রাধামাধব মণ্ডলকে পাঠক চেনেন প্রাবন্ধিক হিসেবে। সাংবাদিকতার ব্যস্ত কাজ সেরে লিখে চলেন নানা বিষয়ের ওপর একটির পর একটি প্রবন্ধ। তার ফুরসতে লিখতে থাকেন ঘটমান বিষয় নিয়ে নানা ধরনের ছোটগল্প। ইতিপূর্বে আরও তিনটি গল্পের বই প্রকাশ করেছেন, এবার প্রকাশিত হয়েছে তাঁর চতুর্থ ছোটগল্পের বই, ‘বাঁকবদল’।
রাধামাধব খুবই স্পর্শকাতর বিষয়ের ওপর গল্প লেখেন। ঘটমান নানা অনাচারের দিকে আমরা চোখ বুজে থেকে দৃষ্টি ন্যস্ত করি খবরের কাগজের পাতায়। এ-বেলা যত খুন-ধর্ষণ, রক্তপাত বা নষ্টামির খবর পড়ি, ও-বেলায় বেমালুম ভুলে গিয়ে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অথচ সবার চোখের সামনে সংঘটিত হতে থাকে নানা ধরনের পাপ। ‘দীর্ঘশ্বাস’ এমনই একটি গল্প, যাতে লেখক সমকালীন সমাজের অন্ধকার দিকগুলো ব্যক্ত করেছেন স্পষ্টভাবে। মফস্বলের হোটেলগুলির নিরীহ ছদ্মবেশের অন্তরালে কী ঠিক ঘটে তার এক হুবহু চিত্র।
‘রাতের চারাবাগান’ একটু অন্য ধরনের গল্প, এক শ্মশানের পরিবেশে ভৌতিক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে গল্পের ছত্রে ছত্রে। নামগল্প ‘বাঁকবদল’-এ এক ত্রিভুজ প্রেম পরিবেশিত হয়েছে প্লেটোনিক প্রেমের দৃষ্টিকোণ থেকে। রুদ্রনীল ও কদমের মধ্যে হঠাৎ শিউলির আগমন যতটা জটিল করতে পারত, ততটা করতে পারেনি ভালবাসার মহত্বের কারণে। তবে গল্পে এক প্রকৃতিপ্রেম উঠে এসেছে।
‘পাপ’ গল্পে কয়েকজন সহোদর ভাইয়ের মধ্যে একজন অবিবাহিত ভাইয়ের অবৈধ প্রেম জটিল করে তুলেছে ভাইদের সম্পর্ক। নিঃসন্তান বধূটির মা হতে চাওয়ার মধ্যেই অঙ্কুরিত হয়েছে সমস্যার বীজ। ‘ময়নামতী’ গল্পের স্বামী-পরিত্যক্তা বধূটির সন্তান ও গোপালকে নিয়ে এক অন্যরকম সংসার। ‘দল বদলের নেপথ্যে’ গল্পে বর্তমান কালের রাজনীতিবিদদের আদলে আঁকা হয়েছে এক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা।
এরকম ১৬টি গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক মূর্ত করে তুলেছেন এ সময়কার সমাজের ঘুণ-ধরা চিত্রপট। জীবন কখনও সহজ পথে চলে না, কলকাতার বাইরে বাস করায় রাধামাধব স্পষ্ট করতে পেরেছেন মফস্বল জীবনের বাস্তব অবস্থা। বাইরে আলো, ভিতরে অন্ধকার— অধিকাংশ গল্পে এই চিত্রটাই উন্মোচন করেছে এক অন্য পৃথিবীকে।
আশা করব পরবর্তীকালে মফস্বলজীবনের জটিলতা নিয়ে রাধামাধব লিখে ফেলবেন একটি বড় আকারের উপন্যাস।