ইনস্টিটিউট ফর সার্চিং অব রিইনকারনেটেড হিউম্যান সোল। মানবাত্মার পুনর্জন্ম অনুসন্ধান কেন্দ্র। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। নিজাম প্যালেসে অ্যানুয়াল রিটার্ন জমা হয়। সল্টলেকের সেক্টর থ্রি-তে একটা দু-কামরার ফ্ল্যাটে বাতানুকূল অফিস। প্রায় ১০ বছরের অফিস। ডিরেক্টর দুজন। নির্মল ঘোষ এবং সুনীল চক্রবর্তী।
দুজনের জীবনেই সংগ্রামের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। বছর তিরিশেক আগে নির্মল সরু সরু ডাল কেটে এক আঙুল সাইজের টুকরো করে ছাল ছাড়িয়ে লালদিঘির ধারে প্লাস্টিক পেতে বিক্কিরি করত। সেই ডালের টুকরো গায়ে বাঁধা থাকলে নাকি সাপ ধারেকাছে আসবে না, সেই ডালের টুকরো সাপের মাথায় ধরলে নাকি সাপ ফণা নামিয়ে তল্লাটছাড়া হয়ে যাবে। দামও বিশেষ কিছু না, পাঁচ টাকা মাত্র। অষ্টধাতুর মাদুলিতে ঢুকিয়ে পড়লে নাকি সবচেয়ে ভাল কাজ হয়। নির্মলের প্লাস্টিকের ২০ ফুট দূরে লালকাপড়ে বসে সুনীল আসল অষ্টধাতুর মাদুলি বেচত মাত্র দশ টাকায়। কলকাতার লোকে যারা সাপের ত্রিসীমানায় থাকে না, বা যাদের ত্রিসীমানায় সাপও আসে না— তারা নির্মলের কাছ থেকে সর্পহরী ডাল কিনে সুনীলের মাদুলিতে ভরে শরীরে ধারণ করত। কিন্তু দিনকাল পাল্টাল।
কলকাতার মানুষ সেয়ানা হল। তারা আর সস্তায় ঠকতে রাজি নয়। তারা তখন অমুকলাল, তমুকশাস্ত্রী, শ্রীতুসুকের কাছে মোটা ভিজিট দিয়ে হাত দেখিয়ে দামি পাথরের আংটি কিনে ঠকতে আরম্ভ করল। কিংবা তন্ত্রসাধক ধরে কামাখ্যায় যাগযজ্ঞ করে পয়সা জলে ফেলতে লাগল। লালবাতি জ্বলল নির্মল-সুনীলের কারবারে। অবশ্য কারবার বলাটা বাড়াবাড়িই হয়ে যাবে। হাঁড়ির হালই ছিল তাদের। তারপর কতরকম ব্যবসা যে দুজনে মিলে করল। মাসে মাসে টাকা জমা করা, প্রতি মাসে ৫ জন ভাগ্যবান ফ্রি গ্যাসের কানেকশন পাবে, মোটা সুদসহ বছর শেষে টাকা ফেরত সঙ্গে উপহার ইলেকট্রিক ইস্ত্রি, মিক্সি, কিংবা ক্যাসারোলের কৌটো। একটা অঞ্চলে ছ’-আট মাস টাকা তুলে উধাও হয়ে যাওয়া। খোঁজ খোঁজ। ফ্রিতে গ্যাসের কানেকশন পাওয়া একজনকে পাওয়া গেল না, কিন্তু আটমাস টাকা জমা করা অনেককে পাওয়া গেল।
কিন্তু একবার ধরা পড়ল দুজনে। গণধোলাই, কয়েকদিন হাসপাতাল, ক’মাস শ্রীঘরে খাটিয়ে তারা বুঝল খুচখাচ কাজে এত ঝক্কি নেওয়া যাবে না। মারলে বড় দাঁওই মারা উচিত। কিছুদিন ইংরেজিতে ছবিওয়ালা রঙিন প্রসপেকটাস ছাপিয়ে মেহগনি চারার শেয়ার বেচা হল। চারা নাকি ঝাড়গ্রামে পোঁতা হয়েছে। একটা গাছের দাম হাজার। পনেরো বছর পরে কিছু না হোক পনেরো লক্ষ টাকা হবে। কিছুদিন পর তারা বুঝল এ লাইনে কম্পিটিশন ক্রমশ বাড়ছে। লোকে শেয়ার কিনে ডুবতে আর সুনীল-নির্মলকে পাত্তা দেবে কেন, ইউটিআই আর রিলায়েন্স যখন শেয়ার মার্কেটে হাজির। তারপর বছর দশেক আগে এই ব্যবসার শুরু। বাড়ি বিক্কিরির পুঁজি লাগিয়ে। তারপর থেকে এই ব্যবসাতে থিতু হওয়া আর উন্নতি।
ব্যবসাটি বেশ অভিনব। সুনীল-নির্মলের দাবি, প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তারা মানবাত্মার হদিশ করতে পারে। অর্থাৎ আজকে যে মানুষ মরে গেল সে পরের জন্মে কোথায় জন্মাল তা তারা জানতে পারে। এই নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা চালিয়ে তারা নাকি সফল হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি সফটওয়ারও তারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং দিন দিন গবেষণায় উন্নতি হচ্ছে। আর খোলা হয়েছে এই রিইনকারনেশন ইনস্টিটিউট। ওদের অফিসে গেলে বারান্দায় একটি ঢাউস ডিস অ্যান্টেনা দেখা যায়। অথচ গোটা ঘরে ওয়ালপেপারে হিন্দু পৌরাণিক নানা ঘটনার ছবি। একটি প্রায় অন্ধকার ঘরে বিরাট এলইডি স্ক্রিনে নানান রং পৃথিবীর স্যাটেলাইট ছবির ওপর ঘোরাফেরা করে। অফিসে খুব হালকা করে গায়ত্রী বা মহাকালের মন্ত্র ব্লুটুথ বক্সে বাজে। নির্মলের পরনে এখন গেরুয়া সিল্কের আলখাল্লা আর কোট-টাইতে ফিটফাট সুনীল। বিজ্ঞান আর ধর্মের এমন সহাবস্থানের ছবি মিশন ছাড়া আর কোথাও পাওয়া মুশকিল।
কারবারটা কী? আসল কারবারটা অন্য। আত্মার পরজন্মের খোঁজ রাখার দাবি নিয়ে সুনীল-নির্মল যোগাযোগ করে কলকাতার বাঘা বাঘা বৃদ্ধ বড়লোকদের সঙ্গে। তাদের বোঝায়, এজন্মে বড়লোক হয়ে জন্মালে পরের জন্মে গরিব হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর আত্মার ওজন যেহেতু অতি কম সে খুব বেশিদূর যেতে পারে না। ওদের গবেষণা বলে আত্মা সাধারণত আগের শরীর যেখানে ছেড়েছে তার পঁচিশ কিলোমিটারের মধ্যেই জন্মগ্রহণ করে। যদি সেই ধনী ব্যক্তি রিইনকারনেশন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসে তবে তার মৃত্যুর পরে গরিবজন্ম লাভের পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে ইনস্টিটিউট তাকে সাহায্য করবে। কীভাবে? এগ্রিমেন্টের সঙ্গে একটা লেনদেন হবে। সেই ধনী ব্যক্তি একটা বড় অঙ্কের টাকা ইনস্টিটিউটের কাছে গচ্ছিত রাখবে। ধনী ব্যক্তির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ইনস্টিটিউট তার আত্মাকে ট্রেস করার চেষ্টা করবে। তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সেই আত্মার হদিশও পাবে ইনস্টিটিউট। তারপর তার সেই গচ্ছিত টাকার ষাট শতাংশ গিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে সেই পাঁচ-সাত বছরের বাচ্চার নিকটাত্মীয়ের হাতে। ফার্স্টক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ৫০০ টাকার স্ট্যাম্পপেপারে চুক্তি হবে।
বৃদ্ধ বড়লোকেরা বোকা নন। কিন্তু তাদের অনেকের মধ্যেই ভোগের লোভ অতি প্রবল। বয়েস বাড়ছে, শরীর ভাঙছে। প্রচুর টাকা থাকা সত্ত্বেও এই বয়েসে আর সুখভোগ সম্ভব হচ্ছে না। এই যন্ত্রণা তাদের অনেককেই কুরে কুরে খায়। তবে আর এত টাকা করে লাভ কী হল? এদের মনের এমন অবস্থার খবর সুনীল-নির্মলের মত ব্রিটিশ ঠগের কাছে অজানা নয়। তারা টোপ ফেলে। বৃদ্ধ বড়লোকের কেউ কেউ জ্যাকপটের টিকিট কাটার মত একটা জুয়া খেলেন। পরের জন্মে গরিব হয়ে জন্মানোর ভয় তো তাদের বিলক্ষণ আছে। এগ্রিমেন্ট হয়, ইনস্টিটিউটের নামে টাকা আসে। এইভাবে চলে। বেশিরভাগই লাখ পাঁচেক, লাখ দশেক জমা রাখেন। অল্প করে রিস্ক মার্কেটে খেলেন।
তবে ভাববেন না যেন এভাবে রোজগার করা পুরো টাকাটাই সুনীল-নির্মল হজম করে দেয়। কিছু রেগুলার ইনভেস্টমেন্ট করতেই হয়। হঠাৎ বছরে এক-আধবার কোনও বস্তিতে গিয়ে এক গরিব বাচ্চার বাবার হাতে সুনীল-নির্মল ধরিয়ে দেয় নব্বই হাজার টাকার চেক। এর বেশি আর দেওয়া গেল না। ওর ছেলে গতজন্মে তিনটে গোডাউনের মালিক ছিল। কিন্তু আমাদের ভরসা করে দেড়লক্ষের বেশি দিল না। চুক্তি অনুযায়ী ৬০ শতাংশ মানে নব্বই হাজার আমরা আপনাকে দিচ্ছি। এই টাকা দেওয়ার সময় বেশি হৈহুল্লোড় করা হয় না। কিন্তু ঘটনার চমৎকার ডকুমেন্টেশন করা হয়। আর সেগুলো খুব কায়দা করে গোপনে বৃদ্ধ বড়লোকদের গোচরে আনা হয়। এ এক ধরনের বিজ্ঞাপন।
বছরে কতিপয় কাস্টমারই পায় সুনীল-নির্মল। তাতে এই আক্রাগণ্ডার বাজারে মোটামুটি চলে যায়। অফিস ভাড়া, গাড়ি, রেগুলার ইনভেস্টমেন্ট এসবে খরচও অনেক। আসলে দুটো বড় পার্টি পেয়েছিল ওরা। একজনের জমানো টাকা প্রায় শেষের দিকে। আর-একজনেরটা এখনও অক্ষত। সেটাই সবচেয়ে বড় রোজগার ছিল। প্রায় কোটি টাকা। ভদ্রলোক ছিল অকৃতদার রাজনৈতিক নেতা, বহুদিনের এমএলএ, রতনচন্দ্র প্রধান। তিন কুলে কেউ ছিল না। মূলত বিরোধী দলে থাকলেও রোজগার করার ক্ষমতা ছিল। এদিকে অকারণে হাত থেকে জলও গলত না। পাঁচটি ‘ম’-তেই বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তার। একসময় বুঝেছিল অতিরিক্ত আনন্দ করতে গিয়ে শরীরের অনেক অঙ্গই জবাব দিয়ে দিয়েছে। আয়ু আর বেশিদিন নেই। কিন্তু মনে তার শান্তি নেই। এখনও ফুর্তিতে তার অরুচি নেই। কিন্তু এখন আর যযাতির যুগ নেই। যৌবন ট্রান্সফারের গল্প নেই। অগত্যা এক জায়গা থেকে খবর পেয়ে সেই নেতা এসেছিল সুনীল-নির্মলের কাছে। বিরাট টাকা গচ্ছিত রেখেছিল। ক্ষমতা দেখিয়ে ৬০ শতাংশ ফেরতের বদলে ৮০ শতাংশ ফেরতের এগ্রিমেন্ট করিয়েছিল। চুক্তির দিন সাতেকের মধ্যেই তার মৃত্যু হয় আর কপাল ফেরে সুনীল-নির্মলের। সে প্রায় বছর আষ্টেক আগেকার কথা।
সেদিন মেল চেক করতে বসে আশ্চর্য হয় নির্মল। ইনস্টিটিউটের নামে এক অদ্ভুত মেল এসেছে। লিখেছে সুখময় রায় নামে এক ভদ্রলোক। সে দাবি করেছে, তার একমাত্র ছেলের বয়েস ছয়। সেই ছেলে নাকি জাতিস্মর। সেই ছেলে জানিয়েছে, সে গতজন্মে ছিল সেই রাজনৈতিক নেতা রতনচন্দ্র প্রধান। সে জানিয়েছে, সে নাকি এই ইনস্টিটিউট থেকে অনেক টাকা পায়। সুখময় রায় সেই টাকা ফেরত চায়। সুনীল-নির্মল খুবই গোপনে এই কাজ করে। সকলের জানার কথা নয়। রতনচন্দ্র প্রধান টাকা উইতে খাওয়াবে তবু কাউকে প্রাণে ধরে দিতে পারবে না সেইরকম পার্টি ছিল। তবে এই সুখময় রায় এল কোথা থেকে, যে অনেক কিছু জানে? দুজনে আলোচনা করে ঠিক করল, ভয়ের কিছু নেই। হয়তো মরার আগে রতন জ্ঞান হারিয়ে কাউকে কিছু বলেছিল। সে সেইটা নিয়ে এখন অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে লাক ট্রাই করছে। তাছাড়া এগ্রিমেন্টে স্পষ্ট বলা আছে ইনস্টিটিউট আত্মার হদিশ করে টাকা দেবে। এখন যে কেউ টাকা চাইলেই তো হবে না। মেলের কোনও জবাব দেওয়া হবে না।
কিছুদিন পরে উকিলের চিঠি এল। আর তারপরে আদালতের চিঠি। সুখময় রায় মামলা করেছে টাকা ফেরত চেয়ে। সুনীল-নির্মল বড় উকিলই ধরল। ওই মোটা টাকাটাই তাদের মেরুদণ্ড। উকিল একেবারে রতনচন্দ্র প্রধানের সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়েছে তাই অস্বীকার করল। বিচারক রিইনকারনেশন ইনস্টিটিউটের কাগজপত্র দেখে আশ্চর্য হলেন। আইনে পাকা। এমনভাবে সব লেখা আছে প্রতারণার কেস দেওয়া যাবে না। রেগে গেলেও তার কিছু করার নেই। সুখময়ের কাছে তিনি কিছু প্রমাণ চাইলেন। সুখময় ছেলেকে নিয়ে এল আদালতে। বিচারকের অনুমতি নিয়ে ছেলেকে বলল আগের জন্মের কথা লিখতে। সে নাকি এ ব্যাপারে মুখে কিছু বলে না, লিখেই সব জানায়।
ছেলেটি লিখল—
আমি রতনচন্দ্র প্রধান, এম এল এ
টাকা পাই আইএসআরএইচএস
এপিজে
ডিবি
২১০৮
বিচারক কাগজটা নিয়ে বুঝলেন সুখময়ও প্রতারক। জিগেস করলেন এসবের মানে কী? সুখময় জানাল, ‘আগের জন্মের কথা বললে ও শুধু এই লেখে। অনেক কষ্ট করে আমি এর মানে উদ্ধার করেছি। আইএসআরএইচএস হল ইনস্টিটিউট ফর সার্চিং অব রিইনকারনেটেড হিউম্যান সোল। এপিজে মানে এপিজে হাউস, পার্ক স্ট্রিট। সেখানে খোঁজ করে দেখেছি ডিবি সিকিউরিটি নামে একটি কোম্পানি আছে যারা প্রাইভেট লকার ভাড়া দেয়। আমার ধারণা ২১০৮টা কোনও লকারের নম্বর। সে-ব্যাপারে খোঁজ নিলে সত্যি জানা যাবে।’ বিচারক ডিবি সিকিউরিটিকে নির্দেশ দিলেন লকারের মালিকের নাম জানাতে। তারা জানাল মালিকের নাম রতনচন্দ্র প্রধান। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক সে লকার ভাঙা হল। পাওয়া গেল শুধু একতাল কাগজ। আর কিছুই নয়। সেই কাগজ কিন্তু অমূল্য। কারণ সেইটাই রিইনকারনেশন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে রতনের এগ্রিমেন্ট। বিচারক চুক্তির কথা গোপনের অপরাধে সুনীল-নির্মলকে রতনের পুরো টাকা সুখময়ের ছেলেকে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন, সঙ্গে আরও দশ লক্ষ টাকা জরিমানাস্বরূপ। ওদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অ্যাটাচ হল। কপালজোরে জেল হল না।
সুখময় রায় এখন কলেজ স্ট্রিটের এক টেক্সট বই প্রকাশকের ক্যানভাসার বটে কিন্তু তার আগে পনেরো বছর সে কাজ করেছে রতনচন্দ্র প্রধানের অফিসে। ফোন ধরা, ফাইফরমাশ খাটা, অ্যাপ্লিকেশন জমা নেওয়া, ব্যাঙ্কের কাজ করা ইত্যাদি। রতন মাইনে দিত খুব কম, খাটতে হত খুব। সুখময়ের আশা ছিল রতন এত প্রভাবশালী, সে নিশ্চয়ই তার একটা ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু কিছুই হল না। রতন মারা যাওয়ার আগে নিজের রক্ষিতাদের, দলের গুন্ডাদের কিছু কিছু টাকা দিয়েছিল কিন্তু সুখময়কে একপয়সা ঠেকাল না। মারা যাওয়ার তিনদিন আগে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিল রতন। তখনই সুখময়কে একটা চাবি আর একটা বড় কাগজের খাম নিয়ে এপিজে হাউসের ডিবি সিকিউরিটিতে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে সুখময় বোঝে এখানে একটা প্রাইভেট লকার আছে রতনের। এর কথা সে জানত না। অনেক আশা নিয়ে সে লকার খোলে। কিন্তু তাতে কিছুই ছিল না। কী মনে হতে রতন লকারে খামটি না রেখে বাইরে আসে। কাছের পার্কে গিয়ে খামটি খোলে। সেটি ছিল ওই এগ্রিমেন্ট। পড়ে মাথা গরম হয় সুখময়ের। লোকটা পরের জন্মের জন্যে কোটি টাকা রেখে যাচ্ছে কিন্তু তাকে এক পয়সা দিল না। কে জানে কেন সেই এগ্রিমেন্টের একটা জেরক্স নিজের কাছে রেখেছিল সুখময়। তারপর এগ্রিমেন্ট রেখে এসেছিল লকারে। রতনের মৃত্যুর পরে সুখময়ের এই ক্যানভাসিংয়ের চাকরি। বছর খানেকের পরে বিয়ে আর বাচ্চা। জেরক্সের কথা ভুলেই গেছিল সে। একদিন বাচ্চাকে ইংরেজি লেখা শেখাতে শেখাতে সেটার কথা মনে পড়ে। তখনই মাথায় বুদ্ধি খেলে যায় তার। গোপনে খোঁজ রাখত সে ওই ইনস্টিটিউটের আর ছেলেকে শেখায় ওই কথাগুলি লিখতে, বারবার। যাতে আসল সময়ে ভুল না হয়। ছেলেকে বোঝায় সে আগের জন্মে ছিল রতনচন্দ্র প্রধান। কিন্তু মুখে কিছু বলতে বারণ করে দিয়েছিল সে। তারপরে জাল গোটায়।
একেবারে কপর্দকশূন্য হয়ে গেল সুনীল-নির্মল। এবার বদলাল তারা। মানে কারবার বদলাল। এখন তারা মোবাইলে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সেজে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের ফোন করে এটিএম কার্ডের পিন জানার জন্যে। মাসে একটা-দুটো মুরগি জুটেও যায়।