Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

কবিতাগুচ্ছ: এ-জীবন হাজারদুয়ারি

ভর-শক্তি আলোড়ন

শরীর একতারা, তারই সুরে বাঁধা অতীন্দ্রিয় মনও।
এ-জীবন হাজারদুয়ারি, তুমি আত্মার অভেদমন্ত্র শোনো।

মন থাকে শরীরেই, যেরকম শক্তি থাকে ভরে,
আর সে উন্মাদ বেগে যথা-ইচ্ছে চলাচল করে
দেহঘর ফেলে রেখে, যেমন নক্ষত্র থেকে আলো
শূন্য ভেঙে ছুটে যায়। আয়ু বলে, নিজেকেই জ্বালো
সত্তার ফর্মুলা দিয়ে, কারণ আমিই মহাকাল।
আমিই থিওরি অভ্ এভরিথিং সৃষ্টিকারী মায়ার আড়াল।

*

সম্বুদ্ধ-সংলাপ

—তুমি কি বুদ্ধের কাছে নতজানু হতে গিয়েছিলে
আজ ভোরবেলা?
—না। তিনি আমারই কাছে রাতের খেলায়
হাজির ছিলেন। ভোরে, তড়িঘড়ি উঠে
ফিরে গিয়েছেন প্যাগোডায়। আমি একলাই অস্ফুটে
বিড়বিড় করে-করে ঘুরি সারাদিন।
রাতে তিনি নিজে এসে হাঁক দেন, ‘মহীন! মহীন!’
—তাহলে তুমিই সেই বেয়াদপ কালপ্রিট, মহীন্দ্র বিশ্বাস?
—আমার অনেক নাম। গুম করে রাখি নিজেকেই বারোমাস।
কিন্তু তবু তিনি ঠিক গোয়েন্দা সেজেই
ঘুরে-ঘুরে আমার পেছনে
হানা দেন। এই শহরের জেতবনে
কিম্বা থাই রেস্টুরেন্টে, যেখানেই যাই,
বুদ্ধ এসে উপস্থিত। শেষে, আমি ফাঁক বুঝে সজোরে দৌড়াই
স্নিগ্ধ আস্তানার দিকে… সিঁড়ি টলোমলো
গভীর রাতের গেটে চাবি হাতড়াই।
মোবাইল-ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে
হঠাৎ বুদ্ধের আবির্ভাব: ‘আরে মহীন! এক্ষুনি ঘরে চলো…’

*

আত্মতত্ত্ব বিষয়ী সনেট

যে-কথা লেখার জন্য বহু বেলা হল গুজরান,
যে-কথাটা ঠোঁটে নিয়ে উড়ে গেল গগনেন্দ্র চিল,
আজ সেই কথা বলি, মনে মনে যৌবনের চাকা
গড়িয়ে চলেছে দূর… মহাশূন্যে সূক্ষ্ম কোনও কোণে
আমাদের হেরে-যাওয়া মাঠ থেকে যেখানে উড়ান
খুলেছে গভীর স্বপ্নে দেখা-দেওয়া তারার মিছিল
আর সেই পরিযাণ তাড়া ক’রে অন্ধকার পাখা
ঝাপটাতে-ঝাপটাতে একা চিল তার আকাশ হারায়,
আজ সেই কথা বলি, যে-কথার ভর-আলোড়নে
সমস্ত আসান সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, সব মিল
জড়জগতের মূল প্রশ্নটাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
আমি সে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জন্মবীজ থেকে ক্রমে ঋতং বৃহৎ
হয়ে-ওঠা আত্মতত্ত্ব বলব বলে হাঁটি শতপথ…
সে-কথা বলার জন্য সাজিয়েছি এই মেহফিল।

*

সামাজিক

নিজেকেই ক্রপ ক’রে ভাসিয়েছি ইথার-সাগরে।
সেখানেও কত ভিড়!— মুখে ও মুখোশে কাড়াকাড়ি।
আমি কি সাঁতরে পার হতে পারব আকাঙ্ক্ষার জোরে?
ডিজিটাল ছবিবিশ্বে সকলেই প্রসিদ্ধ আনাড়ি।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
4 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
গৌতম ভাদুড়ি
গৌতম ভাদুড়ি
1 year ago

অত্যন্ত মূল্যবান কটি কবিতা। সাম্প্রতিক কালে এরকম লেখা কম পেয়েছি। দুর্লভ মুন্সিয়ানা শব্দের ব্যবহারে। জবরদস্ত ! কবিকে নমস্কার।

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »