প্যারিসের ব্রিজিত
এখন প্রতীক্ষা এই, বড়ই বিধুর ছায়া প্যারিস স্টেশনে
মাত্র একটি দিন বড় মায়া দিয়ে ঢেকেছিলে তুমি মোহময়ী
ফরাসি বাদামি চুলে ঘন মোহাচ্ছন্ন করে ব্রিজিত তরুণী
সমস্ত ফ্রান্সের ছায়া শরীরে জড়ালে, যেন ইফেল টাওয়ারে
ক্লান্তির প্রতিমা মুখ ঝুলেছিল, ঝুলেছিল ঝুলন্ত উদ্যান
যেরকম ঝুলে খাকে এলোচুলে এলোচুলে, আমি ব্যাবিলনে
হঠাৎ এসেছি যেন, ক্ষণিকের আগন্তুক, এমন সময়ই
চলে যাব শোকাচ্ছন্ন সীন নদীতীর ছেড়ে, হীরে পান্না চুনি
তোমার মুকুটে থাকে, প্রাচীন যুবতী তুমি, কুয়াশা হাওয়ারে
বলে যাব নম্রলঘু, যেন তারা গির্জা জুড়ে নরম লজ্জায়
বিছোয় গভীর ছবি, ভ্যানগগ লুভরের চিত্রপট জুড়ে
ছড়িয়েছে যেরকম রঙিন মিহির জাল, আর লন্ডনের
টেমসের তীক্ষ্ণতা ছুরি বেঁধে না, বেঁধে না বুকে, প্যারিস মায়ায়
পাঠালে বাহিকা করে এ কাকে আশ্চর্যময়, সোনার মুকুটে
যদি বা ছড়াতে কাঁটা, তাহলে ঘনান্ধ বুকে এ রাত্রি সন্ধ্যায়
হত না বিষাদধ্বনি, যা নিয়ে আপ্লুত এই চলে যাওয়া দূরে।
*
আবার লন্ডনে আসা
ভোরের কুয়াশা সারা শরীরে, বিমান নামে হিথরো বন্দরে
বাতাসে হিমের ছোঁয়া, তাপমাত্রা সাত ডিগ্রি, সূর্য অন্তরালে
অনেক বছর পরে আবার লন্ডনে আসা, মন স্মৃতি খোঁড়ে
উত্তর সমুদ্র পাড়ি জাহাজে সেবার, মন বন্দি স্বপ্নজালে
সমাজতান্ত্রিক দেশে তখন তো ছাত্র, নেই পোশাকে ঝলক
ধনতন্ত্র চেনে শুধু ধনের জলুস, তাই প্রাপ্তি অবহেলা
ডোভারে প্রথম ভীরু পদক্ষেপে অভিমানে জলে ভরে চোখ
লন্ডনে পৌঁছেই দেখি ধনের গরিমা, দেখি প্রাচুর্যের মেলা
অনেক স্তিমিত তবু কিছুটা তো রয়ে গেছে মেকি অহংকার
নিভে গেছে রাজত্বের দীপশিখা, তবু বাজে অক্সফোর্ড স্ট্রিটে
ট্রাফালগার স্কোয়ারে বা হাইড পার্কে আজও ক্ষীণ জয়ের ঝংকার
যা কিছু উষ্ণতা ছিল অতীত গর্বের সব জমে গেছে শীতে
রাকস্যাক কাঁধে নিয়ে ঘোরাফেরা রাজপথে, সীমিত মুদ্রায়
কলা রুটি কোক দিয়ে প্রাতরাশ দুপুর ও রাতের আহার
সেবারে নিয়মমতো, উপভোগ অজানাই থেকে যেত প্রায়
পকেটে পাউন্ড দিত অতি লঘু চাপ, বুকে বিষাদ পাহাড়
এবারে আমার কাছে রানির হাসিতে মাখা অনেক কাগজ
শ্বেতাঙ্গিনী ওয়েট্রেস স্যার নামে সম্বোধনে জানায় সম্মান
ইসলিংটনে দেখি ধবল ঊরুর শোভা নারীদের রোজ
এখন স্টেশনে আর শুতে হয় না, হোটেলের বাথটবে স্নান
এখন লন্ডনে ঘোরে অনেক রঙের লোক, নগর বর্ণিল
অয়সটার কার্ড নিয়ে বাসে বা পাতালপথে চলাফেরা করি
উবের বা কালো ক্যাবে অনায়াসে যাতায়াত, জীবন স্বপ্নিল
কটাক্ষের ইশারাতে প্রতিদিন ডাক দেয় রূপসী নগরী
এসবের দাম আছে, শরীরে জীর্ণতা বাঁধে অবাঞ্ছিত বাসা
চুলেও রুপোলি ছাপ, যদিও আমাকে আর সম্রাজ্ঞীর ঘৃণা
করে না আদৌ বিদ্ধ, হয়তো পাউন্ডে কিনি তাঁর ভালবাসা
দুবার এলাম তবু কোনটা যে ভাল ছিল জানি না বুঝি না।
*
স্টকহোমে নিঃস্ব পথিক
রত্নাগারের তালা খুলে কেন যে দাও খুলে
স্টকহোমে কি আমিই শুধু নিঃস্ব পথিক আজ!
লোভীর চোখে স্বপ্ন আনে রত্নহিরের খোঁজ
কী কুড়োব, কীই বা নেব, কোথায় পাব আজ
এ সব ভেবে এই অবেলায় মিথ্যে মরি ঘুরে
ভিক্ষার পাল বাঁধা শুধু আমারই মাস্তুলে!
ওই যে অলেনস দোকানে এক সুইডিশ যুবতী
খাটো প্যান্টে দেখায় ঊরুর মাদক আন্দোলন
সেও কি খুঁজে চলছে না তার পরশপাথর রোজ
গোপন ব্যথা যন্ত্রণা তার বুকের শিখর চূড়ে
নেয়নি বাসা, কোন কুয়াশা থমকে জামার ভাঁজে
হৃদয়ে তার কি তির বেঁধা, তাই কি সে অস্থির
উথালপাথাল শব্দে কি তার রিক্ততা গোপন
হয় কখনো, বৃন্তে বুকের বিঁধল সোনার তির
ক্রোনার পাউন্ড আর ইউরোর হিসেব ও লাভ ক্ষতি
সব ধুইয়ে বৃষ্টি, মনে তবুও বিষাদ বাজে।
বাঃ, চমৎকার। আবার একগুচ্ছ কবিতা পেলাম। দুটি দীর্ঘ কবিতা, কী ঝরঝরে চলন। প্রায় আধখানা ইউরোপ ঘুরে আসা গেল। কবিকে শুভেচ্ছা
অমিতাভ ভট্টাচার্য কলকাতা শ্রী সুজিত বসু র এই তিনটি নতুন কবিতা গুলো khub ভালো লাগলো. চমৎকার. আশা করবো ওনার আরও নতুন নতুন কবিতা আপনাদের ভালোবাসা তে প্রকাশিত হোক. ধন্যবাদ.