আম হচ্ছে ফলের রাজা। এই ফলটির উৎস আমাদের উপমহাদেশেই। ভারতবর্ষে ৬০০০ বছর আগে আমের চাষ শুরু হয়। রামায়ণ ও মহাভারতের মত মহাকাব্যেও এই ফলের উল্লেখ পাওয়া যায়। সারা পৃথিবীর মধ্যে ট্রপিক্যাল দেশগুলিতেই আমের ফলন হয়। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমচাষ বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। আম ফল সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয়। এত পছন্দনীয় ফল পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। এমন কোনও জাতি নেই যারা আম পছন্দ করে না। তাই একে সন্মান দিয়ে ‘ফলের রাজাʼ বলা হয়।
আমের বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera indica। এটি Anacardiaceae পরিবারের উদ্ভিদ। মোহনভোগ, গোপালভোগ-সহ বাহারি নামে বিভিন্ন আমে বাজার সয়লাব। পাওয়া যাচ্ছে গোবিন্দভোগ, হিমসাগর। এ ছাড়া বাংলাদেশে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ মধুমাসকে পরিপূর্ণ করবে। আর এর পরই আসবে সে অঞ্চলের ফজলি আম। গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি, ল্যাংড়া, রানিভোগ, ফজলি, আশ্বিনা ছাড়াও এখন বাংলাদেশে নতুন জাতের আম ফলছে। বারি আম-১১ নামে একটি বারোমাসি আম বাংলাদেশে রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এই জাতটিকে আবিষ্কার করেছে।
কোলেস্টেরল বশে রাখে আম। হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। প্রচুর ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং ক্যালোরি আছে। আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা ফল ল্যাকজেটিভ, রোচক ও টনিক বা বলকারকরূপে ব্যবহৃত হয়। লিভার বা যকৃতের জন্য উপকারী। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে পাকা এবং কাঁচা, উভয় প্রকার আমই মহৌষধ। রক্ত পড়া বন্ধকরণে আমগাছের বিভিন্ন অঙ্গের রস উপকারী। কচি পাতার রস দাঁতের ব্যথা উপশমকারী। আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, পুরাতন আমাশয় এবং প্রস্রাবের জ্বালাযন্ত্রণা উপশম করে। গাছের আঠা পায়ের ফাটা ও চর্মরোগে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। জ্বর, বুকের ব্যথা, বহুমূত্র রোগের জন্য আমের পাতার চূর্ণ ব্যবহৃত হয়। আম থেকে চাটনি, আচার, আমসত্ত্ব, মোরব্বা, জেলি ও জুস তৈরি হয়।
আমের জন্মস্থান নিয়ে রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। বৈজ্ঞানিক ‘ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা’ নামের এ ফল ভারতীয় অঞ্চলের কোথায় প্রথম দেখা গিয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমাদের এ জনপদেই যে আমের আদিবাস— এ সম্পর্কে আম-বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা একমত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭-এ আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় আম দেখে ও খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ সময়ই আম ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ ও মাদাগাস্কারে।
চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩২ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ অঞ্চলে ভ্রমণে এসে বাংলাদেশের আমকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করেন। ১৩৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে আফ্রিকায় আম চাষ শুরু হয়। এরপর ১৬ শতাব্দীতে পারস্য উপসাগরে, ১৬৯০ সালে ইংল্যান্ডের কাচের ঘরে, ১৭ শতাব্দীতে ইয়েমেনে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে আম চাষের খবর জানা যায়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আমের আঁটি থেকে গাছ হয়। এভাবেই আম ফলটি বিশ্ববাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।
জানা যায়, মোগল সম্রাট আকবর ভারতের শাহবাগের দ্বারভাঙায় এক লক্ষ আমের চারা রোপণ করে উপমহাদেশে প্রথম একটি উন্নত জাতের আমবাগান সৃষ্টি করেন। আমের আছে বাহারি নাম বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ। ফজলি, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, ক্ষীরসাপাতি, গোপালভোগ, মোহনভোগ, জিলাপিভোগ, লক্ষণভোগ, মিছরিভোগ, বোম্বাই ক্ষীরভোগ, বৃন্দাবনী, চন্দনী, হাজিডাঙ্গ, সিঁদুরা, গিরিয়াধারী, বউভুলানি, জামাইপসন্দ, বাদশাভোগ, রানিভোগ, দুধসর, মিছরিকান্ত, বাতাসা, মধুচুসকি, রাজভোগ, মেহেরসাগর, কালীভোগ, সুন্দরী, গোলাপখাস, পানবোঁটা, দেলসাদ, কালপাহাড়-সহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাওয়া যায় প্রায় ৩০০ জাতের আম। তবে অনেকগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়।
ইংরেজি শব্দ Mango (বহুবচন “Mangoes” বা “Mangos”) পর্তুগিজ শব্দ, Manga, মালয় শব্দ, manga এবং দ্রাবিড় ভাষাসমূহ (তামিল) শব্দ, mankay থেকে উদ্ভূত, যেখানে man অর্থ “আমের গাছ” এবং kay অর্থ “ফল”। mango নামটি ১৫শ এবং ১৬শ শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে ইংল্যান্ডের মশলার ব্যবসার সময় বিকশিত হয়েছিল। বাংলায় আম শব্দটি সংস্কৃত ‘আম্র’ থেকে উদ্ভূত এবং বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘আম’ অর্থ— অম্র, আম্র, চূত, ফলের রাজা নামে পরিচিত ফলবিশেষ প্রভৃতি।
ক্যারাবাও আম, ফিলিপাইনের জাতীয় ফল। অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এলাকার আমের মতোই এটি পাকলে বৈশিষ্ট্যগতভাবে Polyembrionic এবং উজ্জ্বল হলুদ। এটি উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় ভারতীয় আমের মত নয়, ওগুলো পাকলে monoembryonic এবং লালচে হয়।
আম গাছ সাধারণত ৩৫-৪০ মিটার (১১৫-১৩০ ফিট) লম্বা এবং সর্বোচ্চ ১০ মিটার (৩৩ ফিট) ব্যাসার্ধের হয়ে থাকে। আমগাছ বহু বছর বাঁচে, এর কিছু প্রজাতিকে ৩০০ বছর বয়সেও ফলবতী হতে দেখা যায়। এর প্রধান শিকড় মাটির নিচে প্রায় ৬ মিটার (২০ ফিট) গভীর পর্যন্ত যায়। আমগাছের পাতা চিরসবুজ, সরল, পর্যায়ক্রমিক, ১৫-৩৫ সেমি লম্বা এবং ৬-১৬ সেমি চওড়া হয়ে থাকে; কচি পাতা দেখতে লালচে-গোলাপি রঙের হয়। আমের মুকুল বের হয় ডালের ডগা থেকে, মুকুল থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যন্ত প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে।
পাকা আমের আকার, আকৃতি, রং, মিষ্টতা এবং গুণগত মান জাতভেদে বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। আমগুলো জাতভেদে হলুদ, কমলা, লাল বা সবুজ বর্ণের হতে পারে। ফলটি একক ত্বকবিশিষ্ট, লম্বাকৃতির বীজত্বক থাকে। বীজত্বক পৃষ্ঠ তন্তুযুক্ত বা লোমশ হতে পারে এবং পাল্প থেকে সহজে আলাদা করা যায় না। ফলগুলো বৃত্তাকার, ডিম্বাকৃতির বা বৃক্ক আকারের হয়ে থাকে। দৈর্ঘ্যে একেকটি আম ৫–২৫ সেন্টিমিটার (২–১০ ইঞ্চি) এবং ওজনে ১৪০ গ্রাম (৫ আউন্স) থেকে ২ কিলোগ্রাম (৫ পাউন্ড) হয়ে থাকে। ফলত্বক চামড়ার মত, মোমের আস্তরণযুক্ত, মসৃণ এবং সুগন্ধযুক্ত, রং সবুজ থেকে হলুদ, হলুদ-কমলা, হলুদ-লাল বা পুরোপুরি পাকলে লাল, বেগুনি, গোলাপি বা হলুদের বিভিন্ন শেডের মিশ্রণযুক্ত।
পাকা অক্ষত আম থেকে মিষ্টি স্বাদযুক্ত সুবাস পাওয়া যায়। বীজত্বকের ভিতরে ১–২ মিমি (০.০৩৯–০.০৭৯ ইঞ্চি) পুরু পাতলা আস্তরণযুক্ত একটি একক বীজ থাকে, যা ৪–৭ সেমি (১.৬–২.৮ ইঞ্চি) লম্বা। আমগুলোতে অ-পুনরুদ্ধারযোগ্য বীজ থাকে যা ঠান্ডায় জমে বা শুকিয়ে গেলে তা থেকে আর চারা উৎপন্ন হয় না। আমের বীজ থেকে সহজেই চারা জন্ম নেয় ও বেড়ে উঠে। সাধারণত অঙ্কুরোদগমের হার সর্বাধিক থাকে যখন পরিপক্ক ফল থেকে বীজ নেওয়া হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে আম কয়েক হাজার বছর ধরে চাষাবাদ চলছে, পূর্ব এশিয়াতে আমের প্রচলন হয় খ্রিস্ট-পূর্ব পঞ্চম-চতুর্থ শতাব্দী থেকে এবং চাষাবাদ শুরু হয় আরও পরে খ্রিষ্টাব্দ দশম শতাব্দী দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশ এবং পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশের পর পৃথিবীর অন্য যেসব দেশে ভারতীয় উপমহাদেশের মত জলবায়ু রয়েছে, যেমন: ব্রাজিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা মেক্সিকোতে আরও অনেক পরে আমের প্রচলন ও উৎপাদন শুরু হয়। মরোক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ১৪ শতকে আমের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত উষ্ণপ্রধান জলবায়ুর অঞ্চলগুলোতে আমের চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি আম উৎপাদন হয় শুধুমাত্র ভারতেই। এর পর অন্যান্য যেসব দেশ আম উৎপাদন করে তার মধ্যে আছে চিন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা প্রভৃতি। আম খুব উপকারী ফল।
পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম আছে। আমের প্রায় কয়েকশো জাত রয়েছে। যেমন: ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত, অরুণা, সুবর্ণরেখা, মিছরিদানা, নীলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপুরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোলাপখাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, হাড়িভাঙ্গা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী, মল্লিকা, আম্রপালি ইত্যাদি।
আমের ফলের আকার, আকৃতি, মিষ্টতা, ত্বকের রং এবং ভেতরের ফলের বর্ণ (যা ফ্যাকাশে হলুদ, সোনালি বা কমলা হতে পারে) জাতভেদে পরিবর্তিত হয়। ভারতের মালদহ, মুর্শিদাবাদ-এ প্রচুর পরিমাণে আম চাষ হয়ে থাকে। আম ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় ফল, এবং বাংলাদেশের জাতীয় গাছ। বাংলাদেশের রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম চাষ বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে।
আম ভারতের জাতীয় ফল। এটি বাংলাদেশেরও জাতীয় গাছ। ভারতে, আমের ফলন ও বেচাকেনা মার্চ-মে মাসে হয় এবং এসকল খবর বার্ষিক সংবাদ সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত হয়।
জেনেটিক বিশ্লেষণ এবং মেঘালয়ের দামালগিরির কাছে পাওয়া প্যালিওসিন যুগের আম গাছের পাতার জীবাশ্মের সঙ্গে আধুনিক আম তুলনা করে জানা যায় আম গণের উৎপত্তি ছিল ভারতীয় এবং এশীয় মহাদেশীয় প্লেটের সংযোগস্থলে, ভারতীয় উপমহাদেশে, প্রায় ৬০ মিলিয়ন বছর আগে। সম্ভবত ২০০০ খ্রিস্ট-পূর্বের প্রথম দিকে ভারতে আম চাষ করা হত। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০-৫০০ অবধি আমকে পূর্ব এশিয়ায় আনা হয়েছিল, ১৪ই শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে সোয়াহিলি উপকূলে আম পাওয়া যেত, এবং ১৫ শতকে ফিলিপাইনে এবং ১৬শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ পরিব্রাজকরা ব্রাজিলে আম নিয়ে গিয়েছিলেন।
মালাবার অঞ্চলের ডাচ কমান্ডার হেন্ডরিক ভ্যান রিডি তাঁর ১৬৭৮ সালের ‘হর্টাস মালাবারিকাসে’ গ্রন্থে অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন উদ্ভিদ হিসেবে আমের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। যখন ১৭শ শতাব্দীতে আমেরিকান উপনিবেশগুলোতে প্রথম আম আমদানি করা হয়েছিল, তখন সংরক্ষণের অভাবে এগুলোর আচার বানাতে হয়েছিল। অন্যান্য ফলগুলোরও আচার বানানো হয়েছিল এবং সেগুলো “আম”-এর নামেই পরিচিত ছিল, বিশেষত বেল মরিচ এবং ১৮শ শতাব্দীতে, “ম্যাংগো” শব্দটি ক্রিয়াপদে পরিণত হয়েছিল যার অর্থ ছিল “আচার বানানো”।
দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে আমের চিরাচরিত সম্পর্ক রয়েছে। মৌর্য সম্রাট অশোকের নির্দেশে সাম্রাজ্যের রাস্তাগুলোতে ফলদ এবং ছায়া বহনকারী গাছ লাগানোর বিষয়ে তাঁর নির্দেশাবলিতে উল্লেখ রয়েছে: “রাস্তায় বট-গাছগুলো আমার দ্বারা রোপিত হয়েছিল, যাতে তারা গবাদি পশু এবং পুরুষদের ছায়া সরবরাহ করতে পারে, (এবং) আমের চারা রোপণ করা হয়েছিল।”
মধ্যযুগীয় ভারতে, ইন্দো-পার্সিয়ান কবি আমির খসরু (১২৫৩ – ১৩২৫) আমকে “নাঘজা তারিন মেওয়া হিন্দুস্থান”— “হিন্দুস্থানের সবচেয়ে সুন্দর ফল” বলে অভিহিত করেছিলেন। দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির দরবারে আম খাওয়া হত এবং মুঘল সাম্রাজ্যে ফলকে বিশেষভাবে পছন্দ করা হত। বাবর তাঁর ‘বাবরনামা’-য় আমের প্রশংসা করেছিলেন, শের শাহ সুরি মুঘল সম্রাট হুমায়ূনের বিরুদ্ধে তাঁর বিজয়ের পরে চাউসা জাতটির উদ্বোধন করেছিলেন। উদ্যানচর্চায় মুঘল পৃষ্ঠপোষকতার ফলে বিখ্যাত তোতাপুরী জাত, যা ইরান এবং মধ্য এশিয়ায় রপ্তানি করা প্রথম জাত ছিল, সেটি সহ হাজার হাজার আমের জাতের কলম করা শুরু হয়েছিল। বলা হয় আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) বিহারের দ্বারভাঙার লাখিবাগে ১,০০,০০০ গাছসমৃদ্ধ একটি আমবাগান করেছেন। জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান লাহোর ও দিল্লিতে আমের বাগান করার এবং আমের তৈরি মিষ্টান্ন বানানোর আদেশ দেন।
জৈন দেবী অম্বিকাকে ঐতিহ্যগতভাবে একটি আমের গাছের নিচে উপস্থাপন করা হয়। আমের ফুল সরস্বতী দেবীর পূজায়ও ব্যবহৃত হয়। আমের পাতা ভারতীয় বাড়ির ফটক এবং দরজা সাজাতে এবং বিয়ে ও গণেশ চতুর্থীর মত উৎসবের সময় ব্যবহার করা হয়। আমের মোটিফ এবং পাইসলেগুলো বিভিন্ন ভারতীয় সূচিকর্মে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং কাশ্মীরি শাল, কাঞ্চিপুরম এবং সিল্ক শাড়িতে পাওয়া যায়। তামিলনাড়ুতে আমকে মিষ্টতা এবং স্বাদের জন্য তিনটি রাজকীয় ফলগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হয়, যার বাকি দুটি হল কলা এবং কাঁঠাল। ফলের এই ত্রয়ীকে মা-পালা-ভাজাই বলা হয়। ধ্রুপদী সংস্কৃত কবি কালিদাস আমের প্রশংসায় গেয়েছিলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও অনেক প্রিয় ছিল আম। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় জনগণের প্রতি চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের ভালবাসার প্রতীক হিসাবে আম চিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।