ভর-শক্তি আলোড়ন
শরীর একতারা, তারই সুরে বাঁধা অতীন্দ্রিয় মনও।
এ-জীবন হাজারদুয়ারি, তুমি আত্মার অভেদমন্ত্র শোনো।
মন থাকে শরীরেই, যেরকম শক্তি থাকে ভরে,
আর সে উন্মাদ বেগে যথা-ইচ্ছে চলাচল করে
দেহঘর ফেলে রেখে, যেমন নক্ষত্র থেকে আলো
শূন্য ভেঙে ছুটে যায়। আয়ু বলে, নিজেকেই জ্বালো
সত্তার ফর্মুলা দিয়ে, কারণ আমিই মহাকাল।
আমিই থিওরি অভ্ এভরিথিং সৃষ্টিকারী মায়ার আড়াল।
*
সম্বুদ্ধ-সংলাপ
—তুমি কি বুদ্ধের কাছে নতজানু হতে গিয়েছিলে
আজ ভোরবেলা?
—না। তিনি আমারই কাছে রাতের খেলায়
হাজির ছিলেন। ভোরে, তড়িঘড়ি উঠে
ফিরে গিয়েছেন প্যাগোডায়। আমি একলাই অস্ফুটে
বিড়বিড় করে-করে ঘুরি সারাদিন।
রাতে তিনি নিজে এসে হাঁক দেন, ‘মহীন! মহীন!’
—তাহলে তুমিই সেই বেয়াদপ কালপ্রিট, মহীন্দ্র বিশ্বাস?
—আমার অনেক নাম। গুম করে রাখি নিজেকেই বারোমাস।
কিন্তু তবু তিনি ঠিক গোয়েন্দা সেজেই
ঘুরে-ঘুরে আমার পেছনে
হানা দেন। এই শহরের জেতবনে
কিম্বা থাই রেস্টুরেন্টে, যেখানেই যাই,
বুদ্ধ এসে উপস্থিত। শেষে, আমি ফাঁক বুঝে সজোরে দৌড়াই
স্নিগ্ধ আস্তানার দিকে… সিঁড়ি টলোমলো
গভীর রাতের গেটে চাবি হাতড়াই।
মোবাইল-ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে
হঠাৎ বুদ্ধের আবির্ভাব: ‘আরে মহীন! এক্ষুনি ঘরে চলো…’
*
আত্মতত্ত্ব বিষয়ী সনেট
যে-কথা লেখার জন্য বহু বেলা হল গুজরান,
যে-কথাটা ঠোঁটে নিয়ে উড়ে গেল গগনেন্দ্র চিল,
আজ সেই কথা বলি, মনে মনে যৌবনের চাকা
গড়িয়ে চলেছে দূর… মহাশূন্যে সূক্ষ্ম কোনও কোণে
আমাদের হেরে-যাওয়া মাঠ থেকে যেখানে উড়ান
খুলেছে গভীর স্বপ্নে দেখা-দেওয়া তারার মিছিল
আর সেই পরিযাণ তাড়া ক’রে অন্ধকার পাখা
ঝাপটাতে-ঝাপটাতে একা চিল তার আকাশ হারায়,
আজ সেই কথা বলি, যে-কথার ভর-আলোড়নে
সমস্ত আসান সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, সব মিল
জড়জগতের মূল প্রশ্নটাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
আমি সে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জন্মবীজ থেকে ক্রমে ঋতং বৃহৎ
হয়ে-ওঠা আত্মতত্ত্ব বলব বলে হাঁটি শতপথ…
সে-কথা বলার জন্য সাজিয়েছি এই মেহফিল।
*
সামাজিক
নিজেকেই ক্রপ ক’রে ভাসিয়েছি ইথার-সাগরে।
সেখানেও কত ভিড়!— মুখে ও মুখোশে কাড়াকাড়ি।
আমি কি সাঁতরে পার হতে পারব আকাঙ্ক্ষার জোরে?
ডিজিটাল ছবিবিশ্বে সকলেই প্রসিদ্ধ আনাড়ি।
অত্যন্ত মূল্যবান কটি কবিতা। সাম্প্রতিক কালে এরকম লেখা কম পেয়েছি। দুর্লভ মুন্সিয়ানা শব্দের ব্যবহারে। জবরদস্ত ! কবিকে নমস্কার।