Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মফস্বলের অন্ধকার জীবন

রাধামাধব মণ্ডলকে পাঠক চেনেন প্রাবন্ধিক হিসেবে। সাংবাদিকতার ব্যস্ত কাজ সেরে লিখে চলেন নানা বিষয়ের ওপর একটির পর একটি প্রবন্ধ। তার ফুরসতে লিখতে থাকেন ঘটমান বিষয় নিয়ে নানা ধরনের ছোটগল্প। ইতিপূর্বে আরও তিনটি গল্পের বই প্রকাশ করেছেন, এবার প্রকাশিত হয়েছে তাঁর চতুর্থ ছোটগল্পের বই, ‘বাঁকবদল’।

রাধামাধব খুবই স্পর্শকাতর বিষয়ের ওপর গল্প লেখেন। ঘটমান নানা অনাচারের দিকে আমরা চোখ বুজে থেকে দৃষ্টি ন্যস্ত করি খবরের কাগজের পাতায়। এ-বেলা যত খুন-ধর্ষণ, রক্তপাত বা নষ্টামির খবর পড়ি, ও-বেলায় বেমালুম ভুলে গিয়ে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অথচ সবার চোখের সামনে সংঘটিত হতে থাকে নানা ধরনের পাপ। ‘দীর্ঘশ্বাস’ এমনই একটি গল্প, যাতে লেখক সমকালীন সমাজের অন্ধকার দিকগুলো ব্যক্ত করেছেন স্পষ্টভাবে। মফস্বলের হোটেলগুলির নিরীহ ছদ্মবেশের অন্তরালে কী ঠিক ঘটে তার এক হুবহু চিত্র।

‘রাতের চারাবাগান’ একটু অন্য ধরনের গল্প, এক শ্মশানের পরিবেশে ভৌতিক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে গল্পের ছত্রে ছত্রে। নামগল্প ‘বাঁকবদল’-এ এক ত্রিভুজ প্রেম পরিবেশিত হয়েছে প্লেটোনিক প্রেমের দৃষ্টিকোণ থেকে। রুদ্রনীল ও কদমের মধ্যে হঠাৎ শিউলির আগমন যতটা জটিল করতে পারত, ততটা করতে পারেনি ভালবাসার মহত্বের কারণে। তবে গল্পে এক প্রকৃতিপ্রেম উঠে এসেছে।

‘পাপ’ গল্পে কয়েকজন সহোদর ভাইয়ের মধ্যে একজন অবিবাহিত ভাইয়ের অবৈধ প্রেম জটিল করে তুলেছে ভাইদের সম্পর্ক। নিঃসন্তান বধূটির মা হতে চাওয়ার মধ্যেই অঙ্কুরিত হয়েছে সমস্যার বীজ। ‘ময়নামতী’ গল্পের স্বামী-পরিত্যক্তা বধূটির সন্তান ও গোপালকে নিয়ে এক অন্যরকম সংসার। ‘দল বদলের নেপথ্যে’ গল্পে বর্তমান কালের রাজনীতিবিদদের আদলে আঁকা হয়েছে এক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা।

এরকম ১৬টি গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক মূর্ত করে তুলেছেন এ সময়কার সমাজের ঘুণ-ধরা চিত্রপট। জীবন কখনও সহজ পথে চলে না, কলকাতার বাইরে বাস করায় রাধামাধব স্পষ্ট করতে পেরেছেন মফস্বল জীবনের বাস্তব অবস্থা। বাইরে আলো, ভিতরে অন্ধকার— অধিকাংশ গল্পে এই চিত্রটাই উন্মোচন করেছে এক অন্য পৃথিবীকে।

আশা করব পরবর্তীকালে মফস্বলজীবনের জটিলতা নিয়ে রাধামাধব লিখে ফেলবেন একটি বড় আকারের উপন্যাস।

বাঁকবদল ।। রাধামাধব মণ্ডল ।। খোয়াই পাবলিকেশন হাউস ।। ২৫০ টাকা
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »