Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

দুর্গাপুজো: অতীত দিনের স্মৃতি

সে-ই কবে থেকে দুর্গাপুজো দেখে আসছি। হিসেব করলে থই পাই না। কত পরিবর্তন আর ওলোটপালোট, রাজনৈতিক পরিবর্তন, সামাজিক বিন্যাসের স্তর-স্তরান্তর, অর্থনৈতিক বিরাট ফারাকের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে আমার দুর্গাপূজার অভিজ্ঞতা। ইতিহাসের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা, ভাবতে গিয়ে মনে হয়। তার-ই কিছু স্মৃতি তুলে ধরব, একাল আর সেকালের সেতুবন্ধ হিসেবে।

আমাদের শৈশব-কৈশোরে দুর্গাপূজার কাউন্টডাউন শুরু হত পুজোর তিনমাস আগে থেকে। পয়সা জমানো শুরু করতাম নতুন মাটির ভাঁড় কিনে। আমি ও আমার অভিন্নহৃদয় এক বন্ধু নিমাই এক ভাঁড়েই পয়সা জমাতাম। কে বেশি বা কে কম পয়সা ফেলছি, সে বৈষয়িকতায় যেতাম না। পুজোর আগে ঘট ভেঙে যা মিলত, আধাআধি ভাগ করে নিতাম দুজনে। এই সততার সঙ্গে কিছু অসাধুতার কথাও কবুল করা ভাল। ঘট ভর্তি করার জন্য আমি অন্তত বাড়ির বয়স্কদের টাকাপয়সা আত্মসাৎ যে না করেছি, এমন নয়। বন্ধুটিও, সম্ভবত।

এর পরবর্তী পর্ব পুজোর জামাপ্যান্ট কেনা। রেডিমেড বা দর্জির দোকানে মাপ দিয়ে। আমাদের পাড়ার দর্জি অবধারিতভাবে একেবারে শেষ মুহূর্তে ডেলিভারি দিত। তাই টেনশনে থাকতে হত খুব। দক্ষিণ কলকাতায় ‘স্যামসন’ নামে একটা বনেদি দোকান ছিলো। বাবা নিয়ে যেতেন ওখানে রেডিমেড জামাকাপড় কেনার জন্য। কেনাকাটার পর রেস্তোরাঁয় খাওয়া। উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল মোগলাই পরোটার সঙ্গে কষা মাংস। তাইতেই বেহেশত! বাড়ন্ত বয়স বলে আমার যা সাইজ, সব সময় তার থেকে বড় মাপের প্যান্ট কেনা হত। অতএব কয়েক প্রস্থ ভাঁজ করে পরা ছাড়া উপায় থাকত না। বিড়ম্বনা আর কাকে বলে! সবচেয়ে সমস্যা হত জুতো নিয়ে। নতুন জুতো পায়ে দিয়ে ঘণ্টাখানেক হেঁটেছি কী হাঁটিনি, ব্যস, পায়ে ফোস্কা! অতঃপর জুতো হাতে নিয়ে চলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে! এ অভিজ্ঞতা কার হয়নি?

মধ্যপর্বে প্রতিমা তৈরি দেখার কথাটা বাদ দিই কেন? আমাদের পাড়াতেই হরেকেষ্ট পাল বলে এক শিল্পী প্রতিমা গড়তেন। স্কুলে যাতায়াতের পথে প্রায়ই দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর মূর্তি গড়া দেখতাম। সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা! একমেটে, দোমেটে, রং করা, গর্জন ফুটিয়ে তোলা, প্রতিমার চোখ আঁকা মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। এঁটেল মাটির স্বরূপ এভাবেই জেনেছি।

মহালয়া দিয়ে হত পুজোর প্রকৃত সূচনা। শরতের ভোররাতে আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রচারিত এই অনুষ্ঠানটির শ্রোতা অন্তহীন, এবং এখনও তা সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও অনুষ্ঠানটির শ্রোতা অগণিত। আমাদের শৈশবে বাড়ি বাড়ি রেডিও ছিল না, টিভি তো আসেইনি। বাড়ির পাশে মাঠে মাইক থাকত, আর প্রায় তিনশো গজ দূরের এক বাড়িতে মাউথপিস রাখা থাকত। সেখান থেকে ভেসে আসত মহালয়ার গান, ভাষ্য। বাণীকুমার-বীরেন্দ্রকৃষ্ণ-পঙ্কজকুমার মল্লিক-ত্রয়ী অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন এই অনুষ্ঠানটির জন্য।

এর পর পুজো। পঞ্চমী বা ষষ্ঠীতে মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে এলে পাড়ার মহিলারা উলুধ্বনি দিয়ে বরণ করতেন। প্রথমদিকে প্রতিমা ছিল একচালা। পরে আলাদা আলাদা মূর্তি হয়। প্রতিমা দেখতে বেরোতাম দুই দফায়। দিনের বেলা কাছাকাছি যে পুজো, সেখানে। পায়ে হেঁটে ঘণ্টা দুই-তিন। বন্ধু নিমাই ছাড়াও আরও পাঁচ-ছয় জন। পথে টুকটাক খাওয়াদাওয়া। ফিরে এসে স্নান-খাওয়া, দিবানিদ্রা কখনও কখনও। অথবা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কী সেটা? পুজোর গান শোনা। আমাদের শৈশব-বাল্য-কৈশোর-যৌবনে পুজোর সময় যে গান প্রকাশিত হত, মূল পুজোর থেকে তার আকর্ষণ নেহাৎ কম ছিল না। বাংলা গানের সুবর্ণযুগ সেটা। পুজোপ্যান্ডেলে বাজত, ঘরে ঘরে রেকর্ড প্লেয়ারে বাজত। এখনও কানে লেগে আছে ‘সাতভাই চম্পা জাগোরে জাগো’ (লতা), ‘নাম রেখেছি বনলতা’ (শ্যামল), ‘তার আর পর নেই’ (হেমন্ত), ‘এক তাজমহল গড়ো’ (পিন্টু), ‘মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা’ (সন্ধ্যা), এমন অসংখ্য স্মৃতিজাগানিয়া গান। ছিল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌতুকনক্সা, মিন্টু দাশগুপ্তের প্যারোডি, অপরেশ লাহিড়ী-আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়-জপমালা ঘোষের ছোটদের গান, কীর্তন, লোকগীতি পর্যন্ত। এইচ এম ভি গানগুলি ছেপে বের করত। তার-ও চাহিদা ছিল তুঙ্গে।

একদিকে পুজোর গান, অন্যদিকে পুজো সংখ্যার পত্রপত্রিকা। সংখ্যায় এখনকার চেয়ে কম হলেও গুণমানে নয়। ছোটদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল দেব সাহিত্য কুটীর থেকে প্রকাশিত পাঁচশো পৃষ্ঠার ওপর বাঁধানো পূজাবার্ষিকী। প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা রঙিন। পত্রিকায় নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, শিবরাম চক্রবর্তী, তারাশঙ্কর-বনফুল-বিশু মুখোপাধ্যায়, অচিন্ত্যকুমার-ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ-বিমলচন্দ্র ঘোষ-প্রেমেন্দ্র মিত্র-অসমঞ্জ মুখোপাধ্যায়-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কে না লিখতেন? পি সি সরকার ম্যাজিক নিয়ে লিখেছেন, আর বিধায়ক ভট্টাচার্য লিখতেন নাটক। প্রতিবছর এক এক নামে বেরোত,– জয়যাত্রা, নবপত্রিকা, এইরকম। সত্যজিৎ রায় ‘সন্দেশ’ প্রকাশ করছেন ১৯৬১ থেকে। তার পুজোসংখ্যাও কম আকর্ষণীয় ছিল না, বিশেষ করে এখানেই যখন তিনি শঙ্কুর অভিষেক ঘটালেন সম্ভবত ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি’-র মাধ্যমে।

গোড়ায় আনন্দবাজার, দেশ ইত্যাদি পত্রিকা দুটি করে উপন্যাস ছাপত পুজোসংখ্যায়। সাগরময় ঘোষ প্রতিবছর আনকোরা নতুন একজনকে দিয়ে উপন্যাস লেখাতেন। তাঁর এই নিরীক্ষা যে কতদূর সফল, তার প্রমাণ, অচিরেই এর ফলে বাংলাসাহিত্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার প্রমুখ ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব হল। এমনকি সত্যজিৎ রায়কেও তিনি এইভাবে বার্ষিক ফেলুদাকাহিনি লেখায় উদ্বুদ্ধ করেন। সেসময় আনন্দবাজার গোষ্ঠীর যেমন দেশ, যুগান্তর গোষ্ঠীর তেমন ছিল ‘অমৃত’। পাঠকমহলে তার জনপ্রিয়তাও কম ছিল না। তাছাড়া উচ্চাঙ্গের শারদীয় সংখ্যা বের করত ‘পরিচয়’, ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি’, ‘নবকলোল’, ‘বারোমাস’, ‘নন্দন’, ‘পুরশ্রী’, ‘প্রমা’, ‘কথাসাহিত্য’, ‘উদ্বোধন’ (বেলুড় থেকে প্রকাশিত এই মাসিক পত্রিকাটি ১৮৯৮ থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এর প্রথম উদ্যোক্তা স্বামী বিবেকানন্দ। এটি-ই বাংলাভাষার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সাময়িকপত্র। পত্রিকাটির পূজা সংখ্যা অবশ্য-সংগ্রহযোগ্য, লেখক এবং লেখার মান বিচার করে) মাসিক সহ বেশ কিছু পত্রিকা। কলকাতার বাইরে নাগপুর, জামশেদপুর, ভিলাই, হাইলাকান্দি, আন্দামান, মুম্বাই, দিল্লিও অন্যন্য বহু জায়গা থেকেও পুজোসংখ্যা বেরোত, বেরোয় অদ্যাপি। শারদীয়া পূজা বাংলা সাহিত্যকে যে গতিজাড্য দেয়, দিয়ে চলেছে, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করা যায়। আনন্দমেলা, শিশুসাথী, কিশোরভারতী-সহ প্রচুর কিশোরপাঠ্য পত্রিকা বেরোত, বেরোয় এসময়।

১৯৬২-তে চীন-ভারত যুদ্ধের প্রভাব দুর্গাপুজোর ওপরেও পড়েছিল। কলকাতার বিজয়গড়ে (যাদবপুর) ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময়ে অবনীন্দ্রনাথ-অঙ্কিত ভারতমাতার মূর্তি গড়ে পুজো করা হয়। অতিরিক্তের মধ্যে ছিল মহিষাসুরের বদলে ড্রাগন-বধে ভারতমাতা। আজকেও সেখানে ভারতমাতা পূজিত হচ্ছেন, তবে ড্রাগন-বর্জিত। এখন তিনি সিংহবাহিনী, তবে পরিবারহীন একা। দ্বিভুজা, একহাতে ভারতবর্ষের মানচিত্র। অভিনব ভাবনা নিঃসন্দেহে। বাষট্টি থেকে আজ, ছ’দশকেরও অধিক সময়ে কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ও বিশ্বে কম পরিবর্তন হয়নি। দেবী দুর্গাও নানা রূপ-রূপান্তরে এসেছেন। তার মধ্যে একটি হল মূর্তিগঠনে যুগান্তর, যাকে ‘থিমপূজা’ নাম দেওয়া হয়েছে। অন্যটি কলকাতার এক বারোয়ারি পুজোয় মুসলমান পুরোহিত।

ফের আসা যাক কৈশোরের কথায়। বিকেলে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রস্তুতি প্রতিমাদর্শনের। এবার বন্ধুসংখ্যা এক কী দুই। আমাদের দৌড় বড়জোর পার্ক সার্কাস ময়দান। তখন বিখ্যাত মৃৎশিল্পী রমেশচন্দ্র পাল তিন-চার, বড়জোর পাঁচটি প্রতিমা গড়তেন। তাঁর সম্পর্কে এবং দুর্গাপ্রতিমা-শিল্পীদের নিয়ে পরে বিশদ লিখছি।

পার্ক সার্কাস ছাড়া কালীঘাটে সঙ্ঘশ্রীর বিখ্যাত পুজো দেখতাম। সেখানকার দুর্গাপ্রতিমার ছবি বিক্রি হত। কিনতাম। সেখান থেকে হাজরা পার্ক, পরে ট্রামে চড়ে দেশপ্রিয় পার্ক। তাছাড়া পায়ে হেঁটে তেইশ পল্লী, সাতাশ পল্লী। কলকাতা যে একদা বিরাট অংশেই পল্লীগ্রাম ছিল, তার প্রমাণ রয়ে গেছে এরকম পল্লী-নামাঙ্কিত পুজোর মধ্যে। ছোটবেলায় বাড়ির বয়স্করা যখন সিনেমা বা গড়ের মাঠে বেড়াতে যেতেন, বলতেন, কলকাতা যাচ্ছি। যদিও আমাদের ঠিকানা তখন কলকাতা ৪০, ডাকঘর রীতিমতো সাহেবি,– রিজেন্ট পার্ক!

জমানো পয়সায় খাওয়ার উচ্চাশা ছিল ডবল ডিমের ওমলেট। আমরা ভালবেসে ‘মামলেট’ ডাকতাম। তখন মুরগির ডিম বিশেষ ছিল না। হাঁসের ডিম। পেট ভরে যেত। তাছাড়া টুকটাক বাদাম, লজেন্স, ক্বচিৎ আইসক্রিম। যাতায়াতে বাস-ট্রামে ভাড়া না দেওয়াটা যোগ্যতা বলে বিবেচিত হত। পাপকর্ম মনে হলেও সিগারেটের হাতেখড়ি তখন, পরে যদিও তা ধারাবাহিকতা রক্ষা করেনি। স্কুলজীবনের শেষদিকে সাহেবপাড়ার এলিট সিনেমা হলে ‘The Heroes of Talemark’ দিয়ে ইংরেজি সিনেমা দেখার সূচনা। পুজোয় কোনওবার দেখেছি ‘রাজা রামমোহন’, কোনওবার ‘শঙ্খবেলা’, আবার অন্যবার ‘চিড়িয়াখানা’।

পুজোর তিনদিন সত্যি সত্যি এত দ্রুতগতিতে কাটত! কখন যে দশমীর প্রভাত হত, টের পেতাম না। টের পেতে চাইতাম-ও না। সেদিন দিনের বেলাতে পাড়ার না-দেখা প্রতিমাদর্শনে বেরোতাম। ব্যথার সুর টের পেতে দিত না বাড়ি ফিরে পোলাও-মাংসের সেবায়। আমাদের যুগে বিরিয়ানির চল হয়নি। হোটেল-রেস্তোরাঁতেও কম যাওয়া হত। অষ্টমীর দিন সকালে মা-বাবার সঙ্গে কালীঘাট যেতাম। মা কালীপুজো দিত, আর তারপর কালীবাড়ির কাছেই মামাবাড়ি (এক অর্থে মায়ের পিত্রালয়) দুপুরের আহার বাঁধা ছিল। বাড়িতে এ ক’দিন ইলিশ, চিংড়ি, মাংস, পোলাওয়ের রমরমা। দশমীতে তদুপরি পায়েস ও পিঠে। নাড়ু, মোয়া, সন্দেশ, রসগোল্লাও বাদ যেত না। যাকে বলে দীয়তাং ভুজ্যতাং। প্রতিবেশীরা আসত, নিকটস্থ আত্মীয়রাও।

এবার বলি বিসর্জনের কথা। দশমীর দুপুর থেকেই মহিলারা দুর্গা আর তাঁর সন্ততিদের, সিংহ, এমনকি মহিষাসুরকেও বিদায় জানাত মিষ্টিমুখ করিয়ে, সিঁদুর পরিয়ে। একে বলা হত ‘বরণ’। আসলে বিদায়দানকে মহিমান্বিত করার জন্যই এই অভিধা। বিবাহিতা মহিলারাই বিশেষভাবে এতে অংশ নিতেন। প্রতিমাকে বরণের পর তাঁরা পরস্পরের কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিতেন। কালীঘাটে সাড়ম্বরে সেদিন এই অনুষ্ঠানটি হত। দুপুর থেকে তাই মন্দিরটিতে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আজ-ও।
প্রতিমার চোখে জল! মা ফিরে যাবেন মাতৃগৃহ ছেড়ে সম্বৎসরের জন্য কৈলাশে, তাই তাঁর চোখে অশ্রু। আসলে এই অশ্রু কল্পনার, যে-কল্পনায় মধুসূদন লেখেন, মা মেনকার বয়ানে,– যেও না রজনী আজি লয়ে তারাদলে!/ গেলে তুমি, বিধুমুখী, এ-পরাণ যাবে!’ কিন্তু তবু রাত প্রভাত হয়, যেতে দিতে হয়। কেননা সর্জন যেমন সত্য, বি-সর্জন-ও ততটাই সত্য! তাই ‘ডম্বরু গুরু গুরু ওই শোনা যায়/ ভোলানাথ এলো বুঝি নিতে গিরিজায়’! এইবার ভাসানে যাবেন দেবী। ছোটবেলায় দেখতাম, ভক্তদের কাঁধে চড়েই প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হত। বর্ষীয়ান পুরুষরা ভার নিতেন। পরে ট্রাকযোগে বাহিত হতেন দেবী। এখন-ও তাই। আমাদের পাড়ার প্রতিমা বিসর্জিত হত নিকটেই রানীকুঠি দীঘিতে। ওটা হল ময়ূরভঞ্জের রানির প্রাসাদ-সংলগ্ন দীঘি। প্রায় শ’খানেক প্রতিমার বিসর্জন হয় সেখানে। কিছু দূরে লায়েলকাতেও অনুরূপ শ’খানেক প্রতিমা বিসর্জন হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু পারিবারিক পুজো।

কভারের ছবি: দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে পল্লব রাজা নরসিংহ বর্মণ (৬৩০-৭০ খ্রিস্টাব্দ) দ্বারা নির্মিত মহাবলীপুরমের আকর্ষণীয় গুহা মন্দিরগুলিতেও দেবী দুর্গাকে তার সিংহের পিঠে চড়ে যুদ্ধে দেখা যায়।

শারদোৎসব: বাংলাদেশে

দুর্গাপূজা, মূর্তিপূজা: দেশে দেশে

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »