মনখারাপ
ব্যাকুল হাওয়া, ছোট ঘূর্ণি, শুকনো পাতার উড়ে আসাযাওয়া
তোমাকে পাওয়া যায়, বোঝা যায় না—
এটুকুই বুঝেছি
***
রুবি রায়
আমার কেন জানি মনে হয়
আর ডি বর্মণের গান থেকেই রায়বাবু মেয়ের নাম রেখেছিলেন রুবি
ও’ গানের মতোই ভার্চুয়াল রুবির রূপ— এমন এক আলগা-শ্রী
কিছুতেই ধরতে পারি না, কেন এত ভালো লাগে!
মেটাফোরিক্যালি, এ যেন এক মুঠো ফোটন হাতে নিয়ে
আলোর তরঙ্গ ধর্ম না কণা ধর্ম সেই নিয়ে বিচার-বিবেচনা…
আমি তাই অত সব না ভেবে—
যে দিন স্কুল (রাজচন্দ্রপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ভূগোলদিদি) থাকে
সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ জানালা খুলে অপেক্ষা করি
আমার ঘরে জানালা দিয়ে রায়বাবুদের মেয়ে এসে পড়ে
***
বাব্ল
কোনো জীবাণুনাশকের প্রায়োগিক ব্যবহারে যদি ৯৯.৯৯% জীবাণু মারা যায়—
তাহলে বলতেই হবে যে ০.০১% জীবাণু মারা যায় না
কিন্তু কীভাবে এই ০.০১% জীবাণু বেঁচে থাকে
প্রবল প্রতাপশালী এই কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ারের সামনে?
তাহলে কি আপাতদৃষ্টিতে মসৃণ সারফেসেও
কোনো সেফ বাংকার খুঁজে পায় এই জীবাণুরা!
তারপর, কখনও মনে হয়, আমিও হয়ত ওদেরই মতো
সন্ধেবেলা আমার ঘরেও আলো জ্বলছে আজ
***
পুনর্বাসন
এইসব কান্না সারা রাত জেগে বসে থাকা পাখির মতো
কী যে বোকা আমি
এখনো তোমাকে চাই
দুর্ঘটনায় মৃত দরিদ্র দম্পতির সন্তান
যেভাবে পুনর্বাসিত হয় সন্তানহীন আলালের ঘরে
***
মৃত্যু
গভীর নিদ্রার ভিতরেও যে ঘুম জেগে থাকে
***
শসা
কবিতায় ক্লোরোফিল, সালোকসংশ্লেষ ইত্যাদি বড় ক্লিশে লাগে। একথা জেনেও আমি যে এখানে এসব শব্দ লিখছি তার একটা কারণ হতে পারে, সালোকসংশ্লেষই এই কবিতার প্রধানতম উপজীব্য। যাইহোক, রাস্তায় শসা বিক্রেতাকে দেখি, সবুজ শসাগুলির উপর জল ছেটাচ্ছে! সবুজ শসার ত্বকে আছে ক্লোরোফিল। এই রঞ্জকপদার্থটি জল পেয়ে সূর্যালোক আর বাতাসের CO2-এর সাহায্য নিয়ে সালোকসংশ্লেষ ঘটাবে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ শিকড়হীন শসা শ্যামল ত্বকের পরে যত্ন করে গ্লুকোজ তৈরি করে আরও কিছুক্ষণ তাজা থাকবে।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমিও তো এরকমই, জল-ছেটানো শসার মতো বেঁচে আছি।
কিন্তু কার ক্ষুধা হয়ে? কার ক্ষুধামান্দ্য হয়ে?
***
ইহকাল
আমার দূরের বোন মারা গেছে কয়েকদিন আগে। আমি গতকালই জানলাম। বহুদিন ওর কোনো খোঁজখবর ছিল না। আত্মীয় স্বজনরাও কেউ জানত না ওর কথা। দারিদ্র্যকবলিত আমার অবিবাহিত বোন, দিন দশেক আগে চলে গেছে অনন্তকালের দূরত্বে। গতকাল রাতে বাড়ি ফিরে যখন ঘুমন্ত মেয়ের কপালে চুম্বন করছি, তখনই মনে পড়ল, আমার মামাও নিশ্চয়ই এরকম বোনের কপালে চুম্বন করত, ওর সুবাসে বাড়িয়ে নিত আয়ু, ইহকাল। ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল, ওদের বাড়িতে কত গেছি ছোটবেলায়, একসাথে খেলেছি, এমনকি দুপুরে মামিমা আমাদের একসাথে বিছানা করে দিয়েছে। বোনের চুলে নাক ডুবিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। সেই সুগন্ধের প্রেতাত্মা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে এখন বেশ কিছুদিন। আমার বুদ্ধিহীন রূপসী বোন ডাক দেবে জানালা দিয়ে, ঘুরঘুর করবে বৌদিদির সুখের পাশে, আরও, আরও বেশ কিছুদিন।
আগামী অনেক কোটি বছরেও আমাদের আর দেখা হবে না, বোন। তবে দুঃখ করিস না,
এখান থেকে চলে যাবার পর নিজের সঙ্গেও নিজের আর দেখা হয় না কোনোদিন!
অপূর্ব প্রতিটি কবিতা।
পৃথা চট্টোপাধ্যায়।
রায়বাবুর মেয়ে থেকে আমার ওই বোন। বুকের ভেতর এত নিজের কথা। কী অনায়াস বলা। অণুগল্পের বীজ। খুব ভাল লাগে।