স্বর্গদ্বার, আমি এত পাপী মহাপাপী
আত্মপ্রকাশের জন্য আর কত অভিমানে বিষাক্ত মদিরা
গলায় জ্বলন্ত নেব, আমার এ একটুকরো পৃথিবীর চাবি
কোথায় লুকোনো আছে, প্রবাস বরফে জমে যে আকণ্ঠ তৃষা
জমাট কঠিন তা কি কোনোদিন বৃষ্টি হবে, তুমি কিংবা নীরা
কেউ কি তা বলে দেবে, এ জীবন যেরকম চলে যাচ্ছে হিম
তুহিন ধূসরভাবে পায়ের আলতা হয়ে সুজাতার, ঝিম
তুষারপাতের শব্দ তির হয়ে বিঁধে যায় বুকে, কত কাল
কথা রাখছে না কেউ, সুজাতা রাখে না বুকে সুগন্ধি রুমাল।
**
অনামী বিদেশিনিকে
নাতাশা ইরা তোমার কী যে নাম
কী হবে জেনে, তোমাকে নিয়ে আজ
একটি শুধু কবিতা লেখা চাই
হরিণী চুলে শাসন ও সমাজ
কাঁপানো ছবি, কপালে মণি ঘাম
তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা তাই
শোষণে ঘন কোনো প্রকার ছলে
তোমার সব হারানো যদি যেত
তুমি যে এই মস্কো শহরিণী
সে কথা ছাই ভস্মে বল্কলে
সাজিয়ে নিয়ে তোমাকে আদরিণী
ফেলেছি লিখে শেষের পরিচ্ছেদও
আমি অনেক দূরের শমীগাছে
রেখেছি তিরধনুক সব তুলে
মৃগয়া তবে কীভাবে আর হবে
রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে থাকা কাচে
আহত আমি বিশ্ব বাউনডুলে
মেয়েটি তুমি সরল সাদাসিধে
নিজের হাতে করোনি যেন কিছু
আমি কি যাব তোমার পিছু পিছু
তিনটি পুরো মিনিট ভেবে নিতে
হয়েছে, মনে এতটা জটিলতা
মাত্র তুমি কুড়ি বছর ধরে
ঝিকোনো এই বরফে জমে জমে
হয়েছ হিম আমি সে উৎসবে
অনধিকারী, ভালই রাখা করে
ভূমিকাটুকু, বাকিটা ক্রমে ক্রমে
কী জানি পাব সুযোগটুকু কবে
বাতাসে ছুঁচ নাকি তোমার মুখে
উঁচিয়ে আছে ধারালো কোনো ছুরি
কখনো যেন রাত্রি দ্বিপ্রহরে
পড়োনি তুমি বিপজ্জনক ঝুঁকে
মৃত্যু ছুঁয়ে ভাঙা রেলিং ধরে
তাহলে ধরে ফেলতে এ চাতুরি
না তুমি যাও উঁচু জুতোর খুরে
মাড়িয়ে ধীর তলানো যত পাপ
বাদামি চুলে ঝাপটা মেরে হেসে
কেন না জানো সাতটা কালো সাপ
ঘুমিয়ে ঝিম এবং আরো দূরে
আমাকে দাও গেরোয় যেতে ফেঁসে
কবিতা শেষ, এখন তবে এসো
বলছ কিছু, আবার তুমি কবে
দেখতে পাবে আমাকে, পাবে কি না
দুদিকে এত শব্দ কেন, ঘেসো
জমিতে ভরা নুড়ি, আবার কবে
সত্যি আমি শুনতে পাচ্ছি না।
***
সুখের ঘরে
বৃষ্টি গেছে নির্বাসনে গহীন নিরুদ্দেশে
রোদের তাপে পুড়তে থাকে রোজ আমাদের মুখ
যতই খুঁজি তৃপ্তি জলে, তৃষ্ণা থাকে শেষে
আগুন হাতে দাঁড়িয়ে অবাঞ্ছিত আগন্তুক
জ্বলছি আমি একাই নাকি এই নিয়ে সন্দেহ
পৃথিবী মা তোমার মনে আর কি আছে সুখ
উষ্ণায়নের জ্বালায় গেছে ঝলসে তোমার দেহ
বৃষ্টি তুষারপাতের জন্য তুমিও তো উন্মুখ
পেট্রোল আর ডিজেল পোড়ার গন্ধে ভরা বুক
বাতাসে বিষ, পৃথিবী মা ধনসম্পদ লুটে
নিঃস্ব করি মা তোমাকে, ছড়িয়েছি অসুখ
বিষুব অক্ষ দ্রাঘিমা আর দু-দুটি মেরুতে
বন কেটে মা প্রাসাদ গড়ি, আমরা সবাই সুখী
ডালে বসেই ডাল কাটত মূর্খ কালিদাস
আমরা কাটি দাঁড়িয়ে দূরে, নিই না কোনো ঝুঁকি
মত্ত থাকি নেশার ঘোরে, সুখের ঘরে বাস
ধ্বংস করি সব পরিবেশ, মন করি কঠিন
মৈথুন আর আহার ঘুমে সুখেই কাটে দিন।
****
এখনও অনেক যুদ্ধ
এখনও অনেক যুদ্ধ জয় করা বাকি
উষ্ণায়নে পরিশ্রান্ত পৃথিবী মায়ের মুখ
দূষণের কালো বিষ হৃদয়ের প্রতি কোণে কোণে
জলকণা বয়ে আনে প্রতিদিন নতুন অসুখ
মধুর কয়েক বিন্দু সুখাবেশ তবু আজও গভীর গোপনে
উদাস নদীর তীরে আজও ঘুরি বিকেলে একাকী
এখনও অম্লান হাসে নবজাত শিশুদের দল
সবুজ কিশোরী মুখ ভেজা আজও ভোরের শিশিরে
আজও স্বপ্নে ভেসে আসে মায়াবী যুবতী
এখনও পবিত্র আছে বৃষ্টিধারা, ঝরনাদের জল
অহল্যা অরণ্য কিছু বিষাক্ত নয় আজও মানুষের ভিড়ে
জীবন মেশায় আজও মিঠেকড়া লাভ আর ক্ষতি
হলুদ ভোরের ঘুম ভাঙায় এখনও এসে নীলকণ্ঠ পাখি
এখনও অনেক যুদ্ধ জয় করা বাকি।
কী অসাধারণ লিখেছেন কবি। আপনার পরিবেশ চিন্তনে সৃষ্ট কবিতা দুটি এসময়ের অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে। অন্য দুটি কবিতা পাঠকে চিনিয়ে দেয় কবির মননের বিস্তার। কী অসাধারণ কাব্যময় পংক্তিতে নির্মাণ এসব কবির শরীর। তবে প্রথম কবিতার প্রথম লাইনে উদ্ধৃতিতে সামান্য ছাপার ভুল রয়ে গেছে। সংশোধন করে দিলে। ভালো হয়।ভালোভাষাকে ধন্যবাদ, তাঁরাই এমন গুচ্ছকবিতা উপহার দিচ্ছেন
এই নতুন কবিতাটি একটি চিত্তাকর্ষক এবং সুন্দরভাবে তৈরি করা লেখা যা পাঠকদের আকৃষ্ট করবে। কবিতাটি তার প্রাণবন্ত চিত্র এবং আবেগপূর্ণ ভাষা দিয়ে প্রথম লাইন থেকেই পাঠককে আকর্ষণ করে। শব্দগুলি অনায়াসে প্রবাহিত হয়, একটি বাদ্যযন্ত্র এবং ছন্দময় গুণ তৈরি করে যা উভয়ই প্রশান্তিদায়ক এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।