Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

শুভদীপ রায়চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ

১.

প্রতিটি দৃশ্য তার দর্শকের দিকে অপলক তাকিয়ে।

এ-কথা ভেবে ফের চাঁদ দেখি আমি।
খামারবাড়ির চাঁদ, খোলা মাঠের চাঁদ,
ফ্ল্যাটের বারান্দার জাফরিকাটা চাঁদ— এক হয় নাকি?

তুমি খুব হেসেছিলে এইটুকু শুনেই, তখনই
হ্যারিকেন ঘিরে থাকা অন্ধকার কেঁপে ওঠে
কেঁপে ওঠে তার শিখা,
কেঁপে ওঠেন চেপে বন্ধ কলঘরের দরজার ওপাশে
স্নানরতা বৃদ্ধা মা তোমার

“মেয়েকে উদ্ধার করো, হে বড়ঠাকুর”
সন্ধ্যা দেখানোর সময় বিড়বিড় করেন তিনি
যদিও তুমি এসব কিছুই জানো না
গালে ঠোনা মেরে, সোনা ডেকে
আদর রেখেছ তখন খুলে।

২.

কী অদ্ভুত দেখো, দেবী, তুমি হাঁ করলে আমার এই অনৃত বিশ্ব
দর্শন হয়, যেন সব পুরাণ কাব্য উল্টে দিয়ে, হেলায় মাড়িয়ে
ছুটে আসছে ঘোর-কৃষ্ণ লোকোমোটিভ
জিভে জেগে ওঠে সাপ-জন্মের স্মৃতি
পাপ নিয়ে আজকাল তেমন কিছুই ভাবি না
যা হওয়ার হবে, চিত্রগুপ্ত বুঝে নেবে চুকেবুকে গেলে
অতএব আরও হাজার জন্ম নিতে রাজি আছি আমি
যদি তোমার স্তন থেকে খসে পড়া জোনাকির আলোয়
কাটাতে পারি আস্ত আস্ত রাত…
যদি তুমি জাগাও বরাভয় মুদ্রায়, প্রসন্ন হাসি আঁকা ঠোঁটে
কাঙাল ও বাচাল হতে রাজি আছি আরও অনেকবার
যদি প্রেম দাও।

৩.

সন্তানবতী রাত ক্রমশ চাঁদ ও নক্ষত্রের জন্ম দেয়
আমি স্থবির দর্শক, দেখি এইসব আর একে একে
খুলে দিই সকল নিদ্রাকপাট
হুড়মুড় ঢুকে পড়ে হাসনুহানা,
                               নিরক্ষীয় বাতাস কাঁপায় ঢোঁড়াই খোলস…

কে নেবে আমাকে? কে ডাকবে ভাটার নদীতে কাদা খেলার জন্য?
শতকজোড়া এই নিঃসঙ্গতা আর তো সহ্য হয় না, বিবিজান
এসো আকাশগঙ্গার নিচে
জিনপরি পাঁজরে নিয়ে অপেক্ষায় আমি
এসো এই জাদুরাতে বাগানে আমার।

৪.

জিভ তো বার করেই রেখেছ, আর কী, দাও।
চাপিয়ে দাও বুকে আমার রক্তপদ, লালাভ চরণ
তোমার কী-ই বা আসে যায়
সংবিগ্ন ফুল ঠিক রেখে যাবে ভক্তদল
যাদের তুমি ভালইবাস অবরে-সবরে।

একটা অঞ্জলি কি আমারও পাওনা হয় না গো?
হলই না হয় ঘেঁটু, ভাঁটু কিংবা ধুতরো
ইগো-টিগো তো না হয় চুলোয় উঠেছে
সেই যেদিন শ্বাসে প্রশ্বাসে ঝড় ডেকে তুমি
সাত নাকি সত্তর নৌকা ডুবিয়ে হেসেছিলে খলখলে হাসি
সেই সেদিন থেকে ফ্রয়েড সায়েবের দাড়িও
ঢুকতে পায়নিকো এই তল্লাটে
তাই বলে এত হেলা? এতখানি এলেবেলে যাপন?

এত হেলাফেলার বস্তু আমি নই, বুঝলে তো
আমি শুভদীপ রায়চৌধুরী,
আমি রামপ্রসাদের সুরার পাত্র চুরি করে পালিয়ে এসেছি।

৫.

মানুষ দুরকমের হয়,
নদীর পাশে বসিয়ে দেখো
মানুষ দুরকমের হয়

কিছুজন উৎস ও মোহনার কথা বলে
বাকিকিছু প্রবাহ বিষয়ে উৎসাহী

৬.

এক-একটা দিন থাকে মন কাপ্তান হয়ে ঘোরে
কলার উঁচিয়ে শিস, ওলে ওলে গান মোড়ে মোড়ে
হাওয়া লেগেছে গো হাওয়া লেগেছে,
বুড়ি পিসিমা কান ঢালে লাজুক নববিবাহিতার
আমার তাতে কী আসে যায়? কিছুই না
আমি লক্কা পায়রা ওড়ানোর ছলে ছাদে যাব রোজ
কর্কশ শব্দ করে বুলেট ছোটাব বাড়ির নিচে
তোমার ওই স্সালা বুড়ো বাপ কদ্দিন আগলাবে?
হাজার বছর ধরে আমি ল্যাবিরিন্থে বারবার ঢুকি
দূরে কোথাও এই ধাঁধার গোলোকে
বসে আছে আততায়ী ষাঁড় যার নিশ্বাসে—
কুয়াশা হয়ে আসছে চারিপাশ জেনেও এগিয়ে যাই
কদ্দিন আগলাবে স্সালা ওই বুড়ো বাপ তোমার?
আমি ডায়েরি লিখি না, বইয়ের পাতায় শুকোই না পাইন পাতা
দার্জিলিংয়ে আমার চোদ্দপুরুষে কেউ কখনও যায়নি
কখনও তোমাকে আধভেজা, বাড়ি ফিরতে দেখে
“এমন দিনে তারে বলা যায়” গেয়ে তো উঠিনি
চিঠিতে আমার বানান ভুল হয়,
কী যেন নাম তোমার? ‘ণ’ নাকি ‘ন’ লেখো শেষটাতে?

৭.

উদাসীজন বসে চোখের ওপর
বিবাগীজন কাঁদে হৃদয় জুড়ে
পথিকজন ঝাঁপিয়ে পড়ে পায়
চালাকজন কল ও কাঠি নাড়ে

৮.

“যার যার যেখ্যানে বসার, সে সে সেখ্যানেই বসেছে তো?”
বুড়ো মাঝির প্রশ্নের ওপর সন্ধ্যা নামে যেই
উপবিষ্টজনের মুখে আততায়ী ঘনিয়ে আসে
কুয়াশা বন্যপ্রাণীর মত জলের সকাশে
নেমে আসে, পান করে, নদীর বর্তুল শরীর

মোহনাগভীর থেকে উঁকি দেয় ভিজে চাঁদ, মাঝি লণ্ঠন তুলে ধরে,
ওদিকে তামাকদেবতার থান, ওদিকে নিশান ওড়ে অরণ্যচূড়ে

চিত্রণ: চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Sabyasachi Chakraborty
Sabyasachi Chakraborty
1 year ago

অপূর্ব শব্দ চয়ন। খুব সুন্দর হয়েছে। শুভেচ্ছা।

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »