Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

কান টানলে মাথা আসে, ‘মাথা’-ও নাকি খোলে

ছোটবেলায় কানমলা বা কান টানা খেয়েছেন কখনও? কান ধরে দাঁড়িয়ে থেকেছেন? কিংবা কান ধরে উঠবোস? লজ্জায় কান লাল হয়ে যেত না? তাতে দুঃখব্যথার চেয়ে অপমানবোধই বেশি থাকত। তাই না? অথচ আমরা কেউই বুঝতে পারতাম না, নির্দোষ কানের ওপরেই কেন মাস্টারমশাই বা গুরুজনদের এমন অবিচার। এই অবিচারের মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিচারও। যা অজান্তেই আমাদের মগজকে ধারালো করেছে, বাড়িয়েছে আমাদের স্মৃতিশক্তি, জ্ঞানধারণ ক্ষমতা। কমিয়েছে আমাদের মানসিক চাপ এবং শারীরিক ক্লেশ। অবাক হচ্ছেন? হালের গবেষণা কিন্তু প্রমাণ করেছে এর সত্যতা।
‘কান টানলে মাথা আসে।’ বাংলার প্রাচীন প্রবাদ। মানে, একটিকে টেনে আনলে, সংলগ্ন অন্যটিও অনুসরণ করবে। মাথাকে বাগে আনতে কান টানা হয়। এটি সাধারণ অভিজ্ঞতামূলক প্রবাদ। প্রবাদের কোনও লিখিত ভিত্তি থাকে না। একথা তাই এক অর্থে লোকসমাজের অভিজ্ঞতার নির্যাস। কানের বিচারে প্রবাদের সত্য আর প্রমাণের সত্য প্রায় একই ধরনের। প্রমাণ বলছে, কান টানলে ‘মাথা’ ভাল হয়। এই মাথা হল মগজ। কান টানলে বুদ্ধি খোলে আর বাড়ে মনে রাখার ক্ষমতা। তাই সাদাচোখে এই লাঞ্ছনার মাধ্যমেই বেলাইন ‘ব্রেন’কে টেনে সোজা ট্র্যাকে ফেলতে চেষ্টা করতেন আমাদের অগ্রজরা। নইলে ‘গোবরপোরা মাথা’ওলা আমাদের সব পড়াশোনা নাকি এ কান দিয়ে ঢুকে, ও কান দিয়ে বেরিয়ে যেত!
ভারতীয় উপমহাদেশে লঘু শাস্তির সবচেয়ে প্রাচীন এবং জনপ্রিয় রূপ দু’হাতে বিপরীত দিকের কান (ডানহাতে বাঁ-কান, বাঁ-হাতে ডান কান) ধরে রাখা। যা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে এবং ভারতীয় বিদ্যায়তনগুলিতে যা ঐতিহ্যের অংশে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও অনেক জায়গায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার সময়েও এমনটা প্রচলিত অনুশীলন, তারা যেন ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছেন এবং নিজেকে শাস্তি দিচ্ছেন। তবে আপাতদৃষ্টিতে সহজ এই পদ্ধতিটি কেবল শাস্তির একটি প্রকারমাত্র নয়, এই অনুশীলনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। মার্কিন দেশে অনেকদিন ধরে এই ‘সুপার ব্রেন ইয়োগা’ ছোটদের মস্তিষ্ক বিকাশের ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃতও হচ্ছে। যোগ-কে ‘ইয়োগা’ না বললে এখন আবার অনেকে ব্যাকডেটেড বলবেন!
যা হোক, বিগত কয়েক দশক ধরে উন্নত বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষক-চিকিত্সকরা এই পদ্ধতিটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং তাতে আশ্চর্য ফল মিলেছে। বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলি আন্তরিকভাবে এটিকে গ্রহণ করেছে এবং একে দুর্দান্ত একটি চর্চা হিসাবে চিকিৎসকরা সুপারিশ করছেন। স্কুলেও এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আগ্রহীদের এই কৌশলটি শেখার জন্য বিশেষ কর্মশালাও হচ্ছে। তাদের কাছে, কানমলাটা দোষের না। প্রমাণ মিলেছে, এটি স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এবং জ্ঞান উপলব্ধি করতে সহায়তা করে। এমনকী মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরের যে কোনও অংশের ব্যথা সারাতে কানের লতিতে চাপ প্রয়োগের বিকল্প নেই। শরীরী ধকল কমাতেও কাজে আসে। সর্বোপরি, পরিবারে ভালবাসার বন্ধন সুদৃঢ় করতেও নাকি কান টানাটানির জুড়ি নেই।
পরিস্থিতি বদলেছে। এখন পড়ুয়ার কান ধরে টানাটানি শারীরিক হেনস্থা হিসেবে বিবেচিত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু উন্নত বিশ্ব খাঁটি সোনা চেনে। তারা আমাদেরই যোগ, আয়ুর্বেদ এবং বিবিধ প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও উপকরণগুলিকে সাদরেই আত্মীকরণ করেছে। আর আমরা সোনার দরে তাদের উচ্ছিষ্ট ওষুধ-পথ্যাদি, তত্ত্ব-তথ্যাদি পরমাদরে গ্রহণ করেছি। অতীত, পরম্পরা ও আত্মবিস্মৃত জাতির তকমা কী আর আমরা এমনি-এমনি পেয়েছি!
তা হলে কানে কী রইল? কেন, হেডফোন!

গ্রাফিক্স : মুনির হোসেন
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »