Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ছোটগল্প: বিদেশি চুইংগাম

‘মামা, বাদাম লইবেন?’

শুকনো পাতার ঘূর্ণি নৃত্যটা থেমে গেল। মোরসালিন প্রথম কতকটা ভাবলেশহীন তাকিয়ে রইল, পরে ‘না’ শব্দটা উচ্চারণ করতে গিয়ে খেয়াল করল, ছেলেটা সচরাচর যেমন দেখা যায়, শিশুশ্রমিক, তাদের থেকেও ছোট। আর সে অর্থে ঠিক শ্রমিকও নয়, একজন খুদে স্বাধীন ব্যবসায়ী। তবে কোনও দোকান-পাট-গুদাম নেই তার, পুঁজি বলতে শুধু দুটো ১০ ইঞ্চি করে পা— লিকলিকে ও কর্দমাক্ত। আর একটি বাঁধের রাস্তা।

এদিকে মেয়েটি অনেকখানি সামনে চলে গিয়েছিল, আপনমনে বিচরণ করছিল পাড় ভেঙে ভেঙে, হঠাৎ দর্শকদের সাথে একটা দূরত্ব অনুভব করে সে, তাদের মনোযোগ অন্যত্র ধাবিত কিনা বুঝে নিতে পেছন ফিরে তাকায়। গাড়ি থেকে নেমে যখন সে কাঁচারাস্তার ওয়াকওয়ে ধরে পা ফেলতে শুরু করেছিল, অবিকল বিদেশি মেমদের মত লাগছিল মোরসালিনের! নদীর পাড়ে বইছিল জোর বাতাস, মাঝে মাঝেই ধুলো উড়ছিল, আর কাছেই পারাপারের নৌকাগুলো হেলে পড়ছিল বারবার! উন্মাতাল হাওয়ার এই উৎসবে যোগ দিতে পাতারাও বেরিয়ে পড়েছিল গাছেদের থেকে, ঢেকে দিচ্ছিল মোরসালিনদের চোখ-মুখ, কেড়ে নিচ্ছিল সামনের চলমান জগৎ-সংসারকে একে একে!

‘খোলা থাইকা তুইলা আনছি… গরম গরম… একটা খাইয়া দেহেন, মামা।’

এবার আরও ভাল করে লক্ষ্য করল মোরসালিন, দেখল, একটা প্লাস্টিকের গামলা গোটা পঞ্চাশেক ঠোঙা ধরে রেখেছে, আর ছেলেটি ধরে রেখেছে তার দেহাকৃতির সাথে সংঘর্ষরত গামলাটিকে, পেটের ঠিক ওপরে… সে তাকিয়ে রয়েছে অর্ধনিমীলিত চোখে… উপরের অপসৃয়মান সূর্যের আলো তার মুখে আলো-আঁধারের ঢেউ তুলে যাচ্ছিল…

‘আচ্ছা দে, চার ঠোঙ্গা।’ মোরসালিনরা বিকেলবেলাটা কাটাতে এসেছিল পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ সেতুর গোড়ায়, সঙ্গে একজন লোকাল কাজিন, একজন বন্ধু, আর সেই বন্ধুর বোন। সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিকে অনেক দিন ধরে আসতে বলছিল; নিজের এলাকার, তাদের বাড়ির এত কাছের এই মহাকীর্তি বন্ধুকে দেখাবেই। তো সেই বন্ধুর সাথে একটি কাট কাট তরুণী দেখে মোরসালিন প্রথমটা তো ‘অন্য কিছু’-ই ভেবে নিয়েছিল! পরে অবশ্য তাকে জানানো হয়েছিল, সম্পর্কটা চাচাতো বোনের। দূরের না কাছের— যদিও তা উহ্য থেকে গিয়েছিল। বোনটি নাকি সাথে আসার জন্য খুব বায়না ধরেছিল।

‘বাড়ি কি এখানেই?’ টাকাটা বের করতে করতে জিজ্ঞাসা করে মোরসালিন, কিন্তু বিশ টাকার নোটটা হাতেই ধরা থাকে, ওপাশের হাত কিছুতেই সাড়া দেয় না, এমনকি বাড়ি কোথায় সে উত্তরও নেই।

‘এক ঠোঙ্গা দশ টাকা কইরা, মামা।’ এক সময় নিরাসক্ত গলায় বলে পুঁচকে বণিক।

‘আগে কস্‌ নাই, ক্যান? এই বয়সেই ধান্দাবাজি শিইখা গেছস্‌?’ খ্যাঁকারি দিয়ে ওঠে লোকাল কাজিন। মোরসালিন ইশারায় তাকে থামার আহ্বান করে ফের পকেটে হাত দেয়, কিন্তু চল্লিশ টাকার খুচরো খুঁজে পায় না… পাঁচশো টাকার একটি নোট হাতে নিয়ে ভাংতি আছে কিনা জিজ্ঞাসা করতে যেয়েও থেমে যায়। অদূরেই গাড়ি পার্ক করা ছিল, ড্রাইভারকে ফোন করে মোরসালিন, জানে, ওর কাছে খুচরোর এক বড় মজুত রয়েছে, অনেকবার বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে।

‘কী বললি না, বাড়ি কোথায়?’

ছেলেটা এতক্ষণ মাথা নীচু করে পায়ের নীচের মাটি তার দুর্বল পা দিয়ে খুঁটছিল… আঙুলগুলো মাটিতে পুরো ঢেকে যাওয়ার আগে মোরসালিনের প্রশ্নে তার হুঁশ ফেরে। মুখটা উপরে তুলে তাকায়, তাকিয়েই থাকে একনাগাড়ে, অনেকটা সময় কোনও কথা বের হয় না মুখ থেকে, চোখজোড়া হারিয়ে যেতে থাকে সামনের অনন্ত আকাশপানে।

ব্রিজটা এখনও খুলে দেয়া হয়নি, শেষমুহূর্তের ধোয়া-মোছা-মহড়া চলছে। তাই ব্রিজে ওঠার রাস্তায় প্রবেশাধিকার নেই কারও… তবে তাতে হতোদ্যম হয় না দর্শনার্থীরা, বাইপাস রাস্তা ধরে ব্রিজের ডানে-বাঁয়ে নদীর ধার-ঘেঁষে বহুদূর বিস্তৃত যে রাস্তা তাতে তাদের ঢল নামে… সমুদ্রপারে সূর্যের থালা পানিতে নেমে যেতে দেখতে যেভাবে ভিড় জমায় দূর-দূরান্তের পর্যটক, এখানেও তেমনই মনোরম বিচ— বসন্তের রচনা হয়েছে ব্রিজকে ঘিরে।

‘ওই যে ধলা দালানডা দেখতাছেন, তার পিছে ওই যে নাম্বা খাজুরগাছটা, তার পিছে ওই যে… পিছে… ওই…।’ ভাংতির বিরতিতে এক সময় ছেলেটা নিজে থেকেই বাড়ি দেখায়। দিনের আলো ফুরোতে ফুরোতে যেন ওই খেজুর ঝোপের ওপর ধপ করে নিভে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও ঘরের ছবিটা দেখতে পায় না মোরসালিন।

‘বাবা কী করে তোর?’ বাচ্চাটির গায়ের গেঞ্চির স্পাইডারম্যানটা দেখতে দেখতে জিজ্ঞাসা করে।

‘ওই যে বিল্ডিংডার কথা কইলাম, ওইহানে খাতিনদারি করে, আগে খেতি করত… আমাগো বাড়িও ওইহানেও আছিল!’ বলেই সামনে তাকায়, একজন কেউ ডাকছে তাকে নীচে থেকে; প্রমত্তা নদীর তীরে শক্তিশালী বাঁধ গড়ে তোলা হয়েছে, ব্লকগুলি মাটির অনেক গভীরে কামড় বসিয়ে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে গড়িয়ে গেছে নীচের দিকে, যেখানে পানির স্রোত উছলে উছলে পড়ছে। শহর থেকে আসা অনেক তরুণ-তরুণী সেই কলকল ধ্বনিতে বুঁদ হতে তীরের ব্লকগুলিতে পা দুলিয়ে বসেছে, নদীর পাগল করা হাওয়া তাদের রেশমমসৃণ চুল আর মিহি সুতোয় বোনা নরম মেদহীন জামাকাপড়ে ঝাপ্টা দিয়ে যাচ্ছে, তাদের উচ্চ পারফিউমের মনমাতানো মহুয়া বাতাসে ভর করে এই এতদূরের নাকগুলিকেও হানা দিয়ে যাচ্ছে।

আওয়াজকে অনুসন্ধান করতে মোরসালিনের দিকে প্রশ্নাতুর চোখে তাকায় ছেলেটি। এক সময় সেখানে ফুটে ওঠা আশ্বাসের ওপর ভর রেখে ছুটতে শুরু করে… ব্লকের ঢালে গড়িয়ে যেতে যেতে সে পতঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকে। মোরসালিনের চোখ যতই খুদে বণিকটির পিছু ধাওয়া করতে থাকে, ততই যেন ব্রিজটি সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। ছেলেটা যত নীচু হতে থাকে, ব্রিজটা ততই উঁচু হতে থাকে তার দৃষ্টিসীমাকে অদ্ভুত সব কৌণিক উপহার দিয়ে।

মাস তিনেকের মধ্যেই উদ্বোধন হচ্ছে ব্রিজটা, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্রিজগুলোর একটি সে, তাই চারদিকে সাজ সাজ রব, শত শত মানুষ খেটে মরছে দিনরাত, এই এত বড় ব্রিজটার প্রতিটা লোহালক্কড় তন্নতন্ন করে ঠুকে দেখা হচ্ছে, যেন কোথাও না থাকে চুল পরিমাণ ফাঁক। স্বপ্নের ব্রিজের উদ্বোধনটাও স্বপ্নের মত করেই উপহার দিতে চায় তারা জাতিকে। উদ্বোধন যতই এগিয়ে আসছে ততই অস্থিরতা বাড়ছে মানুষগুলোর মধ্যে, ব্রিজ ও তার সংলগ্ন রাস্তার অনেকটা পর্যন্ত কাউকে সহ্য করছে না তারা, যা পাচ্ছে তাই ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে। যেমন, তখন মাত্র ২০০ গজ দূরে ছিল মোরসালিনরা। সিকিউরিটি পোশাক পরা লোকটা যদিও মোলায়েম করে ফেলেছিল গলার স্বর, তার চোখে-মুখে কৌতুক, আফসোস ও বিরক্তি একে একে ক্রীড়া করে যাচ্ছিল— আর মানুষ হইল না, এই সময়ে এত কাছাকাছি আসার কথা ভাবতে পারে কেউ, স্টুপিড পাব্লিক! মোরসালিন অবশ্য গাড়ি থেকে নেমে এসেছিল, সে বারবার বলার চেষ্টা করছিল সে এই এলাকারই ছেলে, এই মাটিতেই তার জন্ম। অফিসারটার সেসবে কানে নেয়ার ফুরসত ছিল না, বরং একটি উচ্চপদস্থ গাড়ির শব্দকে চিতার মত ছুটে আসতে দেখে সে প্রায় কুত্তা খেদাও করেছিল মোরসালিনদের, ‘আর এক সেকেন্ডও না, মামলা খাইতে না চাইলে…।’

ড্রাইভার খুচরো নিয়ে এসেছে অনেকক্ষণ, কিন্তু পার ধরে ধরে পতঙ্গের ছুটে চলা যেন শেষ হয় না, মনে হয় বেজায় ব্যবসা হচ্ছে। ব্লকের পরে যে নদী, তাকে একফালি কেকের মত দেখায়, তার ওপারেই গড়ে উঠেছে চরের মত দ্বীপ। ওইখানে আস্তে আস্তে সবুজ হয়ে উঠেছে, আরও দূরে চোখে মেললে এমন ফালি ফালি করে কাটা কেক ও তার পারেই মনোহর সবুজ দ্বীপ আরও অনেক চোখে পড়ে। মোরসালিনের কাজিন বেশ জানাশোনা লোক, তার সাথে কিছুটা সময় থাকলে জানা যায়, এ তল্লাটের হেন কোনও গুরুত্বপূর্ণ কেউ নেই যার সাথে তার কানেকশন নেই। সেই আশার বাণী শুনাল, ব্রিজ উদ্বোধন হওয়ার সাথে সাথে এই ওয়াকওয়েরও উদ্বোধন হয়ে যাবে, টেন্ডার হয়ে কাজও শুরু হয়ে গেছে, তখন আর এই এবড়োথেবড়ো ধুলো রাস্তার হ্যাপা নিতে হবে না, টেমস নদীর ওয়াকওয়েকেও হার মানাবে। গ্রাম আর গ্রাম থাকবে না তখন, পাতায়া বিচ থেকে বেশি লোক টানবে। চিকচিক করতে থাকে মোরসালিনসহ অন্য শ্রোতাদের চোখ। এমনকি হাতে ধরা আয়না সামনে রেখে লিপস্টিক বুলাতে থাকা বিদেশি মেমদের মত দেখতে তাদের মেয়ে সঙ্গীটিও চোখ তুলে তাকায়। মাটির রাস্তায় ধুলো, সেই ধুলোর বাতাসে তামাটে নোনা নেশাটে গন্ধ, পর্যটকদের নাসারন্ধ্র মাতাল করে দিতে থাকে।

শিশুবিক্রেতা ফিরে আসে, কিন্তু যেমনটা ভেবেছিল মোরসালিন, তেমন ঘটেনি… সেই গামলা, যেটা তার পেটের ওপর ধরে রেখেছিল সে, খুব কম ওজনই খোয়াতে পেরেছিল। রীতিমত ঘামছিল সে, শীতের এই পড়ন্ত বিকেলেও। মোরসালিন যখন পঞ্চাশ টাকার নোটটা দেয়ার জন্য হাত বাড়ায়, খুশিতে মুখের চামড়াটা অনেকটাই খুলে যায় না তার। সে কায়দা করে তার খুদে পকেটের পুরোটা দখল করা মানিব্যাগ বের করে, সেখান থেকে একটা দশ টাকার নোট কায়দা করে ওঠায় সে। তারপর নতুন টাকাটা অবশিষ্ট টাকাগুলোও গোনে কায়দা করে, সব শেষে, সেগুলোকে গুঁজে দেয় তার জিন্সের ফুল প্যান্টের পকেটে যেটি সুন্দর করে সেট হয়ে গিয়েছিল পেটের সাথে… তারপর হাঁটা দেয় সেই এবড়েথেবড়ো ব্লক রাস্তায়।

‘জানিস, এখানে দুবাইয়ের মত করে নদীর মাঝখানে দ্বীপ হবে, পানির নীচ দিয়ে টানেলের মত করে রাস্তা বানানো হবে।’ মোরসালিন লোকাল কাজিনের রূপকথা শুনছিল ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে, হঠাৎ বন্ধুটির দিকে তাকাতেই দেখতে পেল সে আবার চোখ বুজে ফেলেছে, আর তার সাথে আসা মেয়েটি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নিজের পোট্রেট নিতে।

‘এই শোন’… মোরসালিনের ডাকটা শুনে কয়েক গজ এগিয়ে যাওয়া শিশুবণিকটি পিছন ফিরে দেখতে পেল একটা নীলমত কী যেন পকেট থেকে বার করা হচ্ছে। বাসা থেকে বেরুনোর সময় চার প্যাকেট চুইংগাম পকেটে পুরে নিয়েছিল মোরসালিন। কিন্তু সাথে আসা বন্ধুর বোনটি তাকে অবাক করে চুইংগাম চিবুতে অস্বীকৃতি জানাল। সে এই বিকেলে এই অনিন্দ্যসুন্দর পদ্মাপারে ছবি তোলায় এত বিভোর ছিল যে, এমনকি চুইংগামের মৃদু ডিস্টার্বও অ্যালাউ করছিল না।

‘এইডা কী?’ ছেলেটি চিনতে পারে না, চুইংগাম যে এই থ্রি-ফোর-ফাইভ জি’র যুগে দেখেনি, তা নয়; কিন্তু মোরসালিনের কাছে থাকা চুইংগামগুলো ছিল স্পেশাল, বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল, এগুলো শুধু দামিই ছিল না, দেখতে অন্যরকম ছিল।

‘এটা একটা খাওয়ার জিনিস, চকলেটের মত, চাবাইতে থাক, কিন্তু গিলবি না।’

লোকগুলি যেমন, এই প্যাকেটটাও তেমন অচেনা ঠেকে ছেলেটির, হাবভাব কিছুই বুঝতে পারে না, হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকে। পরে খোসাটা খুলতে চেষ্টা করে, কিন্তু বিদেশি এই চুইংগামের প্যাকেজিং সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। মোরসালিন ওর হাতে থেকে প্যাকেটটি নিয়ে এক মোচড়ে খুলে ফেলে, পাঁচটা ছিল, প্রতিটাতে তাই থাকে।

দেখতে তার পিস্তলটার গুলির মত মনে হচ্ছিল। সে মুখে পুরতে যেয়েও পোরে না, মা বারবার বলে দিয়েছে, বিদেশি লোকজনের কাছ থেকে কোনও জিনিস না নিতে। সে জিনিসটা ফেলে দেয়ার কথাও ভাবে একবার। কিন্তু এ লোকগুলোর সামনে কাজটি করতে সাহস হয় না তার। সে মোরসালিনদের কোনও ধন্যবাদ না দিয়ে হাঁটা দেয় সেই দিকটিতে, যেখানে তার বাড়ি বলে জানিয়েছিল।

অনেকটা পথ এসে, অন্তত মোরসালিনদের চোখের আড়ালে তো বটেই, সে একবার পেছনে তাকিয়ে নেয়, তারপর পকেটের মধ্যে আঙুলগুলো নিয়ে বেশ কসরত করে— তার জিন্সের লম্বা পকেটের অনেক নীচে পড়ে গিয়েছিল প্যাকেটটা। হাতে আটকানোর পর একঝটকায় তুলে ফেলে পাশের খাদে ফেলে দিতে যেয়ে হঠাৎ থমকে যায়। নাহ্‌, রেখে দেবে সে, বন্ধুদের দেখাতে হবে জিনিসটা, সবাই কী হিংসে করবে তাকে! মা জানতেই পারবে না, সে তার জুতোর বাক্সটার মধ্যে লুকিয়ে রেখে দেবে জিনিসটা। বন্ধুরা অবশ্য শুধূ দূর থেকেই দেখতে পাবে, তাদের কখনও ধরতে দেবে না সে। সে আবার ঢুকিয়ে রাখে প্যাকেটটা তার পেটের সাথে ফিট করা জিন্সের পকেটে। তারপর মাথা নীচু করে ফের হাঁটতে শুরু করে।

সাঁঝ হয়ে এসেছে, দূরের সেতুর বাতিগুলো জ্বেলে দেয়া হয়েছে, এখন চলছে ট্রায়াল কাল, তাই সব কিছুই চলে একমাত্র জ্যাম ছাড়া। অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই যখন চালু করে দেয়া হবে, সে দু’পারের ব্যবধান কমিয়ে দেবে যোজন যোজন। পুরো সেতু জুড়ে নানা রংয়ের পসরা, একটা স্বপ্নপুরীর মত লাগছে তাকে এখন। সেই স্বপ্নপুরীর ঠিক প্রবেশমুখে শিশুবণিক আস্তে আস্তে মিলিয়ে যেতে থাকে… তার বাড়ির খাদে।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
3.5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
J.Ghosh
J.Ghosh
2 years ago

খুব ভাল গল্প। লেখককে অনেক অভিনন্দন।

মোহাম্মদ কাজী মামুন
মোহাম্মদ কাজী মামুন
2 years ago
Reply to  J.Ghosh

অনেক অনেক ধন্যবাদ, দাদা!

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »