Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

রূপদর্শীর কলমের কেরামতি

রূপদর্শী হলেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক গৌরকিশোর ঘোষের অভিন্ন-হৃদয় রসিক সত্তা। এই রূপদর্শী-সৃষ্ট অনন্য চরিত্র হল ‘ব্রজদা’— ব্রজরাজ কারফরমা। রূপদর্শী নিজেই জানিয়েছেন, ‘শ্রীরামকৃষ্ণের যেমন শ্রীম ব্রজদার তেমন’ রূপদর্শী। রূপদর্শী তাঁর কলমের কেরামতিতে ফুটিয়ে তুলেছেন ব্রজরাজের জীবনকাহিনি ও জীবনদর্শন হাস্যরসের ফোয়ারা ও বুদ্ধির ঝলকানির সমন্বয় সাধন করে। কেমন সেই সমন্বয়-প্রচেষ্টা তারই দু-চারটি নমুনা তুলে ধরা হল বর্তমান নিবন্ধে। তবে প্রথমেই ব্রজদার পরিচয়টুকু দেওয়া প্রয়োজন যেমনটি জানিয়েছেন রূপদর্শী এবং বলা বাহুল্য সেই পরিচিতির মাধ্যমে রূপদর্শীর ‘ব্রজদার গুল্প-সমগ্র’ নামক সৃষ্টিকর্মের শুরুতেই মিলেছে তাঁর কলমের কারসাজি— চমকপ্রদ নিঃসন্দেহে।

ব্রজদা হলেন তিনি যার পরামর্শে রবীন্দ্রনাথ নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন, অন্নদাশঙ্কর রায়কে তিনিই বাংলা শিখিয়েছিলেন, সত্যেন বোসকে আইনস্টাইনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন… ইত্যাদি। সে ফিরিস্তি লম্বা না হলেও আক্কেল গুড়ুম করে দেওয়ার মত তো বটেই।

ব্রজদার ‘গুল্প’ কেমন? এবার সে কৌতূহল মেটানোর সামান্য প্রয়াস গ্রহণ করা যেতে পারে। ‘গুল্প’ কী? রূপদর্শী জানিয়েছেন, ব্রজদা বলেন— ‘গুল্প = গুল + গল্প অর্থাৎ ‘নির্ভেজাল সত্যি ঘটনা’।

তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘বাংলার শব্দভাণ্ডারে গুল্প ব্রজদার মোক্ষম দান। এবং মানেটাও তাঁরই।’

এবার রূপদর্শী কথিত ব্রজদার গুল্পগুলি থেকে কিছু নিদর্শন উপস্থাপন করা যেতে পারে। রূপদর্শীর বিবৃতি থেকে বেছে নেওয়া বিষয়ভিত্তিক কতিপয় বক্তব্য— অবশ্যই সেগুলো ব্রজদার।

বাঙালির দৌড়

ব্রজদার গুল্প শুরু হয়েছে বাঙালি নিয়ে। আবার শেষও করেছেন বাঙালির কথা বলেই। কী রকম?

ব্রজদা বলেন, বাঙালিরা ‘তেজি হিস্ট্রির বাচ্চা’ ছিল তাদের আমলে। ব্রিটিশরা দেশটা দখল করলেও বাঙালির তেজ দমন করতে পারেনি। ‘বৃটিশ তো ছার শক হূণ দল পাঠান মোগল’ কেউই তাদের সঙ্গে ‘এঁটে উঠতে’ পারেনি।

সেই ব্রজদাই গভীর দুঃখে শেষে বলেছেন, যে তিনি একদিন বাঙালির ছেলে ‘বিজয় সিংহকে লঙ্কা জয় করতে’ দেখেছেন সেই তাকেই বলতে হচ্ছে, বাঙালি সন্তান ‘চারদিক থেকে মার খেয়ে পালিয়ে বাড়ির দরজায় এসে নেড়িকুত্তার মত কেঁউ কেঁউ করছে’।

ব্রজরাজের এইপ্রকার আক্ষেপের কথা জানার পর মনে হচ্ছে, আজ তিনি থাকলে বলতেন— বঙ্গসন্তান আজ নিজ দেশ থেকে সবকিছু নিয়ে বিদেশে গিয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়ে নিজেদের আত্মসম্মান বিকিয়ে দিয়েও ভোগসর্বস্ব জীবন কাটিয়ে মজা লুটে চলেছে! স্বদেশের কথা ভুলেও ভাবার কোনও দায়বোধ তারা হারিয়ে বসে আছে! দুর্ভাগা বঙ্গজননী!

মেয়ে-চেনা

‘কনফার্মড ব্যাচেলর’ একজন মেয়েদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে শুরু করলে শুনতে পেলেন— আগে বিয়ে-থা করে তবে যেন তিনি এ বিষয়ে মতামত দেন। অন্য একজন বললেন, ‘বিয়ে করলেই যদি মেয়ে-চেনার সাবজেক্টে অনার্স পাওয়া যেত, তাহলে তো দুনিয়াটা বেহেস্ত হয়ে উঠত। মেয়েদের চেনা কি অতই সহজ!’ আর-একজন ফোড়ন কাটলেন, ওরা তো ‘বিচিত্ররূপিনী। ওদের ছদ্মবেশ উন্মোচন করা—’ পর্যন্ত বলতেই ব্রজদা বলে উঠলেন— ‘শিবেরও অসাধ্য, মানুষ তো কোন্ ছার।’

অতঃপর তিনি গোপন তথ্য ফাঁস করার মত বলে ফেললেন— সে ‘এক তুষারনারী’ যে তাকে ‘এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার খিড়কির দরজা দেখিয়ে দিয়েছিল’। তিনি সরস ভঙ্গিতে স্বীকার করে ফেললেন মেয়ে-চেনার কঠিন বাস্তবতা মেনে নিয়েও— ‘সে ভাই নারী অফ অল নারীজ’। তিনি জানালেন, যেবার তিনি ‘এভারেস্ট এক্সপিডিসনে’ যান সেবার ভাগ্যক্রমে তিনি সেই ‘তুষারনারীর’ দেখা পান। তার নাম দিয়েছিলেন তিনি আদর করে ‘পারু’ সে ‘পর্বতদুহিতা’ ছিল বলে। সেই কন্যা তাকে প্রথম দেখাতেই প্রশ্ন করেছিল: ‘পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ?’

তাই সেই মেয়ের ভালবাসা পেয়েও তার কাছে ফিরে যেতে তিনি পারেননি, এভারেস্ট ডিঙোবার পরেও।

পাণ্ডিত্য-লক্ষণ

ব্রজদা কেমন এক বাক্যে পাণ্ডিত্যের লক্ষণ নির্ধারণ করে দিলেন— ‘দুটো কথাকে দু’শ কথা করা, পাণ্ডিত্য তো তাকেই বলে…।’

তারপর তিনি নিজেই তার পাণ্ডিত্য জাহির করে ফেললেন। কত কথাই বলে চললেন। বলে ফেললেন প্রাচীন ভারতের মহা মহা সব আবিষ্কারের কথা। সেই সঙ্গে নিজের অসামান্য সব কাণ্ডেরও রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন।

একবার তাকে ‘সাঁওতাল পরগনায় টিউবওয়েল বসাতে গিয়ে পৌরাণিক যুগ পর্যন্ত পাইপ বসাতে হয়েছিল… সেই সময়’ তিনি ‘প্রাচীন ভারতীয় রকেটের একটা পার্টস’ পেয়েছিলেন। মেঘু (মেঘনাদ সাহা) দেখে বলেছিলেন, কয়েকজন ছাত্রকে তিনি গবেষণার কাজে লাগিয়ে দেবেন। কিন্তু হল না। ব্রজদার আক্ষেপ: ‘অকালে চলে গেল। নইলে দেখতিস এযুগেও আমরা বাঙ্গালীরাই রাশিয়ানদের আগে চন্দ্র সূর্যে পৌঁছে যেতুম।’

তিনি একবার কুয়ো খুঁড়তে খুঁড়তে উপনিষদের যুগ ছাড়াবেন এমন সময় কোদালের দুই কোপে দেখা মিলল— জল। একটু আগে বেতারের দেখা মেলার কথা বলছিলেন। সেকথা তুলতে তিনি বললেন— ‘তার না থাকাই তো বেতার থাকা। মুখ্যু কোথাকার’। তারপর দরজার পাল্লা বন্ধ হয়ে গেল। ‘ব্রজদা অদৃশ্য’ হয়ে গেলেন।

বাংলার বাঘ

একজন ব্রজদার কাছে হাতি মারার কৌশল শিখতে চাইলেন বাঘ মারা শেখার পর। তিনি তখন তাকে বললেন— কেবল পাহাড়ি বাঘ মেরেছ। বাংলার বাঘ তো দেখোনি। ‘একবার বাংলার বাঘকে ক্যালকাটা ইউনিভারসিটির ভাইস চ্যান্সেলর করে দেওয়া হয়েছিল, তার ঠ্যালায় অস্থির। বৃটিশ গভর্নমেন্টের বাপের নাম ভুলিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল। তারপর থেকে বৃটিশরা বাঘেদের আর কখনও ভাইস চ্যান্সেলর হবার চান্স দিয়েছে বলে শুনিনি। তাই বলছি বাঘকে অত তুচ্ছ ভেব না।’

বাঘ ও ধোপানী

বাঘের কথা বলতে গিয়ে ব্রজদা একবার এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার তাকে কীভাবে নাস্তানাবুদ করেছিল তার বর্ণনা দিয়ে বললেন— এই বাঘ তোদের ‘ব্রজদার ব্রজদা’। ‘বড় অদ্ভুত বাঘ। শুধু ধোপানী ধরে তাদের কেবল হাত দুখানি খেত।’

কেন? তার ব্যাখ্যা দিতে বললেন— ‘অম্বলের ব্যামো ছিল বোধ হয়’। ধোপানীরা সোডা দিয়ে কাপড় কাচে বলে তাদের হাতে সোডা বা ক্ষার লেগে থাকে সব সময়। তাই ধোপানী খেয়ে হয়তো সে ‘টেম্পরারি একটা রিলিফ পেত’। নয়তো এই বাঘেরা তো অকারণে কারওর ক্ষতি করে না। ভাল ভাল শিকারীদের বই পড়লে এসব জানা যায়।

পরিচালক ব্রজদার সাফল্য-রহস্য

ফিল্ম পরিচালক হিসেবে ব্রজদার কদর-রহস্য ব্যাখ্যা করলেন তিনি নিজেই। ‘কান, ভেনিস, বারলিনের’ দিকে তাকিয়ে তিনি ফিল্ম বানান। তার দৃষ্টি দেশ-কালের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। তিনি বলেন— ‘বেঁচে থাক আমার কান ফেসটিভ্যাল। কান টানলে মাথাও আসবে, এই বিশ্বাসটা আছে বলেই তো ছবি করতে নেমেছি।’ তিনি সদর্পে বলেন—

ফিল্মের ভাষা বুঝবার মত লোক এদেশে আছে ক’টা? ‘ওই তো যে-কটা কফি-হাউসে বসে, তারা ছাড়া আর সবাই তো কমারশিয়ালের খদ্দের!’

সত্যজিৎ রায় প্রসঙ্গ

ফিল্মের আলোচনাতে সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে কেন কিছু বলা হল না?— প্রশ্ন তুললেন একজন ব্রজদা-ভক্ত। অন্যজন উত্তরে জানালেন যে, তাঁর ফিল্ম সহজে বোঝা যায় বলে তাঁর প্রতি ‘ভক্তি চটে গিয়েছে’। তারপর বললেন, ‘হ্যাঁ ইমেজ উপলব্ধির জিনিস; ও ঠিক ব্যাখ্যা করে বোঝানো যায় না।’

ব্রজদা বলে উঠলেন, ‘কেন যাবে না, বুঝতে পারলেই বোঝানো যায়।’ তিনি বুঝিয়ে দিলেন তারপর একটিমাত্র বাক্যে— ‘এক কথায় ইমেজ হচ্ছে প্রকাণ্ড একটি অশ্বডিম্ব।’

তার এই কথায় ‘সমগ্র ঘরে ঝপ করে স্তব্ধতার একটি নিরেট পর্দা পড়ল।’

খবর-রিপোর্টার-স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

খবর সম্পর্কে মোক্ষম মন্তব্য করে ফেললেন ব্রজদা। তিনি বস্তুত জব্বর প্রশ্ন তুললেন— ‘খবর কি আদালতের জবানবন্দী যে, তার সত্য মিথ্যা যাচাই করতে হবে। হিজরের যেমন স্ত্রী-পুরুষ হয় না, খবরেরও তেমনি সত্য-মিথ্যা হয় না। তাই রিপোর্টাররা যা পাঠায় তাই খবর।’

রিপোর্টার কীভাবে খবর করবে? ব্রজদা তার অভ্যস্ত কায়দায় বলে দিলেন— যে ঘটনাটা দুদিন পরে ঘটবে তার রিপোর্ট লেখা হবে আজকে। অতএব কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কী রকম? রিপোর্ট আরম্ভ করতে হবে এভাবে: ‘বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত একটি নির্ভরযোগ্য গুজবে প্রকাশ—’। শুনতে শুনতে ভক্তদের চক্ষু চড়কগাছ। নির্ভরযোগ্য গুজব! এ আবার কেমন কথা! ব্রজদা তখন বুঝিয়ে দিলেন— ‘রিপোর্টের মধ্যে সব সময় ‘‘প্রকাশ’’, ‘‘আরও প্রকাশ’’, ‘‘নাকি’’ এসব যত পার ঢুকিয়ে’ দিতে হবে। অর্থাৎ ‘প্রকাশ’ না লিখে ভাল রিপোর্টাররা কিছু প্রকাশই করতে পারে না।

একথা বলার পর তিনি টিপ্পনী কাটলেন— ‘…তোদের ব্রজদা এমনি এমনিই এত বড় রিপোর্টার হয় নি।’

এরপর ব্রজদা তার বিদ্যে জাহির করতে স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সম্পর্কে জানালেন— রিপোর্টারেরই বর্ধিত বা রাজ সংস্করণ হল স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট। কেউ যখন কলকাতায় কংগ্রেস কভার করবে তখন সে স্টাফ রিপোর্টার। আবার একই কাজে সে মালদায় গেলে তখন তাকে বলা হবে স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট। সরস ভঙ্গিতে ব্রজদা বলে উঠলেন— ‘রিপোর্টার যদি আমড়া তো স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট হল গে ফজলি আম…’।

সোসাইটি ফটোগ্রাফার বার্তা

ব্রজদা তার এক ভক্তকে বললেন, সে বিয়ে করেনি যখন, তখন সে নিশ্চয়ই সোসাইটি ফটোগ্রাফার ছিল! তাদের এমন কাজ করতে হয় যে, তাদের মেয়েদের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মায়। কী রকম? ব্রজদা জানালেন— এই ফটোগ্রাফারদের ‘যেই অমুক তারকা ‘‘বিশ্রামের অবসরে প্রিয় বাঁদরকে কলা খাওয়াইতেছেন, পাশে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলী’’, কিংবা ‘…কোন বিলাসিনী নাইলন শাড়ীতে শরীরকে সরব করে ‘‘গৃহবধূর কর্তব্য করিতে রান্নাঘরে পুঁইশাক রন্ধনে ব্যস্ত’’ থাকেন, অমনি সেই মুহূর্তটিকে ‘‘ক্যামেরায়িত’’ করতে হামেশা সাটার টিপতে’ হয়।

ব্রজদা মন্তব্য ঝাড়েন— তখন ‘পরম রমণীয়রাও চরম হয়ে ওঠে’ তাদের কাছে। তিনি যোগ করেন যে, তারও নাকি ‘এমন চরম’ অবস্থা হয়েছিল।

বন্দে মাতরম্ মন্ত্রের শক্তি

বেঁচে থাকলে যে ছেলেরা পি ডি অ্যাক্টের আসামি হয়ে জেল খাটত তারা বন্দে মাতরম্ মন্ত্রের জোরে অমর শহিদ হয়ে গেছে। কত ছেলে লেখাপড়া ছেড়ে বন্দে মাতরম্ বলতে বলতে ‘ফাটকে’ গিয়ে ঢুকেছে। আবার যারা হয়তো ‘এমনিতে গোমুখ্যু হয়েই থাকত, কিন্তু স্রেফ এই মন্ত্রের জোরেই তাদের অনেকে দেশ স্বাধীন হবার পর এডুকেশন মিনিস্টার অব্দি হয়ে গেছে।’ ব্রজদা বলতে বলতে হাঁক ছাড়েন—

‘বন্দে মাতরমের কি সোজা এফেক্ট-রে!’

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
J.Ghosh
J.Ghosh
2 years ago

বড় ভাল লাগল নিবন্ধটি। লেখিকা মীরাতুন নাহারকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Siddhartha Majumdar
Siddhartha Majumdar
2 years ago

খুব ভালো লাগল পড়ে

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »