Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রলেখা’ হাসিরাশি দেবী

রবীন্দ্রনাথ তখন ষাটোর্ধ্ব তরুণ। আর মেয়েটির বয়স তখন ১৪ কী ১৫। সেই কিশোরীর আঁকা একটা ছবি পট্ করে ছিঁড়ে ফেললেন রবি ঠাকুর। দেখে ঝোলা কাঁধে পাশে দাঁড়ানো কিশোরী-শিল্পী থতমত। পরক্ষণেই স্মিত হেসে কিশোরীর মাথায় হাত বুলিয়ে বিশ্বকবি বোঝালেন— ‘‘এটা ঠি-ইক হয়নি, এইভাবে আঁক্।’’ দেখিয়ে দিলেন হাতে ধরে। এইভাবে গোবরডাঙার এক সন্তান রবীন্দ্রনাথের স্নেহ ও প্রশ্রয়ে হয়ে উঠলেন অসামান্য চিত্রশিল্পী। গুরুদেব তাঁকে একটা নতুন নামও দিয়েছিলেন— ‘‘চিত্রলেখা’’। আরও পরে কবিগুরুর ভাইপো দিকপাল চিত্রকর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরও প্রতিভাময়ী শিল্পী সম্পর্কে ঘোষণা করেন— ‘‘এঁর আঁকা ইলাস্ট্রেশন দিয়ে আমার গল্প যেন ছাপা হয়।’’ এই কন্যাই ক্রমে ‘‘বেঙ্গল স্কুল’’ ধারার অন্যতম শিল্পী হয়ে ওঠেন। অধুনা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া এই শিল্পীর নাম— হাসিরাশি দেবী।

শকুন্তলা। ফ্রান্সের debaecque.fr ছবিটিকে নিলামে তুলেছে।

১৯১১ সালে হাসিরাশি দেবীর জন্ম, বাবার কর্মস্থল তৎকালীন পশ্চিম দিনাজপুরে। বাবা আইনবিদ গোপালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা সুশীলাবালা দেবীর ৫ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্যে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ। বাবার মৃত্যুর পর গোবরডাঙার খাঁটুরায় মামাবাড়িতে চলে আসেন। মামাবাড়ির সবাই বিখ্যাত। হাসিরাশির দাদু ছিলেন সেকালের শ্রেষ্ঠ কথক ধরণীধর শিরোমণি, দাদুর খুড়তুতো ভাই প্রথম বিধবা-বিবাহ করা শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। শ্রীশচন্দ্রের পিতা আবার সুবিখ্যাত কথক রামধন তর্কবাগীশ। শ্রীশচন্দ্রের দাদু রামপ্রাণ বিদ্যাবাচস্পতি। হাসিরাশির মামা বিখ্যাত অধ্যাপক মুরলীধর বন্দ্যোপাধ্যায়। মামাতো ভাই রবীন্দ্র সাহিত্যে সুপণ্ডিত হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, হাসিরাশি দেবীর ভাইবোনেদের মধ্যে কেউ সাহিত্যিক, কেউ বা চিকিৎসক বা ইঞ্জিনিয়ার। প্রথিতযশা মহিলা ঔপন্যাসিক প্রভাবতী দেবী সরস্বতী তাঁর দিদি। হাসিরাশি দেবী সবচেয়ে বেশি সাহায্য ও সুপরামর্শ পেয়েছেন তাঁর চেয়ে ছ’বছরের বড় দিদি প্রভাবতী দেবী ও দাদা সাধনচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। আর গুরু হিসেবে পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের মতো বরেণ্য মানুষকে। চিত্রাঙ্কনের সহজপাঠ দিয়েছেন তাঁরাই। তাঁদের আদেশ ছিল, ‘‘যত পারো ছবি এঁকে যাও, প্রয়োজনমতো দেখিয়ে নিয়ে যেয়ো।’’

‘স্মৃতি’।

তেরো বছর বয়সে হাসিরাশি দেবীর বিয়ে হয় সুশীলকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ততদিনে, দিদি প্রভাবতী দেবী সাহিত্যিক হিসেবে নাম করেছেন। একলা থাকেন, অনিবার্য কারণে বাল্যবিবাহিত এবং পরবর্তীতে স্বামী গৈপুরের বিভূতিভূষণ চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছেন। অথচ জোড়াসাঁকোর ঠাকুর-পরিবারে তাঁর অবারিত দ্বার। এদিকে, হাসিরাশিকে আঁকতে উৎসাহ দিচ্ছেন স্বামী সুশীলকৃষ্ণ। হাসিরাশি একদিকে যেমন ছবির উপকরণ সংগ্রহ করছেন এক ভগ্নীপতি প্রশান্তকুমার চক্রবর্তীর কাছ থেকে, অন্যদিকে মিতালি পাতাতে কখনও স্বামীর সঙ্গে, আবার কখনও বা দিদির সঙ্গে ছুটছেন ঠাকুরবাড়িতে। ক্রমে যৌবনে পা রাখলেন হাসিরাশি। সেইসঙ্গে তাঁর ছবিতেও তারুণ্যের জোয়ার এল যেন। ছবির নেশায় মেতে উঠলেন তিনি। কলকাতা, দিল্লি, বোম্বাই… প্রদর্শনীর পর প্রদর্শনী, প্রশংসার পর প্রশংসা। হাসিরাশি দেবী সম্পর্কে শ্রদ্ধা ঝরে পড়ল কাজী নজরুলের কলমেও—

‘‘লেখার রেখার পিঞ্জর খুলে যে কথা উড়িয়া যায়—
শিল্পীর তুলি, সেই লেখাগুলি ধরিয়া রাখিতে চায়।
তুলির তিলক কালে মুছে যায়, লেখা হয়ে যায় বাসি
কালের কপোলে টোল্ খেয়ে ওঠে তাহাদেরই হাসিরাশি।’’

‘গোরাহারা গৃহ’।

কিন্তু রইল না সেই নানা রঙের দিনগুলি। জীবনে নেমে এল বিপর্যয়। একমাত্র কন্যা মারা গেল ৭ বছর বয়সে। আর সে শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই হারালেন স্বামীকে। মনও চলে না, হাতও চলে না। এইভাবে চলল কিছুকাল, তারপর ঘুরলেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। দুচোখ ভরে দেখলেন দেশের অতুলনীয় শিল্পসম্ভার। নয়ন তৃপ্ত হল, তবু ভরিল না চিত্ত। আবার তুলি চলল, আঁকার নেশা ফিরে এল। রঙের ওপর রং বুলিয়ে কুড়িয়ে আনা সৌন্দর্যকে ধরে রাখলেন জাপানি ওয়াশ পদ্ধতিতে। জলরঙেই তিনি ছবি করতে ভালবাসতেন, এবং ছবির মধ্যে জমজমাট রং তিনি আদৌ পছন্দ করতেন না। তিনি পৌরাণিক ছবি আঁকতে ভালবাসতেন, তার সঙ্গে বর্তমানের সংমিশ্রণ ঘটাতেও পছন্দ করতেন। কারণ, তাঁর মনে হত, ছবিটি এতে যুগোপযোগী যেমন হয়, তেমনই পৌরাণিকের প্রতি বর্তমানের বিশ্বাসও নষ্ট হয় না। তাঁর ছবির মধ্যে কোথাও ফুটে উঠেছে প্রকৃতির উলঙ্গ রূপ আপন সুষমামণ্ডিত হয়ে, কোথাও বা বুদ্ধের ধ্যানগম্ভীর মূর্তি, আবার কোথাও বা যুগলে রাধিকার মূর্তি। এই ছবিগুলির জন্যে পুরস্কৃতও হয়েছেন। মিলেছে স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদক, স্তুতি এবং প্রশংসা। এতেও শিল্পীমন তৃপ্ত হয়নি।

শিরোনাম অস্পষ্ট।

চিত্রশিল্পী হিসেবেই যে হাসিরাশি দেবীর হাতযশ, তা কিন্তু নয়। সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা অঙ্গনে বিচরণ করেছেন। বহু বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন। ভাস্কর্য গড়েছেন। লিখেছেন গান। এইচএমভি থেকে তাঁর গানের রেকর্ডও বেরিয়েছে। ভাবতেন নারীচেতনা ও প্রগতির কথাও। আকাশবাণীতে ‘মহিলামহল’ অনুষ্ঠানে তাঁর আলোচনা শুনতে অপেক্ষা করতেন মেয়েরা। ছোটদের জন্য বহু ছড়া ও কবিতা লিখেছেন তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। ছোটবেলায় তাঁর ছড়ার সঙ্গে পরিচয় ছিল প্রায় সকলেরই। চিত্রশিল্পী হিসেবে হাসিরাশি দেবী যেমন অনেক ব্যক্তির কাছে ঋণী, তেমনই ভারতবর্ষ, জয়শ্রী, মোহম্মদী, বিচিত্রা, মাসিক বসুমতী প্রভৃতি পত্রপত্রিকাও তাঁর কাছেও কৃতজ্ঞ। তৎকালীন ওইসব প্রথমসারির কাগজে নিয়মিতভাবে তাঁর ছবি ছাপা হত। হাসিরাশি দেবী সম্বন্ধে অবনীন্দ্রনাথের উক্তিটি এই অবসরে দেখে নেওয়া দরকার। সেই মন্তব্য অত্যন্ত উঁচু মনের পরিচয় বহন করে—

‘‘শ্রীমতী হাসিরাশি দেবীর লেখা ছবি গল্প ইত্যাদি আমি বেশ মনোযোগের সঙ্গে দেখি ও পড়ি। ছবি আঁকা ও গল্প লিখতে এঁর বেশ একটু দক্ষতা আছে। এঁর ছবি আমি আমার দু-একটা লেখার মধ্যে দেখে প্রথম থেকেই আমি এঁর ছবি আঁকা Book illustration drawing-এর নিপুণতা ধরতে পেরে সব মাসিকপত্রের মালিকদের জানাই যে এঁর আঁকা illustration দিয়ে আমার গল্প যেন ছাপা হয়। উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে ও সহানুভূতির অভাবে এঁর যদি নৈপুণ্য ভাল করে না প্রকাশ হতে পারে তবে সেটা আমাদের দেশের আর্ট স্কুলগুলির পক্ষে বিশেষ অগৌরবের বিষয় হবে। আমি একান্তভাবে শ্রীমতি হাসিরাশি দেবীর লেখা ও ছবির দিক দিয়ে উৎকর্য কামনা করি। কিমতি মতি শুভমন্তু।’’

শিরোনামহীন।

তাঁর কলমের জোরও ছিল। ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, আত্মজীবনী, আঞ্চলিক ইতিহাস সর্বত্র বিচরণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়াও জলধর সেন, সজনীকান্ত দাস, জসীমুদ্দিন, রাজশেখর বসু, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, মুকুল দে, অশোকনাথ শাস্ত্রী, নরেন্দ্র দেব, প্যারীমোহন সেনগুপ্ত প্রমুখ বরেণ্য শিল্পী-সাহিত্যিক হাসিরাশি দেবীর ছবি ও লেখায় মুগ্ধ ছিলেন। হাসিরাশি দেবীর কিছু উল্লেখযোগ্য বই হল: ‘বকবাবাজি ও কাঁকড়ামাসি’, ‘নিষ্প্রদীপ’, ‘বন্দীবিধাতা’, ‘ভোরের ভৈরবী’, ‘দ্বারী’, ‘লাগ ভেলকি লাগ’, ‘রাজকুমার জাগো’, ‘রক্তনীলার রক্তরাজি’, ‘মানুষের ঘর’, ‘দাই’, ‘কুশদহের ইতিহাস’, আচার্য্য অভেদানন্দ জীবনী এবং কবিতার বই ‘বর্ণালী’। সেই কবিতাবইয়ের ভূমিকা লিখলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ—

‘‘লেখা আর আঁকা
তব মন বিহঙ্গের
এই দুটি পাখা
ধরণীর ধূলিপথ তপ্ত হয় হোক
আকাশে রহিল মু্ক্ত তব মুক্তিলোক।’’

পত্রিকার প্রচ্ছদে হাসিরাশির অঙ্কিত ছবি।

শেখার শেষ নেই। একথা হাসিরাশি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। ১৯৬০ সালে শিল্পীর বয়স যখন প্রায় পঞ্চাশ, মাথার চুলে যখন রং ধরেছে সেইসময় তিনি ভর্তি হলেন সরকারি চারু ও কলা শিল্পালয়ে ছাত্রী হিসেবে। শিখলেন ক্র্যাফট, বাটিক ও মডেল প্রায় দেড় বছর ধরে। হিন্দিও শিখতে শুরু করলেন এরই মধ্যে। শোনা যায়, তখনকার দিনে প্যারিসে তাঁর আঁকা ছবি বিক্রি হয়েছে বিস্তর, যা সেযুগে কেউ ভাবতেও পারতেন না। একবার রুমানিয়ার জনৈক রাষ্ট্রদূত শিল্পীর একখানি ছবি দেখে এতই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে, লোক মারফত তাঁর কাছে শুভেচ্ছা ও উপহার ফুল পাঠান। অথচ প্রবল ব্যক্তিত্বময়ী ও আত্মনির্ভরশীল এই মানুষটির শেষজীবন কেটেছে পরানুগ্রহে। থাকতেন খাঁটুরা হাইস্কুল কোয়ার্টারের একটি অপরিসর কক্ষে। স্থানীয় বিশিষ্ট চিকিৎসক দিলীপকুমার ঘোষ এবং তাঁর পরিবারের বদান্যতায় হাসিরাশি দেবীর জীবননির্বাহ হত।

শিরোনামহীন।

১৯৯৩-এর ৬ জুন এই অসামান্যা নারীর জীবনাবসান হয়। মৃত্যুর অল্পকাল আগে ১৯৯১-এ লেখা তাঁর সম্ভবত শেষ ছড়াটিতে ধরা পড়েছে শিল্পীর নিঃসঙ্গতা ও অসহায়তার করুণ ছবি—

‘‘চাঁদের ভেতর চরকা কাটা বুড়ি
আজো হাঁটে দিয়েই হামাগুড়ি
সেও কি, আমার মতো থরথুরিয়ে হাঁটে
আর, বসে বসে কেবল চরকা কাটে?’’

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

দেখুন, হাসিরাশি দেবীকে নিয়ে প্রথম ও একমাত্র তথ্যচিত্র।

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »