Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

হিজলির জেলখানায় গড়ে উঠেছিল খড়গপুর আইআইটি

দেশের অন্যতম নামজাদা কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খড়গপুর আইআইটি’র সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস। ক্যাম্পাসের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে একখণ্ড ইতিহাস৷ ব্রিটিশ আমলে তৈরি হয়েছিল হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প৷ যেখানে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত লোকজনদের আটকে রাখা হত। খড়গপুর শহরের হিজলিতে অবস্থিত এই ডিটেনশন ক্যাম্পটি। যেখানে, ১৯৫১ সালে ড. বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে পথচলা শুরু করেছিল আইআইটি-খড়গপুর।

১৯৩০ সালে হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হয়েছিল।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৩০ সালে হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হয়েছিল। এই ডিটেনশন ক্যাম্পেই ১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ইংরেজ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন সন্তোষকুমার মিত্র ও তারকেশ্বর সেনগুপ্ত নামে দুই স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁদের মৃতদেহ সংগ্রহ করতে হিজলিতে এসেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। এই গুলি চালানোর ঘটনার প্রতিবাদ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ বিশিষ্ট দেশনায়করা।

ক্যাম্পের সেই ভবন এখন শহিদ ভবন নামে পরিচিত। সেখানে নেহরু মিউজিয়াম অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি তৈরি হয়েছে৷ আর ভবনের উল্টো দিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে হিজলি প্রিজন সেল৷ লোহার গারদের পিছনে ছোট্ট ছোট্ট খুপরি ঘর৷ সেখানে বন্দি থেকেছেন ক্ষুদিরাম বসু থেকে মাতঙ্গিনী হাজরার মত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা।

এখানে বন্দি থেকেছেন ক্ষুদিরাম বসু থেকে মাতঙ্গিনী হাজরার মত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা।

প্রতি স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আয়োজনটা এই ক্যাম্পেই করে থাকেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ৷ আইআইটি খড়গপুরের প্রতিষ্ঠা দিবস স্বাধীনতা দিবসের তিন দিন পরেই, ১৮ অগাস্ট৷ দেশজোড়া স্বাধীনতা আন্দোলনে এত বেশি মানুষ জড়িয়ে পড়েন যে, জেলগুলিতে আর স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না৷ তখনই কয়েকটি ডিটেনশন ক্যাম্প গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার৷ বক্সার পরে হিজলিতে দ্বিতীয় ক্যাম্পটি তৈরি হয়৷ কোনও ডিটেনশন ক্যাম্পকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যবসিত করে তোলার উদ্যোগ বিরল৷ তবে বিধানচন্দ্র রায়ের প্রস্তাব মেনে দেশের প্রথম আইআইটি খড়গপুরের কাছে হিজলিতে ওই ক্যাম্পেই শুরু করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার৷

কোনও ডিটেনশন ক্যাম্পকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যবসিত করে তোলার উদ্যোগ বিরল৷

ইতিহাসকে যে তারা সযত্নে রাখতে চান, আইআইটি-র মূল প্রশাসনিক ভবনে ঢোকার মুখেই তার প্রমাণ মেলে৷ ১৯৫৬ সালে প্রথম সমাবর্তনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বক্তব্য জ্বলজ্বল করছে৷ হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্পে দেশের অন্যতম সেরা এই প্রতিষ্ঠানের পথচলাকে তিনি অতীত ও অনাগত ভবিষ্যতের মধ্যে ফারাক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন৷

ক্যাম্পাসে শহিদ ভবনের উল্টোদিকে যেখানে সার দিয়ে প্রিজন সেল, তার সামনে প্রচুর গাছপালা৷ প্রতিটি সেলের দরজা আটকানোর ছিটকিনি পাশের দেওয়ালে একটা চৌখুপির মধ্যে তৈরি আঙটায় ঢুকিয়ে তালা লাগানো৷ আট বাই দশ ফুটের বেশি সেগুলির মাপ নয়৷ প্রতিটি সেলে ছোট ছোট সাইনবোর্ডে ঐতিহাসিক তথ্য৷ সামনে প্ল্যাকাডে লেখা ‘বন্ডেজ টু ফ্রিডম, দ্য নেশন’স জার্নি’৷ আজ স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তির ঐতিহাসিক মুহূর্তে বিস্মিত হই, ইতিহাসের এই অতীত মূর্ছনার সামনে দাঁড়িয়ে।

চিত্র: লেখক
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

দুর্গাপুজো: অতীত দিনের স্মৃতি

মহালয়া দিয়ে হত পুজোর প্রকৃত সূচনা। শরতের ভোররাতে আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রচারিত এই অনুষ্ঠানটির শ্রোতা অন্তহীন, এবং এখনও তা সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও অনুষ্ঠানটির শ্রোতা অগণিত। আমাদের শৈশবে বাড়ি বাড়ি রেডিও ছিল না, টিভি তো আসেইনি। বাড়ির পাশে মাঠে মাইক থাকত, আর প্রায় তিনশো গজ দূরের এক বাড়িতে মাউথপিস রাখা থাকত। সেখান থেকে ভেসে আসত মহালয়ার গান, ভাষ্য।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

দুর্গাপূজা, মূর্তিপূজা: দেশে দেশে

আসলে বাঙালি নিরন্তর এক অনুসন্ধানী, ব্যতিক্রমী, অভিনব-চিন্তক, ক্রমবিকাশপ্রিয় ও অন্তিমে রহস্যময় জাতি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান আস্তিক নাস্তিকে মিলিত এই জাতি সঙ্ঘারাম আর মিনার, ধ্বজা ও ওংকার, জগমোহন-মিরহাব-স্তূপ-ভস্মাচ্ছাদিত এক জাতি, নিজ মুদ্রাদোষে নয়, মু্দ্রাগুণে আলাদা।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শারদোৎসব: বাংলাদেশে

দুর্গাপুজো কেবল ভক্তের জন্য-ই নয়, ভাল লাগাদের জন্যও। যে ভাল লাগা থেকে ভাই গিরীশচন্দ্র সেন কোরানশরীফ বাংলায় অনুবাদ করেন, অদ্বৈত আচার্য যবন হরিদাসের উচ্ছিষ্ট নিজহাতে পরিষ্কার করেন, স্বামী বিবেকানন্দ মুসলিম-তনয়াকে কুমারীপুজো করেন! দুর্গা বাঙালির কাছে, ধর্মনির্বিশেষে আগ্রহের, যেহেতু এই দেবী পরিবারসহ আসেন, আর সঙ্গে নিয়ে আসেন কাশফুল আর শিউলি। তাই তো সনাতন রামপ্রসাদ, খ্রিস্টান মাইকেল, ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথ এবং মুসলমান কাজী নজরুল দুর্গাকে নিয়ে কলম না ধরে পারেননি!

Read More »
কাজী তানভীর হোসেন

ধানমন্ডিতে পলাশী, ৫-ই আগস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কয়েকদিন ধরে যা ঘটেছিল, তা শুরু থেকেই গণআন্দোলনের চরিত্র হারিয়ে একটা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পরিণত হয়েছিল। আজ আমরা কার্যক্রম দেখেই চিনে যাই ঘটনাটি কারা ঘটাচ্ছে। আগুন আর অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি করার স্বভাব রয়েছে বিএনপি-জামাত ও রোহিঙ্গাদের। তারা যুক্তিবুদ্ধির তোয়াক্কা করে না।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য: কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

আমরা বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিলাম, যাঁকে খুব সঙ্গত কারণেই ‘পশ্চিমবঙ্গের রূপকার’ বলা হয়। পেয়েছি প্রফুল্লচন্দ্র সেন ও অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো স্বার্থত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী। এবং জ্যোতি বসুর মতো সম্ভ্রান্ত, বিজ্ঞ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখর কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ। কিন্তু তাঁদের সকলের চেয়ে অধিক ছিলেন বুদ্ধদেব। কেননা তাঁর মতো সংস্কৃতিমনা, দেশবিদেশের শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র নাটক সম্পর্কে সর্বদা অবহিত, এককথায় এক আধুনিক বিশ্বনাগরিক মানুষ পাইনি। এখানেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনন্যতা।

Read More »