Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সুজিত বসুর কবিতাগুচ্ছ

প্যারিসের ব্রিজিত

এখন প্রতীক্ষা এই, বড়ই বিধুর ছায়া প্যারিস স্টেশনে
মাত্র একটি দিন বড় মায়া দিয়ে ঢেকেছিলে তুমি মোহময়ী
ফরাসি বাদামি চুলে ঘন মোহাচ্ছন্ন করে ব্রিজিত তরুণী
সমস্ত ফ্রান্সের ছায়া শরীরে জড়ালে, যেন ইফেল টাওয়ারে
ক্লান্তির প্রতিমা মুখ ঝুলেছিল, ঝুলেছিল ঝুলন্ত উদ্যান
যেরকম ঝুলে খাকে এলোচুলে এলোচুলে, আমি ব্যাবিলনে
হঠাৎ এসেছি যেন, ক্ষণিকের আগন্তুক, এমন সময়ই
চলে যাব শোকাচ্ছন্ন সীন নদীতীর ছেড়ে, হীরে পান্না চুনি
তোমার মুকুটে থাকে, প্রাচীন যুবতী তুমি, কুয়াশা হাওয়ারে
বলে যাব নম্রলঘু, যেন তারা গির্জা জুড়ে নরম লজ্জায়
বিছোয় গভীর ছবি, ভ্যানগগ লুভরের চিত্রপট জুড়ে
ছড়িয়েছে যেরকম রঙিন মিহির জাল, আর লন্ডনের
টেমসের তীক্ষ্ণতা ছুরি বেঁধে না, বেঁধে না বুকে, প্যারিস মায়ায়
পাঠালে বাহিকা করে এ কাকে আশ্চর্যময়, সোনার মুকুটে
যদি বা ছড়াতে কাঁটা, তাহলে ঘনান্ধ বুকে এ রাত্রি সন্ধ্যায়
হত না বিষাদধ্বনি, যা নিয়ে আপ্লুত এই চলে যাওয়া দূরে।

*

আবার লন্ডনে আসা

ভোরের কুয়াশা সারা শরীরে, বিমান নামে হিথরো বন্দরে
বাতাসে হিমের ছোঁয়া, তাপমাত্রা সাত ডিগ্রি, সূর্য অন্তরালে
অনেক বছর পরে আবার লন্ডনে আসা, মন স্মৃতি খোঁড়ে
উত্তর সমুদ্র পাড়ি জাহাজে সেবার, মন বন্দি স্বপ্নজালে
সমাজতান্ত্রিক দেশে তখন তো ছাত্র, নেই পোশাকে ঝলক
ধনতন্ত্র চেনে শুধু ধনের জলুস, তাই প্রাপ্তি অবহেলা
ডোভারে প্রথম ভীরু পদক্ষেপে অভিমানে জলে ভরে চোখ
লন্ডনে পৌঁছেই দেখি ধনের গরিমা, দেখি প্রাচুর্যের মেলা
অনেক স্তিমিত তবু কিছুটা তো রয়ে গেছে মেকি অহংকার
নিভে গেছে রাজত্বের দীপশিখা, তবু বাজে অক্সফোর্ড স্ট্রিটে
ট্রাফালগার স্কোয়ারে বা হাইড পার্কে আজও ক্ষীণ জয়ের ঝংকার
যা কিছু উষ্ণতা ছিল অতীত গর্বের সব জমে গেছে শীতে
রাকস্যাক কাঁধে নিয়ে ঘোরাফেরা রাজপথে, সীমিত মুদ্রায়
কলা রুটি কোক দিয়ে প্রাতরাশ দুপুর ও রাতের আহার
সেবারে নিয়মমতো, উপভোগ অজানাই থেকে যেত প্রায়
পকেটে পাউন্ড দিত অতি লঘু চাপ, বুকে বিষাদ পাহাড়
এবারে আমার কাছে রানির হাসিতে মাখা অনেক কাগজ
শ্বেতাঙ্গিনী ওয়েট্রেস স্যার নামে সম্বোধনে জানায় সম্মান
ইসলিংটনে দেখি ধবল ঊরুর শোভা নারীদের রোজ
এখন স্টেশনে আর শুতে হয় না, হোটেলের বাথটবে স্নান
এখন লন্ডনে ঘোরে অনেক রঙের লোক, নগর বর্ণিল
অয়সটার কার্ড নিয়ে বাসে বা পাতালপথে চলাফেরা করি
উবের বা কালো ক্যাবে অনায়াসে যাতায়াত, জীবন স্বপ্নিল
কটাক্ষের ইশারাতে প্রতিদিন ডাক দেয় রূপসী নগরী
এসবের দাম আছে, শরীরে জীর্ণতা বাঁধে অবাঞ্ছিত বাসা
চুলেও রুপোলি ছাপ, যদিও আমাকে আর সম্রাজ্ঞীর ঘৃণা
করে না আদৌ বিদ্ধ, হয়তো পাউন্ডে কিনি তাঁর ভালবাসা
দুবার এলাম তবু কোনটা যে ভাল ছিল জানি না বুঝি না।

*

স্টকহোমে নিঃস্ব পথিক

রত্নাগারের তালা খুলে কেন যে দাও খুলে
স্টকহোমে কি আমিই শুধু নিঃস্ব পথিক আজ!
লোভীর চোখে স্বপ্ন আনে রত্নহিরের খোঁজ
কী কুড়োব, কীই বা নেব, কোথায় পাব আজ
এ সব ভেবে এই অবেলায় মিথ্যে মরি ঘুরে
ভিক্ষার পাল বাঁধা শুধু আমারই মাস্তুলে!
ওই যে অলেনস দোকানে এক সুইডিশ যুবতী
খাটো প্যান্টে দেখায় ঊরুর মাদক আন্দোলন
সেও কি খুঁজে চলছে না তার পরশপাথর রোজ
গোপন ব্যথা যন্ত্রণা তার বুকের শিখর চূড়ে
নেয়নি বাসা, কোন কুয়াশা থমকে জামার ভাঁজে
হৃদয়ে তার কি তির বেঁধা, তাই কি সে অস্থির
উথালপাথাল শব্দে কি তার রিক্ততা গোপন
হয় কখনো, বৃন্তে বুকের বিঁধল সোনার তির
ক্রোনার পাউন্ড আর ইউরোর হিসেব ও লাভ ক্ষতি
সব ধুইয়ে বৃষ্টি, মনে তবুও বিষাদ বাজে।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
1 year ago

বাঃ, চমৎকার। আবার একগুচ্ছ কবিতা পেলাম। দুটি দীর্ঘ কবিতা, কী ঝরঝরে চলন। প্রায় আধখানা ইউরোপ ঘুরে আসা গেল। কবিকে শুভেচ্ছা

Amitava Bhattacharya
Amitava Bhattacharya
1 year ago

অমিতাভ ভট্টাচার্য কলকাতা শ্রী সুজিত বসু র এই তিনটি নতুন কবিতা গুলো khub ভালো লাগলো. চমৎকার. আশা করবো ওনার আরও নতুন নতুন কবিতা আপনাদের ভালোবাসা তে প্রকাশিত হোক. ধন্যবাদ.

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »