Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বেদনাঘন দিনে লিজাকে

মস্কো নগরীর বন বনান্তর ভরে গেছে হিম কুয়াশায়
শুকনো পাতারা সব ঝরে যায় ক্রমাগত তুহিন মর্মরে
এ সব বেদনাঘন দিনে লিজা মনে হয় তুমি যে কোথায়
কোন সুদূরের সুইডেনে যেন নির্বাসনে নির্জন বন্দরে;
কোথায় ঈশ্বর আজ, ঘণ্টা বাজে ঝমঝম হিমেলি নির্জনে
আমার পাপীর মনে কেন শুধু পাকায় যে ময়ালকুণ্ডলী
আমার ঈশ্বর আমি পদতলে লুটিয়েছি, বিষের অঞ্জলি
তোমাকে নিজেকে দেব একদিন ঠিক জেনো, মনে রেখো মনে;

প্রতিটি মঙ্গলবার বুধ বৃহস্পতি শুক্র শনি রবি সোম
নখ দাঁত মুখ সব অস্ত্রের সম্ভারে সেজে ব্যর্থ এই রণে
বেশ তো নিমগ্ন আছি, কেন যে সুইডিশ তুমি স্তবগাথা মনে
এনে দাও শুধু শুধু, বিভ্রমে মস্কোকে আজ শুধু স্টকহোম
অবিরত মনে হয়, তুলোর ব্যান্ডেজ হাতে তুমি এলে নাকি
আহত শুয়েছি আজ, বুক পেট গলা মুখ রক্তে মাখামাখি।

*

স্মৃতির ইউলিয়া

স্বর্ণকেশী রাজকুমারী নীলাভ চাহনিতে
সম্মোহনে দিয়েছ মনে গোপন যন্ত্রণা
প্রখর বুকে উজ্জ্বলতা, তুহিন ঘন শীতে
শরীরে সেঁকে শরীর, তবু করেছ বঞ্চনা

চুলে কি তুমি লাগালে ভুলে সোনালি গাঢ় রোদ
অগ্নিস্রোতে দুজনে ভেসে সুদূর কোনো দ্বীপে
এলাচ বনে, এখন মনে বেদনা প্রতিশোধ
নিয়েছে, তেল ফুরোল বুঝি পুরোনো এ প্রদীপে

সন্ধে মরু রিক্ত ধূ ধূ, রাত্রি শুধু তার
গভীরে সরু স্রোতস্বিনী, পোশাক পরিচ্ছদ
ভাসাই তাতে রিক্ত হাতে, প্রচ্ছন্ন হ্রদ
সাঁতার কাটে কেবল যাতে হিংস্র জানোয়ার

গলার পাশে ঘনিয়ে আসে গিলোটিনের দাঁত
মধ্যরাতে দুঃস্বপ্ন জাগায় অসময়ে
বরফ তাপে পুড়েছে ঘর, শরীর কাঁপে ভয়ে
জ্যোৎস্না ঝরে সবার ঘরে, এখানে কালো রাত

ঘরের থেকে বেরোতে মানা, বন্দি আমি ঘরে
বোতলে কারো রক্ত গাঢ়, আমার মৃতা প্রিয়া
কবরে স্মৃতি, তাই তো রীতি, তবুও মনে পড়ে
মিথ্যে খুঁড়ে বেরোয় মৃত কবিতা ইউলিয়া।

*

কুয়াশায় লিয়েনাকে

হাইওয়ে এলে লিয়েনা তোমাকে খুব মনে পড়ে যায়
চকচকে ঝকঝকে পথ মস্কো মসৃণতা ভরা, লেনিন সরণি
বেয়ে বেয়ে গ্রীষ্মকালে কত পথ উজিয়েছি মস্কোর রাস্তায়
সেসব পুরোনো স্মৃতি, প্রাভদা সিনেমা হলে অন্ধকারে মণি
রিমঝিম ঝরে পড়ত জড়ানো হাতের ফাঁকে, অত শীতে ঘাম
ঝিরঝির বৃষ্টি হয়ে ঝরে যেত দুর্নিবার, মণিবন্ধে জ্যোতি
জলার মায়াবী আলো ঝিলমিলে সাংকেতিক, আস্তিনের হ্রদে
ভাসাতে মোহান্ধ তুমি কয়েকটি সোনার নৌকো, কোনোদিন যদি
গঙ্গা হয়ে পৌঁছে যায় ঝুলন্ত সেতুর নিচে, তাতে বুঝি নাম
তোমার প্রতীকচিহ্ন, সহজেই চিনে নেব আশ্চর্য ভারতে
হিমেল ভোলগার ছোঁয়া, আত্মবিস্মৃতির পথে যেতে যেতে ঘুরে
উপহার দেব শুধু একটি নাম শকুন্তলা, একান্ত অঞ্জলি
শুভেচ্ছালিপির মধ্যে, সারাটি আকাশভরা রক্তিম আবিরে
রক্তস্রোত বলে যাকে ভ্রম হয় অবিরত, সারা সেতু জুড়ে
এত ছিল ক্যাকটাস, কষ্ট হয় বড় কষ্ট ট্রামে বাসে ভিড়ে
স্মৃতিভ্রষ্ট ঘুরি ফিরি সারাদিন, কুয়াশায় রাতভর চলি।

*

তামারাকে সনেট

গোধূলি বিকেলে দেখা হয়েছিল তার সঙ্গে, গোধূলি বিকেলে
পাভলভস্কায়া স্ট্রিট তুহিন তুষারে মোড়া, রাস্তা দিয়ে ট্রাম
অলস শিথিল চলে, রমণীর ঝুরো চুলে ম্লান মায়া মেঘ
তারপর কথাবার্তা, অবান্তর কথাবার্তা ঢেকে রাখে কাম
মদের দোকান বন্ধ, যথারীতি নারী বলে মিশিয়ে আবেগ
চলো ঘরে যাই, আছে দুবোতল ড্রাই জিন, কেন যাবে বারে?
কিন্তু নারী ঘরে গিয়ে চকিতে বদলায় রূপ, নামে সে শিকারে
মস্কো নগরীর সীমা অতিক্রম অপরাধ, নিয়ে যাব জেলে

পিস্তল দেখাতে চায় জামার বোতাম খুলে, বোতামের ফাঁকে
কোথায় পিস্তল তার, উঁচোনো সঙিন হয়ে জোড়া ধ্রুবতারা
উরুতে মোমের জ্যোতি, উপরে আবদ্ধ তার রহস্যের খনি
এ যেন নরকে নামা, পাতালে ডোবাতে চায় লোলুপ আমাকে
উদাসী সঙ্গম শেষে কলরোলে হেসে ওঠে পিশাচী তামারা
উল্টোনো কলসির মত নিতম্বে বাজায় নারী মোজার্ট সিমফনি।

চিত্রণ: বিভাবসু
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
2 years ago

এই বর্ষিয়ান কবির প্রারম্ভ যৌবন কেটেছে মস্কোয়। সেই উজ্জ্বল উত্তেজনাময়তায় আজো যেন মগ্ন কবি। কি অসাধারণ সব চিত্রকল্পের সন্ধান পেলাম তাঁর এই কবিতাগুচ্ছে। কবি ও ভালভাষাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা

Last edited 2 years ago by শুভ্র মুখোপাধ্যায়

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »