Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

‘ওই এসে গেছে রাবণকাটা’

দশমীকে ‘বিজয়া’ বলা হয় কেন, তার পৌরাণিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে একাধিক কাহিনি সামনে আসে। পুরাণে মহিষাসুর-বধ সংক্রান্ত কাহিনিতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পরে দশম দিনে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেন দেবী। শ্রীশ্রীচণ্ডীর কাহিনি অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে দেবী আবির্ভূতা হন, এবং শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর-বধ করেন। বিজয়া দশমী সেই বিজয়কেই চিহ্নিত করে। তবে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই দিনে যে দশেরা উদযাপিত হয়, তার তাৎপর্য অন্য। ‘দশেরা’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত ‘দশহর’ থেকে, যা দশানন রাবণের মৃত্যুকে সূচিত করে। বাল্মীকি রামায়ণে কথিত আছে যে, আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতেই রাবণ-বধ করেছিলেন রাম। কালিদাসের রঘুবংশ, তুলসীদাসের রামচরিতমানস, কিংবা কেশবদাসের রামচন্দ্রিকা-য় এই সূত্রের সঙ্গে সংযোগ রেখেই বলা হয়েছে, রাবণ-বধের পরে আশ্বিন মাসের ৩০তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ। রাবণ-বধ ও রামচন্দ্রের এই প্রত্যাবর্তন উপলক্ষেই যথাক্রমে দশেরা ও দীপাবলি পালন করা হয়ে থাকে। আবার মহাভারতে কথিত হয়েছে, দ্বাদশ বৎসর অজ্ঞাতবাসের শেষে আশ্বিন মাসের শু‌ক্লা দশমীতেই পাণ্ডবরা শমীবৃক্ষে লুক্কায়িত তাঁদের অস্ত্র পুনরুদ্ধার করেন এবং ছদ্মবেশ-মুক্ত হয়ে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় ঘোষণা করেন। এই উল্লেখও বিজয়া দশমীর তাৎপর্য বৃদ্ধি করে।

তবে দশমী থেকে দ্বাদশী— তিনদিনের রাবণকাটা লোকনৃত্যে মেতে ওঠেন বিষ্ণুপুরের লোকশিল্পীরা। গায়ে লাল, সাদা, কালো রঙে ছাপানো পাটের উলোঝুলো পোশাক। মুখে বিভীষণ, জাম্বুবান, হনুমান ও সুগ্রীবের রঙিন মুখোশ। সঙ্গে নাকাড়া, টিকারা, কাঁশি বা ঝাঁঝের বাজনা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের অলিতে-গলিতে নেচে চলেছেন তাঁরা।

চারজন নৃত্যশিল্পী ও চারজন বাজনদারকে নিয়ে রাবণকাটার দল।

পায়ে বীর রসের ছন্দ। টুং-টাং, গুড়ুক-গুড়ুক বাজনার বোল উঠলেই জমে যাচ্ছে ভিড়। বড়রা ছোটদের দুষ্টুমি করতে দেখলেই বলছেন, ‘সাবধান, ওই এসে গেছে রাবণকাটা। দুষ্টুমি করলেই ধরে নিয়ে যাবে।’ জাম্বুবানের ভালুকের মুখ, হনুমানের বড়-বড় দাঁত, গামারকাঠের তৈরি এমন বিকট-দর্শন মুখোশ দেখে ছোটরা বড়দের কোলে সিঁটিয়ে যায়। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। এখন যাঁরা বুড়ো তাঁদেরও ছেলেবেলায় এ ভাবেই ভয় দেখানো হত। ভয় ভাঙাতে বাচ্চাদের কোলে তুলে নাচিয়েও দেন শিল্পীরা।

নাচের শেষে বিজয়া দশমীর দিন বিষ্ণুপুরের নিমতলায় রঘুনাথজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে ইন্দ্রজিৎ বধ, একাদশীর রাতে কুম্ভকর্ণ বধে অংশ নেন রাবণকাটা লোকশিল্পীরা। তারপর মাটির তৈরি ছ’ফুট উচ্চতার দশমুণ্ড রাবণবধের মাধ্যমে শেষ হয় প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন এই নৃত্যানুষ্ঠানের। তা দেখতে সেখানেও ভিড় জমান শত শত দর্শক। চিরাচরিত বিশ্বাস থেকে রাবণের কাটা মুণ্ডুর মাটি নিয়ে আগের মতই চলে কাড়াকাড়ি।

পায়ে বীর রসের ছন্দ।

চারজন নৃত্যশিল্পী ও চারজন বাজনদারকে নিয়ে রাবণকাটার দল। সারা বছর কেউ সব্জি বেচেন। কেউ ব্যবসা করেন চুনের। পুজো শেষের তিনটি দিন নিজের নিজের ব্যবসা ছেড়ে গায়ে পাটের পোশাক ও মুখোশ পরে তাঁরাই হয়ে ওঠেন রাবণকাটা নাচের কুশীলব।

আসলে এই নাচ বীর রসের। রাবণের মৃত্যুর পর যুদ্ধজয়ের। যা একই সঙ্গে লোকনৃত্যের আঙ্গিকে সর্বজনীন ও এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে আনন্দসঞ্চারী। সেই সঙ্গে অশুভ শক্তির বিনাশের আহ্বান।

টুং-টাং, গুড়ুক-গুড়ুক বাজনার বোল উঠলেই জমে যাচ্ছে ভিড়।

বাংলায় দুর্গোত্‍সবের প্রবর্তন কে কবে করেছিলেন, সে সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য নেই। বাংলায় যে দুর্গাপূজা প্রচলিত, তা মূলত মহিষাসুরমর্দিনীর পূজা। মহিষাসুরমর্দিনীর পূজার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-এ (রচনাকাল আনুমানিক অষ্টম শতাব্দী)। এছাড়া দুর্গাপূজার কথা পাওয়া যায় মার্কণ্ডেয় পুরাণ (মূল পুরাণটি চতুর্থ শতাব্দীর রচনা, তবে দুর্গাপূজার বিবরণ-সম্বলিত সপ্তশতী চণ্ডী অংশটি পরবর্তীকালের সংযোজন), বৃহন্নন্দীকেশ্বর পুরাণ (সঠিক রচনাকাল অজ্ঞাত), কালিকা পুরাণ (রচনাকাল ৯ম-১০ম শতাব্দী) ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ-এ (রচনাকাল ১২শ শতাব্দী)। ৯ম-১২শ শতাব্দীর মধ্যকার সময়ে নির্মিত একাধিক মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তি বাংলার নানা স্থান থেকে আবিষ্কৃতও হয়েছে। একাদশ শতাব্দীর বাঙালি পণ্ডিত ভবদেব ভট্ট দুর্গার মাটির মূর্তি পূজার বিধান দিয়ে গেছেন। চতুর্দশ শতাব্দীতে মিথিলার কবি বিদ্যাপতি ‘দুর্গা ভক্তি-তরঙ্গিণী’ ও বাঙালি পণ্ডিত শূলপাণি ‘দুর্গোত্‍সব-বিবেক’ বই দুইটি থেকে দুর্গা পূজার কথা জানা যায়। অর্থাৎ‍, চতুর্দশ শতাব্দীতেই বাংলায় দুর্গাপূজা ছিল রীতিমত ‘উত্‍সব’। দুর্গাপূজার প্রাচীনত্ব অনুধাবনে আরও একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ রঘুনন্দনের ‘দুর্গাপূজা তত্ত্ব’ গ্রন্থখানি। নবদ্বীপের এই স্মার্ত পণ্ডিতের লেখা গ্রন্থটিতে দুর্গাপূজার যাবতীয় বিধান রয়েছে। পুরাণ ও স্মৃতিশাস্ত্র থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করে পূজা পদ্ধতি লিখেছেন তিনি।

দশমী থেকে দ্বাদশী— তিনদিনের রাবণকাটা লোকনৃত্যে মেতে ওঠেন বিষ্ণুপুরের লোকশিল্পীরা।

বাংলার অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপূজা হল পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ী মন্দিরের পূজা। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে এই পূজার সূচনা হয়। আচার প্রচলিত দুর্গাপূজার আচার অনুষ্ঠান থেকে কিছুটা ভিন্ন। এই পূজায় মূর্তি বিসর্জন হয় না। প্রতি বছর ঘট স্থাপন করে পটে আঁকা দুর্গার পূজা হয়।

মল্লরাজা জগৎমল্ল তাঁর রাজধানী প্রদ্যুম্নপুর থেকে বিষ্ণুপুরে স্থানান্তর করার পর রাজমহলের অদূরে ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে মৃন্ময়ী মন্দির স্থাপন করেন। মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী মৃন্ময়ী দেবীর মূর্তি গঙ্গামাটি দিয়ে তৈরি।

এখানকার পূজা পদ্ধতি বাংলায় প্রচলিত দুর্গাপূজার থেকে অনেকটাই আলাদা; কিছুটা আলাদা এখানকার দুর্গা প্রতিমার গড়নও। মৃন্ময়ী দেবী সপরিবারে বটে, কিন্তু লক্ষ্মী-গণেশ ও কার্তিক-সরস্বতী এখানে স্থানবদল করে থাকেন। অর্থাৎ লক্ষ্মীর স্থলে গণেশ ও গণেশের স্থলে লক্ষ্মী এবং কার্তিকের জায়গায় সরস্বতী ও সরস্বতীর জায়গায় কার্তিক। রাজবাড়ির কেউ স্বপ্নাদেশ পেলে তবেই দেবীর অঙ্গরাগ হয়। অথ বলিনারায়ণী পুজো পদ্ধতি মেনে চলা হয়। তিন পটেশ্বরী মৃন্ময়ী মূর্তির বাঁ দিকে পুজো পান। শুরুতেই এ দিন এলেন বড় ঠাকরুন। ইনি ‘মহাকালী’। মান চতুর্থীর দিন আসবেন মেজ ঠাকরুন। তিনি ‘মহা সরস্বতী’। আর মহা সপ্তমীর দিন সকালেই বসবেন ছোট ঠাকরুন। তিনি ‘মহালক্ষ্মী’। তিন জনেই পটের দেবী।

জিতাষ্টমী তিথির পরের দিন ঘট স্থাপন করে রাজমহল থেকে রূপার পাত দিয়ে তৈরি মহিষমর্দিনী মূর্তিকে বা স্থানীয় বিশ্বাসে বড়ঠাকুরানিকে এনে নবপত্রিকাসহ কৃষ্ণবাঁধে স্নান করিয়ে বোধনের মাধ্যমে পূজার শুরু হয়। মানচতুর্থীর পরের দিনে লালরঙের কাপড়ে স্থানীয় বিশ্বাসে মেজঠাকুরানি বা দেবীঘটে গোপালসার থেকে জল ভরে আনা হয়। মহাষষ্ঠীর দিনে রাজ অভিষেকস্থলে বিষ্ণুপুরের রাজা ও রানিকে দেবীপট বা স্থানীয় বিশ্বাসে ছোটঠাকুরানিকে দর্শন করানো হয়। সেইদিন শ্যামকুণ্ডের জলে দেবীপটকে স্নান করিয়ে বিল্ববরণ করা ও বোধন করা হয়। জিতাষ্টমী থেকে মহাষষ্ঠী পর্যন্ত খিচুড়িভোগ এবং মহাষষ্ঠী থেকে মহানবমী পর্যন্ত বাদশাভোগ ভাত ও নিরামিষ পদ ভোগ হিসেবে তৈরি করা হয়।

মহানবমীর শেষ রাতে মহামারীর পূজা নামে এক বিশেষ পূজা হয়ে থাকে। কথিত আছে, এককালে কলেরার মড়কে মল্লভূম রাজ্যের ও রাজপরিবারের বহু লোকের মৃত্যু হলে এই পূজার প্রচলন হয়। দুইজন পুরোহিত একমাত্র রাজপরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে দেবীঘটের দিকে পিছন ফিরে খচ্চর বাহিনীর পূজা করেন।

মহাদশমীর দিন পান্তা ভাত দিয়ে দেবীর ভোগ তৈরি করা হয়। প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী স্থানীয় রাউতখণ্ডের ন্যুলে সম্প্রদায়ের লোকেরা নীলকণ্ঠ পাখি নিয়ে আসেন। দেবীমূর্তিকে বিসর্জন না দিয়ে দেবীঘটকে স্থানীয় রামসায়রে নবপত্রিকাসহ বিসর্জন দেওয়া হয়।

চিত্র: লেখক
Advertisement
4 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »