Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ধর্মের রক্তচক্ষু এবং কোপার্নিকাসের তত্ত্ব

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ও বহুপঠিত কবিতা ‘রাস্তা কারও একার নয়’ আজ আবার মনে পড়ল। মনে পড়ল—

‘‘ধর্ম যখন বিজ্ঞানকে বলে ‘রাস্তা ছাড়ো!’ বিজ্ঞান কি রাস্তা ছেড়ে দেয়?
পোপের ভয়ে দেশান্তরী হয়েছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। সারাদিন
একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে পায়চারি করতেন গ্যালিলিও গ্যালিলেই;
তাঁকে পাহারা দেবার জন্য বসে থাকতো একজন ধর্মের পেয়াদা, যার
চোখের পাতা বাতাসেও নড়তো না।
বিজ্ঞান কি তখন থেমে ছিল? তীর্থের পাণ্ডাদের হই হই, তাদের লাল
চোখ কি পেরেছিল পৃথিবীকে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে, সূর্যকে
তার চারদিকে ওঠবোস করাতে?’’

ধর্মের লাল চোখ বিজ্ঞানকে কখনওই থামাতে পারেনি বা নিজের রাস্তা থেকে বিজ্ঞানকে সরিয়ে দিতে পারেনি ঠিক-ই, কিন্তু বহু মাশুল গুনতে হয়েছিল তার জন্যে। প্রায় কয়েক শতাব্দীকাল পিছিয়ে গিয়েছিল বিজ্ঞানের অগ্রগতি। শুরুতে উদ্ধৃত কবিতার অংশটিতে বিজ্ঞানের ওপর ধর্মের সেই অমানুষিক অত্যাচারের কিছু প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এসেছে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। এসেছে জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও গ্যালিলির কথা। যে গ্যালিলিও জন্মাবেন কোপার্নিকাসের জন্মের নব্বই বছর পরে। অত্যাচার ওখানেই থেমে থাকেনি। প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে ধর্মের ‘লাল চোখ’ কতটা সাংঘাতিক হতে পারে, তা আমরা আগেও পড়েছি। কোপার্নিকাস, কেপলার, গ্যালিলিও, জিওর্দানো ব্রুনো, সার্ভেটাস…। শতকের পর শতক ধরে ধর্মযাজকদের অত্যাচারে রক্তাক্ত হয়েছে বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানী। আজ পাঁচ-ই মার্চ, বিজ্ঞান ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। কী হয়েছিল সে দিন? ৫ মার্চ, নিকষ কালো অন্ধকারের অক্ষরে লেখা কালো দিন। কেন না সেদিন সত্যের টুঁটি টিপে ধরেছিল ধর্ম। ভয়ানক লকলকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিল সত্যানুসন্ধানের অক্ষরগুলি! সেসব কথায় যাওয়ার আগে, ইতিহাসের পথ ধরে একটু পিছিয়ে যেতে হবে আমাদের।

পোল্যান্ডে কোপার্নিকাসের বাড়ি।

সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা দেড়-দু’হাজার বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত ছিল। গ্রিক গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ টলেমির জন্ম হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৯০ সালে। গ্রিক পণ্ডিতদের ভ্রান্ত ধারণাকে বহন করে একই সুরে তিনিও বলেছিলেন— পৃথিবীই হল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রস্থল। অ্যারিস্টটলের বিভিন্ন মডেলকে বাতিল করে নতুন একটি প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন টলেমি। টলেমির প্রস্তাবিত সেই মডেলটি ভূকেন্দ্রিক ব্যবস্থা (জিওসেন্ট্রিক সিস্টেম) হিসেবে পরিচিত। টলেমির সেই মডেলের প্রস্তাবে মনে করা হত, মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে পৃথিবী এবং যাকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে সূর্য, চন্দ্র এবং অন্যান্য গ্রহগুলি।

তারপর ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস (Nicolaus Copernicus, ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৪৭৩-২৪ মে ১৫৪৩)। পোলান্ডের ছোট্ট একটি শহর টুরান, সেখানে কোপার্নিকাসের জন্ম। মাত্র দশ বছর বয়সে বাবাকে হারান কোপার্নিকাস। ধর্মযাজক কাকা সেসময় সংসারের হাল ধরলেন। বড় হয়ে পোলান্ডের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়া শুরু করলেন কোপার্নিকাস। ডাক্তারারির পাশাপাশি দর্শন, জ্যামিতি, ভূগোল এবং জ্যোতির্বিদ্যাও পড়েন তিনি। কেবল একটা বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, পড়েছেন ভিয়েনা, রোম, ফেরারা, বোলোনা প্রভৃতি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তবে সব বিষয়ের মধ্যে তিনি বেশি পছন্দ করতেন পড়তে জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়। ডাক্তারি পড়তে পড়তে চলে আসেন ইতালির বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতে। শুধু তাই নয়, ভাবলে আশ্চর্য লাগে আইনবিদ্যাতে তিনি ডক্টরেটও করেছিলেন। আইনবিদ্যার পরে আবার শেষ না-হওয়া ডাক্তারি পড়া সম্পূর্ণ করতে ‘পাদুয়া’-য় যান। কাকা সেইসময় চাইছিলেন ভাইপো এবার গির্জায় যোগ দিক। কোপার্নিকাস কাকাকে বোঝালেন যে, গির্জায় যোগ দেবেন বলেই তিনি ‘চিকিৎসাবিদ্যা’ পড়া শেষ করতে চান, যাতে করে তিনি মানুষের উপকারে আসতে পারেন। আইন এবং ডাক্তারির পাশাপাশি জ্যোতির্বিদ্যা চর্চাতে ছেদ পড়ল না।

মহামান্য পোপ থেকে সম্রাট, বুদ্ধিমান এবং সাধারণ মানুষ— সকলেই তখন এটাই জানতেন ও মানতেন যে পৃথিবী ঠায় নিজের জায়গায় স্থির হয়ে আছে। কোপার্নিকাসের ভাবনা তখন অন্য খাতে বইছে। তাই নিয়ে চলছে নিবিড় অধ্যয়ন আর হিসেব-নিকাশ। তাঁর গণনার ফলাফল আর ছবি এঁকে বার বার বোঝার পরে যা উঠে আসছে, তা তাঁর পূর্বসূরী টলেমির ভাবনার সঙ্গে একেবারেই মিলছিল না। একেবারেই আলাদা ছবি পাচ্ছিলেন কোপার্নিকাস। তিনি তখন ভাবছেন, কেন বিভিন্ন ঋতু একের পর এক আসছে যাচ্ছে, আবার ফিরে ফিরে আসছে! চাঁদ ও অপরাপর গ্রহের গতির হিসেব নির্ণয় করলেন তিনি। বারবার গণনায় একই ফলাফল পাচ্ছেন। শুধু আশ্চর্য-ই নয়, নিজের ফলাফল দেখে নিজেই চমকে উঠছেন কোপার্নিকাস। ভাবনায় পড়লেন, তাঁর পাওয়া এই ফলাফল সবাইকে জানালে তো তার ফল হবে মারাত্মক। ধর্ম, বিশ্বাস আর প্রয়োজনকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এতদিনকার জ্যোতির্বিদ্যার সম্পূর্ণ বিপরীত যে তাঁর পাওয়া ফলাফল। এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে যে বাইবেলের কথা মিথ্যা হয়ে যাবে! ভাবছেন, নিজে গির্জার সঙ্গে একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে সংযুক্ত থেকে কী করে বলবেন তাঁর পাওয়া বৈজ্ঞানিক সত্যের কথা?

কী ছিল কোপার্নিকাসের সেই ফলাফল? বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও গাণিতিক প্রমাণসহ কোপার্নিকাস বলেছিলেন, ‘সূর্য স্থির আর পৃথিবী নিজের অক্ষের মধ্যে ঘুরে ঘুরে সূর্যের চারদিকে ঘোরে। অন্যান্য গ্রহগুলিও সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে।’ সম্পূর্ণ নতুন একটি সৌর কাঠামোর কথা। কোপার্নিকাস আরও বললেন— পৃথিবী তার নিজের কক্ষপথে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় চব্বিশ ঘণ্টা।

টলেমির ‘ভূকেন্দ্রিক’ তথা ‘জিওসেন্ট্রিক সিস্টেম’-এর ভিত দারুণভাবে নড়ে উঠল কোপার্নিকাসের এই ‘সৌরকেন্দ্রিক’ জগতের কথায়। গাণিতিক ক্যালকুলেশন করে কোপার্নিকাস যা পেয়েছেন, তাতে টলেমির ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল সে কথাই প্রতিষ্ঠিত হল। পৃথিবীর অবস্থান এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে নয়। কোপার্নিকাসের এই র‌্যাডিকল ভাবনা জ্যোতির্বিদ্যা-র জগতে প্রথম বিপ্লব নিয়ে আসে। তাঁর গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলি আধুনিক গ্রহ নক্ষত্রদের অবস্থান, কক্ষপথ, আবর্তন এবং গতি সম্পর্কে পরবর্তী বিজ্ঞানীদের ধারণাকে অনেকখানি স্পষ্ট করে তোলে। আজ থেকে ৪৫০ বছরেরও বেশি আগে মারা গেছেন। তবু আজও কোপার্নিকাসকে আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার স্থপতি হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়।

ক্যালকুলেশন করে নিশ্চিত হয়েছেন, তাঁর ধারণায়।

রাতের পর রাত জেগে পর্যবেক্ষণ করেছেন আকাশের তারাদের সাম্রাজ্য! ক্যালকুলেশন করে নিশ্চিত হয়েছেন, তাঁর ধারণায়। তবে কোপার্নিকাস জানতেন যে, তাঁর ভাবনার কথা প্রকাশ্যে আসা মানেই, তাঁর কঠিন শাস্তি অনিবার্য। শাসকবর্গ আর ধর্মের পতাকার নিচে যাদের অবস্থান, তারা নিশ্চিত মেরে ফেলবে কোপার্নিকাসকে। ‘পৃথিবী ঘুরে চলেছে আর সূর্য স্থির’— বাইবেল-বিরোধী এরকম কথা মুখে আনলে চার্চ যে তাঁকে ছেড়ে দেবে না, পেতে হবে অনিবার্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি— এ কথা তিনি খুব ভাল করেই বুঝেছিলেন। পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে সবাই তো রোজই দেখতে পাচ্ছেন, আকাশে সূর্য আর চাঁদ এক দিক থেকে আর একদিকে সরে যাচ্ছে। কী করে তাঁদের মাথায় ঢোকাবেন ‘পৃথিবী ঘুরে চলেছে সূর্যের চারপাশে’, সেই পরম সত্যের কথা?

এই রকম জটিল এক পরিস্থিতির মধ্যে খুব গোপনে কোপার্নিকাস তাঁর তত্ত্বগুলি পাণ্ডুলিপি আকারে তৈরি করলেন। কিন্তু বই প্রকাশ করলেন না। তাঁর প্রস্তাবনা পাণ্ডুলিপি স্তরেই আরও তিরিশ বছর সযত্নে আগলে রাখলেন। তাঁর ধারণা সম্বন্ধে আরও নিশ্চিত হতে পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ ও ক্যালকুলেশনের কাজ চালিয়ে গেলেন তিনি এই সময়।

অবশেষে ১৫৪৩ সালে কোপার্নিকাসের বয়স তখন সত্তর বছর। অশক্ত শরীর। অধিকাংশ সময়ই রোগশয্যায় শায়িত থাকেন। অবশেষে বই হিসেবে প্রকাশ পেল কোপার্নিকাসের তৈরি করা সেই পাণ্ডুলিপি। তবে বই হিসেবে প্রকাশ হওয়ার কয়েক মাস আগেই মৃত্যু হয় কোপার্নিকাসের। যুগান্তকারী সেই বই, De Revolutionibus Orbium Coelestium Libri IV (1543)। ‘On the Revolutions of the Heavenly Spheres’ তিনি জীবিত অবস্থায় দেখে যেতে পারেননি। প্রকাশিত বইয়ের প্রথম কপিটি কোপার্নিকাসের কবরে মৃত্যুশয্যার পাশা রাখা হয়।

এখানে একটা কথা বলে রাখি। বইটি প্রকাশ করার সময় কোপার্নিকাস দারুণ একটি কৌশল অবলম্বন করেন। কী সেই কৌশল? তাঁর সেই বই তিনি উৎসর্গ করেছিলেন স্বয়ং মহামান্য তৃতীয় পোপ-কে। যাতে করে, বইটি চার্চের বিষ-নজরের বাইরে থাকতে পারে। তাছাড়া বইটির বিষয়বস্তু এবং উপস্থাপনাও ছিল যথেষ্ট কঠিন। গণিতের ভাল জ্ঞান না থাকলে সকলের পক্ষে তা বুঝতে পারা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। সব মিলিয়ে কোপার্নিকাসের ‘সূর্য কেন্দ্রিক সিস্টেম’ তদানীন্তন বিজ্ঞানী মহলে তেমনভাবে সাড়া ফেলল না আর স্বাভাবিকভাবেই তা পাদ্রীদেরও নজরে এল না।

কোপার্নিকাস তখন মৃত্যুর পরপারে। কোপার্নিকাসের যুগান্তকারী বইটি প্রথম প্রকাশের ৭৩ বছর পরে, ১৬১৬ সালের ৫ মার্চ বইটি নিষিদ্ধ করে ক্যাথলিক চার্চ। পাদ্রীদের হুকুমে কোপার্নিকাসের সমস্ত বই পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সমস্ত চিহ্ন মুছে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে তাঁর মৃত্যুর তিনশ বছর পরে প্রাগ-এ তাঁর বইয়ের মূল পাণ্ডুলিপিটির হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। আজ সেই অন্ধকার আর কলঙ্কিত সেই দিন। যেদিন ধর্মের অসুররা, বিজ্ঞানের রাস্তা আটকেই শুধু দাঁড়ায়নি, বিজ্ঞান আর সত্যের ওপর চরম আঘাত নিয়ে এসেছিল। রক্তাক্ত করেছিল সত্য আর বিজ্ঞানকে।

পুড়িয়ে দেওয়া বইয়ের পাতা।

বিয়ে করেননি কোপার্নিকাস। সারা জীবন তিনি বিজ্ঞান অনুসন্ধানে, চার্চ এবং সরকারের কাজে নিরলসভাবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। শুধু বিজ্ঞানীসত্তা-ই নয়, আর্ট বা শিল্পকলাতেও ছিল কোপার্নিকাসের গভীর অনুরাগ! চিত্রশিল্পের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় সংযোগ! চিত্রশিল্প চর্চার পাশাপাশি চর্চা করেছেন কবিতারও! অজস্র কবিতার অনুবাদ করেছেন কোপার্নিকাস।

মৃত্যুর পরে তাঁর সমাধির জায়গাটির খোঁজ পাওয়া যায়নি বহু শতাব্দী। হাল আমলে ২০০৫ সালে তাঁর সমাধির সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০১০ সালে তাঁকে আবার ওই স্থানে সমাধিস্থ করা হয়েছে। সেই সত্যনিষ্ঠ, সৃজনশীল, মহাপ্রাণ জ্যোতির্ময় পুরুষ, আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার স্থপতি নিকোলাস কোপার্নিকাসের প্রতি শ্রদ্ধা।

চিত্র: গুগল
4.5 11 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Anjana Ghosh
Anjana Ghosh
1 year ago

তথ্যের ভারে ভারাক্রান্ত নয়, অথচ বহু তথ্য সমৃদ্ধ সুন্দর এক উপস্থাপনা। ❤️❤️

সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar
সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar
1 year ago
Reply to  Anjana Ghosh

পড়ে জানালেন বলে অনেক ধন্যবাদ জানাই

Recent Posts

নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »
দীপক সাহা

বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়ে ইতিহাসকে লেন্সবন্দি করেছেন সাইদা খানম

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে উপমহাদেশের বিখ্যাত প্রায় সকল ব্যক্তিত্ব— ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবী, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়— কার ছবি তোলেননি! সেই সঙ্গে রানি এলিজাবেথ, মাদার টেরেসা, মার্শাল টিটো, অড্রে হেপবার্নের মতো বিখ্যাত মানুষদের ছবিও তুলেছেন। এই বিশাল তালিকায় আরও তিনটি নাম যুক্ত করে না দিলে অন্যায় হবে। চন্দ্রবিজয়ী নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিনস, মাইকেল কলিন্সের ছবিও তুলেছেন তিনি।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

মামলায় জয়ী হয়ে থোড় কুঁচি দিয়ে কালীর আরাধনা করেন জমিদার-গিন্নি

দেবী কালিকার খড়ের মেড় দেখে মজুমদার গিন্নি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, মামলার রায় যদি তাঁদের পক্ষে যায় তাহলে কলাগাছের থোড় কুঁচো দিয়ে হলেও জগজ্জননী মা মহাকালীর পুজো করা হবে, আর যদি মামলার রায় তাঁদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে ওই খড়ের মেড় দামোদরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। যদিও সেদিন দুপুরের মধ্যেই আদালত থেকে মজুমদার জমিদার পক্ষের জয়লাভের খবর পৌঁছেছিল থলিয়ার মজুমদার বাড়িতে। মজুমদার-গিন্নিও অক্ষরে অক্ষরে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। মামলায় জয়লাভের খবর পাওয়া মাত্রই জমিদার-গিন্নির নির্দেশে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দীপাবলি উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়।

Read More »