Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

স্মৃতিতে সুজাতা

সুজাতা তোমার পায়ে
আগুনের গোলা ধরে উত্তাপে পুড়েছে আমার হাত
তুষারে গিয়েছি জুড়োতে সে জ্বালা, সেই হাত জমে শীতে
বাগান করার স্বপ্নে কেটেছে কত বিনিদ্র রাত
সুজাতা আমার ঘর আজ ভরা কাঁটালতা উদ্ভিদে

বলোনি মাটিতে কী রত্ন ছিল, বহুদিন ধরে খুঁড়ছি
পাতালে নামার গর্ত গভীর, হঠাৎ বেরোয় সিন্দুক
ভিতরে রয়েছে ছলনায় ক্রূর সাপিনীর প্রতিমূর্তি
ভালবাসা যদি বলো একে তুমি বিশ্বের সেরা মিথ্যুক

আমার চোখের মণি নয় প্রেম প্রতীকের নীল পদ্ম
অনেক সয়েছে ঘৃণা বিদ্যুৎ, আজ দিতে পারি উপড়ে
কলঙ্কী শিরা উপশিরাগুলো অভিমান মদে মত্ত
অনেক হয়েছে, আমি মরে গেলে জমা করে দিয়ো লুভরে

তুবড়ির খোলে আগুনের কত স্ফুলিঙ্গ কণা বিন্দু
নিভৃতে ছিল, কত মিলিয়ন মেগাওয়াটের শক্তি
দেহের প্রতিটি রক্তকণায় তোমার জন্য, কিন্তু
তুমি তা নিলে না, পরমাণু ফেটে শরীরে রক্তারক্তি

শতচ্ছিন্ন শরীর নিয়েও বেঁচে আজও কেন আছি
অগ্নিকুণ্ড সমুখে আমার, তাতে শুধু ঘৃতাহুতি
দিলেই শান্তি জ্বালা বেদনার, কেউ নেই কাছাকাছি
দূর থেকে শুধু অপমান ধুলো ছুড়ে দিয়ো এক মুঠি

গোধূলির এই অবেলায় আমি জীবনকে বহুবার
বলেছি তাসের ঘর ভেঙে গেছে, তোমার এ হরতন
রাজা বিকোবে না এই দুর্দিনে, সুজাতা তবু তোমার
পায়ে নতজানু হয়ে বসে আছে অবাধ্য এ জীবন।

ব্যারিকেড থেকে সুজাতাকে
না না যাচ্ছি না বলে ধূপজ্বালা ঘরে
বেশ তো ছিলাম, পরে
কী হল সে এক অদ্ভুত ইতিহাস
রাস্তায় কত বুলেট বারুদ, পড়ে গেল কত লাশ

আমার ভায়েরা নিহত সুজাতা, বোনগুলো ধর্ষিতা
তোমার টিভিতে পড়েনি প্রতিচ্ছবি
ভিডিও ক্যামেরা কোথায় যখন গাঁথে ওরা বঁড়শিটা
আমাদের বুকে, সিডিতে বাজেনি যুদ্ধের ভৈরবী

সুজাতা তোমার কোনো প্রশ্নের আজ কোনো উত্তর
দিতে পারব না, তরুণের জ্বলে চিতা
এখনও আমার দেওয়া হয়নি তো আবদুলকেও গোর
টমাস কফিনে, এসির আরামে তুমি জমে থাকো সীতা

ক্র্যাকারের বুম, মেশিনগানের একটানা কটকট
ধূপ নিভে গেছে ঝড়ে
সুজাতা আমার বড় দুর্দিন, নিদারুণ সংকট
বন্দুক থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে, বারুদ গন্ধ ঘরে

না না আজ কোনো অহিংসা নয়, গান্ধী বুদ্ধ যিশু
মাথায় থাকুন, বন্ধুরা পাতে বুলেটের মুখে বুক
অকালবোধনে চোখে যেন থাকে বহ্নির বন্দুক
টিভিতে দেখোনি ফুটপাথে শুয়ে নিষ্পাপ মৃত শিশু!

রাস্তার মোডে ব্যারিকেড, তার ওদিকে ধনের রাশি
পাউন্ড ডলার ইউরো টাকার স্তূপ
এদিকে আমরা অনেক বন্ধু দাঁড়িয়েছি পাশাপাশি
হাতের আড়ালে জ্বালাই নিভানো ধূপ

দু-পা ভেঙে গেছে, চলতে পারে না, বাঁহাতেও ফ্র্যাকচার
যোদ্ধার ডান হাতে রাইফেল ধরা কোনোমতে, তবু
সুজাতা তুমি তো প্রতিবাদে নও কেন যেন সোচ্চার
তুমি ক্রীতদাসী, স্টিরিও ভিডিও ফ্রিজই তোমার প্রভু

বেয়নেটগুলো ঝলসে উঠছে ভাড়া করা কালো হাতে
ব্যারিকেডে আরো লোক চাই, আরো অন্ন বস্ত্র জল
ঝলমলে সোনা অনেক পরেছ, অনেক উঠেছ জাতে
প্রতীকচিহ্ন আজ হোক শুধু ঝকঝকে পিস্তল

আকাশ ভরেছে ভস্মে ধোঁয়ায়, দেবতারা অভিমানে
কেঁদে অস্থির, ধরা পড়ে গেছে ভণ্ডামি জোচ্চুরি
পুরোহিত আর মৌলবিদের, তুমি আসবে না মানে!
এসো না সুজাতা গুলি না হলেও একরাশ ঘৃণা ছুড়ি

ব্যারিকেডে বসে প্রেমের কবিতা কী করে যে লিখি বলো
জ্যোৎস্নারা সব নিভে গেছে আজ, নিষ্প্রাণ বনবীথি
বুলেট শব্দে বারুদ ছন্দে কবিতার মতো জ্বলো
সিঁদুরে অনেক রাঙিয়েছ, আজ রক্তে রাঙাও সিঁথি।

*

ঘরের দ্বীপে

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে
জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে
চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে
যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ
রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে
শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ
তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা
অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা
যুবতী তার খোঁপায় আর রাখে না ফুলমালা
ওষ্ঠাধরে নখরে তার রক্তলিপি লেখা
পক্ষীরাজ ওড়ে না আর, কাটা গিয়েছে ডানা
ময়ূর একা বাজায় সুর আর্তনাদে কেকা
নারীকে মনে আলিঙ্গনে হয় না কাছে টানা
ঘরের দ্বীপে মলিন ক্ষীণ আশার দীপ জ্বালা।

5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
4 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
11 months ago

অনেক দিন পর সুজিত বসু্র দুটি কবিতা ভালভাষায় পেলাম। দীর্ঘ কবিতা “স্মৃতিতে সুজাতা” যেন দীর্ঘ পরিক্রমণ। এই ভাঙাচোরা সময়ে ‘সিঁদুরে অনেক রাঙিয়েছ, আজ রক্তে রাঙাও সিঁথি’ এমন পংক্তি অন্য মাত্রা এনে দেয়। “ঘরের দ্বীপে” চতুর্দশপদী।‌ অসাধারণ এক ছন্দের চলন পাঠককে কেমন দ্রুত পদচারণায় এগিয়ে নিয়ে যায় কোন এক নিঃসঙ্গতায়।

Dr Indrani Choudhury Singh
Dr Indrani Choudhury Singh
8 months ago

Khub sundor

Bipasha
Bipasha
8 months ago

Beautifully penned and carry thought provoking emotions that binds a reader to your poem. Kudos 👏👏👏

Amitava Bhattacharya
Amitava Bhattacharya
8 months ago

বেশ কিছুদিন পরে শ্রী সুজিত বসু র নতুন দুটি কবিতা “স্মৃতিতে সুজাতা ” এবং ” ঘরের দ্বীপে ” কবিতা গুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো আপনার ” ভালো ভাষা” ডিজিটাল পত্রিকা তে. আশা করব এরকম আরও ওনার কবিতা আপনাদের মাধ্যমে দেখতে পারবো. আপনাদের মাধ্যমে কবি শ্রী সুজিত বসু কে ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাই. নমস্কার. Amitava Bhattacharya. কলকাতা

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শতবর্ষে মহানায়ক উত্তমকুমার

‘মহা’ শব্দটি মহান আর বিশাল, এই দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন ‘মহাকাব্য’ বা ‘মহারাজ’। কাব্য আর রাজার চেয়ে তার মাত্রা ভিন্ন, মহিমা অনেক বেশি তাৎপর্যময়। উত্তম বাংলা চলচ্চিত্রের সেই তাৎপর্যময়তার একমাত্র উদাহরণ। যাঁকে শ্রদ্ধাভরে আমরা ‘কিংবদন্তি’-ও বলে থাকি। তাই সত্যজিৎ রায়ের মতো আরেক কিংবদন্তি তাঁকে নিয়ে চিত্রনাট্য লেখেন, ছবি বানান, আর সে ছবির ‘নায়ক’ হন উত্তমকুমার।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সুকান্ত ভট্টাচার্য: ভিসুভিয়স-ফুজিয়ামার সহোদর এক কবি

‘–ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে’, সুকান্ত লিখেছেন নিজের সম্পর্কে। বলেছেন, ‘আমি এক অঙ্কুরিত বীজ’। এই বীজ মহীরুহে পরিণত হতে পারল না, বাংলা সাহিত্যের পরম দুর্ভাগ্য এটা। কিন্তু তাঁর একুশ বছরের জীবনে তিনি আভাস দিয়ে গেছেন, তাঁর সম্ভাবনা কতদূর প্রসারিত হতে পারত। সুকান্ত মানে একজন কবিমাত্র নন, তার চেয়েও আরও অধিক কিছু।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও প্রসঙ্গত

প্রয়াণের আগে, সব হিসেব বাদ দিয়ে যদি তাঁর জীবনের শেষ পাঁচ বছরের কথা-ই ধরি, দেখব, কত প্রিয়জনের মৃত্যুশোক বহন করতে হয়েছে তাঁকে। যেহেতু তিনি ছিলেন মানুষের সান্নিধ্যপ্রিয়, তাই অন্যের চেয়ে ঢের ঢের বেশি মৃত্যুবেদনা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। এসব মৃত্যু তাঁকে বেদনার্ত করলেও নিজের মনোবলের জোরে সে-অরুন্তুদ বিষাদকে কাটিয়েও উঠেছেন। পাশাপাশি মৃত্যু নিয়ে তাঁর দর্শন গড়ে উঠতেও তা ভূমিকা রেখেছে। তাই তিনি বলতে পারেন, তিনি-ই বলতে পারেন, ‘দুদিন দিয়ে ঘেরা ঘরে/ তাইতে যদি এতই ধরে/ চিরদিনের আবাসখানা সেই কি শূন্যময়?’ কেন পারেন?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার: অন্য ও অনন্য

তাঁর জন্মদিনের চেয়েও মৃত্যুদিনটিকে অধিকভাবে স্মরণ করা হয়, এ এক আশ্চর্য ব্যাপার। তাছাড়া বাংলা চলচ্চিত্র-জগতে তো কম খ্যাতিমান ব্যক্তির আবির্ভাব হয়নি, সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল, ছবি বিশ্বাস-কানন দেবী-সুচিত্রা-সৌমিত্র, তবু তাঁর মতো, ঠিক তাঁর মতো স্মরণযোগ্য হয়ে রইলেন না কেউ। শ্রাবণের অনুষঙ্গে নয়, উত্তমকুমারের প্রয়াণদিবসটি চিহ্নিত চব্বিশে জুলাই তারিখটির বিধুরতায়। ১৯৮০-র এই দিনটিতে বাংলা চলচ্চিত্র-জগতের এই দিকপাল প্রতিভার জীবনাবসান ঘটে। আজ তাঁর মৃত্যুর পঁয়তাল্লিশ বছর পূর্তিতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে উত্তম সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্যের ডালি।

Read More »
শৌনক দত্ত

রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী

নাটকটির নাম প্রথমে রেখেছিলেন যক্ষপুরী, তারপর নন্দিনী এবং পরিশেষে রক্তকরবী নামে থিতু হয়। শিলং-এ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে যে নাটক লেখা শুরু হয়েছিল তার দশম খসড়া প্রকাশিত হয় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রায় দেড় বছর পর আশ্বিন ১৩৩১ বঙ্গাব্দে—১৯২৪ সালে। প্রকাশিত হবার পরেও, একাদশতম খসড়া প্রস্তুত করার কথা ভাবেন নাট্যকার। অনেকেই বলেছেন, এটি নাট্যকারের হৃদয়ে লালন করা কোনও স্বপ্ন। কেউ কেউ এই নাটকের মধ্যে শ্রেণিসংগ্রাম চেতনার ছায়া খুঁজেছেন। নানা প্রশ্ন, নানা যুক্তি নিয়ে নাটকটি রচনার পর থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত দারুণ আলোচিত ও জনপ্রিয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত নাটকটি নিয়ে বহু আলোচনা। শতবর্ষে এসে দাঁড়ানো সেই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নানামাত্রায় বিবেচনাযোগ্য একটি নাটক; বহুমাত্রিক এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।

Read More »
নুশান জান্নাত চৌধুরী

নুশান জান্নাত চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ

কিছুকাল ঘুমিয়ে, কিছুকাল লুকিয়ে,/ কিছু শহর, কিছু মানুষের ভিড়ে হারিয়ে/ আমি দেখি—// কোনও এক/ পথহারা দেবদূতের বিষণ্ণ ডানার পাশে/ আমি বুক পেতে দিয়েছি// চুলের ভেতর জন্ম নিয়েছে/ ঘাসফুল থোকা থোকা, বুকের মাঝখানে একটা প্রাচীন পেরেক,// ঝরাপাতার রাজ্যপাটে/ আমার বাম হাঁটুতে গেঁথে আছে—/ আগামী বছরের প্রথম সন্ধ্যা;

Read More »