শুরু হয়েছিল পায়রা দিয়ে। এখন এসে ঠেকেছে মুঠোফোনে। সৌজন্যে অবশ্যই বিবর্তন।
বিবর্তনের পথ বেয়ে এগিয়ে চলেছে আমাদের সভ্যতা, পাশাপাশি হারিয়ে যাচ্ছে অনেক পুরনো ঐতিহ্য। এই যেমন ভারতীয় ডাকব্যবস্থা। একটা সময় পোস্টকার্ডে ঘরে গাদা গাদা শুভেচ্ছাবার্তা এসে পৌঁছত। লেখাটি গোপন রাখার জন্য ছিল ইনল্যান্ড লেটার, খাম। বর্তমানে বার্তা আসে মুঠোফোনে। দিনবদলের এই দিনলিপিতেই ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি আমরা। এই দীর্ঘ পরিক্রমাটা কেমন ছিল, জানতে চলুন, প্রথমে আমরা পায়রার কাছেই যাই।
মহাকবি কালিদাস বিরহিণী প্রিয়ার কাছে তাঁর প্রিয়জনের বার্তা বয়ে নিয়ে যেতে বলেছিলেন আকাশের মেঘকে। আর মৌর্যযুগের পণ্ডিত কৌটিল্য তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থে পায়রার সাহায্যে ডাক বা চিঠি পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন। এর সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দ। সম্রাট অশোক পর্যন্ত এই পায়রা-ডাকের ব্যবস্থাই বহাল ছিল। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে ভারতে এসেছিলেন মরক্কোর পর্যটক ইবন বতুতা। দিল্লির সম্রাট তখন মহম্মদ বিন তুঘলক। সে সময় অশ্বারোহী ও পদাতিক— ভারতে দু’ধরনের ডাকব্যবস্থা চালু ছিল বলে ইবন বতুতা লিখেছেন।
খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে সম্রাট শের শাহের আমলে ভারতের সব জায়গায় অশ্বারোহী অর্থাৎ ঘোড়ায় ডাকব্যবস্থা প্রচলিত ছিল বলে জানাচ্ছেন ঐতিহাসিক ফেরিশতা।
পরবর্তীকালে মোগল সম্রাট আকবরের আমলেও অশ্বারোহী ডাকব্যবস্থা চালু ছিল এবং সে সময় ঘোড়ায় চেপে আগ্রা থেকে আমেদাবাদে চিঠি পৌঁছতে সময় লাগত পাঁচ দিন।
খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে তাঁদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। তখনও কিন্তু এ দেশে নিয়মিত ডাক চলাচল ছিল না। এজন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেদের লোক দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চিঠিপত্র পাঠাত।
ভারতে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১-এ মার্চ ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় প্রথম ডাক প্রচলন হয়। সে সময় ডাকমাশুল নিয়ে জনসাধারণের চিঠিপত্র দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে সে সময় খোলা চিঠি দিতে হত। খামের ভেতরে চিঠি পাঠানো যেত না। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই নিয়মই চালু ছিল।
এরপর ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ডাকব্যবস্থার উন্নতি করতে মেসার্স কোটনি, ফরবেস্ ও বিডন সাহেবকে নিয়ে তৈরি হয় একটি কমিশন। সেই সময়েই তৈরি হয় আজকের ডাকব্যবস্থার রূপরেখা।
পরে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ডাকব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে নিয়োগ করা হয় ৩৩ হাজার পোস্টাল রানার। ওই সালেই রানাররা ৮৫৩ মাইল পায়ে হেঁটে, কখনও গোরুর গাড়ি আবার কখনও ঘোড়ার গাড়ির সাহায্যে ৫,১৫৬ মাইল পথ ভ্রমণ করে গোটা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় চিঠিপত্র পৌঁছে দেন।
এরপর ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে মহারানি ভিক্টোরিয়ার ছবি দেওয়া ‘হাফ্ আনা’ (দুই পয়সা)-র খামে সিকি ভরি ওজনের চিঠি পাঠানো শুরু হয় ভারতের সর্বত্র।
সে সময়ের ডাকটিকিটের হার সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায় ও’ম্যালির লেখায়,—
‘The postal system was also inaugurated in 1884, when a uniform rate of postage, viz., half an anna for a letter weighing quarter of a tolla was fixed irrespective of distance.’
এ দেশে প্রথম ডাকটিকিট ছাপা হয় ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার উড্ স্ট্রিটে। সেটি ছিল মহারানি ভিক্টোরিয়ার ছবি দেওয়া দুই পয়সার ডাকটিকিট। এটি দুষ্প্রাপ্য।
১৮৫৫ থেকে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের সব ডাকটিকিট ছাপা হত বিলেতে। তারপর তা ভারতে আসত।
১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বোম্বাই প্রদেশের নাসিকে একটি ছাপাখানা বসানো হয়। এরপর এই ছাপাখানা থেকেই ভারতের যাবতীয় ডাকটিকিট ছাপা হতে থাকে। এ বিষয়ে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ২২-এ জুন আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়,—
‘বোম্বাইয়ের ষ্ট্যাম্প মুদ্রণ ব্যবস্থাপক এসেম্বলি ভারতবর্ষের স্ট্যাম্প মুদ্রণের প্রস্তাবটি সমর্থন করিয়াছেন। ষ্ট্যাম্প মুদ্রিত করিবার প্রেসটি সম্ভবতঃ বোম্বাই প্রেসিডেন্সির নাসিক রোডে স্থাপিত হইবে। তাহার উদ্যোগ আয়োজন এখনই চলিতেছে। গত শীতকালেই পরীক্ষাস্বরূপ দিল্লীতে একটি ষ্ট্যাম্প প্রেস স্থাপিত হইয়াছিল। সে পরীক্ষা সন্তোষজনক হইয়াছিল। কিন্তু দিল্লীর আবহাওয়া স্থায়ী প্রেসের পক্ষে সম্পূর্ণ অনুপযোগী হওয়াতে উহা নাসিক রোডে স্থাপিত হইবে।’
১৫ আগস্ট ১৮৮২ পর্যন্ত ভারতে পোস্ট অফিসের সংখ্যা ছিল ২২,১১৬টি। পরে তা বেড়ে হয় ৪৫,৯০৭টি।
১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে এ দেশে স্ট্যাম্প ছাপার ক্ষেত্রে আরও উন্নতি পদ্ধতি চালু হয়। কর্নেল ফরবেসের পরিকল্পনামত কলকাতা টাঁকশাল থেকে প্রথম বের হয় সিংহ ও তালগাছ আঁকা দুই আনা দামের ডাকটিকিট।
১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের মে থেকে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট পর্যন্ত কলকাতায় ছাপা হয় ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ ৩২ হাজার ৪৯৬টি ডাকটিকিট।
১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ভি.পি.-তে মালপত্র পাঠালে পোস্ট অফিসের তরফে সংশ্লিষ্ট প্রেরককে ডাকমাশুলের বদলে মালের মূল্য আনাবার ব্যবস্থা চালু হয়।
ভারতীয় ডাকব্যবস্থায় এখনও এসব ব্যবস্থাই চালু আছে।
এবার আসছি পালকিতে।
পালকিতে ডাক, জলপথে ডাক ও ডাকচৌকি ‘বাঙ্গি’।
পালকিতে বউ চলে যায়, আমরা শুনেছি। কিন্তু এই পালকিতেই একসময় ডাক অর্থাৎ চিঠিপত্র যেত। কেমন ছিল সে ব্যবস্থা?
বাংলায় ডাকঘর তৈরির সঠিক সাল-তারিখ অজানা। তবে ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ক্লাইভের সময় ডাকব্যবস্থা প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। পরে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে ডাকব্যবস্থার বেশ কিছু উন্নতি করেন ওয়ারেন হেস্টিংস। আর ডাকঘর চালুর আগে এক শ্রেণির মানুষ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চিঠিপত্র পৌঁছে দিতেন।
ডাক পৌঁছানোর জন্য এ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছিল ডাকচৌকি। আর এইসব ডাকচৌকিতে থাকত পালকি ও পালকি বেহারার দল। স্থানীয় পোস্ট অফিসের অধীনে ছিল এইসব ডাকচৌকিগুলি।
চিঠির সঙ্গে পালকিতে যাত্রীরাও যেতে পারতেন। এজন্য ভাড়াও নির্দিষ্ট ছিল। এ বিষয়ে একটি খবর পাওয়া যাচ্ছে ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ জানুয়ারি তারিখের ‘কলিকাতা গেজেট’-এ। তাতে দেশের বিভিন্ন জায়গার ডাকচৌকিতে ভ্রমণের একটি ভাড়ার তালিকা দেওয়া আছে। যেমন, কলকাতা থেকে হুগলির পালকি ভাড়া ছিল ৪৬ টাকা ৪ আনা, কলকাতা থেকে বাঁশবেড়িয়া ৭৬ টাকা, কলকাতা থেকে চন্দননগর ও চুঁচুড়ার ভাড়া ২৪ টাকা এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছিল কাশী যাওয়া। কলকাতা থেকে কাশীর পালকি ভাড়া ছিল ৭৬৪ টাকা। তখন রাজমহল-ভাগলপুর হয়ে কাশী যাওয়ার রেওয়াজ ছিল। এই তালিকা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এভাবে ডাকচৌকির পালকিতে যাতায়াত করা ছিল ব্যয়বহুল।
তবে পালকির পাশাপাশি জলপথে নৌকোয় যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল এবং এর ভাড়া ছিল তুলনায় অনেকটাই সস্তা।
জলপথে ডাক যেত নৌকো কিংবা বজরায়। আর এইসব নৌকো ও বজরা ছিল জল-পুলিশের অধীনে। সেজন্য জলপথে যেতে গেলে জল-পুলিশের আগাম অনুমতি নিতে হত। তবে জলপথে ছিল জলদস্যুদের ভয়। তাই জল-পুলিশ বিশ্বাসী দাঁড়ি-মাঝি যোগাড় করত। আর নৌকো বা বজরায় সিপাই-সান্ত্রী মোতায়েন থাকত। এরপরেও পথের বিপদের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকতেন না। ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে এখানে ছিল ‘কোম্পানি’। ব্রিটিশ আমলে সে সময় জলপথে মালপত্র পরিবহণের একচেটিয়া কারবারের দায়িত্বে ছিল ‘মেসার্স হোমস্ অ্যান্ড অ্যালেন কোং’।
আগেই বলেছি, স্থলপথে পালকিতে ভ্রমণের তুলনায় জলপথে নৌকো কিংবা বজরায় ভ্রমণ ছিল তুলনায় অনেকটাই সস্তা। এর প্রমাণ আমরা পাই, ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ প্রকাশিত পুলিশের একটি বিজ্ঞাপনে। ওই বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল, জলপথে নৌকোর ভাড়া ৮ জন দাঁড়ির বজরা ২ টাকা, ১০ জন দাঁড়ির বজরা আড়াই টাকা এবং ১৬ জন দাঁড়ির বজরার ভাড়া সাড়ে তিন টাকা। আর এক্ষেত্রেও কলকাতা থেকে জলপথে নৌকো কিংবা বজরায় কাশী যাওয়ার ভাড়া ছিল ৪৮৮ টাকা।
তবে বর্ষার সময় খারাপ রাস্তাঘাটের কারণে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাস ডাক চলাচল বন্ধ থাকত।
এর প্রমাণ হিসেবে আমরা ১০/০৬/১৭৮৪-তে ‘কলিকাতা গেজেট’-এ প্রকাশিত একটি খবরের উল্লেখ করতে পারি। ওই খবরে বলা হয়,—
‘আগামী ৩০ শে জুন হইতে অনারেবল কোম্পানী বাহাদুরের ডাক বেহারাগণ ডাকের কার্য বন্ধ করিবে।’
ফের আরেকটি খবরে বলা হয়েছিল,—
‘আগামী ১ লা অক্টোবর হইতে কোম্পানী বাহাদুরের ডাকবেহারারা পুনরায় কার্য আরম্ভ করিবে।’
সে সময় বাংলার সর্বত্র ডাকব্যবস্থা চালু ছিল।
এবার আসি ‘বাঙ্গি’ প্রসঙ্গে। ডাকচৌকিতে পালকি কিংবা নৌকোয় ডাকের সঙ্গে যাত্রী পরিবহণ করাও হত, তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। যাত্রী ছাড়াও তাদের মালপত্র নিতেন ডাকবাহকেরা। আর এই মালপত্রের ডাককে বলা হত ‘বাঙ্গি’।
১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ জুন ‘বঙ্গদূত’ পত্রিকা মারফৎ নতুন ডাকঘর স্থাপনের কথা জানা যায়। ওই পত্রিকা থেকে রোজারিও কোম্পানির উদ্যোগে কলকাতায় নতুন ডাকঘর স্থাপনের উল্লেখ রয়েছে। কোম্পানির তরফে এ বিষয়ে বলা হয়, তারা কলকাতা ও কলকাতার কাছাকাছি অঞ্চলে এক ভরি ওজনের পর্যন্ত চিঠিপত্র বিলি করবে এক আনা মাশুলে। এরপর এক থেকে দুই ভরি ওজনের চিঠির জন্য মাশুল লাগবে দুই আনা।
কোম্পানির তরফে আরও জানানো হয়, দিনে তিনবার তারা চিঠিপত্র বিলি করবে। প্রথম বিলি হবে সকাল ৯ টার মধ্যে, দ্বিতীয়বার বেলা দুই প্রহরে এবং তৃতীয়বার বেলা ৫টার মধ্যে।
চিঠি বিলি করা হবে উত্তর কলকাতার চিৎপুর, কাশীপুরসহ চনক পর্যন্ত, দক্ষিণে বালীগঞ্জ ও খিদিরপুর পর্যন্ত, পূর্বে হাওড়া-সালকিয়া-শিবপুর পর্যন্ত এবং পশ্চিমে দমদমা ও নীলগঞ্জ পর্যন্ত।
এখনও ডাক বিলির ব্যবস্থা অনেকটা আগের মতই রয়ে গেছে।
এবার পোস্টকার্ডের যুগে। দু’দিকে লেখা যেত না বলে পোস্টকার্ড নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতে।
চিঠি লেখা প্রায় উঠেই গেছে এখন। তাই এ প্রজন্মের কাছে পোস্টকার্ড অনেকটাই গুরুত্বহীন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে ‘প্রাত্যহিকী’ বিভাগে তবুও এখনও প্রচলিত রয়েছে চিঠি। আকাশবাণীর অন্য বিভাগেও চিঠির প্রচলন রয়েছে। তবে সেখানেও এখন ঢুকে গেছে বিকল্প ই-মেল। অথচ বাংলা পত্রসাহিত্য একসময় ছিল আলোচনার বিষয়। এখন মেল, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারের যুগে পোস্টকার্ড সেকেলে হলেও এখনও নস্টালজিক।
পোস্টকার্ডের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে এ দেশে প্রথম পোস্টকার্ড চালু হয়। আজকের তুলনায় বড় ছিল সে পোস্টকার্ড। সেটি ছিল ৪৩/৪”X৩” সাইজের। দাম ছিল এক পয়সা।
কেমন ছিল সে পোস্টকার্ড?
পোস্টকার্ডের ডানদিকে খয়েরি রঙে তৎকালীন ভারতসম্রাজ্ঞী মহারানি ভিক্টোরিয়ার ছবি ছিল। আর তার মাঝখানে ছিল ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতীকচিহ্ন হিসেবে একটি সিলমোহর। এই সিলমোহরের নিচে একদিকে ছিল ইংরেজিতে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া’ এবং অন্যদিকে ‘পোস্ট কার্ড’ কথাগুলি লেখা ছিল। আর এর নিচেই লেখা থাকত ‘দ্য অ্যাড্রেস ওনলি টু বি রিটন্ অন্ দিজ সাইড’ (The address only to be written on this side)। পোস্টকার্ডের রং ছিল বাদামি।
তখন পোস্টকার্ডে দু’দিকে লেখা যেত না। একদিকেই লিখতে হত। এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। এ নিয়ে সরব হয়েছিল গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ ‘সংবাদমাধ্যম’। তখন ইংরেজি জনপ্রিয় দৈনিক ছিল ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’। এর সম্পাদক ছিলেন মহাত্মা শিশিরকুমার ঘোষ।
১৮৭৯-এর ১৮ জুলাই সম্পাদক শিশিরকুমার ঘোষের কলমে অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হল—
‘…But the great difficulty is to teach the people on which side of the card the address is to be written and we think it will be some years before they are enlightened in this respect. But really does it matter much if the address is written on the wrong side? We think that the people of India living under the enlightened rule of the British should have the privilege of writting the address on whichever side they like…’.
পরবর্তীতে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে চালু হয় ‘রিপ্লাই কার্ড’ সহ জোড়া পোস্টকার্ড। এটি আগের মতই ছিল। শুধুমাত্র বাঁ-দিকে লেখা ছিল ‘দ্য অ্যানেক্সড্ কার্ড ইজ্ ইনটেনডেড্ ফর্ আনসার্’ (The annexed card is intended for answer) কথাগুলি।
পরে আরও একপ্রস্থ পরিবর্তন হয় ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে। এতদিন ধরে পোস্টকার্ডে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া পোস্টকার্ড’ লেখা হয়ে আসছিল, এবার লেখা হল ‘ইন্ডিয়া পোস্টকার্ড’। সেই সঙ্গে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির প্রতীক সিলমোহরটিকে বাঁ-দিকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং ডানদিকে লেখা হয় ‘ইন্ডিয়া পোস্টকার্ড’।
ভারতে প্রথম বিদেশি পোস্টকার্ড চালু হয় ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে। তখন এর দাম ছিল ৬ পয়সা। পরে ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে এর দাম কমে হয় ১ আনা। মূলত বিদেশি পোস্টকার্ডকে জনপ্রিয় করতেই এই মূল্য হ্রাস।
পোস্টকার্ডের আরেক প্রস্থ নকশা বদল হয় ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে। তখন ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন সপ্তম এডওয়ার্ড। তাঁর আমলে পোস্টকার্ড ও ডাকটিকিট ছবিতে মুকুট ব্যবহার করা হয়।
বর্তমান পোস্টকার্ডের মাপ হচ্ছে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা ও সাড়ে তিন ইঞ্চি চওড়া।
এখন পোস্টকার্ডে দু’দিকেই লেখা যায়।
এভাবেই পায়রা থেকে এখন আমরা মুঠোফোনে। ভবিষ্যৎ গন্তব্য কোথায়, সে যাত্রা এখন ভবিষ্যতের গর্ভেই অপেক্ষমাণ।
তথ্যসূত্র :
1) Ancient India : Dr. R. C. Majumdar.
2) The Oxford History of India : Vincent A. Smith.
3) From Empire to Independence : The British Raj in India 1858-1947 : Chandrika Kaul.
4) The Post Office. Of India And It’s Story : B. Clark.
চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়/ চিত্র : গুগল
প্রেমের জন্য ছেড়েছেন মুঘল দরবার, বর্গিদের সঙ্গেও লড়েছেন এই বীরাঙ্গনা
ভালো লাগলো, জানতে পারলাম অনেক কিছু