Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

হাসিরাশি দেবীর কবিতা ও ছড়া

হা সি রা শি  দে বী

বৈশাখ বিদায়

বিদায় বৈশাখ
শুভ— নব বরষের বিদ্যুজ্জ্বল-নয়ন-নির্ব্বাক
তুলিয়া ইঙ্গিত করি অনাগত সময়ের পানে
ছুটে চল প্রলয়াভিযানে
অশ্বখুর পথ-ধূলি গগনের গায়ে—
সদর্পে মিলায়ে,—
বৈজয়ন্তী তুলি রথ-পরে;
আঁকিয়া অধরে
দুর্ব্বাসার ক্রোধ-রক্ত ক্রুর পরিহাস,
বক্ষে লয়ে উন্মত্তের আকুল উচ্ছ্বাস,
সাঙ্গ করি তাণ্ডবের নটরাজ-লীলা
সম্বরিলা
মুক্তকেশ পাশ,—
তপঃক্ষীণ কটীতটে বাঁধিলা অসংযত বাস।
দিগন্তের সীমা হ’তে ঐ স’রে যায়
তোমার গৈরিক উত্তরীয়; ভেসে ওঠে ধূসর ছায়ায়
শান্ত,— ম্লান বিষাদ গম্ভীর
ক্লান্ত প্রকৃতির মুখ; উতল— আখর
বাতাস হইল শান্ত,— ভীরু-কম্প্রমান,—
নবোঢ়া কিশোরী সমা;
ভগ্নশাথে তবু কাঁপে বিহগীর নষ্ট নীড়খান—,
তবু কাঁদে পক্ষীমাতা শাবকে ঢালিয়া
ভগ্ন পক্ষপুটে; ফিরিছে মাগিয়া

গৃহ,— গৃহহারা চির পথি-বেশে!
বঞ্চিতের দীর্ঘশ্বাস তবু ধীরে নভোতলে মেশে।
তব পদ স্পর্শ করি ধূম্রজালাচ্ছন্ন অন্ধকার,—
নূতনের তোরণ-দুয়ার।
তবু জানি আছে,—
তারই পাছে
আলোকের উৎসব প্রভাত,
জ্যোৎস্নাময়ী রাত,—
আছে হাসি, ফুল, পাখী, আছে সুর গান,—
আছে নব প্রাণ!
তুমি শুধু এসেছিলে হে নব উদাসী,—
বাজাইয়া মন্ত্রপূত বাঁশী
সৃষ্টিরে তেয়াগি’ পুন করিবারে নূতনে সৃজন,
এনেছিলে নব আকিঞ্চন।
আজি লহ গুটায়ে অঞ্চল,—
হে চির চঞ্চল।
একে একে সাঙ্গ করি খেলা,—
আজি তব যাইবার বেলা,—
লহ মোর শ্রদ্ধা নমস্কার!—
ঝঞ্ঝাক্ষত পরাণের কম্প্রহারে শেষ উপহার,
বিদায় নিশীথে
তুলে দিনু কণ্ঠে তব শোক—
শান্ত চিতে।।

[রায় বাহাদুর জলধর সেন সম্পাদিত ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার বৈশাখ ১৩৪১ (এপ্রিল ১৯৩৮) সংখ্যা থেকে।]

***

দুঃখের রাতি এলো

দুঃখের রাতি এলো বক্ষের আঙ্গিনায়
বন্ধু হে, ঐ পদধ্বনি তার,—
অন্তর মন্দিরে ঐ বুঝি শোনা যায়—
চঞ্চল মঞ্জির ঝঙ্কার;
জীর্ণ দুয়ার ঘর, বন্ধ এ বাতায়ন,
শঙ্কায় কেঁরে ওঠে আজি শুধু ক্ষণে ক্ষণ
রুদ্ধ আঁধার ভরা অতীতের ক্রন্দন
মুক্তি মাগিয়া ফেরে বার বার,
কোন উন্মনা আছে ছেদি বাধা বন্ধন
বাহিরিতে চাহে খুলি এ দুয়ার!

বাহির আকাশ আজ ঘন মেঘ মন্থর
মদির স্বপন নাহি অঙ্কে,—
চকিত চপলা চলে ছুটিয়া নিরন্তর
ভ্রূকুটি কুটিলা নানারঙ্গে!
দীর্ঘ দিবস মাস, দীর্ঘ নিশীথ দিন,
উত্সবানন্দিত ছন্দিত হৃদিবীণ,
আজি অবসাদ ভরা, সুরহারা গীতহীন
মিশে যেতে চায় ওরি সঙ্গে—
চির যবনিকাতলে,— পথে, পথে হয় লীন
যেথা শত লীলা নানারঙ্গে!

বন্ধুহে ঐ মহাযাত্রার সঙ্গীত
ঝঙ্কৃত হয়ে ওঠে বক্ষে,
দিগন্তে জাগে তার অজানিত ইঙ্গিত,
ভেসে ওঠে মোহময় চক্ষে।
রক্তিম শিখা ঐ রচে নব লিপিকা,
জ্বলে ওঠে শক্তির অর্চ্চনা-দীপিকা,
দুঃখের রাত্রির সাথে চিরযাত্রী
মুক্তি আসিবে কারাকক্ষে
আনন্দ হাসি গান, অবসাদে হ’লো ম্লান,
দুঃখ-সুখ বাঁধা প’লো সখ্যে।

[বঙ্কিমচন্দ্র সেন সম্পাদিত ‘দেশ’ পত্রিকার ২৫শে কার্তিক ১৩৪৫ (নভেম্বর ১৯৩৯) সংখ্যা থেকে।]

***

ধূসর ধুলায় ঢাকা রবে…

বন্ধু আমার! দূর স্বপনের স্বর্ণশিখর দেশে,
উদয়-ঊষার প্রথম আলোক যদি না দেখিতে পাও,
অনন্ত অন্তরে
রক্ত রবির রাগ লিপি যদি হারায় নিরুদ্দেশে,
তারেই আবার বারে বারে কেন ফিরে ফিরে পেতে চাও?

কবে চলে গেছে কার কোন্ রথ!
কঙ্কর ভরা ধূলিময় পথ
চক্র চিহ্নে ক্ষত বিক্ষত— জীর্ণ বুকের মাঝে
শীর্ণ বাহু বন্ধনে যদি বিদায়ের ব্যথা কাঁদে,—
গুঞ্জন-হীন কুঞ্জে তাহ’লে এসো না প্রাতে কি সাঁঝে
পূর্ণ ক’রো না জীবন তোমার আশাহীন অবসাদে॥

সম্মুখে তব বিস্তৃত ঐ অদূর ভবিষ্যৎ—
দিগন্তে তার আলিপনা আঁকে আলো ছায়া মিশাইয়া,—
—হাসি আর ক্রন্দনে,—
সুর হ’তে শেষে মিশে মিশে গেছে সেই দূর বন্ধুর পথ
অন্তর আর বাহির মিশেছে যা কিছু গোপন নিয়া—
মুক্তি ও বন্ধনে।

যেটুকু লজ্জা, যেটুকু বা ভয়,
তারি এতটুকু ক্ষীণ সংশয়
এ পথে চলিতে ফেলে চলে যেও আবর্জনার মাঝে,
যেমন সকলে যায়—
বহু পদরেখা অঙ্কিত পথ আবার প্রাতে কি সাঁঝে
ধূসর ধুলায় ঢাকা রবে পুনরায়॥

[রায় বাহাদুর জলধর সেন সম্পাদিত ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার পৌষ ১৩৪৯ (ডিসেম্বর ১৯৪২) সংখ্যা থেকে।]

***

যে গেছে সে চলে যাক্

অস্ফুট নক্ষত্রালোকে তোমার লিখিয়া যাওয়া নাম,—
আজিকে প্রথম হেরিলাম।

ফাল্গুনের ফুলবনে বসন্তের শেষ বেলা মোর,—
পাণ্ডুর চাঁদেরে চাহি নিঃশব্দে ফেলিছে আঁখি লোর
আলো ও আঁধারে ঢাকা নিঃসঙ্গ স্বপন বুকে রাখি,—
তন্দ্রাহীন দীর্ঘ রাতি জাগি
বিগত বন্ধুরে স্মরি,
শুষ্ক শীর্ণ পল্লবে মর্ম্মরি;
সহসা শিহরি উঠা আমার আকাশ,
ফেলে দীর্ঘশ্বাস।

খণ্ডহীন মোর অবসর।
আমার মুহূর্ত্তগুলি অলস মন্থর
পদে একে একে চলে ধীরে ধীরে—
অন্তহীন তমসার তীরে

চির বিস্মৃতির দূর দেশে,
আপনারে ডুবাতে নিঃশেষে।
নবাগত বন্ধু মোর! তবু আজ তোমারে জানাই,
যদি তুমি এসে দেখো, আমার দুয়ার খোলা, শুধু আমি নাই,
নিভে গেছে আমার দীপালী,
বুকের সৌরভ ঢালি
হেমন্ত-রাত্রির শেষে প্রভাতের নভ-নীলিমায়,
যদি শোনো তোমার বীণায়
বাজিছে আমারই নাম নয়নের জলে,
তারে মোর শূন্য গৃহতলে
হে বন্ধু, ফেলিয়া যেও। ব’লে যেও, আর যারা সব
এপথে আসিছে ঐ আশা করি— আনন্দ উৎসব;
বলিও তাদের ডাকি,— ক’রোনাক’ ভুল,—
যেথা শুধু মরীচিকা বরষায় ফোটে না বকুল,
সেখা হ’তে ফিরে যাও;— আর আসিও না,
যে গেছে সে চ’লে যাক;— ক’রো তারে নীরবে মার্জ্জনা।

[রায় বাহাদুর জলধর সেন সম্পাদিত ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার ফাল্গুন ১৩৫২ (ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬) সংখ্যা থেকে।]

***

হাতে কলমে

সইয়ের বইয়ের কভারে যেই এঁকেছি কই মাছ,
তড়বড়িয়ে উঠলো গিয়ে সামনে দেখে ওই গাছ।
সেই গাছে সে ডিম পেড়েছে দুটো
একটা ভালো, একটা আবার ফুটো।
সেই ফুটো দে’ কই ছানা গে সটান দিলে লাফ
এক্কেবারে সমুদ্দুরে, সক্কলে অবাক।

দেখেননি সেই দৈনিকে যে লিখলো মেছো দাদা,
সেই থেকে রোজ ভরিয়ে শুধু আঁকছি কেবল খাতা।
কত যে মাছ চুনো-পোনা নাম কি জানি তার,
ভাবছি মনে একদিনে ঠিক মিলবে পুরস্কার।
বলো তো ভাই সবাই মিলে এ কথা ঠিক কি না?
এর বেশি আর বলবো কি তার কিছুই জানি না।

[শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও এখলাসউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘দুই বাংলার ছড়া’ (১৯৯৩) সংকলন থেকে।]

***

দূরদর্শী

পাকাঠিলাল ঠুনঠুনিয়া,
বললে সেদিন হাত গুনিয়া
বাজার এবার মন্দা ভারি,
আভাষ যেন পাচ্ছি তারই;
জাভার থেকে জাহাজ এসে,
চড়ায় ঠেকে আটকেছে সে;
মাস্তুলটাও গেছে বেঁকে,
এলোমেলো বাতাস লেগে;
উচ্ছে-পটল কড়াইশুঁটি,
কুমড়ো-ঝিঙে কাঁকুড়-ফুটি
মন-দরুনে যাচ্ছে পাওয়া,
বদলে চলে কালের হাওয়া!

পাকাঠিলাল ঠুনঠুনিয়া,
বললে সেদিন হাত গুনিয়া
জাঞ্জিবারের প্লেনটা উড়ে,
মিলিয়ে গেছে অনেক দূরে;
লবঙ্গ আর যায় না পাওয়া,
ডাল-চিনি তো বেবাক হাওয়া!
জিরে জোয়ান বস্তা ক’রে,
আসতে পথে নিল চোরে!
ছোট এলাচ আনতে গিয়ে,
ডাকাত প’ল বর্শা নিয়ে!
বাজার চলে মন্দা বড়,
কেউবা ফাঁপর, কেউ বা দড়।

পাকাঠিলাল ঠুনঠুনিয়া,
বললে সেদিন হাত গুনিয়া
এই যে হাতের সামনে রেখা,
এদিক থেকে যাচ্ছে দেখা,
এর মানেটা নয়কো যা-তা,
ঘুরিয়ে দেবে অনেক মাথা।
পাউণ্ড শিলং পেন্স ও ডলার,
পয়সা টাকার নানান কালার
জগৎটাকে সরসে-ফুলে
ভরিয়ে দেবে শিকেয় তুলে।
বাজার তবু মন্দা ভারি,
আভাষ যেন পাচ্ছি তারই।।

[নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও সরল দে সম্পাদিত ‘পাঁচশো বছরের কিশোর কবিতা’ সংকলন থেকে।]

***

নমস্কার

বঙ্গবাণীরে পুজে যে ভক্তগণ,
তাহাদের মাঝে তুমিও যে একজন;
বাংলার ভাষা মন্ত্রের হে পূজারী;
নিয়ে এলে নব কল্যাণময়ী বারি;
তব জীবনের সুদূর অতীত প্রাতে,
যে পূজা-প্রদীপ তুলে নিয়েছিলে হাতে,
সে-দীপ রাখোনি, আরতি হয়নি শেষ,
আজিও বাজিছে সুরের কম্প্ররেশ;
জীবন বীণায় বাজিছে যে গানখানি,
কণ্ঠ তোমার তাহারে দিল যে বাণী,—
তার ভাবধারা ভাষার গুঞ্জরণ
যবে করেছিল বিভোর মোর এ-মন—
আজি শুভদিনে দিনু তোমা উপহার,
তাহারি স্মরণে একটি নমস্কার!

***

আজগুবি

আচাভূয়োর বাচ্চা ছিল খাঁচায়—
আর, বদ্যি বুড়ো ঘুমোচ্ছিল মাচায়;
এমনি সময় হট্টগোলের হাট থেকে এক হুমো
বললে এসে,— ‘‘জানিস পুতুল কেমন ক’রে নাচায়?
নাচ তো সে নয়,— সে এক ভীষণ যুদ্ধু!
দেখতে পেলেই নাচবে পাড়াশুদ্ধু।
তাই সেখানে নিষেধ আছে যাওয়ার—
সঙ্গে নিয়ে ঢাল, তলোয়ার, সেপাই কিংবা সওয়ার
সহ যত ভুতুম এবং বুদ্ধু।’’
এই না শুনে বদ্যি বুড়ো চটে
হুড়মুড়িয়ে আমড়া গাছে ওঠে।

[ক্ষিতীন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘রামধনু’ পত্রিকার আশ্বিন, ১৩৬৯ সংখ্যা থেকে।]

***

চাঁদের ভেতর চরকা কাটা বুড়ি

চাঁদের ভেতর চরকা কাটা বুড়ি
আজো হাঁটে দিয়েই হামাগুড়ি
সেও কি, আমার মতো থরথুরিয়ে হাঁটে
আর, বসে বসে কেবল চরকা কাটে।

[১৯৯১-তে রচিত কবিতাটি সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত ‘সংসদ বাংলা চরিতাভিধান’, প্রথম খণ্ড (২০১০) থেকে।]

(বানান অপরিবর্তিত)

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »