Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

নিয়তি

স্টেশনের কাছে টোটো ছিল বেশ কয়েকটা। ট্রেন থেকে নেমে গেট পেরোতেই ছেঁকে ধরেছিল ওরা। কোথায় যাবেন, শুধোচ্ছিল বারবার। নিয়তি পাত্তা দেয়নি।

গ্রামটার নাম জানে, কিন্তু সে-গ্রামের ঠিক কোন জায়গাটাতে ও যাবে তা ওর অজানা। ঠিকঠাক না বলতে পারলে ওরা ওকে কোথায় নিয়ে যাবে! তার চেয়ে হেঁটে, লোককে জিজ্ঞেস করে করে যাওয়া ভাল।

মরুটিয়া গ্রামের রাস্তাটা কেবল শুধিয়েছিল এক দোকানিকে। তারপর সেই রাস্তা ধরেই হাঁটতে শুরু করেছিল। কিন্তু কতদূরে গ্রাম? হাঁটছে তো হাঁটছেই। ভাগ্যিস ছাতাটা সঙ্গে এনেছিল। নাহলে তো এত রোদে ওর টোটো ছাড়া গতি ছিল না!

এখনও চারদিকে শহরেরই ছোঁয়া। এই বিডিয়ো অফিস পার হল। এবার আবার থানা। গ্রামটা আসবে কখন কে জানে!

থানার কাছটাতে একটা লোক শশা বিক্রি করছিল। মরুটিয়া গ্রামটা কোনদিকে আবার জানার জন্য নিয়তি দাঁড়াল ওর কাছে।

লোকটা ভাবল, খরিদ্দার। কিনবে কিনা না শুধিয়েই বলল— ‘একটা পাঁচ, দুটো নিলে একটাকা কম।’

নিয়তি বলল— ‘মরুটিয়া গ্রামটা এই রাস্তাতেই তো? আর কতটা যেতে হবে?’

শশা বিক্রেতা লোকটা একটু নড়েচড়ে বসল। —‘মরুটিয়া এখন থেকেই শুরু। দেখছেন না থানার নাম? তবে গ্রামটা তো অনেকটা রাস্তা দিদি! যা রোদ, হেঁটে যাবেন কীভাবে? একটা টোটো নিয়ে নিন বরং।’

—‘দরকার নেই। হেঁটেই চলে যাব। হাঁটতে অসুবিধে হচ্ছে না। ছাতা আছে তো!’

—‘ওখানে যাবেন কাদের বাড়ি? আমিও তো মরুটিয়ারই লোক!’

একে বলাটা কি ঠিক হবে? আবার না বললেই বা কী ভাববে? —‘সাধন দাস।’ নিয়তি বলেই দিল নামটা।

—‘ও।’ কোনও ভাবান্তর দেখা গেল না শশাওলার চোখেমুখে। চেনে নাকি চেনে না? না চেনারই কথা অবশ্য। সাধন দাস খুব তো কেউকেটা কেউ নয়!

রাস্তা ধরে আবার হাঁটতে লাগল নিয়তি। পাকারাস্তার দু’ধারে ফাঁকা মাঠ। নিজের গ্রামের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। অনেকটা যাওয়ার পরে গ্রামটা পেল। রাস্তা একই। সে রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই নজরে এল একটা ক্লাব। সেখানে লেখা, ‘মরুটিয়া যুব সংঘ’। মরুটিয়া গ্রামে ঢুকে পড়েই শুরু হয়েছে বুক জুড়ে আশা-আশঙ্কার দোলা।

ক্লাবের বারান্দায় কয়েকটা ছেলে আড্ডা দিচ্ছিল। —‘এই যে ভাইরা, সাধন দাসের বাড়িটা কোনদিকে একটু বলবে?’ শুধোয় নিয়তি।

একটা দাড়িওলা ছেলে জবাব দিল— ‘‘সোজা আরও কিছুটা যান। গিয়ে ডানদিকের রাস্তাটা ধরুন। একটা পোলট্রি ফার্ম পাবেন। সেখানে দেখবেন ‘বিল্টুর চায়ের দোকান’। ওখানে খোঁজ করুন। বলে দেবে।’’

‘বিল্টুর চায়ের দোকান’-এ নিয়তি পৌঁছে দেখল ওটা বন্ধ। কাছেই গরু চরাচ্ছিল একটা লোক। ও কি বলতে পারবে? জিজ্ঞেস করে দেখা যাক।

সাধন দাসের বাড়ির হদিশ জানতেই লোকটা একগাল হেসে বলল— ‘চলেই তো এসেছেন। ওই তো সামনের নিমগাছটার ডাইনে। কোত্থেকে আসছেন দিদি?’

—‘দিল্লি।’ বলে আর দাঁড়াল না নিয়তি। তবু শুনতে পেল লোকটার আপন মনে বলে চলা কথাগুলো— ‘দিল্লি কি এখানে? সাধনের বউয়ের কেউ হবে হয়তো!’

শেষ কথাটা কানে এসে লাগল নিয়তির। কিন্তু ঠিক বোধগম্য হল না।

ছ-ছ’টা মাস। কম সময় তো নয়! বাড়ির উদ্দেশে সেই যে লোকটা বেরল আর খোঁজ নেই। নিয়তি ফোন করেছে বার বার। কখনও শুধু রিং বেজে গেছে, কখনও ভেসে এসেছে সুইচ বন্ধ থাকার যান্ত্রিক ঘোষণা। লোকটার কিছু হল না তো! চিন্তা হয়েছে। আবার এ-ও মনে হয়েছে, খারাপ কিছু হলে তার খবর ঠিক এসে পৌঁছত কানে। মনে একটা অন্য কু-ডাক তখন থেকেই ডেকেছে। তাহলে কি…! গরু-চরানো লোকটার কথায় মনের সেই কু-ডাক আবার ডালপালা মেলে।

একটা মেয়ে এক্কা-দোক্কা খেলছে। নিয়তি ওকেই শুধোয়— ‘সাধন দাসের বাড়ি এটা?’

—‘বাবা তো বাড়ি নেই! কাজে গিয়েছে। মাকে ডাকব?’ মেয়েটা বাড়ির দিকে ছোটে। স্তব্ধ হয়ে ওখানেই বসে পড়ে নিয়তি।

***

—‘কীভাবে পরিচয় হল আপনার সঙ্গে?’ হাতে কলম নিয়ে নিয়তির দিকে তাকান থানার অফিসার ইনচার্জ।

—‘দিল্লিতে ও যে সোনার দোকানে কাজ করত তার পাশেই ছিল আমাদের পোশাক তৈরির কারখানা। আমি বাসে আসতাম। ও-ও তাই। দু’জনেই বাঙালি। আলাপ হয়ে গেল একদিন।’

—‘তারপর?’

—‘তারপর পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা। বলল, বিয়ে করবে। আমি বললাম, বাড়িতে জানাও তাহলে। ও বলল, দরকার নেই। ওখানে কেউ নেই। বাবা মারা গেছে ছোটবেলায়। আর মা কিছুদিন আগে। মা মারা যেতেই ভিটে দেখভালের দায়িত্ব এক দূর সম্পর্কের পিসির উপর চাপিয়ে ও চলে এসেছে দিল্লি।
দিল্লিতে আমিও গিয়েছি এক গ্রাম থেকেই। গ্রামে আমার বিয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের রাতে দেনাপাওনা নিয়ে ঝগড়া। বর চলে গেল। এরপর বাড়িতে কোণঠাসা হয়ে পড়লাম। কী করব? গ্রামের একজন দিদি দিল্লিতে কাজ করত। ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিল। ধরলাম, ওর হাতেপায়ে। ওই দিদির সঙ্গেই এরপর দিল্লি যাই। প্রথমে কাজ লোকের বাড়ি, পরে পোশাক তৈরির কারখানায়।
ওর কথামত, ওর গ্রামে ভিটে ছাড়া কিছু ছিল না। আর আমার সবাই থেকেও কেউ নেই। কাজেই বিয়েতে কাউকে জানাবার কিছু ছিল না। আমরা বিয়ে করলাম। বস্তিতে আমার ঘরটা ভাল। ও ওখানেই উঠে এল। ছ’মাস বেশ সুখেই কাটল আমাদের। তারপর একদিন ও বলল, দেশে ভিটেটা পড়ে আছে। বিক্রি করে দিতে যাবে। আমি বললাম, বেশ যাও। কিন্তু গেল তো গেলই। তারপর আজ এসে দেখি এই।’

—‘লোকটা যে এতটা ফ্রড, আপনি একটুও বুঝতে পারেননি?’

—‘না, আসলে ভালবেসেছিলাম তো! জানেন, ওর কোথায় বাড়ি তা পর্যন্ত আমি জানতে চাইনি। ও নিজের থেকেই একদিন বলেছিল, ওর গ্রামের নাম, শিয়ালদহ থেকে কোন স্টেশনে নামতে হয় ইত্যাদি। মরুটিয়া নামটা আমার শোনা। আমার এক পিসির মেয়ের বিয়ে হয়েছে মরুটিয়া বলে একটা জায়গায়, শুনেছিলাম। পিসির মেয়েকে ওর বিয়ের আগে দেখেছিও একবার। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পিসির সঙ্গে আমাদের তো তেমন যোগাযোগ ছিল না। তাই পিসির মেয়ের বিয়েতেও যাইনি। সেজন্য জানতামও না মরুটিয়া কোথায়, কার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ইত্যাদি। তবু মরুটিয়া নামটা শুনেছিলাম। তাই হয়তো মনে থেকে গিয়েছিল।’

—‘পিসির মেয়ের বিয়ে হয়েছে মরুটিয়াতে, কখনও বলেননি ওকে?’

—‘বলেছিলাম। উত্তরে ও বলেছিল, মরুটিয়া কি পশ্চিমবঙ্গে একটা আছে?’

—‘বুঝুন অবস্থা!’

—‘আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি সেই মরুটিয়াই…’ ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে নিয়তি।

—‘এখন দেখছেন তো, সামান্য পরিচয়ে সম্পর্কে জড়ানোর বিপদ! এইসব লোক এভাবেই নানা জায়গায় মেয়েদের প্রতারণা করে বেড়ায়। তবে ভাববেন না, জেলে ওকে পুরবই। আচ্ছা, দুজনের একসঙ্গের কোনও ছবি আছে?’

বিয়ের পরেই দুজনের ছবি তোলা হয়েছিল। তার একটা মানিব্যাগে বয়ে বেড়িয়েছে এতদিন। অফিসার ইনচার্জকে সেটাই বের করে দেয় নিয়তি।

***

—‘ছোটমা!’

স্টেশনের রাস্তা ধরে এগোতে গিয়ে হঠাৎ পিছুডাক।

নিয়তি তাকিয়ে দেখে হন্তদন্ত হয়ে আসছে মা-মেয়ে। নিয়তি হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়।

—‘ছোটমা! একটু দাঁড়াও!’ কচি গলায় একটা আর্তি ভেসে আসে।

ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য টোটোয় উঠে বসবে কি? টোটোয় উঠে স্টেশনে গিয়ে ভিড়ে লুকিয়ে গেলে আর হয়তো ওকে খুঁজেই পাবে না ওরা! কিন্তু কচি গলায় ‘ছোটমা’ ওকে বিপদে ফেলে দেয়। সাতপাঁচ ভেবে একটু দাঁড়িয়েই যায় নিয়তি।

—‘এভাবে আমাদের ভাসিয়ে চলে যাস না বোন!’

রাগে নিয়তির চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। ‘শুধু নিজের ভেসে যাওয়াই দেখছিস? আমি যে ভেসে গেলাম, সেটা বুঝি কিছু নয়?’

কেঁদে ওঠে মা ও মেয়ে।

—‘কাঁদিস না। একই লোক দুটো মেয়েকে প্রতারণা করল, ওর একটা শাস্তি হওয়া দরকার!’

—‘ও জেলে গেলে আমাদের চলবে কী করে? একটু দয়া কর!’

এ সময় একটা শিমুলগাছের আড়ালে প্রতারকের অবয়ব দেখা যায়। নিয়তি কি ছুটে গিয়ে ওকে এলোপাথাড়ি মারতে লাগবে? তারপর কলার ধরে হিড়হিড় করে থানায় টেনে নিয়ে যাবে? বলবে, এই নিন আসামি?

—‘ছোটমা, বাবা কিন্তু তোমার জন্য লুকিয়ে কাঁদে। আমি একদিন ধরে ফেলে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাবা আমাকে বলেছিল তোমার কথা।’ কচি গলায় হঠাৎ ভিন্ন সুর।

এই ভিন্ন সুরে একটু কি টলে যায় নিয়তি? খুব দূরে তো নয়। ও দেখে কেমন আলুথালু চেয়ে আছে লোকটা! এমন অসহায় দৃষ্টির সামনে নিজেকে বড় বিব্রত লাগে নিয়তির।

কিন্তু মেয়েটা শিখিয়ে দেওয়া কথা বলছে না তো? লোকটার দিকে তাকিয়ে ওর কথা অবিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না। তবু প্রতারণা প্রতারণাই। লোকটার দিক থেকে জোর করে চোখ ফিরিয়ে আবার শক্ত হয়ে যায়।

—‘বোন হয়ে দিদির এমন ক্ষতি করে যাস না তুই!’

ক্ষতির কথায় এবারে কিন্তু কেঁপে ওঠে নিয়তি। শেষ অবধি নিজের নামটাতেই বাজেভাবে উঠে বসেছে নাকি ও? নিজে যতই বঞ্চিত হোক, অন্যের ভাগ্য নিয়ে খেলায় আর তেমন জোর পায় না।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »