অপরিচিত
যত দূরে যাই আমি ততই হারাই।
কলকাকলির শহর, শান্ত শহর, পাহাড়, সমুদ্র, তোমাদের মুখ
কিছুই কি আমাকে মানায়…
আমি তো গভীরে যাই
আমি তো সামনে যাই
আমিও পেছনে যাই
আমি সাধারণেরে খুঁজি
অসাধারণেরে খুঁজি
আমি তোমারই মতো ভবঘুরেরে খুঁজি
আমি তোমাদের মতো সরলতারে খুঁজি
তৃপ্তি-অতৃপ্তিরে খুঁজি;
কিছুই কি আমাকে মানায়
আমি আমাকে তো খুঁজি নাই
যেমন করে মজুরের নখ থেকে কাদামাটি খসে যায় নদীগর্ভে
যেমন করে কিশোরীর মৃদু প্রেম চড়ুইয়ের সাথে উড়ে যায় বনের পাতায়
তেমন করে আমার নাগাল থেকে তোমাদের হাত খসে যায়
ক্লান্ত পা, ভারী হৃদয় নিয়ে আমি যাই
পাহাড়-উপত্যকা-মরু-বন দ্রুত ম্লান হয়ে যায়
তোমাদের সাথে দেখা প্রত্যন্ত অপরিচিত প্রান্তরে
কই, আমাকে তো পাই নাই
আমার সদয় মুখ ও পরিশ্রান্ত বুক জুড়ে জেগে ওঠে ঘরোয়া ঘাসের দল
এক প্রস্থ শস্যের খেতে,
এইটুকু ভেবে শুধু সান্ত্বনা পাই
*
বিবিধ বিভ্রান্তিতে
দূরে দাঁড়িয়ে দেখলাম তোমায়—
ভাবলাম তুমি পলিতকেশ বৃদ্ধ কোনও,
দেখলাম—
তোমার চোখের পাতায় বলিরেখা,
তোমার অঙ্গুরিপিঠে মলিন আলস্য,
ভাবলাম তুমি সহজেই ব্যবহারযোগ্য,
ভাবলাম তোমাকে পরিমাপ করেই দেখি—
নাম দেই কোনও
নাম দেই— দিন মাস বছর,
একবার ভাবলাম—
তোমাকে নাম দেই ইতিহাস;
বলি তুমিই ভবিষ্যৎ,
একবার ভাবলাম—
তোমাকে খোদাই করেই দেখি না;
এঁকে দেই ক্ষতচিহ্ন
একে-তাকে ডেকে বললাম
শুনছ, এই দ্যাখো আমার অপচয়
যুগের পর যুগ গেল কিন্তু…
তুমি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলে আমায়—
হঠাৎ বললে, ও কিছু না, …ও তো বিন্দু
আর আমি বুঝি ঋতু?
আমাকে যে পরিবর্তন দিলে,
ভেবেছিলে আমি অন্তহীন পর্বত—
তাই বুঝি ক্ষয় দিলে?
ভেবেছিলে আমি জীবাশ্ম কোনও—
আমাকে যে দিলে পরাজয়,
নাকি ভেবেছিলে আমি সভ্যতা কোনও—
তাই দিলে উত্থান, ও অধর্মের ভয়?
এইসব বিবিধ বিভ্রান্তিতে
আমি তোমার কাছে গচ্ছিত রাখি আমার তুচ্ছতা?
তুমি আমার কাছে গচ্ছিত রেখো—
আরেকটু দূর,
আর একটু আধটু বছর পার হওয়া