Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ছোটগল্প: মায়াবতী

‘তিশা, এই তিশা, তোর এখনও হল না! এইবেলা বের হতে না পারলে দেরি হয়ে যাবে মা। তোর বাবা সেই কখন থেকে নীচে দাঁড়িয়ে।’

তিশার মা সোমাদেবী, বড়মেয়ের মাথায় বুলিয়ে দিয়ে দোতলার বারান্দায় এসে নীচে তাকিয়ে দেখলেন, স্বামী তিমির চৌধুরি এবং ছোটমেয়ে তিস্তা গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে। তিমিরবাবু বার-বার হাতের ঘড়ি দেখছেন।

তিমির চৌধুরি কলকাতায় একটি সরকারি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারী। স্ত্রী সোমা এবং তাদের দু’টি মেয়ে তিশা এবং তিস্তা। তিশা ফিজিক্স নিয়ে প্রেসিডেন্সিতে আর ছোটমেয়ে তিস্তা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। মেয়েদের পড়াশুনার সুবিধার কথা ভেবে কৃষ্ণনগর থেকে কলকাতার ফ্ল্যাটে থাকবেন বলে স্থির করেছেন তিমিরবাবু।

দুই বোন পড়াশুনায় বেশ মেধাবী। তবে স্বভাব একদম বিপরীত। ছোটবোন তিস্তা যেন চঞ্চলা নদী, তার উপস্থিতি সব সময় বোঝা যাবে, যেন নূপুরের ধ্বনি তুলে এগিয়ে চলেছে। আর বড়মেয়ে তিশা দিঘির মতো ধীর-স্থির, ওর মনের তল দিঘির মতোই গভীর, তার থেকেও গভীর ওর চোখদু’টি, শান্ত মায়াজড়ানো চপলতাহীন। সবকিছুর প্রতি ওর মমত্ববোধ। সেই সঙ্গে ভীষণ ভিতু স্বভাবের। নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে ওর ভয়ংকর রকমের দ্বিধা। সম্ভবত এই ভয়ের কারণেই হবে, একমাত্র সোমাদেবীই তার বড়মেয়েকে ভাল করে উপলব্ধি করতে পারেন।

গতকাল রাত থেকেই মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। বুঝেছিলেন, তার বড়মেয়ে সহজে এ বাড়ি ছেড়ে কলকাতার ফ্ল্যাটে যেতে পারবে না। খুব কষ্ট হবে। অবশ্য কষ্ট তো তারও কিছু কম হচ্ছে না। সেই কবে বিয়ে হয়ে এ বাড়িতে এসেছেন, ভালবাসা দিয়ে গড়ে তুলেছেন সবকিছু, সংসার ভাল করে করবেন বলে সরকারি চাকরি পেয়েও করেননি। যাই হোক, মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে যেতে রাজি হলেন।

অনেক দিন হয়ে গেছে ওরা কলকাতায় চলে এসেছেন। কিন্তু তিলোত্তমা কলকাতাও তিশার মন থেকে ভয় দূর করতে পারল না। আর এই ভয় আজ তাকে শহরের এক নামকরা নার্সিংহোমের দরজায় এনে দাঁড় করাল।

তিশা প্রায় দৌড়ে নার্সিংহোমের বড় গেট দিয়ে ঢুকে মেন বিল্ডিংয়ের ভিতরের দরজা ঠেলে রিসেপশনের কাছে পৌঁছে গেল। দাঁড়িয়ে কয়েক বার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করে নিল। তারপর রিসেপশনের মেয়েটিকে বলল, ‘তূরীয় চ্যাটার্জি কত নম্বর বেডে আছেন?’

মনিটরে চোখ বুলিয়ে মেয়েটি বলল, ‘সেকেন্ড ফ্লোর ওটি-তে আছেন।’

ওটি কোন দিকে জেনে নিয়ে ডানদিকের সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেল। ওটির সামনে পৌঁছে হঠাৎ সাদা কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় কী একটা নজরে পড়তেই তিশার বুকের ভিতরটায় কে যেন হাতুড়ির আঘাত করল। মাথাটা কেমন করে উঠল। কোনও রকমে পাশের দেওয়ালটা ধরে নিজেকে সামলে নিল। তার পর ধীরে ধীরে ওটির সামনে যেতেই একটি মেয়ে তার দিকে এগিয়ে এল।

মেয়েটি কাছে এসে বলল, ‘তুমি তিশা, না?’

তিশা কেমন ঘোরের মধ্যে উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ, আমি তিশা। তূরীয় কেমন আছে?’

মেয়েটি উত্তর দিল, ‘অপারেশন চলছে, শেষ না হলে কিছুই বলা যাবে না।’

তিশা দু’হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে কান্নার আবেগ কিছুটা সামলে নিয়ে মেয়েটিকে বলল, ‘তুমি?’

মেয়েটি বলল, ‘আমি অঙ্কিতা, তূরীয়র বন্ধু।’

মেয়েটির উত্তর দেওয়ার মধ্যে এমন একটি ভাব ছিল যা লক্ষ্য করে তিশা বুঝতে পারল, অঙ্কিতা তূরীয়র প্রতি বেশ আন্তরিক। মেয়েটি তিশার হাত ধরে পাশের চেয়ারে বসবার জন্য এগিয়ে যেতে যেতে বলল, ‘তুমি অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেলে কী করে?’

এমন সময় একজন নার্স এসে তূরীয় চ্যাটার্জির বাড়ির লোকের খোঁজ করতেই ওরা দু’জনেই নার্সের সামনে এল। নার্স ওদের ডাক্তারবাবুর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। অঙ্কিতা তিশাকে নিয়ে ওটি-র দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখল, ডাক্তার বোস ওটি রুমের আগে ডানদিকের ছোট্ট একটি চেয়ারে বসে কী লিখছেন।

অঙ্কিতা বলল, ‘আসব?’

ডাক্তার বোস মুখ না তুলেই বললেন, ‘হ্যাঁ, আসুন।’

ডাক্তার অরিত্র বোস মুখ তুলে ওদের দেখে বললেন, ‘আপনারা পেসেন্টের কে হন?’

অঙ্কিতা উত্তর দিল, ‘আমরা ওর বন্ধু।’

ডাক্তার বোস বললেন, ‘ঠিক আছে, কিন্তু ওর বাড়ির লোককে তো খবর দিতে হবে।’

সঙ্গে সঙ্গে তিশা জানতে চাইল, ‘কেন ডাক্তারবাবু? তূরীয় কি ঠিক নেই?’

ডাক্তার বোস বললেন, ‘আরে না না, অপারেশন খুবই সাকসেসফুল হয়েছে। কিন্তু আটচল্লিশ ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাবে না। সেই জন্য ওর বাবা-মাকে খবর দেওয়াটা প্রয়োজন।’

ওরা ডাক্তার বোসের সঙ্গে কথা বলে বাইরে আসতেই একটি ছেলে এসে বলল, ‘কী রে, ডাক্তার কী বললেন?’

অঙ্কিতা বলল, ‘ডাক্তারবাবু বললেন, অপারেশন সাকসেসফুল, তবে আটচল্লিশ ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাবে না। আর হ্যাঁ শোন, তূরীয়র বাবা-মাকে ফোন করা হয়েছে?’

ছেলেটি বলল, ‘হ্যাঁ কল করেছি, কাল এসে যাবেন বললেন।’

অঙ্কিতা বলল, ‘মনে করে নার্সিংহোমের ঠিকানাটা বলেছিস তো?’

ছেলেটি বলল, ‘বলেছি বলেছি। এখন তো অনেক রাত হল, বাড়ির দিকে যাবি তো, না কি থাকবি?’

অঙ্কিতা বলল, ‘হ্যাঁ যাব। আনন্দ, এই হচ্ছে তিশা।’

তিশার নাম শুনে ছেলেটি তিশার দিকে তাকাল।

তিশা হাতজোড় করে নমস্কার জানাল। প্রতি-নমস্কার জানাল আনন্দও।

তিশা বলল, ‘আপনিই ফেসবুকে তূরীয়র বাইক অ্যাক্সিডেন্টের খবরটা পোস্ট করেছিলেন?’

আনন্দ বলল, ‘হ্যাঁ। আমিই নার্সিংহোমের ঠিকানা ও তূরীয়র ছবি সহ খবরটা পোস্ট করেছিলাম।’

তিশা বলল, ‘অনেক খুঁজেছি ওকে, ওরা যে বাড়িতে ছিল সেখানে গিয়েও খোঁজ করেছি কিন্তু কোথাও ওকে পাইনি। আনন্দবাবুর জন্য আজ ওকে খুঁজে পেলাম। কিন্তু দেখুন কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল।’— বলেই কেঁদে ফেলল তিশা।

তূরীয়র সঙ্গে সে রাতে আর দেখা হল না, ওকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে।

এ দিকে অনেক রাত হয়েছে। ঘরে ফিরতে হবে। ওরা তিনজন নার্সিংহোমের বাইরে চলে এল। আনন্দ চা খেতে পাশের একটি দোকানে গেল। তিশা এবং অঙ্কিতা চা খাবে না বলে জানিয়ে দিয়ে ট্যাক্সির খোঁজ করতে লাগল।

ট্যাক্সি পেয়ে তিশা অঙ্কিতাকে বলল, ‘কাল সকাল ন’টায় চলে আসব।’

এদিকে সোমাদেবী খুবই চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। রাত অনেক হয়েছে, প্রায় এগারোটা বাজে। তার মেয়ে তো এত রাত করে কোনও দিন বাইরে থাকে না। সন্ধে সাতটা বেজে গেলে দু’-তিন বার ফোন করে মাকে জানিয়ে দেয়, কোথায় আছে; কেন দেরি হচ্ছে। সেই মেয়ে, এত রাত হল, একবারও ফোন করল না। যত বার তিনি ফোন করেছেন কোনও উত্তর পাননি। এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজ। প্রায় দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখলেন, বড়মেয়ে তিশা। তিশা ঘরে ঢুকতেই সোমাদেবী জানতে চাইলেন, ‘কী রে, সেই বিকেলে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলি, আর রাত হল ফিরতে, কোথায় গিয়েছিলি?’

তিশা কোনও উত্তর না দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। তিশার মা মনে মনে কী ভাবলেন, তারপর বললেন, ‘কী হয়েছে মা? আমার কাছে বল।’

তিশা কিছুই বলতে পারল না, মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদল, তার পর নিজের ঘরে চলে গেল।

মেয়ের এমন ব্যবহার দেখে সোমাদেবী আরও উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠলেন। এই ভেবে যে, তার বড়মেয়েটি ভীষণ ভিতু স্বভাবের। কী এমন ঘটনা ঘটেছে, যার কারণে মেয়ের মনে এত কষ্ট হচ্ছে!

সোমাদেবী রাতের সব কাজ সেরে বড়মেয়ের ঘরে এসে দেখলেন, তিশা পড়ার টেবিলে মাথা গুঁজে কাঁদছে। শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে মেয়ের কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখলেন। তিশা মুখ তুলে তাকে দেখে ‘মা’ বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। সোমাদেবী অনেকক্ষণ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মেয়েকে সান্ত্বনা দিলেন। তার পর বললেন, ‘তিশা তুমি বুদ্ধিমতী, যদি তুমি মনে করো মায়ের কাছে তোমার কষ্টের কথা বললে মা তোমাকে সাহায্য করতে পারবে, তবে সব কিছু আমাকে বলতে পারো মা।’

চোখ মুছে, তিশা মাকে খাটের ওপর বসিয়ে বলল, ‘তোমার মনে আছে মা, একটি ছেলের কথা তোমাকে বলেছিলাম? কলেজ শুরুর প্রথম দিকের কথা, ছেলেটি মাঝেমধ্যে কখনও ফুল, কখনও ক্যাডবেরি, কখনও দু’-তিন লাইনের কবিতা লিখে একটি বাচ্চা ছেলেকে দিয়ে পাঠাত।’

তিশার মা বললেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে। তুমি বলেছিলে, সে তো অনেক দিন আগের কথা।’

তিশা বলল, ‘প্রায় তিন বছর আগের কথা। আজ দুপুরে ফেসবুক চেক করতে গিয়ে চোখে পড়ল, সেই ছেলেটি বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করে ভীষণ রকম ইঞ্জিওর হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি।’

‘ফেসবুকে খবরটা কে দিয়েছিল?’— তিশার মা জানতে চাইলেন।

তিশা বলল, ‘ওর এক বন্ধু। কলেজের প্রাক্তনীদের ফেসবুক পেজে। তূরীয়র ছবি, নার্সিংহোমের ঠিকানা সব দেওয়া ছিল।’

মা এবং মেয়ে দু’জনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।

তিশা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘জানো মা, তূরীয়র ছবি দেখে আমার বুকের ভিতর খুব কষ্ট হতে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করলাম, আমি যাব। নার্সিংহোমের ঠিকানাটা ভাল করে দেখে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে বলে যাব, একথা আমার মাথায়ই ছিল না মা।’

‘ওখানে গিয়ে তুমি কী দেখলে? কেমন আছে ছেলেটা? সব ঠিক ছিল?’

‘না মা না, কিছুই ঠিক ছিল না। অপারেশন চলছিল, পরে ডাক্তারবাবু বললেন, আটচল্লিশ ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাবে না।’ কথাগুলি বলেই কান্নার আবেগ কিছুটা কম হওয়ার পর তিশা বলল, ‘একটা বিষয় খুব কৌতূহল হচ্ছে।’

তিশার মা বললেন, ‘কী বিষয়?’

‘‘আমি অপারেশন থিয়েটারের সামনে যেতেই একটি মেয়ে আমার সামনে এগিয়ে এসে বলল, ‘তুমি নিশ্চয়ই তিশা?”

সোমাদেবী বললেন, ‘তুমি মেয়েটিকে আগে চিনতে?’

‘না মা, ওকে সেই প্রথম দেখলাম, তবে মেয়েটি বলল, ও তূরীয়র বন্ধু।’

তিশার মা বললেন, ‘এটা নিয়ে এত ভাবছ কেন?’

‘ভাবছি এই কারণে যে, আমিই তিশা সেটা মেয়েটি নিশ্চিত হল কী করে?’

সোমাদেবী বললেন, ‘তুমিই তো বললে যে, মেয়েটি তূরীয়র বন্ধু। তূরীয়র কাছে নামটা শুনে থাকবে হয়তো।’

কথা শেষ না হতেই দেওয়াল ঘড়ি ঢং-ঢং করে জানিয়ে দিল রাত দুটো বাজল।

তিশার মা বললেন, ‘অনেক রাত হয়েছে, এবার একটু ঘুমনোর চেষ্টা করো মা। কাল সকালে আবার নার্সিংহোমে যেতে হবে তো?’

‘কী করে ঘুম আসবে মা, চোখ বন্ধ করলেই ওর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে যে।’ —বলেই মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।

সোমাদেবী সস্নেহে মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন। দু’টি মেয়েকেই খুব স্নেহ-ভালবাসা দিয়ে বড় করেছেন। বিশেষ করে বড়মেয়েকে। ওর প্রতি যেন ভালবাসাটা একটু বেশি। একেই প্রথম সন্তান, তার ওপর নিজের প্রতিচ্ছবি। তাই বড়মেয়ের কষ্টে নিজেকে ধরে রাখতে পারছেন না। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েকে বললেন, ‘তিশা, একটা কথা বলি মা, আমি যত দূর জানি, তোমার আর তূরীয়র মধ্যে কোনও রকম সম্পর্কই তো তৈরি হয়নি, তবে তুমি এত কষ্ট পাচ্ছ কেন?’

‘সম্পর্ক, তূরীয় করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তখন ভয় পেয়েছিলাম, সেই কারণে তখন সম্পর্ক করতে রাজি হইনি। অথচ দেখো, অজান্তেই কখন যে ওকে মনে মনে ভালবেসে ফেলেছি। এখন তুমিই বলো মা, আমি তো ওকে ফিরিয়েই দিয়েছিলাম। তবে ওর জন্য এত কষ্ট হচ্ছে কেন?’

তিশার মা বুঝতে পারলেন যে, ছেলেটিকে সেদিন ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ হচ্ছে ‘ভয়’, কিন্তু এতদিন ধরে ছেলেটির প্রতি ভালবাসা বুকের ভিতর ফল্গুর ধারা হয়ে বয়ে চলছিল। আজ যেন সেই ভালবাসার বাঁধ ভেঙে গেছে। তিশার মা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লেন, তার পর মেয়েকে বললেন, ‘তিশা, আমার কথা মন দিয়ে শোনো, আর কেঁদো না, তুমি কাঁদলে তূরীয়র ক্ষতি হতে পারে। মনকে শান্ত করো, ঈশ্বরের ওপর ভরসা রাখো, তিনি সর্বশক্তিমান, তাঁর ইচ্ছায় সব ঠিক হয়ে যাবে মা।’

পরের দিন তিশা তৈরি হয়ে নিল, নার্সিংহোমে যেতে হবে। সোমাদেবী এক রকম জোর করেই কিছু খাইয়ে দিলেন মেয়েকে। নার্সিংহোমের সামনে পৌঁছে অঙ্কিতা এবং আনন্দকে দেখতে পেল তিশা। তিশাকে দেখতে পেয়ে অঙ্কিতা এগিয়ে এসে বলল, ‘ডাক্তার বোস এখন ভিজিট করছেন, চলো আমরা ভেতরে গিয়ে অপেক্ষা করি।’

সকালের দিকটায় নার্সিংহোম প্রায় ফাঁকা। দু’-তিনজন নার্স বাঁদিকের সিঁড়ি দিয়ে নেমে সোজা বাইরের দিকে চলে গেল। তিশা লক্ষ করল অঙ্কিতার ডান দিকের কয়েকটা চেয়ার বাদে একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা বসে আছেন। তাঁর দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। ভদ্রমহিলাকে দেখে মনে হল খুবই সম্ভ্রান্ত পরিবারের। তিশা অঙ্কিতাকে ইশারা করে মহিলাকে দেখাল।

অঙ্কিতা মহিলাকে দেখে বলল, ‘ভদ্রমহিলার স্বামীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, খুবই মেজর অ্যাটাক, ডাক্তার বলেছেন, বাহাত্তর ঘণ্টা না গেলে কিছুই বলা যাবে না।’

তিশা বলল, ‘ভদ্রমহিলা একা বসে কাঁদছেন, পাশে কেউ নেই?’

অঙ্কিতা বলল, ‘একমাত্র ছেলে ইউক্রেনে থাকে। তাকে উনি খবর দিয়েছেন কিন্তু ওখানে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, ছেলে কবে এসে পৌঁছবে তার ঠিক নেই।’

তিশার চোখ ছলছল করে উঠল। অঙ্কিতা তিশার দিকে ফিরে বলল, ‘রাতে খুব কেঁদেছ না?’

কথাটা শুনে তিশা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল, পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘অঙ্কিতা, একটা কথা বলব?’

‘হ্যাঁ বলো না।’ অঙ্কিতা বলল।

‘তুমি আমায় চিনতে পারলে কী করে?’

প্রশ্ন শুনে অঙ্কিতা কিছুক্ষণ তিশার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল, তার পর বলল, ‘তূরীয়র মুখে তোমার কথা এত বার শুনেছি যে, তুমি ভাবতেও পারবে না।’ কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে দূরে একটি বুদ্ধমূর্তির দিকে তাকিয়ে রইল, তার পর আবার বলতে শুরু করল, ‘জানো তিশা? যখনই কোনও বন্ধুর প্রেমের আলোচনা শুরু হত, তখনই ও তোমার কথা শুরু করত। সেই সময়ে তূরীয়র চোখেমুখে কী যে একটা আনন্দ ফুটে উঠত তা বলে বোঝাতে পারব না।’

তিশা জানতে চাইল, ‘কী কথা বলত তূরীয়?’

‘ও তোমার প্রশংসা করে বলত, আমার তিশা এমন দেখতে, আমার তিশা তেমন দেখতে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করত তোমার চোখদুটোর। তোমার চোখদু’টি নাকি ভীষণ মায়াবী, ওই চোখের দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকা যায় না। আর এই কারণে তোমার একটা নাম দিয়েছিল তূরীয়।’

‘কী নাম দিয়েছিল?’

অঙ্কিতা বলল, ‘মায়াবতী।’

অনেকক্ষণ দুজনেই চুপ করে রইল। পরে অঙ্কিতা বলল, ‘গতকাল তোমাকে দেখেই কেন যেন আমার মনের মধ্যে একটা উপলব্ধি হল যে, এ তিশা-ই হবে।’

অঙ্কিতার মুখে একথা শুনে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল তিশা, তার পর বলল, ‘‘যেদিন যে ওর সঙ্গে শেষবার আমার দেখা হয়েছিল, সে দিনটা ছিল ওদের ফেয়ারওয়েলের দিন, হঠাৎ তূরীয় আমাকে একটু আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল, ‘তোমার সঙ্গে আমার হয়তো আর দেখা হবে না, আজও যদি আমার মনের কথা তোমায় বলতে না পারি, তবে হয়তো আর কখনও বলার সুযোগ পাব না তিশা। আমার কথা মন দিয়ে একবারটি শোনো। তিশা, আমি সারা জীবন তোমার পাশে থাকতে চাই। তোমাকে আমি ভালবাসি।”

এ পর্যন্ত বলে তিশা একটু থামল, তারপর অঙ্কিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বিশ্বাস করবে কি না জানি না, সেই সময়ে হঠাৎ করে এই পরিস্থিতির জন্য আমি তৈরি ছিলাম না। ভীষণ ভয় পেয়ে প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলাম, আর বার বার মাথা নাড়িয়ে বলেছিলাম— আমি পারব না ভালবাসতে, পারব না আমি—’।

‘আমার এমন অপ্রত্যাশিত ব্যবহারে তূরীয় কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকলও, তার পর কোনও কথা না বলে সেই যে চলে গেল, আজ পর্যন্ত ওকে কোথাও খুঁজে পাইনি। তুমি বিশ্বাস করো অঙ্কিতা, সে দিন এত বেশি ভয় পেয়েছিলাম যে অনেকটা সময় লেগেছিল স্বাভাবিক হতে।’

‘‘পরে অনুষ্ঠান মঞ্চের দিকে গিয়ে শুনলাম, লাউড স্পিকারে তূরীয় চ্যাটার্জির নাম ঘোষণা হচ্ছে মঞ্চে উপস্থিত হবার জন্য। কিন্তু তূরীয় কোথায়? বার বার তূরীয়র নাম ঘোষণা হচ্ছে কিন্তু তূরীয় নেই। সেই প্রথম তূরীয়র জন্য আমার বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল। ভাল করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। বুকের ভিতর একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে ওকে খুঁজতে লাগলাম, ‘কোথায় কোথায় তুমি তূরীয়? প্রত্যেকটা মানুষ তোমাকে খুঁজছে’— বুঝতে দেরি হল না যে, আমার রূঢ় ব্যবহারে ভীষণ আঘাত পেয়ে ও কলেজ ছেড়ে চলে গেছে।’’

বেশ কিছুক্ষণ দু’জনে চুপ করে রইল। ‘‘জানো অঙ্কিতা, সেই প্রথম মনে হল, আমার জীবন থেকে কী যেন হারিয়ে ফেললাম। এখনও বেশ মনে আছে, সেই সময় একজন অন্ধ গায়িকা মঞ্চে গান করছিলেন— ‘এসো এসো এসো প্রিয়, এসো আমার ঘরে, আমার মনের অন্তঃপুরের স্বপ্নে ভেজা পথটি ধরে।”

‘কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে সারারাত তূরীয়র কথা ভেবেছি। যে কষ্ট সেদিন ও পেয়েছিল তার থেকে বেশি কষ্ট নিজে বুকে বয়ে চলেছি।’

‘‘পরের দিন কলেজ বন্ধ ছিল, সেই কারণে সকাল হতেই এক বান্ধবীকে ফোন করে তূরীয়র সম্পর্কে খোঁজ করতে ও বলল, ‘আমি কিছু বলতে পারব না, তবে আমার দিদি তূরীয়র সঙ্গে একই ক্লাসে পড়ে, খোঁজ নিয়ে তোকে জানাচ্ছি।”

এ কথা বলতে বলতে একজন নার্স এসে ওদেরকে বললেন, ‘আপনারা তূরীয় চ্যাটার্জির বাড়ির লোক? ডাক্তার বোস আপনাদেরকে ভেতরে ডাকছেন।’

ওরা দু’জন প্রায় দৌড়ে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে এল। ডাক্তার বোস ভেতরেই ছিলেন। ওদেরকে দেখে বললেন, ‘বসুন।’ তার পর বললেন, ‘পেসেন্ট এখন আউট অব ডেঞ্জার, কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে, ওকে আরও কয়েকটা দিন অবজারভেশনে রাখব, মাথায় আঘাত পেয়েছে তো সেই জন্য। আর হ্যাঁ, আর একটা কথা, ওর বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়েছে নিশ্চয়ই?’

অঙ্কিতা বলল, ‘হ্যাঁ ডাক্তারবাবু। ওরা আজই চলে আসবেন।’

তিশা এতক্ষণ চুপ করে সব শুনছিল, এবার ও কথা বলল, ‘ডাক্তারবাবু, ওকে একটিবার দেখতে পারি?’

ডাক্তার বোস বললেন, ‘অবশ্যই, তবে বেশিক্ষণ নয়, আর একটু সাবধানে।’

ওরা ডাক্তার বোসের চেম্বার থেকে বেরিয়ে, তূরীয়র কেবিনের দিকে হাঁটতে লাগল। তিশার মনে হল ওর পাদুটো যেন চলছে না। তূরীয়র কেবিন যেন কতদূর। অনেক কষ্টে অঙ্কিতার পেছন পেছন হেঁটে কেবিনের দরজার সামনে এসে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। বুকের ভিতর হৃৎপিণ্ডের টিপ টিপ আওয়াজ শুনতে পেল। কোনও রকমে নিজেকে সামলে নিল তিশা। অঙ্কিতা কেবিনের দরজা খুলতেই তূরীয়কে দেখা গেল, লম্বা হয়ে শুয়ে আছে, অক্সিজেন, স্যালাইন দুই-ই চলছে।

তিশার দৃষ্টি নিবদ্ধ দূরে বেডের ওপর শায়িত তূরীয়র দিকে। বাঁধভাঙা অশ্রুধারা রয়ে চলেছে দু’চোখ দিয়ে। ‘কত দিন কত দিন দেখিনি তোমায়।’

অঙ্কিতা তিশার হাত ধরে কেবিনের ভেতর নিয়ে এল। তূরীয়র চোখ বন্ধ। ইশারায় তিশাকে বসতে বলল অঙ্কিতা। তিশা বেডের পাশে রাখা একটি টুলে বসে তূরীয়র দিকে তাকিয়ে রইল। কয়েক মুহূর্তে কেটে গেল এইভাবে।

অঙ্কিতার নজর পড়ল তিশার দিকে। তিশার দৃষ্টি তূরীয়ও মুখের ওপর, ঠোঁটদু’টি নড়ছে, কী যেন বলছে তিশা— ‘কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে তুমি, এই তিন-চার বছর ধরে খুঁজেছি তোমায়। সেই যে মুখ নীচু করে চলে গেলে, আর একটিবারও ফিরে দেখলে না আমাকে। এত অভিমান তোমার!’

অঙ্কিতা এই দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারল না। ওর দু’চোখ বেয়েও জল গড়িয়ে পড়ল।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
4 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
নুশান
নুশান
1 year ago

ভাল লেগেছে পড়ে। জানি না আপনি মেডিক্যাল পার্স্পেক্টিভ থেকে ‘ভয়’টা কে তুলে ধরেছেন কিনা। কিন্তু পাঠক হিসেবে আমি ‘ভয়’ ব্যাপারটার সাথে যথেষ্ট রিলেট করতে পারছি। আমার জানা পরিসরে আমি দেখেছি অনেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভয়াবহ এক ধরণের অ্যাঙ্কযাইটি তে ভোগে। অবশ্য এখনকার ফাস্ট-প্যেস্ট দুনিয়ায় অ্যাঙ্কযাইটি একটা ধ্রুবসত্য-সঙ্গী।

Subhananda
Subhananda
1 year ago

Khub valo likhechen 😊❤️

শ্যামল সমাদ্দার
শ্যামল সমাদ্দার
1 year ago

দারুন লিখেছো, এইরকম আরো ভালো ভালো গল্পের আশায় রইলাম।

Ashis Guha
Ashis Guha
1 year ago

মায়াবতী অনেক মেয়ের জীবনের গল্প। যা চিরদিন অলিখিত থেকে যায়।আজ সেই গল্প তোমার লেখায় উদ্ভাসিত। এটাই এই গল্পের সাথ্কথা। অসাধারণ।

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »