চিন্তানায়ক অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর ‘সাংস্কৃতিক বিবর্তন’ গ্রন্থে লিখেছেন, বিশ শতকের মাঝামাঝি ইন্দোনেশিয়া থেকে এক মুসলমান অধ্যাপক শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন সংস্কৃত ছন্দের ওপর বক্তৃতা করতে। অধ্যাপক সাহেবের নাম ছিল বীর্যসুপার্থ। বীর্য মানে বীর আর সুপার্থ মানে পার্থ, অর্থাৎ অর্জুন। একজন মুসলমানের নাম কী কখনও মহাভারতের কোনও বীরের নামে হয়! কোনও মুসলমানের নাম কি পার্থ, শান্তনু কিংবা অভিমন্যু হতে পারে? কেন পারে না! অবশ্যই হতে পারে। একজন মুসলমানের নাম যদি অগ্নি-উপাসক সোহরাব-রুস্তমের নামে হতে পারে, তাহলে রামায়ণ-মহাভারতের বীরদের নামে নয় কেন? মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দেনেশিয়ার সর্বমহলে ভারতবর্ষের রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্য হিসেবে পঠিত হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভিয়েতনাম ও কম্পুচিয়াতেও পঠিত হয়। ভারতীয় রামায়ণ কিংবা মহাভারত ইসলামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তার পরও ইন্দোনেশিয়ার মুসলমান সমাজ গ্রন্থদুটি পরিত্যাগ করেননি। ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের অধিবাসীরা অধিকাংশই ধর্মে মুসলমান হলেও তাঁরা ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আধুনিক ইন্দোনেশিয়ার স্থপতির নাম আহমদ সুকর্ণ এবং তাঁর কন্যার নাম মেঘবতী সুকর্ণপুত্রী। তাঁদের বিমানবন্দরের নাম গারুদা বা গরুড়, গরুড় হল বিষ্ণুর বাহন। ইন্দোনেশিয়ার এক পণ্ডিতের নাম আবদুল্লাহ সরস্বতী। তাঁরা ধর্মে মুসলমান, কিন্তু ভারতীয় পুরাণের অনুগামী। যেমন, আরবরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন বটে, কিন্তু প্রাক-ইসলামি যুগের অনেক আচার ত্যাগ করেননি। ত্যাগ করেননি প্রাক-ইসলামি যুগের কবি ইমরুল কায়েসকে।
বিশ্বের সব সভ্য জাতিই নিজ সত্তার শেকড় খুঁজে পেতে ঐতিহ্যর দ্বারস্থ হয় এবং পূর্বপুরুষদের কৃতী-কীর্তির প্রতি আবেগ ও সহমর্মিতা প্রকাশ করে। বিজ্ঞানমনস্ক ইংরেজদের মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করার মতো ঐতিহ্যপ্রীতি। এই প্রীতিই তাদের আধুনিকতা, মানবিকতা ও গণতন্ত্রের মূল্যবোধসমূহ গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে। শক্তিশালী ও পরিপুষ্ট করেছে বিজ্ঞানচর্চা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে, কিন্তু রাজতন্ত্রের জৌলুশ-জাঁকজমক, লোকাচার ও অভিজাততন্ত্রের কৌলিন্য ত্যাগ করেনি। তারা অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগকেও নিয়েছে, গ্রিক-রোমান ঐতিহ্যকেও ত্যাগ করেনি। শিক্ষিত সংস্কৃতিবান মানুষ মাত্রই ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পূর্বপুরুষদের ভাবুকতা ও বিশ্বাস-মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কুণ্ঠিত হন না। এজন্যই একজন শিক্ষিত জাভানিজ পিতা তাঁর আদরের পুত্রের নাম রাখেন বীর্যসুপার্থ। সাংস্কৃতিক কারণেই কাশ্মিরী কায়স্থ ব্রাহ্মণ মোতিলাল নেহরু তাঁর পুত্রের নাম রেখেছিলেন সংস্কৃত ভাষার পরিবর্তে পারসি ভাষায় জওয়াহেরলাল নেহরু। উত্তর ভারতের কায়স্থ হিন্দু খোশ বখত রায়ের পুত্রের নাম হয় ইকবাল বখত রায়। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি মমতার কারণেই একজন ভারতীয় পারসি তাঁর পুত্রের নাম রাখেন জাহাঙ্গীর রতনজি দাদাভাই টাটা। মনেপ্রাণে কট্টর মুসলমান হয়েও ইরানিরা ‘নওরোজ’ উৎসব উদযাপন করেন জাঁকজমক সহকারে। নওরোজ কোনও ধর্মীয় উৎসব নয়, আবার ধর্মবিরোধীও নয়। এটা একটি ঋতুভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক উৎসব। ঐতিহ্যপ্রীতির কারণে কয়েকশো বছর আগে ইসলামে দীক্ষিত হয়েও আমরা বর্ষবরণ, পৌষ-পার্বণ ও নবান্ন উৎসব উদযাপন করি। ভারতচন্দ্রের মঙ্গলকাব্য পাঠ করে আনন্দিত হই। চৈতন্যচরিতামৃত কিংবা বৈষ্ণব পদাবলী বুকের ভেতরে শিহরণ জাগায়। লালন-গগন হরকরার গান শুনে মনের মানুষ-কে খোঁজার চেষ্টা করি। তাঁদের গানের ভিতর দিয়েই খুঁজে ফিরি আমাদের আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। তাঁদের প্রতিভার উজ্জ্বলতা আর ভাষা দিয়েই প্রকাশ করি আমাদের অধ্যাত্মচেতনা, দ্রোহ, প্রেম ও মানবিক আবেগ-সংরাগ। আমরা গর্ব অনুভব করি এই ভেবে যে, লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বাঙালি ছিলেন। তাঁরা বাংলা ভাষায় কথা বলেছেন, সাহিত্যচর্চা করেছেন এবং এ ভাষার জন্য লড়াই করে গেছেন। চর্যাপদের সিদ্ধাচার্য ও শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের পদকর্তারাও বাঙালি ছিলেন। তাঁদের ধর্মপরিচয় নিয়ে আমরা একদম মাথা ঘামাই না। যে-ধর্মের অনুসারীই হোন না কেন, তাঁরাই আমাদের পূর্বপুরুষ। তাঁরাই আমাদের শিখিয়েছেন, মানুষ অমৃতের সন্তান। বলেছেন: ‘সহজ মানুষ ভজে দেখ না রে মন দিব্যজ্ঞানে।’ মানুষ ভজনার বার্তাটি তো লালন ও তাঁর সহগামীদের মাধ্যমেই এ ভূখণ্ডে জারি আছে। কোনও সাম্প্রদায়িক হীনমন্যতা বা হুজুগ লালনকে ইতিহাসের সত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। তিনি বলেছেন, জাতপাত, আভিজাত্য, কৌলিন্যের ভিতর মানুষের পরিচয় নেই। মানুষের পরিচয় তার কর্মে, তার কীর্তিতে। মানুষকে কীর্তিমান হতে হলে, তাকে অবশ্যই ইতিহাস, দেশকাল, জল-হাওয়া, আলো-আকাশের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। এজন্যই লালন বাঙালিত্বের কাছে, ইতিহাসের কাছে, বাংলার ভাবুকতার চরণতলে নতজানু হয়ে বলেছেন, ‘ভাব জানি নে, প্রেম জানি নে/ দাসী হতে চাই চরণে।’
আসলে মানুষ তার জন্মস্থানের দাগ মুছতে পারে না। বদলতে পারে না প্রাকৃতিক পরিচয় বা জাতি-পরিচয়ের দাগ। আমাদের পূর্বপুরুষরা হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে যদি ইসলাম গ্রহণ করে থাকেন, তাতে তাদের ধর্মগত পরিচয় পালটিয়েছে মাত্র, জাতি-পরিচয় নয়। মানুষ তার ধর্ম-পরিচয় বদলাতে পারে, নাগরিকত্ব বদলাতে পারে, কিন্তু জাতি-পরিচয় বদলাতে পারে না। একজন হিন্দু ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান বা খ্রিস্টান হতে পারেন কিংবা একজন শাক্ত খুব সহজেই বৈষ্ণব হতে পারেন, কিন্তু ইংরেজ কোনওভাবেই বাঙালি হতে পারেন না। জন্মসূত্রেই কেবল বাঙালি হওয়া যায়। এটা মানুষের দৈব-নির্ধারিত প্রাকৃতিক পরিচয়। বিধাতাপ্রদত্ত পরিচয়। বাঙালিত্বের সঙ্গে কোনও ধর্মের-ই বিরোধ নেই। ইসলাম কিংবা হিন্দুধর্মকে বাঙালিত্ব শত্রুজ্ঞান করে না। জগতের সব মহৎ ভাবনাকেই বাঙালি প্রণতি জানিয়েছে। ইসলাম কিংবা হিন্দুধর্মের বিধিবিধান, আচার-আচরণ বাঙালিয়ানার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাঙালি সত্তা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম।
আজকাল একদল ধর্মোন্মাদ এবং কিছু জ্ঞানপাপী বাঙালিয়ানা ও মঙ্গল শোভাযাত্রাকে হিন্দুয়ানি আখ্যা দিয়ে হৈ হৈ করে বেড়াচ্ছে। ইতিহাসের পরম্পরা, দেশকালের সম্পর্ক থেকে তারা আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে চায়। খারিজ করতে চায় লালন ও অন্যান্য সাধকদের গান ও দর্শন। বাতিল করতে চায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুলসহ জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। গগন হরকরার সুরে রবীন্দ্রনাথের রচিত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ওদের পছন্দ নয়। এদের কণ্ঠের সুর ও স্বরের সঙ্গে পাকিস্তানি জামানার সুবিধাবাদী সংস্কৃতিসেবী ও বুদ্ধিজীবীদের হাঁকডাকের বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। একদিন এরাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংহতির দোহাই পেড়ে উর্দু শিখিয়ে আমাদের ইমানদার-পাকিস্তানি এবং সহি মুসলমান বানাতে চেয়েছিল। এরা আসলে মতলববাজ, এদের লোলুপ দৃষ্টি মনসদের দিকে। ইসলামি তাহজিব-তমুদ্দুনের দোহাই পেড়ে এরা ক্ষমতার ক্ষীর-প্রসাদের স্বাদ আস্বাদন করতে চায়। নজরুলের ভাষায়, এরা আসলে ভণ্ড, ‘জায়নামাজ দেখানো’ বকধার্মিক! লালন-রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতা, পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইসলাম-বিরোধী কৃত্য আখ্যা দিয়ে এরা আসলে রাজনৈতিক মতলব হাসিল করতে চায়। এদের চোখে লালন ফকির কেবলই ‘ন্যাড়ার ফকির’ কিংবা মুশরেক, বেদাতি, বেনামাজি। কিন্তু তাঁর সৎ জীবনযাপন ও উচ্চমার্গীয় গান রচনার প্রতিভা যে আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে, এটা ওরা আমলেই আনতে চায় না। লালন যে উচ্চস্তরের চেতনাসম্পন্ন সাধক-পুরুষ ছিলেন, এটা ওরা স্বীকার করতেই চায় না। লালন যে সব ধরনের ভেদবুদ্ধি, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিলেন, এটা কি অস্বীকার করা যায়? লালন-রবীন্দ্রবিরোধী, বাঙালি-সংস্কৃতিবিদ্বেষী গোষ্ঠীগুলোকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, কেন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা যাবে না? কেন মঙ্গল শোভাযাত্রার সমাগমে শরিক হওয়া যাবে না? এসব লোকায়ত উৎসবের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কি কোনও বিরোধ আছে? বর্ষবরণ উৎসবের নামে আমরা কি জনমনে কোনও বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছি? তাহলে কেন পহেলা বৈশাখকে ইসলামবিরোধী কৃত্য আখ্যা দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে? দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, এসব উৎসব ইসলামের মূল স্পিরিটের পরিপন্থী তো নয়ই, বরং সহগামী। আসলে বাঙালি সংস্কৃতির কোনও কিছুই ধর্মবিরোধী নয়, বরং সর্বতোভাবে ধর্মসহিষ্ণু। বাঙালি সংস্কৃতি সর্বধর্মের সঙ্গে একধরনের যৌক্তিক ফায়সালা করেই চলে এবং চলতে চায়। এই সংস্কৃতির ভিতর নাস্তিকতা বা নিরীশ্বরবাদিতার উপাদান খুবই কম। আমাদের ভাবুকরা ধর্মের সারকথা জানতে-বুঝতে এবং জানাতে-বুঝাতে গিয়ে তর্ক করেছেন বটে, কিন্তু ধর্মের মানবিক দিকগুলি গ্রহণ করেছেন অকুণ্ঠ চিত্তে। ধর্মের সঙ্গে কোনওভাবেই বিরোধে লিপ্ত হননি। ধর্মের মর্মশাঁস গ্রহণ করেও সাম্প্রদায়িক ধর্মের গণ্ডির বাইরে দাঁড়িয়ে মুক্তির পথ খুঁজেছেন। আশ্রয় খুঁজেছেন সর্বধর্ম সমন্বয়ের নিবিড় ছায়াতলে। এ কারণে লালন গাইতে পেরেছেন: ‘যে যা ভাবে সেই রূপে সে হয়।/ রাম রহিম করিম কালা এক আত্মা জগৎময়।।’ যারা বাঙালি সংস্কৃতি ও সংস্কৃতি-সাধকদের ধর্মবিরোধী বলতে চায়, তারা আসলে আমাদের সংস্কৃতির মূল ভাবটাই বুঝে উঠতে পারেননি অথবা জ্ঞানতই বুঝতে চায় না। চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল— এঁরা কেউই ধর্মবিরোধী ছিলেন না। নিরীশ্বরবাদীও নন। বরং ধর্ম, জাতপাতের নামে বিভাজন-বিভক্তিতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। জাতবিচারীদের আচারে ক্ষুব্ধ মর্মাহত লালন বলেছেন:
‘ফকিরি করবি ক্ষ্যাপা কোন রাগে।/ আছে হিন্দু মুসলমান দুইভাগে।/ থাকে ভেস্তের আশায় মমিনগণ/ হিন্দুরা দেয় স্বর্গেতে মন/ ভেস্তে-স্বর্গ ফাটক সমান/ কার-বা তাতে ভালো লাগে।’
হাল-আমলের এক শ্রেণির সুবিধাবাদী ও সাম্প্রদায়িকতাবাদী রাজনীতিক, ধর্মবেত্তা ও শাস্ত্রকার বাঙালির পোশাক-আশাক, খাবার-দাবার, বিয়েশাদি বিষয়ক আচার-আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। বাঙালির সবকিছুতেই তারা হিন্দুয়ানির গন্ধ খুঁজে পায়। উৎসব-অনুষ্ঠান, বিয়েশাদিতে বাঙালি রমণীরা শাড়ি পরিধান করুক, এটা তাদের পছন্দ নয়। শাড়ি পরিধান করা ওদের চোখে হিন্দুয়ানি। নতুন ধানের চালের পায়েস খেয়ে নবান্ন উৎসব উদযাপন করাও হিন্দুয়ানি। গায়ে হলুদ, বৌভাত, কবিতা-রচনা, সুন্নতে খৎনার প্রীতিভোজ— এ সবও নাকি হিন্দু-আচার! সব-ই যদি হিন্দুয়ানি আচার হয়, তাহলে বাংলাদেশে ইসলামি আচার কোনটা! তাহলে অঙ্গুলিমেয় আলখেল্লাধারী ফতোয়াবাজ ছাড়া সব বাঙালি মুসলমানই কি বেশরা-বেদাতি? ওদের সংকীর্ণ মত মানলে, বাংলাদেশের দুই জনপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকেও শুদ্ধ মুসলমান বলা যায় না। কারণ তাঁরাও পয়লা বৈশাখ উদযাপন করেন। শাহজালালের দরগায় যান, শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত একদল মূঢ় ধর্মধ্বজী আছে যারা বাংলা ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, বাঙালির লোকজ উৎসব, পোশাক-আশাক— সবকিছুতেই হিন্দুয়ানির গন্ধ খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু মাইকেল জ্যাকসন, ম্যাডোনা, পপ-রক, ব্যান্ড শুনলে ওদের ধর্ম নষ্ট হয় না। ওদের ধর্ম নষ্ট হয় কেবল লালন, রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত আর ডিএল রায়ের গান শুনলে। রামপ্রসাদী-পদাবলী কীর্তন এবং রবীন্দ্র-লালনের গানকে ওরা প্রতিপক্ষ ভাবে। ভয় পায় বাঙালির নিজস্ব ভাবসম্পদকে। রাজনীতির ময়দানে মাতব্বরি এবং খবরদারি করার জন্য ওরা বাঙালি সংস্কৃতির সবকিছুকে নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। লালনের গান ও একতারা, পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ওদের ভীষণ প্রতিপক্ষ। কিন্তু নিজের দেশ ও সংস্কৃতিকে উপেক্ষা-অবহেলা করে কি বড় হওয়া যায়? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নিজ দেশ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে উদার-মানবিক-প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া কোনও জাতি মহান হতে পারে না।