Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মণিশংকর বিশ্বাসের কবিতাগুচ্ছ

মনখারাপ

ব্যাকুল হাওয়া, ছোট ঘূর্ণি, শুকনো পাতার উড়ে আসাযাওয়া
তোমাকে পাওয়া যায়, বোঝা যায় না—

এটুকুই বুঝেছি

***

রুবি রায়

আমার কেন জানি মনে হয়
আর ডি বর্মণের গান থেকেই রায়বাবু মেয়ের নাম রেখেছিলেন রুবি
ও’ গানের মতোই ভার্চুয়াল রুবির রূপ— এমন এক আলগা-শ্রী
কিছুতেই ধরতে পারি না, কেন এত ভালো লাগে!
মেটাফোরিক্যালি, এ যেন এক মুঠো ফোটন হাতে নিয়ে
আলোর তরঙ্গ ধর্ম না কণা ধর্ম সেই নিয়ে বিচার-বিবেচনা…
আমি তাই অত সব না ভেবে—
যে দিন স্কুল (রাজচন্দ্রপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ভূগোলদিদি) থাকে
সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ জানালা খুলে অপেক্ষা করি

আমার ঘরে জানালা দিয়ে রায়বাবুদের মেয়ে এসে পড়ে

***

বাব্‌ল

কোনো জীবাণুনাশকের প্রায়োগিক ব্যবহারে যদি ৯৯.৯৯% জীবাণু মারা যায়—
তাহলে বলতেই হবে যে ০.০১% জীবাণু মারা যায় না
কিন্তু কীভাবে এই ০.০১% জীবাণু বেঁচে থাকে
প্রবল প্রতাপশালী এই কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ারের সামনে?
তাহলে কি আপাতদৃষ্টিতে মসৃণ সারফেসেও
কোনো সেফ বাংকার খুঁজে পায় এই জীবাণুরা!

তারপর, কখনও মনে হয়, আমিও হয়ত ওদেরই মতো

সন্ধেবেলা আমার ঘরেও আলো জ্বলছে আজ

***

পুনর্বাসন

এইসব কান্না সারা রাত জেগে বসে থাকা পাখির মতো

কী যে বোকা আমি
এখনো তোমাকে চাই

দুর্ঘটনায় মৃত দরিদ্র দম্পতির সন্তান
যেভাবে পুনর্বাসিত হয় সন্তানহীন আলালের ঘরে

***

মৃত্যু

গভীর নিদ্রার ভিতরেও যে ঘুম জেগে থাকে

***

শসা

কবিতায় ক্লোরোফিল, সালোকসংশ্লেষ ইত্যাদি বড় ক্লিশে লাগে। একথা জেনেও আমি যে এখানে এসব শব্দ লিখছি তার একটা কারণ হতে পারে, সালোকসংশ্লেষই এই কবিতার প্রধানতম উপজীব্য। যাইহোক, রাস্তায় শসা বিক্রেতাকে দেখি, সবুজ শসাগুলির উপর জল ছেটাচ্ছে! সবুজ শসার ত্বকে আছে ক্লোরোফিল। এই রঞ্জকপদার্থটি জল পেয়ে সূর্যালোক আর বাতাসের CO2-এর সাহায্য নিয়ে সালোকসংশ্লেষ ঘটাবে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ শিকড়হীন শসা শ্যামল ত্বকের পরে যত্ন করে গ্লুকোজ তৈরি করে আরও কিছুক্ষণ তাজা থাকবে।

আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমিও তো এরকমই, জল-ছেটানো শসার মতো বেঁচে আছি।

কিন্তু কার ক্ষুধা হয়ে? কার ক্ষুধামান্দ্য হয়ে?

***

ইহকাল

আমার দূরের বোন মারা গেছে কয়েকদিন আগে। আমি গতকালই জানলাম। বহুদিন ওর কোনো খোঁজখবর ছিল না। আত্মীয় স্বজনরাও কেউ জানত না ওর কথা। দারিদ্র্যকবলিত আমার অবিবাহিত বোন, দিন দশেক আগে চলে গেছে অনন্তকালের দূরত্বে। গতকাল রাতে বাড়ি ফিরে যখন ঘুমন্ত মেয়ের কপালে চুম্বন করছি, তখনই মনে পড়ল, আমার মামাও নিশ্চয়ই এরকম বোনের কপালে চুম্বন করত, ওর সুবাসে বাড়িয়ে নিত আয়ু, ইহকাল। ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল, ওদের বাড়িতে কত গেছি ছোটবেলায়, একসাথে খেলেছি, এমনকি দুপুরে মামিমা আমাদের একসাথে বিছানা করে দিয়েছে। বোনের চুলে নাক ডুবিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। সেই সুগন্ধের প্রেতাত্মা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে এখন বেশ কিছুদিন। আমার বুদ্ধিহীন রূপসী বোন ডাক দেবে জানালা দিয়ে, ঘুরঘুর করবে বৌদিদির সুখের পাশে, আরও, আরও বেশ কিছুদিন।

আগামী অনেক কোটি বছরেও আমাদের আর দেখা হবে না, বোন। তবে দুঃখ করিস না,

এখান থেকে চলে যাবার পর নিজের সঙ্গেও নিজের আর দেখা হয় না কোনোদিন!

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Pritha Chatterjee
Pritha Chatterjee
5 months ago

অপূর্ব প্রতিটি কবিতা।
পৃথা চট্টোপাধ্যায়।

ব্রতী মুখোপাধ্যায়
ব্রতী মুখোপাধ্যায়
5 months ago

রায়বাবুর মেয়ে থেকে আমার ওই বোন। বুকের ভেতর এত নিজের কথা। কী অনায়াস বলা। অণুগল্পের বীজ। খুব ভাল লাগে।

Recent Posts

কাজী তানভীর হোসেন

ধানমন্ডিতে পলাশী, ৫-ই আগস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কয়েকদিন ধরে যা ঘটেছিল, তা শুরু থেকেই গণআন্দোলনের চরিত্র হারিয়ে একটা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পরিণত হয়েছিল। আজ আমরা কার্যক্রম দেখেই চিনে যাই ঘটনাটি কারা ঘটাচ্ছে। আগুন আর অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি করার স্বভাব রয়েছে বিএনপি-জামাত ও রোহিঙ্গাদের। তারা যুক্তিবুদ্ধির তোয়াক্কা করে না।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য: কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

আমরা বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিলাম, যাঁকে খুব সঙ্গত কারণেই ‘পশ্চিমবঙ্গের রূপকার’ বলা হয়। পেয়েছি প্রফুল্লচন্দ্র সেন ও অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো স্বার্থত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী। এবং জ্যোতি বসুর মতো সম্ভ্রান্ত, বিজ্ঞ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখর কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ। কিন্তু তাঁদের সকলের চেয়ে অধিক ছিলেন বুদ্ধদেব। কেননা তাঁর মতো সংস্কৃতিমনা, দেশবিদেশের শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র নাটক সম্পর্কে সর্বদা অবহিত, এককথায় এক আধুনিক বিশ্বনাগরিক মানুষ পাইনি। এখানেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনন্যতা।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে/ জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে/ চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে/ যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ/ রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে/ শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ/ তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা/ অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মার ব্রতকথা

বিশ্বকর্মা পুজোতেও কেউ কেউ বিশ্বকর্মার ব্রত পালন করে থাকেন। এমনিতে বিশ্বকর্মা যেহেতু স্থাপত্য ও কারিগরির দেবতা, তাই কলকারখানাতেই এই দেবতার পুজো হয়ে থাকে। সেখানে ব্রতকথার স্থান নেই। আবার কোন অলৌকিক কারণে এবং কবে থেকে যে এদিন ঘুড়িখেলার চল হয়েছে জানা নেই। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শহর ও গ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ও নানা আকৃতির ঘুড়িতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার কখনও বাংলাদেশে পা রাখেননি!

ভাবতে অবাক লাগে, ‘৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ উত্তমকুমারকে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। টালিগঞ্জের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছিলেন সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে। অন্যদিকে ববিতা, অলিভিয়া ও আরও কেউ কেউ টলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদার ও পরে গৌতম ঘোষ ছবি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশে এসে, কিন্তু উত্তমকুমারকে আহ্বান করার অবকাশ হয়নি এখানকার ছবি-করিয়েদের।

Read More »
নন্দিনী কর চন্দ

স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্দরমহলে: কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি

বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এমন কয়েকজন মহিলা কবির কথা আলোচনা করব, যাঁরা তাঁদের কাব্যপ্রতিভার দ্যুতিতে বাংলা কাব্যের ধারাকে উজ্জ্বল ও বেগবান করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণকামিনী দাসী, মোক্ষদায়িনী দেবী, প্রসন্নময়ী দেবী, লজ্জাবতী বসু, জগন্মোহিনী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, হিরণ্ময়ী দেবী, অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, সুরবালা ঘোষ প্রমুখ।

Read More »