Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

হকিকি আজাদি

উসকে উঠছিল ১৫ বছর আগের স্মৃতি। কী অদ্ভুত মিল দুটি ঘটনার। তবে যাই হোক, শেষটা মনে হয় একটু আলাদাই হল। গত রবিবার, অর্থাৎ ৬ নভেম্বর, ডান পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে লাহোরের শৌকত খানম ক্যানসার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

কী ঘটেছিল ১৫ বছর আগে? দিনটি ছিল ২০০৭-এর ২৭ ডিসেম্বর। সন্ধ্যাবেলা। অকুস্থল, রাওয়ালপিন্ডির র‍্যালি ময়দান। ১০ দিন বাদেই পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। সকালে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে ফোনালাপ সেরে রাওয়ালপিন্ডির নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা দিতে এসেছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। এক সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু হল তাঁর। জনসভার ঠিক প্রাক-মুহূর্তে। যার কারণ আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। কেননা, কোনও পোস্টমর্টেমই হয়নি তাঁর। উল্টে অকুস্থল জল দিয়ে ধুয়ে প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে।

এটা অত্যন্ত আনন্দের যে, বেনজিরের পরিণতি ইমরানের হয়নি। কারণ হিসেবে ইমরান জানাচ্ছেন, তিনি আগেভাগেই জানতেন ওয়াজিরাবাদ বা গুজরাতে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করা হবে। গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৩ নভেম্বর এই ওয়জিরাবাদেই তাঁকে লক্ষ্য করে চলে গুলি। চারটি বুলেট লাগে তাঁর ডান পায়ে। এই অবস্থাতেই তাঁকে ভর্তি করানো হয় শৌকত খানম ক্যানসার হাসপাতালে। হাসপাতালের সিইও ফয়জল সুলতান জানিয়েছেন, ডান পায়ের টিবিয়া জখম হয়েছে এই ৬৯ বছরের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে না-ঢুকেও কয়েকটি কথা বলা যায়। এই বছরের এপ্রিল মাসে আস্থাভোটে পরাজিত হন ইমরান খান। তাঁর অভিযোগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগসাজস করেই নাকি তাঁকে সরানো হয়েছে। এই বক্তব্যের সত্যতা সম্বন্ধে কোনও মন্তব্য না-করেও বলা যায়, ওই এপ্রিলেই দেখা যায় দুই বিবদমান দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-কে একযোগে ইমরানের পিটিআই দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে। এর আগে বরিষ্ঠ পাকিস্তানি সাংবাদিক আহমেদ রশিদ জানিয়েছেন, মৃত্যুর দু-সপ্তাহ আগে বেনজির ভুট্টো তাঁকে জানিয়েছিলেন যে, হোয়াইট হাউস তাঁর (বেনজিরের) ওপর মুশাররফের সঙ্গে সমঝোতায় আসার জন্য ‘অসম্ভব চাপ’ সৃষ্টি করে চলেছে। সেনার উর্দিধারী মুশাররফ ছিলেন গণতন্ত্রের স্বঘোষিত প্রহরী আমেরিকার প্রচণ্ড পছন্দের। এই মুশাররফকে সঙ্গে নিয়েই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আমেরিকা। তার ফল যে কী হয়েছে তা সবাই জানেন। ২০ বছর পর আবার আফগানিস্তানে তালিবান। এই তালিবানদের ঘোর বিরোধী বেনজিরকে প্রাণ দিতে হয়েছিল ১৫ বছর আগে। একজনকে খাড়া করাও হয়েছিল তাঁর খুনি হিসাবে। তবে সে সত্যই খুন করেছে কি না সে-বিষয়ে সন্দেহ থেকে গেছে অনেকেরই। ইমরানের ক্ষেত্রেও একজন দুষ্কর্মকারী পাওয়া গেছে। সে নাকি জানিয়েছে সে একাই এই কাজ করেছে। তার সঙ্গে কোনও সঙ্গী ছিল না। যা বিশ্বাস করা একটু কষ্টকরই। প্রশ্ন উঠছে শেহবাজ শরিফের সরকার কি কোনও কিছু চাপা দিতে চাইছে? যদি তাই হয়, তা কার নির্দেশে?

উল্লেখ্য, এই শেহবাজ শরিফের সরকারকে ইমরান খান প্রথম থেকেই আমদানি-করা সরকার বলে গেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই সরকারকে বসিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অভিযোগ সম্বন্ধে কিছু না-বলেও বলা যায়, পাকিস্তান সহ এই অঞ্চলের দেশগুলির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বারবার নাক গলিয়েছে এই দেশ। ইমরান যাদের চরম অপছন্দের। একটি রাষ্ট্র তখনই সত্যিকারের স্বাধীন, সার্বভৌম হয়, যখন তারা কারও মুখাপেক্ষী না-হয়েই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ইমরানের বক্তব্য, পাকিস্তান তা হতে পারেনি। এই জায়গা থেকেই তাঁর ‘হকিকি আজাদি’ আন্দোলন।

এখন প্রশ্ন হল, এই হকিকি আজাদি (সত্য স্বাধীনতা) কি পেয়েছি আমরাও? আমরা কি নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি? আমাদের সরকারও যেসব সিদ্ধান্ত নেন, তা কি অন্যত্র নির্ণীত হয় না?

উত্তরটা আমাদের সবার জানা। ইমরানের সাহস আছে, তিনি সেইসব ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে হকিকি আজাদির জন্য লং মার্চ করতে নেমেছেন। আমাদের কোনও রাজনীতিবিদ সেটা করতেও পারেন না।

চিত্র: গুগল
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »