Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

গৌতম চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ

অপরগুচ্ছ হইতে

সমস্ত আঁচড় নির্মমভাবে মুছিয়া যাইতেছে। সরিয়া যাইতেছে উচ্ছ্বাস ও আর্তনাদ হইতে ঠিকরাইয়া-পড়া চাপচাপ রঙগুলি। পুরা নিশানটি কাফনের কাপড়ের মতো সাদা হইয়া আসিল। বিদায়-মুহূর্তের জন্য এটুকু আয়োজনই কি তবে শ্রেয়! পুরানো যাত্রীরা বিদায় লইবে। সাথে সাথেই আসিয়া পৌঁছাইবে নতুন যাত্রীরা। তাহাদের স্বাগত জানাইবার জন্য কি তবে নতুন কিছুর বন্দোবস্ত হইবে? নাঃ, তেমন সময় নাই। মনও নাই। বাতাস বিলকুল স্তব্ধ। সাদা কাপড়টিই আস্তে আস্তে দুলানো যাক। দুলাইতে দুলাইতে ক্রমে বুঝা যাইবে, সাদা রঙের কোনও তাৎপর্য নাই। চিহ্ন আরোপের সকল জটিলতা হইতে সরিয়া আসিয়া আজকের নিশানটি নিছকই সাদা…

জলের উপরে থিরথির ছায়াটি, প্রতারক। আত্মমুগ্ধতার ঘোর যেন শুনিতে পায় এক ফিসফিস গলার হাতছানি। কাছে আয়, কাছে আয়। আর পায়ে পায়ে নামিয়া যায় আরও। সামনে ঢলঢল করিতেছে মৃত্যুর মতো জল। কিন্তু সংবিৎ ফিরাইবে কে! সহসাই আকাশ ফুঁড়িয়া একটি কুকুর চিৎকার করিয়া উঠিল। চটকা ভাঙিল তাহার। বুঝা গেল, হাঁটুজল-বুকজল পার হইয়া গলাজলের একেবারে কিনারায় লইয়া গিয়াছিল ওই ছায়া। কালপুরুষের কুকুরটি এখনও থামে নাই। আকাশ তছনছ করিয়া যতই সে ঘেউ ঘেউ করুক, তাহাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়…

মাথার উপর দিয়া সাঁ সাঁ উড়িয়া যাইতেছে ঝাঁক ঝাঁক তারা। ইতস্তত খসিয়া পড়িতেছে দু’একটি উল্কা। দূরে দ্যাখা যাইতেছে এক ধূমকেতুর লেজ। আর নিচে, ওই যে, নীল রঙের চোখ-জুড়ানো আলো ছড়াইতেছে, ওই হইল আমাদের পৃথিবী। পড়িয়া পড়িয়া ঘুমাইলে কি আর এহেন তোফা সফরটি হইত! এমন মজা পাইতে গেলে একটু পেরেশানি তো করিতেই হইবে। দামড়া মানুষকে কে আর ঝিনুকে করিয়া দুধ খাওইয়া দিবে। লজ্জায় চোখ নামাইয়ো না। দ্যাখো, ওই যে ছুটিয়া যাইতেছে কিছু গ্রহাণুপুঞ্জ। ভয়ের কিছু নাই। সবারই চলিবার রাস্তা পূর্বনির্ধারিত। ঘণ্টা-প্রহর কাঁটায় কাঁটায় মিলাইয়া, যে যাহার সাধনোচিত ধামে গমন করিবে। যত অনিশ্চয়তা মানুষের মনে। লম্বা জীবন কাটাইয়াও কিছুতে সে নিজেকে চিনিতে পারে না। চিনিবে কী করিয়া! মুখের সামনে আটপহর আটখানি আয়না ধরিয়া থাকিলে কি চলে? সব ফেলিয়া মাঝে মাঝে এইভাবে বেফিকির শূন্যের বুকে ঘুরিয়া বেড়াইতে হয়…

তাহাকে তন্দ্রা বলা চলে। সুপ্তি নয়। মনে হইল, একটি অর্গল খুলিল। একটি বাতাস আসিয়া পৌঁছাইল অন্য জন্মের। পিছু পিছু আরও কয়েকটি। তখনই তাহাদের পান-সুপারি দিয়া আপ্যায়ন করিবার কথা। কিন্তু তন্দ্রার ঘোরে সব এলোমেলো হইয়া গেল। ক্ষণিক শিয়রে দাঁড়াইয়া তাহারা যেন কানে কানে কিছু বলিল। তাহার পর ফিরিয়া গেল। তন্দ্রা তখন ধীরে ধীরে সুপ্তির দিকে গড়াইতেছে …

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »
দীপক সাহা

বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়ে ইতিহাসকে লেন্সবন্দি করেছেন সাইদা খানম

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে উপমহাদেশের বিখ্যাত প্রায় সকল ব্যক্তিত্ব— ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবী, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়— কার ছবি তোলেননি! সেই সঙ্গে রানি এলিজাবেথ, মাদার টেরেসা, মার্শাল টিটো, অড্রে হেপবার্নের মতো বিখ্যাত মানুষদের ছবিও তুলেছেন। এই বিশাল তালিকায় আরও তিনটি নাম যুক্ত করে না দিলে অন্যায় হবে। চন্দ্রবিজয়ী নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিনস, মাইকেল কলিন্সের ছবিও তুলেছেন তিনি।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

মামলায় জয়ী হয়ে থোড় কুঁচি দিয়ে কালীর আরাধনা করেন জমিদার-গিন্নি

দেবী কালিকার খড়ের মেড় দেখে মজুমদার গিন্নি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, মামলার রায় যদি তাঁদের পক্ষে যায় তাহলে কলাগাছের থোড় কুঁচো দিয়ে হলেও জগজ্জননী মা মহাকালীর পুজো করা হবে, আর যদি মামলার রায় তাঁদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে ওই খড়ের মেড় দামোদরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। যদিও সেদিন দুপুরের মধ্যেই আদালত থেকে মজুমদার জমিদার পক্ষের জয়লাভের খবর পৌঁছেছিল থলিয়ার মজুমদার বাড়িতে। মজুমদার-গিন্নিও অক্ষরে অক্ষরে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। মামলায় জয়লাভের খবর পাওয়া মাত্রই জমিদার-গিন্নির নির্দেশে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দীপাবলি উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বরিশাল শ্মশান-দীপালি

সমগ্র উপমহাদেশে বরিশাল শ্মশান একটি বিশেষ কারণে অনন্য। এই শ্মশানের বৈশিষ্ট্য হল, প্রতিবছর কার্তিকী অমাবস্যায়, (যাকে শাস্ত্রে ‘অশ্বযুজা’ মাস বলে) সেখানকার এই শ্মশানে যে কালীপুজো হয়, সেখানকার পুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশীর রাতে লক্ষ লোকের সমাবেশ হয়। উদ্দেশ্য, ওখানে যাঁদের দাহ করা হয়েছে, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। সমগ্র শ্মশান জুড়ে কয়েক হাজার মঠ বা স্মৃতিসৌধ আছে, মুসলমানদের যেমন আছে বনানী বা অন্য বহু গোরস্তানে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বৌদ্ধসম্প্রদায়ের প্রবারণা ও কঠিন চীবরদান উৎসব

বিশ্বের বহু দেশেই এই উৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয়। স্পেন ও ফ্রান্স-সহ ইয়োরোপীয় দেশে চীনা, জাপানি, বাঙালি বৌদ্ধরা পালন করেন যেমন, তেমনই বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি থেকে কুয়াকাটা-কলাপাড়া এই উৎসবে মেতে ওঠে। ইওরোপীয়দের মধ্যে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকবছর আগে দালাই লামা যেবার শিলিগুড়িতে তাঁর বার্ষিক অনুষ্ঠান করলেন, সেবার প্যারিস থেকে আগত বেশ কিছু ফরাসির সঙ্গে আলাপ হয়, যাঁরা বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত। তাঁদের কাছেই শুনেছিলাম, ফ্রান্সে বহু মানুষ বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নিচ্ছেন।

Read More »
শায়ক মুখোপাধ্যায়

শায়ক মুখোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা

যাদের কাছে আজকে তুমি পৌঁছে গেছ,/ সবাই কিন্তু আয়নার মতো এখানে/ এখনও পুরো ফিরে আসতে পারেনি;// আয়না হয়ে কেউ আবার ফেরে নাকি!/ হয়তো কেউ কেউ বা কাছে ফিরে আসে;// সূর্যের রং হরিদ্রাভ কুসুম আলো/ শেষ আশ্রয় হৃদয়শূন্য হয়ে গেলে,/ যারা তবুও মনে করে রক্তের গন্ধ/ আজ শিরায় শিরায় নতুন যাদের/ ফিরে আসা এখানে অথবা যেখানেই দূরে হোক,// সে সবের প্রয়োজন সমস্তটাই ফুরিয়ে গেছে।

Read More »