Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

নারী মান পায় না যেখানে, সে সমাজ অসভ্য, বর্বর

যেন মহাভারতের সেই বিভীষিকাময় ঘটনারই প্রতিচ্ছবি। দোসরা আগস্ট, ২০১৯। উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে জুয়াখেলায় সর্বস্ব খুইয়ে শেষপর্যন্ত নিজের স্ত্রীকে বাজি রাখেন মদ্যপ স্বামী। এবং ভাগ্যের পরিহাসে এবারও তিনি হেরে যান। তাই শর্ত মোতাবেক স্বামীর দুই মদ্যপ বন্ধু ওই মহিলাকে তার স্বামীর উপস্থিতিতে এবং অনুমতিতেই ধর্ষণ করে একাধিকবার। এখানেই শেষ নয়, নির্যাতিতা এরপর পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলেও পুলিশ কোনও অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে।

এই ঘটনা শুনেই আপনার গা কেমন শিউরে উঠল না? মনে হচ্ছে না রাগে গোটা শরীর জ্বলে যাচ্ছে? হ্যাঁ, ঠিক এরকমটাই ঘটেছে। স্বাধীনতার পরে ৭৫ বছর কেটে গেছে। বছর বছর নারী দিবস (International Women’s Day) পালিত হয়। তবুও নারী স্বাধীনতা পেল কই? তার প্রাপ্য সম্মানটুকু পেল কই? এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারী তার নিজের মালিক নয়, জন্মের পর বাবা বা দাদা, বিয়ের পরে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন এবং তারও পরে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের অঙ্গুলিহেলনে নিয়ন্ত্রিত হয় তার জীবন।

যদিও এখন মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছেন, চাকরি করছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশের শাসনব্যবস্থায় নিজের জায়গা পাকা করছেন, তবুও স্বাধীনতার এত বছর পরেও এদেশে মেয়েরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। এখনও মেয়ে রাস্তায় বেরোলে মা-বাবা অসহায় চিন্তায় থাকেন মেয়ে সসম্মানে বাড়ি ফিরবে তো?

এখন দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদেশে মেয়েদের অবস্থান ঠিক কোন জায়গায়।

প্রথমেই আসি শিক্ষাক্ষেত্রে। ২০১১-১২-র জনসমীক্ষা অনুযায়ী ভারতের মোট শিক্ষার হার ৭৪.১৪%। ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ৬৫.৪৬% মহিলা লিখতে বা পড়তে পারেন। কেরালা, যেখানে শিক্ষার হার সবচেয়ে বেশি, মোট জনসংখ্যার ৯৩.৯১% মানুষ শিক্ষার আলোয় এসেছেন সেখানে নারীশিক্ষার হার স্বভাবতই অন্য রাজ্যের তুলনায় বেশি, প্রায় ৯১.৯৮%। অন্যদিকে বিহারে এই অবস্থা খুবই অসন্তোষজনক। ২০১১-১২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বিহারের মাত্র ৫৩.৩৩% মহিলা শিক্ষার আঙিনায় এসেছেন।

শিক্ষায় এই বৈষম্য যে লিঙ্গবৈষম্যেরই নামান্তর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে স্কুলগুলোয় প্রাইমারি বা হাইস্কুল পর্যন্ত মেয়েদের সংখ্যা যা থাকে, স্কুলের শেষ বছরগুলোয় বা কলেজে পৌঁছে সেই সংখ্যাটা একটু একটু করে কমতে থাকে। হয় তাদের বিয়ে দেওয়া হয়, অথবা মেয়েকে পড়াশোনা করানোর মত বাজে খরচ বাঁচাতেই আমাদের মত গরিব দেশের মা-বাবারা মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দেন মাঝপথেই।

এরপরই চলে আসে মেয়েদের সামাজিক অধিকারের প্রসঙ্গ। Indian Human Development Survey (IHDS), ২০১১-১২, যেটি সংঘটিত হয়েছিল University of Maryland এবং National council of Applied Economic Research-এর উদ্যোগে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র ৫% মহিলা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জীবনসঙ্গী নির্বাচন করে থাকেন এই দেশে। প্রায় ৭৩% মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারে তার বাবা-মা এবং আত্মীয়স্বজনরাই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেন।

প্রায় ৮০% মহিলাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবার জন্য ফ্যামিলি মেম্বারদের কাছে অনুমতি নিতে হয় এই দেশে এবং এমনকি নিত্য ব্যবহার্য জিনিস কিনবার প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যেতে হলেও প্রায় ৫৮% মহিলার ক্ষেত্রে বাড়ির লোকরা অনুমতি দিলে তবেই যেতে পারেন। এই সমীক্ষা দেশের ৩৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১৫ থেকে ৮১ বছর বয়সী মহিলাদের ওপর করা হয়েছিল।
এই রিপোর্ট আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না কি যে গোটা বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে, মঙ্গলে পৌঁছে গেছি আমরা, ভারতবর্ষ থেকেও হচ্ছে চন্দ্রাভিযান, দেশকে ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে তখনও আমাদের নারীর প্রতিটা পদক্ষেপ স্থির হয় পিতৃতন্ত্রের হাত ধরে। নারীকে পর্দার পেছনে আটকে রেখে দেশ সত্যিই এগিয়ে যাবে তো?

কর্মক্ষেত্র। World Bank-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালে আমাদের দেশের Labour Force Participation Rate ছিল মাত্র ২৬.৯৭%, যেখানে গোটা বিশ্বে এই সংখ্যা প্রায় ৪৮.৪৭%। India infoline News service-এর ২০১৬, ফেব্রুয়ারির এক আর্টিকেলে বলা হয়েছিল ভারতে কর্মক্ষেত্রে ৭০ শতাংশেরও বেশি মহিলা মনে করেন কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য ভীষণরকম প্রভাব ফেলে তাদের জীবনে। এমনকি একই কাজের জন্য শুধুমাত্র মেয়ে হবার কারণে পারিশ্রমিক কম পাওয়ার ঘটনাও এদেশে অসংখ্য, যদিও দেখা গেছে একজন মহিলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন পুরুষের থেকে এমনকি তিনগুণ পর্যন্ত বেশি কাজ করে থাকেন।

এখন আইন মোতাবেক সংসদ বা বিধানসভায় মহিলাদের আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। গ্রামপঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও আসন সংরক্ষিত হওয়ায় মহিলা জনপ্রতিনিধির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় সেই প্রতিনিধির সমস্ত সিদ্ধান্ত, কাজকর্ম সামনে থেকে বা আড়াল থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন অন্য কেউ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই নিয়ন্ত্রক রাজনৈতিক দলের হর্তাকর্তা অথবা তাঁর স্বামী অথবা বাবা কিংবা ভাইয়েরা। এদেশ কি এখনও মনে করে মহিলারা তাদের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নন? যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে এই প্রহসনের সংরক্ষণের কী প্রয়োজন! তাহলে প্রথমে মহিলাদের সক্ষম করে তোলার কাজটি করাই কি যুক্তিসঙ্গত নয়।

গার্হস্থ্য হিংসা আর একটি জ্বলন্ত সমস্যা। বিশেষত শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অত্যাচারে এদেশে প্রতিদিন অত্যাচারিত অসংখ্য মহিলা। পণের কারণে, কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’, স্বামীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক অথবা মেয়েদের চাকরি করা বা আরও অনেক কারণেই নিজের বাড়িতে, নিজের আত্মীয়দের কাছে অত্যাচারিত হচ্ছেন অসংখ্য মহিলা, এমনকি প্রতিদিন অনেকেই খুন হয়ে যাচ্ছেন বা বাধ্য হচ্ছেন নিজেকে শেষ করে দিতে।
National Family Health Survey (NFHS-4), ২০১৮। Union Health Ministry দ্বারা প্রকাশিত সেই সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ২৭ শতাংশেরও বেশি মহিলা অর্থাৎ প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন মহিলা গার্হস্থ্য হিংসার শিকার এবং তারা কোনও না কোনওভাবে শারীরিকভাবে অত্যাচারিত। ১৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের ওপর এই সমীক্ষা করা হয়।

ধর্ষণ। যে শব্দটি বিকট এক ক্ষতের মত বসে রয়েছে সমাজের শরীরে। রোজ খবরের কাগজ, টিভি, রেডিওয় খবর শুনলেই একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা। দুধের শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ সুরক্ষিত নন। কোথাও ৯ মাসের শিশু, কোথাও ১৯ বছরের যুবতী, তো কোথাও বয়স্কা কোনও নারী বিকৃত কিছু নরপশুর লালসার শিকার হচ্ছে রোজ। কামদুনি, বারাসত, পার্ক স্ট্রিট, উন্নাও, কাঠুয়া, দিল্লি এসব দেখতে দেখতে আমাদের প্রায় গা-সওয়া হয়ে গেছে। আমরা যেন ভেবেই নিয়েছি নিত্যনৈমিত্তিক আর সব কিছুর মতই ধর্ষণও একটি স্বাভাবিক ঘটনা যা প্রতিদিন ঘটবে।

National crime Records Bureau-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সরকারি হিসেব অনুযায়ী গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০৬টি করে ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়, যার মধ্যে প্রতি দশজনের মধ্যে চারজন নাবালিকা। মানে প্রতি ১৩ মিনিটে একজন করে ধর্ষিতা হন এই দেশে। খুব চমকে দেওয়ার মত হলেও রিপোর্ট অনুযায়ী এটাই সত্যিই যে, এই সমস্ত ঘটনার ক্ষেত্রে প্রায় ৯৪.৬% ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ধর্ষিতার আত্মীয়। অর্থাৎ আমাদের বাবা, কাকা, ভাই, দাদা, মামা, দাদু বা অন্যান্য আত্মীয়ের কাছেই ধর্ষিতা হন মেয়েরা।

আরেকটি চমক হলো POCSO অনুযায়ী ২০১৬ সালেই শিশু ধর্ষণ (নাবালিকা)-এর নথিভুক্ত কেসের সংখ্যা ৩৮,৯৪৭টি। এ তো হিমশৈলের চূড়ামাত্র। আমাদের দেশে সামাজিক কারণে, সম্মানের ভয়ে অথবা প্রাণনাশের হুমকির কারণে বেশিরভাগ ধর্ষণের ঘটনাই থাকে লোকচক্ষুর আড়ালে। বর্তমানে হিসেব অনুযায়ী এই সংখ্যা বাড়ছে, তার মানে, মেয়েরা ট্যাবু থেকে বেরিয়ে এসে পুলিশে রিপোর্ট করছেন। যদিও আমরা এটাও জানি, নির্যাতিতা বহুবার থানা ঘুরেও অভিযোগ লেখাতে পারেননি, পুলিশ-প্রশাসন তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে বারেবারে, হয়তো বা প্রভাবশালী অপরাধীকে বাঁচাতে বা প্রভাবশালীর হাত থেকে নিজে বাঁচতে।

কন্যাভ্রূণ হত্যা এবং শিশুকন্যা হত্যা। এদেশেই নারী পুজো পান দেবীরূপে, আবার এখানেই কন্যাশিশু বা কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয় শুধুমাত্র মেয়েজন্মের অপরাধে। লিঙ্গের ভিত্তিতে ভ্রূণহত্যা আটকাতে ১৯৯৪ সালে পাশ হয় PCPNDT act এবং ২০০৩ সালে আইনের অ্যামেন্ডমেন্টও হয়। তবুও বজ্র আঁটুনির ফস্কা গেরোয় প্রতিদিনই প্রায় ঘটে চলেছে কন্যাভ্রূণের হত্যা। ১৯৯১ সালে প্রতি হাজার পুরুষের অনুপাতে মহিলা ছিলেন ৯৪৭ জন, ২০০১-এ ৯২৭ জন এবং ২০১১-তে ৯৪৩ জন। ২০০৬ সালের ইউনিসেফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লিতে ৭৬টি কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়, পাঞ্জাবে ৬৭টি এবং গুজরাতে ৫৭টি। এগুলি তো নথিভুক্ত ঘটনা, চোখের আড়ালে রোজই কত কন্যাভ্রূণকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে তার হিসেব কে করবে?

আঁতকে উঠবার মত খবর হল, ২২ জুলাই, ২০১৯ Indipendent-এর খবর অনুযায়ী, উত্তরাখণ্ডে সেবছর এপ্রিল থেকে জুন, তিনমাসে ১৩২টি গ্রামে ২১৬টি বাচ্চা জন্মেছে যার প্রত্যেকটিই ছেলে বাচ্চা, কোনও মেয়ে বাচ্চাকে জন্মাতে দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে উত্তরাখণ্ডের ম্যাজিস্ট্রেট ঘোষণা করেন, কোনও মা-বাবা কন্যাভ্রূণ হত্যা করেছেন প্রমাণিত হলে তাদের জেলে পাঠানো হবে। কিন্তু এই প্রমাণ করবার কাজটি কে বা কারা করবেন? সর্ষের মধ্যেই তো ভূত।

এরপর রয়েছে কন্যাশিশু হত্যা। লিঙ্গবৈষম্যের ফলস্বরূপ অযত্ন, অবহেলায়, অপুষ্টিতে, অনাহারে অসংখ্য মেয়ে বাচ্চা প্রাণ হারায় অকালে। মেয়ে হয়ে জন্মানোর অপরাধে কিছু জন খুন হয়ে যায় মা-বাবা অথবা আত্মীয়দের হাতে। Journal Lancet Global Health অনুযায়ী, আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ২,৩৯,০০০টি শিশুকন্যা মারা যায় তাদের ৫ বছরের জন্মদিনের আগেই। অর্থাৎ এক দশকে প্রায় ২.৪ মিলিয়ন ভবিষ্যতের নারীকে আমরা হারাই ৫ বছর পূর্ণ করবার আগে। এই সংখ্যা উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি তথা উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থানে তুলনায় বেশি।

মাঝে মাঝে ভাবতেও ভয় করে এরপর কোনও একদিন আমাদের দেশ নারীবর্জিত দেশে রূপান্তরিত হবে না তো? হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে মেয়েদের সংখ্যা এতটাই কমে গিয়েছে যে, সেখানে বিবাহযোগ্য মেয়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিবাহযোগ্য পুরুষকে অনেকক্ষেত্রে পাত্রী খুঁজতে পাড়ি দিতে হচ্ছে ভিনরাজ্যে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাড়িতে হয়তো তিন বা চারজন ভাই, সেক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য পাত্রীর যোগাড় না হওয়ায় একটি বউ নিয়ে আসা হচ্ছে সবার জন্য। এ যেন পঞ্চপাণ্ডবদের মত ব্যাপার। এরপর এমন সময় আসবে না তো যখন ভিনরাজ্য নয় ভিন দেশে পাড়ি দিতে হবে নারীর খোঁজে? এমন দিন দেখব না তো যেদিন নারীগর্ভের অভাবে উত্তরসূরির জন্ম অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে!

নারী ও শিশু পাচার। সমাজে ছড়িয়ে থাকা বিষবৃক্ষের আর একটি শাখা। প্রতিদিন প্রচুর মেয়ে বাচ্চা এবং যুবতী হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে বাড়ি থেকে। এই পাচারের কারণ মূলত দুটো। ১. যৌনতা সম্বন্ধীয়, মানে পাচার করা মহিলাদের দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় পতিতালয়গুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ৮০% ক্ষেত্রেই মূলত এই কারণেই পাচার হয়ে থাকে। ২. আর কিছু অংশকে বাড়ির পরিচারিকা, ঠিকাশ্রমিক, বিয়ে করার কারণে পাচার করা হয়।

কাউকে পয়সার লোভ দেখিয়ে, চাকরি বা বিয়ের প্রলোভন অথবা জোর করে পাচারের ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। এই বিষয়ে আইন পাশ করানো বা শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা anti-trafficking of women and child নিয়ে অনেক কাজও করে চলেছে। তবুও ঘটনার শেষ কোথায় আমরা জানি না। ২০১৮-য় ভারত সরকারের প্রকাশিত এক রিপোর্টে অনুযায়ী, প্রায় ৬৩ মিলিয়ন (১ মিলিয়নে ১০ লক্ষ) নারী ও শিশুকন্যা আমাদের জনসংখ্যা থেকে জাস্ট হারিয়ে গেছে। তারা কোথায় গেছে, কীভাবে গেছে তার কোনও খোঁজ কারও কাছে নেই।

স্বাধীনতার পর আমরা পার করেছি ৭৫টি বছর। উপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলি থেকেই পরিষ্কার, আমাদের দেশে মেয়েদের অবস্থান ঠিক কতটা সুরক্ষিত এবং সম্মানজনক। শুধুমাত্র আইন পাশ করলেই যে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়, তা পাগলেও বুঝবে।নারী দিবস পালন অথবা কিছু জনমোহিনী প্রকল্প উদ্বোধন যথেষ্ট নয়, যতক্ষণ না আমাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, যতক্ষণ না মেয়েদেরও মেয়ে মনে না করে শুধুমাত্র মানুষ বলে আমরা মনে করতে পারছি, ততক্ষণ মেয়েরা যে আঁধারে আছেন সেই আঁধারেই থাকবেন। স্বাধীন দেশে নারীও স্বাধীন নাগরিক, তাকে তার প্রাপ্য নাগরিক অধিকার বুঝিয়ে দিতে হবে। ফিরিয়ে দিতে হবে তার মর্যাদা। কথায় আছে, How civilised a culture is depends on how it treats women। সোজা বাংলায়, কোন জাতি কতটা সভ্য, তা চেনা যায়, নারীদের প্রতি তাদের আচরণের মাধ্যমেই।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শতবর্ষে মহানায়ক উত্তমকুমার

‘মহা’ শব্দটি মহান আর বিশাল, এই দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন ‘মহাকাব্য’ বা ‘মহারাজ’। কাব্য আর রাজার চেয়ে তার মাত্রা ভিন্ন, মহিমা অনেক বেশি তাৎপর্যময়। উত্তম বাংলা চলচ্চিত্রের সেই তাৎপর্যময়তার একমাত্র উদাহরণ। যাঁকে শ্রদ্ধাভরে আমরা ‘কিংবদন্তি’-ও বলে থাকি। তাই সত্যজিৎ রায়ের মতো আরেক কিংবদন্তি তাঁকে নিয়ে চিত্রনাট্য লেখেন, ছবি বানান, আর সে ছবির ‘নায়ক’ হন উত্তমকুমার।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সুকান্ত ভট্টাচার্য: ভিসুভিয়স-ফুজিয়ামার সহোদর এক কবি

‘–ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে’, সুকান্ত লিখেছেন নিজের সম্পর্কে। বলেছেন, ‘আমি এক অঙ্কুরিত বীজ’। এই বীজ মহীরুহে পরিণত হতে পারল না, বাংলা সাহিত্যের পরম দুর্ভাগ্য এটা। কিন্তু তাঁর একুশ বছরের জীবনে তিনি আভাস দিয়ে গেছেন, তাঁর সম্ভাবনা কতদূর প্রসারিত হতে পারত। সুকান্ত মানে একজন কবিমাত্র নন, তার চেয়েও আরও অধিক কিছু।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও প্রসঙ্গত

প্রয়াণের আগে, সব হিসেব বাদ দিয়ে যদি তাঁর জীবনের শেষ পাঁচ বছরের কথা-ই ধরি, দেখব, কত প্রিয়জনের মৃত্যুশোক বহন করতে হয়েছে তাঁকে। যেহেতু তিনি ছিলেন মানুষের সান্নিধ্যপ্রিয়, তাই অন্যের চেয়ে ঢের ঢের বেশি মৃত্যুবেদনা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। এসব মৃত্যু তাঁকে বেদনার্ত করলেও নিজের মনোবলের জোরে সে-অরুন্তুদ বিষাদকে কাটিয়েও উঠেছেন। পাশাপাশি মৃত্যু নিয়ে তাঁর দর্শন গড়ে উঠতেও তা ভূমিকা রেখেছে। তাই তিনি বলতে পারেন, তিনি-ই বলতে পারেন, ‘দুদিন দিয়ে ঘেরা ঘরে/ তাইতে যদি এতই ধরে/ চিরদিনের আবাসখানা সেই কি শূন্যময়?’ কেন পারেন?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার: অন্য ও অনন্য

তাঁর জন্মদিনের চেয়েও মৃত্যুদিনটিকে অধিকভাবে স্মরণ করা হয়, এ এক আশ্চর্য ব্যাপার। তাছাড়া বাংলা চলচ্চিত্র-জগতে তো কম খ্যাতিমান ব্যক্তির আবির্ভাব হয়নি, সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল, ছবি বিশ্বাস-কানন দেবী-সুচিত্রা-সৌমিত্র, তবু তাঁর মতো, ঠিক তাঁর মতো স্মরণযোগ্য হয়ে রইলেন না কেউ। শ্রাবণের অনুষঙ্গে নয়, উত্তমকুমারের প্রয়াণদিবসটি চিহ্নিত চব্বিশে জুলাই তারিখটির বিধুরতায়। ১৯৮০-র এই দিনটিতে বাংলা চলচ্চিত্র-জগতের এই দিকপাল প্রতিভার জীবনাবসান ঘটে। আজ তাঁর মৃত্যুর পঁয়তাল্লিশ বছর পূর্তিতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে উত্তম সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্যের ডালি।

Read More »
শৌনক দত্ত

রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী

নাটকটির নাম প্রথমে রেখেছিলেন যক্ষপুরী, তারপর নন্দিনী এবং পরিশেষে রক্তকরবী নামে থিতু হয়। শিলং-এ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে যে নাটক লেখা শুরু হয়েছিল তার দশম খসড়া প্রকাশিত হয় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রায় দেড় বছর পর আশ্বিন ১৩৩১ বঙ্গাব্দে—১৯২৪ সালে। প্রকাশিত হবার পরেও, একাদশতম খসড়া প্রস্তুত করার কথা ভাবেন নাট্যকার। অনেকেই বলেছেন, এটি নাট্যকারের হৃদয়ে লালন করা কোনও স্বপ্ন। কেউ কেউ এই নাটকের মধ্যে শ্রেণিসংগ্রাম চেতনার ছায়া খুঁজেছেন। নানা প্রশ্ন, নানা যুক্তি নিয়ে নাটকটি রচনার পর থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত দারুণ আলোচিত ও জনপ্রিয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত নাটকটি নিয়ে বহু আলোচনা। শতবর্ষে এসে দাঁড়ানো সেই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নানামাত্রায় বিবেচনাযোগ্য একটি নাটক; বহুমাত্রিক এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।

Read More »
নুশান জান্নাত চৌধুরী

নুশান জান্নাত চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ

কিছুকাল ঘুমিয়ে, কিছুকাল লুকিয়ে,/ কিছু শহর, কিছু মানুষের ভিড়ে হারিয়ে/ আমি দেখি—// কোনও এক/ পথহারা দেবদূতের বিষণ্ণ ডানার পাশে/ আমি বুক পেতে দিয়েছি// চুলের ভেতর জন্ম নিয়েছে/ ঘাসফুল থোকা থোকা, বুকের মাঝখানে একটা প্রাচীন পেরেক,// ঝরাপাতার রাজ্যপাটে/ আমার বাম হাঁটুতে গেঁথে আছে—/ আগামী বছরের প্রথম সন্ধ্যা;

Read More »